September 20, 2024
ফিচার ৩সাক্ষাৎকার

সুন্দর পৃথিবীর জন্য লড়াইটা কঠিন হলেও, এটা বিরাট আনন্দেরও কাজ

জার্মান লেখক মারিয়া মাইজ একজন ইকো ফেমিনিস্ট বা পরিবেশ নারীবাদী। সমাজবিজ্ঞানের  অধ্যাপক ছিলেন তিনি কোলোন ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সাইন্সেসে। তাঁর ‘পুঁজিবাদী পিতৃতন্ত্র’ তত্ত্বের জন্য তিনি বিখ্যাত, যে তত্ত্ব বলে প্রকৃতি ও নারী দুটিই পিতৃতান্ত্রিক সিস্টেম দ্বারা শোষিত হচ্ছে।

২০১৪ সালে রোর ম্যাগাজিনের হয়ে পরিবেশ নারীবাদী মারিয়া মাইজের এই সাক্ষাৎকারটি নেন জোরিস লিভেরিংক। এ সাক্ষাৎকারে তিনি পিতৃতান্ত্রিক পুঁজিবাদ, সুন্দর জীবন এবং ইকোফেমিনিজমের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেছেন। ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি বাংলায় অনুবাদ করা হলো।

প্রশ্ন: ইকোফেমিনিজমের মূল ধারণাটি হলো, আমার যা মনে হয়, প্রকৃতির উপর পুরুষের আধিপত্য এবং নারীর উপর পুরুষের আধিপত্য সমান্তরাল বিষয়। এছাড়াও নারীবাদী আন্দোলন এবং পরিবেশ রক্ষার লড়াই একটি আরেকটির সাথে সম্পর্কিত। আমাদের পাঠকদের জন্য, যারা পরিবেশ নারীবাদ সম্পর্কে জানেন না, আপনি কি অনুগ্রহ করে এ ব্যাপারে তাদের একটু বিস্তারিত বলবেন? এবং কেন আপনি এ ধারায় আগ্রহী হলেন?

মারিয়া মাইজ: প্রকৃতির ওপর মানুষের আধিপত্য এবং নারীর ওপর পুরুষের আধিপত্য- এই দুটি সমান্তরাল, এটা নিয়ে আমি ভাবতে শুরু করলাম, যখন প্রশ্ন করতে শুরু করলাম নারী-পুরুষের এই উঁচু নিচু সম্পর্কের সামাজিক ভিত্তিটা কী? আমি এবং আমার মতো আরো অনেক নারীবাদী, এই ১৯৮০ সালের দিকের কথা বলছি, তারা এই ধরণের জবাবে সন্তষ্ট ছিলেন না, যেমন ধরেন- ‘পুরুষ নারীর চেয়ে শারীরিকভাবে শক্তিশালী, তাই পুরুষের দায়িত্ব নারীকে রক্ষা করা’; অথবা ‘নারী সন্তান ধারণ করে, এ কারণে তারা অনেকটা ঘরোয়া, আর পুরুষ নারীর চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিমান।’ এমনকি বিখ্যাত সিগমুন্ড ফ্রয়েড পর্যন্ত নারী পুরুষের মধ্যে পার্থক্য করেছেন এভাবে- “Anatomy is destiny”. মানে শেষ পর্যন্ত শরীরই সব।

বহু নারীবাদী এ ধরণের তত্ত্বকে বাতিল করেছেন। শ্রমের লিঙ্গবিভাজনের ইতিহাস নিয়ে পড়তে পড়তে আমি নিজে একটা উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছি। সেসময় আবিস্কার করলাম, নারী একটি শিশুকে জীবন দেয়, এটাকে কোনো কাজ হিসেবে কখনো ধরা হয়নি, বরং দেখা হয়েছে নারীর স্বাভাবিক শারীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়া অথবা প্রাকৃতিক ব্যাপার হিসেবে। এর মানে হলো সন্তান জন্মদান জিনিসটা এমনিই ঘটে, এর জন্য কোনো সচেতনতা কিংবা পূর্বজ্ঞানের দরকার হয় না, যে জ্ঞান একজন ধাত্রীর অথবা সেকালের ‘জ্ঞানী নারী’দের ভেতরে থাকতো। সন্তান জন্মদানের সময় যে ব্যাথা ওঠে ইংরেজিতে সেটিকে এখনো labour বলে। আর জার্মান ভাষায় বলে Wehen, মানে ব্যাথা।

