April 29, 2024
নারী'র খবরবিদেশফিচার ৩

‘‘নারীবাদীরা পুরুষকে ঘৃণা করে’’- স্টেরিওটাইপ চিন্তা ভুল প্রমাণিত গবেষণায়

ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর ডেস্ক ।। নারীবাদী মানেই পুরুষকে ঘৃণা করে – দীর্ঘদিন ধরে লালিত এই স্টেরিওটাইপ চিন্তা ও ধারণা অবশেষে ভুল প্রমাণিত হলো। পুরুষকে ঘৃণা করাই নারীবাদ – এই বহুল প্রচলিত কথাটি একটি মিথ ছাড়া আর কিছুই না, এবারে বলছেন গবেষকরা। যে নারীরা নারী অধিকার নিয়ে কাজ করেন, তাদের নিয়ে এ ধরনের ধারণা রয়