এখানে আমরা নারী ও প্রকৃতি নিয়ে একটা বায়োলজিস্টিক বোঝাপড়ায় এসেছি। এই বোঝাপড়া বলে, শিশুকে জন্মদানের বিষয়টি ঘটে সহজাতভাবে। সত্যিকার মানুষের গুণ “human element”, সচেতনতা, consciousness, জন্মদানের ঘটনায় এটি এখানে অনুপস্থিত। আমাদের এই বোঝাপড়াটা আসলে আরোপিত, একদম শুরু থেকে। প্রকৃতি ও নারীর ওপর পুরুষের আধিপত্যের সাথে এই বোঝাপড়া সম্পর্কিত।

একই সময়ে নারীবাদীরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করলেন- নারীর গৃহস্থালী কাজ, রান্না করা, ঘর পরিস্কার করা, কাপড় কাচা, সন্তান লালন পালন, অসুস্থ হলে সেবা করা, স্বামীরা কাজ থেকে ঘরে ফিরলে তাদের যত্নআত্তি করা, ইত্যাদি যত ঘরের কাজ আছে, সেগুলোকে কেন ‘কাজ’ হিসেবে গণ্য করা হয় না? কেন এই কাজগুলোর জন্য সে মজুরি পায় না? যে নারীরা শুধুমাত্র গৃহিনী হিসেবে জীবন কাটিয়েছে, তারা কেন বৃদ্ধ বয়সে অবসরভাতা পায় না?

এ নিয়ে মার্ক্স এর চিন্তাভাবনা জানতে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ তাকে পড়তে শুরু করলাম। তখন জানলাম, মার্ক্স একজন গৃহবধূর ঘরের কাজ এবং কারখানায় একজন পুরুষের কাজের ভেতরে পার্থক্য হিসেবে বলছেন, পুরুষের কাজটি এখানে উৎপাদনের সাথে জড়িত (productive)। অন্যদিকে নারীর কাজটি প্রজনন সম্পর্কিত (Re-productive)। মার্ক্স বুঝেছিলেন যে নারীর রিপ্রডাকটিভ কাজটি দিনের পর দিন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পুরুষ শ্রমশক্তি তৈরিতে দরকার হয়। কিন্তু তিনি এটি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন যে, পুঁজিবাদ শুধু মজুরি উপার্জনকারী শ্রমিক পুুরুষকেই শোষণ করে না, উপার্জনহীন গৃহবধূ নারীও এই শোষণের শিকার হয়। তিনি বুঝতে পারেননি যে, পুঁজিপতিরা যে মুনাফা অর্জন করে, সেটির একটি বড় অংশ আসে নারীর দেয়া বিনামূল্যের শ্রম থেকে। ঘরের ভেতরে নারীর শ্রম বিনা পয়সার পণ্য হিসেবে ছিল এবং আছে, ঠিক যেরকম প্রকৃতির অবদান রয়েছে পুঁজির পেছনে।

আমি আমার দুই বন্ধু- ভেরোনিকা বেনহোল্ডট থমসন এবং ক্লডিয়া ওয়েলহফ এর সাথে কিছুদিন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ছিলাম। যখন আমরা ঘরের কাজের ভূমিকা এবং পুঁজিবাদে এর প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করতাম, আমরা অনুধাবন করতাম যে উপনিবেশগুলো নারী ও প্রকৃতির মতই শোষিত হয়, শ্বেতাঙ্গরা যেমন ‘বিনামূল্যের পণ্য’ বলে শোষণ করে, ঠিক তেমনি।

প্রশ্ন: একটি আদর্শ সমাজে ইকো ফেমিনিজমের ধারণাটি কেমন? এবং পরিবেশ নারীবাদীরা ঠিক কীভাবে তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন? ‘subsistence perspective’ সম্পর্কেও বিস্তারিত জানতে চাই।

মাইজ: যখন আমরা বিরাজমান পুঁজিবাদী পিতৃতান্ত্রিক সমাজের একটি বিকল্প খুঁজি, তখন তখন আমরা তাকে ‘subsistence perspective’ বলি। (*বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু দরকার, ততটুকুই আয় বা উৎপাদন করা।) না, আমরা কোনো আদর্শ সমাজের কথা বলি না। কারণ ‘subsistence’ ঠিক আদর্শ নয়, কিন্তু জরুরি। বেশিরভাগ লোকই এই তত্ত্বের সমালোচনা করে। তাদের সমালোচনাটা এরকম- ‘‘তার মানে কি আমরা মধ্যযুগে ফিরে যাবো? আমাদেরকে ক্ষুদ্র কৃষক হয়ে যেতে হবে? বেঁচে থাকার জন্য কাস্তে আর লাঙ্গল ধরতে হবে আবার?” অনেকেই মনে করে,  সাবসিসটেন্স প্রডাকশন একটা অসম্ভব ব্যাপার, কারণ আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের আরো উন্নত জীবনের সুযোগ করে দিচ্ছে। এছাড়া এটাও বলা হয়ে থাকে যে, পৃথিবীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অতিরিক্ত লোকের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অতিরিক্ত উৎপাদন করতে হয়। আমাদের subsistence perspective-কে একটা সুন্দর রোমান্টিক স্বপ্ন বলে উল্লেখ করেন অনেকে, যা কেউ অনুধাবন করবে না।

ইকোফেমিনিজম বইটিতে আমি প্রথমে বর্ণনা করেছি subsistence production বলতে আমি কী বুঝি:

‘‘Subsistence production অথবা production of life সেইসমস্ত কাজগুলোকেই বোঝায় যার কাজ সৃষ্টি, পুনঃসৃষ্টি এবং  জীবনধারণ করা এবং এর আর কোনো উদ্দেশ্য নেই। Subsistence productionপণ্য ও বাড়তি মুনাফার বিপরীতে অবস্থান করে। subsistence production এর লক্ষ্য হলো- জীবন। আর commodity production এর লক্ষ্য হলো- টাকা, আরো টাকা যা আরো মূলধন জমাবে। এতে জীবন কেবলমাত্র এক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। পুঁজিবাদী শিল্পনির্ভর সিস্টেমে এটাই চিরাচরিত ঘটনা…”

কিন্তু বইটিতে আমরা অনেকগুলো উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছি যে, দুনিয়াজুড়ে একটা বিশাল অংশ মানুষ সাবসিসটেন্স আদর্শে জীবন যাপন করতে শুরু করেছে, যেমন- অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ঠিক যতটুকু দরকার ততটুকু উৎপাদন করা, স্থানীয়ভাবে বা আঞ্চলিকভাবে প্রয়োজনীয় ও সম্ভবপর পণ্য উৎপাদন ও ভোগ, নতুন পণ্য বিনিময়, এবং এভাবেই খাদ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর বেশি দূরত্বের পরিবহণ এড়ানো, পরিবেশের যত্ন নেয়া এবং এটা মাথায় রাখা যেন পরবর্তী প্রজন্মের বেঁচে থাকার রসদ যথেষ্ট থাকে।

বর্তমানে পুরো পশ্চিমা দুনিয়া, বিশেষ করে দক্ষিণ ইউরোপ অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগছে। গ্রিস, স্পেন, পর্তুগাল এবং ইটালিতে তরুণদের ভেতরে বেকারত্ব বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। রাষ্ট্রগুলোর একরম অবস্থা নেই যে কাজ দেবে কিংবা বেকারত্ব ভাতা দেবে। এরকম পরিস্থিতিতে সাবসিসটেন্স সিস্টেমে ফিরে যাওয়াটা কোনো স্মৃতিকাতরতা না, বরং এটা প্রয়োজন। অনেক তরুণ তাদের গ্রামে দাদা দাদীর কৃষি খামারে ফিরে যাচ্ছে, অথবা শহরেই বেঁচে থাকার জন্য এক ধরণের সাবসিসটেন্স উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে তুলছে।

সাবসিসটেন্স বোঝাবার জন্য আদর্শ সমাজ কথাটা ব্যবহার না করে আমি সুন্দর জীবন কথাটা ব্যবহার করেছি। আমি সুখি সমাজের কথাও বলিনি, ভুটানের রাজা যেটা করেছেন, তাঁর রাজনৈতিক লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন সুখি সমাজ প্রতিষ্ঠা। জনগনের সুখের পরিমাপ করে তিনি Gross National Happiness (GNH) ইনডেস্ক তৈরি করেছেন। সুন্দর জীবনের মানে এটা নয় যে আমরা সবসময় সুখি। সুন্দর জীবন আর সাবসিসটেন্স বলতে আমি কী বুঝি, সেটা বিস্তারিত না বলে বরং আমি আপনাদের দুটো গল্প বলি:

আমার মা বারোটি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন, সারাজীবন আমাদের ছোট্ট সাবসিসটেন্স খামারে কাজ করেছেন এবং ৮৭ বছর বয়সে মারা গেছেন। মৃত্যুর কয়েক বছর আগে তিনি নিজের জীবনের পিছনের দিকে ফিরে তাকিয়ে সেটিকে এক কথায় প্রকাশ করেছিলেন এভাবে- ‘‘জীবন কি সুন্দর ছিল না! অবশ্যই ছিল। হ্যাঁ, অনেক কাজ করতে হতো ঠিকই। কিন্তু আমি তো কাজ করতেই ভালোবাসি।”

আমার মনে হয়, আমার মায়ের এই শেষ বাক্যটাই হলো আমি সুন্দর জীবন বলতে যা বুঝি, তাই। আমি প্রত্যাশা করি পৃথিবীর বুকে সবাই মৃত্যুর আগে যেন এভাবে বলে যেতে পারে। “Wasn’t that a good Life!”

আমি জেনেছিলাম অস্তিত্বের প্রয়োজনে বলতে কী বোঝায়, না শুধু একক ব্যক্তির ক্ষেত্রে নয়, বরং গোটা দুনিয়ার ক্ষেত্রে, যখন আমি Association of Catholic Rural Women এর আয়োজনে একটা কনফারেন্সে আমন্ত্রণ পেলাম। আমার সাবসিসটেন্স থিওরি নিয়ে কথা বলার কথা। আমি একটু খেই হারালাম। অস্তিত্বের প্রয়োজনে বাঁচা নিয়ে গ্রামীণ মেয়েদের আমি আসলে কী বলবো? আমি যখন কনফারেন্স হলে ঢুকছিলাম, তখন দেখলাম মেয়েরা প্রায় সব ধরণের ফল আর সবজি দিয়ে প্লাটফর্মটা ভরে ফেলেছে, যেমন- বাধাকপি, আলু, গাজর, আপেল, পেয়ারা এবং কিছু ফুলও রয়েছে।

এবং তাদের সারা বছরের পরিশ্রমের এই ফল ও সবজির উপরে তারা একটি ব্যানার ধরে ছিল যেটাতে ওই সম্মেলনের শ্লোগানটা লেখা ছিল-  ‘The World is Our Household!’ আমাদের গেরস্থালীটাই এই পৃথিবী।

সাবসিসটেন্স নিয়ে আমি এর চেয়ে বেশি আর কী বলতে পারি? যদি পৃথিবীর সব মানুষ, নারী ও পুরুষ সবাই মিলে এই পৃথিবীটাকে নিজের সংসারের মতো করে যত্ন করতো, তবে পৃথিবীটা অন্যরকম হতো, অনেক অনেক ভালো হতো।

প্রশ্ন: পরিবেশ নারীবাদের মূল ভাবনাগুলোর একটা হলো- পিতৃতন্ত্রই পুঁজিবাদের ভিত নির্মাণ করেছে এবং তা না হলেও এটার ওপর এর প্রভাব বিস্তর। আপনার বই  Patriarchy and Accumulation on a World Scale: Women in the International Division of Labor এ আপনি বলেছেন, যেহেতু পিতৃতন্ত্র পুঁজিবাদ থেকে আসেনি, তাই পুঁজিবাদ বিলুপ্ত হলেও পিতৃতন্ত্র বিলুপ্ত হবে না। আপনি লিখেছেন, যৌন নিপীড়নই হলো পিতৃতান্ত্রিক নিপীড়নের ভিত্তি; এবং শ্রম বিভাজন এসেছে এই তথাকথিত ‘শিকারী পুরুষ’ মডেল থেকে। এই আলোকে আমি জানতে চাই, কোন লড়াইটিকে আপনি প্রাধান্য দেবেন- পুঁজিবাদকে ছুড়ে ফেলার সংগ্রাম, নাকি নারীর উৎপাদনমুখী শ্রমের স্বীকৃতির জন্য লড়াই?

মাইজ: পিতৃতন্ত্র ও পুঁজিবাদের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ না যে কোনটি আগে এসেছে আর কোনটি পরে এসেছে। এটা হলো নারীকে পুরুষ দ্বারা ব্যবহার করা ও বঞ্চিত করার বিষয়, যেটা দুটি সিস্টেমেরই মৌলিক ভিত্তি। আজকে আমি এই দুই সিস্টেম নিয়ে কথা বলবো না, বরং কথা বলবো পুঁজিবাদী পিতৃতন্ত্র নিয়ে। আমি ‘শিকারী পুরুষ’ মডেলটিও আর উল্লেখ করবো না এটা বোঝাতে যে এই দুটি সিস্টেম কীভাবে পরস্পরের সাথে যুক্ত। আমি বরং বলবো, পুঁজিবাদ হলো পিতৃতন্ত্রের একেবারে নতুন অবতার। তাছাড়া কেউ পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধের লড়াই থেকে আলাদা করতে পারে না।

নারীর উৎপাদনমুখী শ্রমের স্বীকৃতির জন্য লড়াই সত্যিই জরুরি। কিন্তু এই লড়াই যদি নারী পুরুষের সমান মজুরির জন্য লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকে, তবে তা পিতৃতন্ত্রের গভীরে পৌঁছুতে পারবে না। হাজার বছর আগে যেভাবে পিতৃতন্ত্র প্রকাশ পেতো, অবশ্যই এখন সেভাবে প্রকাশিত হয় না। কিন্তু তাদের আচরণ একই রকম, যেমন- নারী নির্যাতন, অবক্ষয়, নারীকে বঞ্চিত করা, হয়রানি করা। বলা যায়, পিতৃতন্ত্রের আধুনিক প্রকাশ হলো কর্মক্ষেত্রে নারীকে দলবেধে হয়রানি করা।

এটা জানা জরুরি, নারীর ওপর পুরুষের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ভেতরের বিষয়টি কী। এটা মোটেই দুটি লিঙ্গের ভেতরে শারীরিক পার্থক্যের কারণে ঘটে না, ফ্রয়েড যেভাবে বিশ্বাস করতেন আর কি, বরং এটির কারণ হলো সহিংস আচরণ। পুরুষের জিন এমন না যে তারা জন্ম থেকেই বীর যোদ্ধা, কিংবা ধর্ষক, হত্যাকারী কিংবা র‌্যাম্বো। বরং তাদেরকে হত্যার মেশিন হিসেবে তৈরি করা হয়, প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাদের ভেতরে হত্যা খুনের ব্যাপারে যে প্রাকৃতিক বাধা বা ভয় কাজ করে, সেটি উৎরে যাওয়ার শিক্ষা তাদের নিতেই হয়। তাদেরকে মাটিতে থাকা অচেনা অজানা মানুষের দিকে মারার রকেট ছুড়ে মারার জন্য ড্রোনের পাইলট হওয়া শিখতেই হয়। ভিয়েতনাম যুদ্ধের আতঙ্কের পর তরুণ আমেরিকান সৈনিকরা আবার যুদ্ধে ফেরত যেতে চাইতেন না। তখন সিনেমা হলে র‌্যাম্বো এলো। র‌্যাম্বো যুদ্ধের পোশাক পরা একজন লোক, যার মাথা থেকে পা পর্যন্ত সারা শরীরে নানান রকম অস্ত্র থাকে, হাতে একটা কালাশনিকভ, কোনো না কোনো শত্রুর বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধ করছেন এবং হত্যা করছেন। আমেরিকায় সিনেমাটি খুব জনপ্রিয় হলো। এবং এরপর অনেক তরুণ আবারো যুদ্ধে যেতে তৈরি হলো। এখনকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আর কোনো  ফিল্মের দরকার নেই তরুণদের র‌্যাম্বো বানানোর জন্য। এই কাজটা এখন দারুনভাবে করে চলেছে উদীয়মান গেম ইন্ডাস্ট্রি।

প্রশ্ন: পরিবেশ নারীবাদ তার আধ্যাত্মিক বাঁকটির কারণে সুবিখ্যাত, যেখানে বলা হয়, নারী পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি প্রকৃতির কাছাকাছি। এটি প্রকৃতির ওপর পুরুষতান্ত্রিক সংস্কৃতির চলমান আধিপত্যের কথা বলে, যা একসময় শেষ হবে সমতার  সমাজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। এক্ষেত্রে আপনার মতামত জানতে চাই, এবং অনুগ্রহ করে কি ম্যাটেরিয়াল এবং স্পিরিচুয়াল ইকোফেমিনিজমের ভেতরের পার্থক্যটি বিস্তারিত বলবেন?

মাইজ: আমি আধ্যাত্মিক পরিবেশ নারীবাদীদের ওই কথাগুলো বলতে চাই না, যেটা বলে যে নারী পুরুষের চেয়ে বেশি প্রকৃতির কাছাকাছি, এবং পুরুষকে নিয়ন্ত্রণ করে যুক্তি, যেখানে আবেগ অনুভূতি হলো নারীর জায়গা। এটা সত্য যে, আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রযাত্রাটি অনেকখানি পুরুষের করা। কিন্তু তার মানে এটা বুঝায় না যে তাদের জিনের ভেতরে আবিস্কারক হওয়ার মতো কিছু আছে। পুরুষ যুক্তিবাদী হতে পারে, আবেগীও হতে পারে। ঠিক নারীও সেরকম। নারী ও পুরুষের ভেতরে কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই। সামাজিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় আজকে পুরুষকে বেশি যুক্তিবাদী ধরা হয়, যেটা শুরু হয়েছিল রেনেসাঁর পর থেকে, তার আগে ছিলেন ‘জ্ঞানী নারী’রা, সেইসব ধাত্রীরা যারা জানতেন কীভাবে সন্তান জন্মদানের সময় নারীকে সাহায্য করতে হয়, ইউরোপে ডাইনী নিধনের সময় তাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

বেকন যাদের ‘নতুন পুরুষ’ বলতেন, যারা বিজ্ঞানের মাধ্যমে পৃথিবীকে নেতৃত্ব দেবে, তাঁর দায়িত্ব ছিল বন্য প্রকৃতিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে তাকে গৃহপালিত বানিয়ে ফেলা, সভ্য বানানো, এবং ‘যুক্তিবাদী পুরুষ’দের সেবায় নিয়োজিত হতে তাদের বাধ্য করা। আমরা যদি আধুনিক বিজ্ঞানের ফলাফলের দিকে তাকাই, তাহলে দেখবো এটা আদতে পৃথিবীকে কোনো উন্নততর জায়গা বানায়নি। নিউক্লিয়ার শক্তি, রিপ্রডাকক্টিভ ও জিন প্রযুক্তি, বায়োটেকনোলজি ও অন্যান্য প্রযুক্তির আবিস্কার- এগুলোকে নাকি প্রকৃতি পরিবেশের উন্নতির জন্য করা হয়েছে! আসলে উল্টো এগুলো প্রকৃতিকে ধ্বংসই করছে। এসব নতুন নতুন আবিস্কারের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে আমি আর বন্দনা শিবা একত্র হয়েছিলাম, কোনো লাইব্রেরিতে বসে ফেমিনিজম আর বাস্তুশাস্ত্রের বই পড়ে আমরা আমাদের জ্ঞান অর্জন করি নি, বরং বৈশ্বিক পুঁজিবাদী পিতৃতন্ত্র ও এর নিওলিবারাল কৌশল, যা প্রকৃতি ও মানুষকে মুনাফার জন্য নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়েই আমরা শিখেছি। পরিবেশ নারীবাদ আমাদের লড়াইয়ের ফসল।

ম্যাটেরিয়াল এবং স্পিরিচুয়াল ইকোফেমিনিজমের মধ্যে দ্বৈতত্ত্বের প্রশ্নে আমার অবস্থান জানতে চাইলে বলবো যে আমি ম্যাটেরিয়াল ইকোফেমিনিস্ট। এককভাবে আধ্যাত্মিকতা হয় না। বস্তুগত অবস্থার ভেতর দিয়ে এটা মূর্ত হয়ে উঠতে হবে। বস্তুগত ও আধ্যাত্মিকতার মধ্যে পার্থক্যটির শেকড় একশ্বরবাদী ধর্ম, জুডাইজম, ক্রিশ্চিয়ানিটি এবং ইসলামের ভেতরে রয়েছে। একজন অদৃশ্য অবস্তুগত ঈশ্বর যিনি এক খাঁটি আত্মা, তিনি পৃথিবীর বুকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। এরপর তিনি তাকে জীবন দিয়েছেন। এর অর্থ হলো, প্রকৃতি মানে পৃথিবী নিজে কোনো প্রাণ সৃষ্টি করতে পারে না। সে একটি মৃত জিনিস। তার উপর মৃত জিনিসটি অপরিচ্ছন্ন এবং পাপে পূর্ণ। ভাল কিন্তু অবস্তুগত আত্মা এবং খারাপ, অপরিচ্ছন্ন, বস্তুগত দুনিয়ার মধ্যে যে পার্থক্য, সেটিই সমান্তরালভাবে নারী ও পুরুষের মধ্যে পার্থক্যের মতো। যেমন বলা হয়েছে, ‘‘পুরুষ বুদ্ধিমত্তা আর যুক্তির ধারক, আর নারী হলো প্রকৃতি, পৃথিবী, যার জরায়ুতে পুরুষ দ্বারা বীজ বপন করা হয় যাতে সে পুরষের বংশধরকে জন্ম দিতে পারে, বিশেষ করে পুত্র।’’ আত্মা হলো জীবনদানকারী জিনিস এবং অবশ্যই উচ্চস্তরের ব্যাপার। পৃথিবীর বুকে পাশ্চাত্য সভ্যতার জন্ম হয়েছে; এর ন্যায়নীতি, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান এবং ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান। এমনকি এর জ্ঞানের আলো এবং অসাম্প্রদায়িকতাও এই ভালো আত্মা আর খারাপ জিনিসের মধ্যকার এই দ্বন্দ্ব মুছে দিতে পারেনি। 

আমার কাছে বস্তুগত জিনিস গুরুত্বপূর্ণ। এটি মৃত কিছু না। আমাদের পৃথিবী নানারকম রাসায়নিক উপাদানে তৈরি কোনো মৃত বল না। বরং সে একটি জীবন্ত প্রাণ যে ক্রমাগত প্রাণের জন্ম দিয়ে চলেছে। সে সমস্ত জীবন্ত কিছুর মা। এই তথাকথিত আত্মা আর বস্তুর ভেতরের দ্বন্দ্ব নিয়ে ম্যাটেরিয়াল আর স্পিরিচুয়াল ইকোফেমিনিজমের পার্থক্য অনেক দূর নিয়ে যায়। আমরা যদি সত্যিই আমাদেরকে এইসব দ্বৈত চিন্তা থেকে মুক্ত করতে চাই, আমাদেরকে অবশ্যই একটা আলাদা দৃষ্টিকোন থেকে এই পৃথিবীকে দেখতে হবে। আদিবাসী মানুষের দৃষ্টিতে এই পৃথিবী তাদের মা, সেভাবেই তারা তাকে শ্রদ্ধা করে। আমরা সবাই, নারী, পুরুষ, জীবজন্তু, গাছপালা- আমাদের পৃথিবী মায়ের সন্তান। আমাদের একজনই মা। আমাদের উচিত তাকে সম্মান করা এবং রক্ষা করা।

প্রশ্ন: সারা বিশ্বজুড়ে, নানারকম মতপার্থক্য সত্ত্বেও, প্রকৃত গণতন্ত্রের জন্য এবং নিওলিবারাল পুঁজিবাদকে প্রত্যাখানের জন্য যে বিদ্রোহের ঢেউ জেগে উঠেছে, আপনি কি পরিবেশ নারীবাদের দৃষ্টিতে এটি সম্পর্কে কিছু বলবেন? এই সাম্প্রতিক আন্দোলনগুলোতে দাবিদাওয়া ও অ্যাকশনের মধ্যে কীসের অভাব রয়েছে বলে আপনার কাছে মনে হয়?

মাইজ: একজন পরিবেশ নারীবাদী হিসেবে যখন আমি সারাবিশ্বে জেগে ওঠা বিদ্রোহের দিকে তাকাই: যুক্তরাষ্ট্রের অকুপাই মুভমেন্ট, আরব বিশ্বে বিদ্রোহ (মিশর, লিবিয়া, তিউনিশিয়া), তুরস্ক এবং আরো অনেক দেশ, আমার মনে হয়, বেশিরভাগেরই মূল লক্ষ্য প্রকৃত গণতন্ত্র। আমার মনে হয় এই লক্ষ্যের ভেতরে দূরদৃষ্টির অভাব রয়েছে। বেশিরভাগ বিদ্রোহের উদ্দেশ্য থাকে স্বৈরাচারী শাসককে হটিয়ে নতুন একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আমি কখনোও শুনিনি যে আন্দোলনকারীরা পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে, জীববৈচিত্র ও পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এবং একটি বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে।

নিউইয়র্কের অকুপাই মুভমেন্ট পুঁজিবাদ নিয়ে কথা বলার ব্যাপারে যে ট্যাবুটা ছিল, সেটা ভেঙ্গেছে। অ্যাক্টিভিস্টরা লিওলিবারালিজম, বড় বড় ব্যাংক এবং গ্লোবাল কর্পোরেশনগুলোকে আক্রমণ করেছে। কিন্তু আমি যতটা জানি, পিতৃতান্ত্রিক পুঁজিবাদের কোনো প্রত্যক্ষ সমালোচনা হয়নি। মিশর এবং তুরস্কের আন্দোলন সম্পর্কে টিভির সংবাদে যা দেখলাম, অনেক নারী আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। তাদের কেউ হিজাব পরা, কেউ হিজাব ছাড়া। পশ্চিমের বেশিরভাগ মানুষ প্রশ্ন করেন একজন নারী কি স্বাধীন নাকি স্বাধীন নয়, এর মানে হলো তিনি মাথা ঢাকেন কি ঢাকেন না। হিজাব একটা রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রতীকে পরিনত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশের মেয়েদের সাথে আমার ব্যক্তিগত সংযোগ হয়নি। তাই আমি বলতে পারবো না যে এসব আন্দোলনের লক্ষ্য নিয়ে ওখানকার মেয়েরা কী ভাবে, যদিও আন্দোলনের মধ্যে ‘নারীপ্রশ্ন’- নিয়ে বিতর্ক উঠেছে যে পুরুষরা নারী স্বাধীনতা নিয়ে কী ভাবে।

আমি জানি এই আন্দোলনে তুরস্কের নারীবাদ একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। আমার/আমাদের দুটো বই তুরস্ক থেকে প্রকাশিত হয়েছে- Women, the Last Colony এবং Patriarchy and Accumulation। তুরস্কের বন্ধুরা জানিয়েছেন এই বই তুরস্কে খুব পরিচিত। এর ফলে বোঝা যায় যে, বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা আন্দোলনটি নানারকম কৌশলগত ভুলচুক এবং তত্ত্বীয় অবস্থান নিয়েই এমন কিছু গভীরতর প্রশ্ন তুলবে, যেমন- কোন সিস্টেমে আমরা বেঁচে আছি? পশ্চিমা জীবনযাপন ধরণ কি আসলেই তেমন কিছু যার জন্য সংগ্রাম করা যায়? ভবিষ্যতে নারী ও পুরুষের সম্পর্ক কেমন হবে? যুদ্ধ এত স্বাভাবিক কেন এখন? এই নতুন যুদ্ধগুলোতে ধর্ম কী ভূমিকা রাখছে? বিকল্পগুলো কী?

প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন। ইকোফেমিনিস্ট তত্ত্ব কীভাবে এই সাম্প্রতিকালের আন্দোলনগুলোকে সমৃদ্ধ করতে পারে? এ ব্যাপারে আপনার মতামত জানতে চাই।

মাইজ: আমি মনে করি, বিশ্বজুড়ে তারুণ্যের যে জোয়ার এসেছে, তাতে পরিবেশ নারীবাদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ প্রকৃতিকে রক্ষা করা এবং নারী স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার এজেন্ডা সব জায়গায় রয়েছে। পৃথিবীব্যাপী লড়াই করে যে তত্ত্বীয় জ্ঞান আমাদের মতো বয়স্ক পরিবেশ নারীবাদীরা অর্জন করেছি, তা দিয়ে আমরা তাদের এটা শেখাতে পারি যে, উঠে দাঁড়ানো এবং যে ক্ষমতা দুনিয়া শাসন করছে, তাকে মুখের ওপর ‘না’ বলে দেয়াটা খুব জরুরি। আমাদের তত্ত্বগুলো আমাদের সংগ্রামের অভিজ্ঞতা থেকে উদ্ভুত। আমরা অনুশীলন করে এগুলো শিখেছি। ভারতের বন্দনা এবং জার্মানি থেকে আমার যতদিন পর্যন্ত দেখা হয়নি এবং আমরা আবিস্কার করিনি যে ভূঅবস্থানগত, সাংস্কৃতিক ও বয়সের পার্থক্য সত্ত্বেও আমাদের চিন্তাভাবনার জায়গাটি এক, ততদিন পর্যন্ত কিন্তু আমরা Ecofeminism বইটি লিখিনি। এটা একটা দারুন অনুপ্রেরণামূলক অভিজ্ঞতা। এটা আমাদের বুঝিয়েছে যে এসব পার্থক্য আমাদের বিভক্ত করতে পারেনি। কারণ আমাদের চিন্তার জায়গাটি এক। এছাড়া আমরা একটা আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম, Diverse Women for Diversity (DWD) নামে। মানব জাতির যে বৈচিত্র সেটি এবং একই সাথে জীববৈচিত্র ও গাছপালার সুরক্ষাই এই গ্রহটির প্রাণপ্রকৃতির জীবন রক্ষার একমাত্র উপায়। Monoculture জীবন ধ্বংস করে।

বিশ্বের নানা দেশের তরুণ আন্দোলনকারীদের প্রতি আমার পরামর্শ, আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করুন এবং সবার বৈচিত্রপূর্ণ অভিজ্ঞতা, প্রতিবন্ধকতা, আইডিয়া, তত্ত্ব ইত্যাদি শেয়ার করুন। এবং এভাবে আমাদের মূল চিন্তার জায়গাটিকে ঘিরে একটি আন্তর্জাতিক কম্যুনিটি গড়ে তুলুন। আমরা পরিবেশ নারীবাদ, বাস্তুশাস্ত্র সম্পর্কিত, বিশ্বায়ন বিরোধী, শান্তির দাবিতে শত শত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছি এবং অংশ নিয়েছি। এসব সম্মেলনে নারী ও পুরুষ অংশ নেন। ‘লিঙ্গ সমস্যা’ এখানে কোনো বিষয় হয়ে ওঠেনি। আমরা যদি একজন আরেকজনকে জানতে চাই, বিশ্বাস করতে চাই ও বন্ধু হতে চাই, তবে এ ধরণের আন্তর্জাতিক বৈঠকের দরকার আছে। এরকম সরাসরি বৈঠক ছাড়া কোনো আন্দোলন গতি পায় না। ডিজিটাল যোগাযোগ এরকম আন্দোলনের বিকল্প হতে পারে না। আমি প্রত্যাশা করি যে, Ecofeminism বইটির পুনঃমুদ্রন আন্দোলনকারীদের অনুপ্রাণিত ও সমৃদ্ধ করবে, তারা উপলব্ধি করবে যে একটা সুন্দর পৃথিবীর জন্য একসাথে লড়াই করাটা কঠিন হলেও, এটি বিরাট মহৎ আনন্দেরও একটি কাজ।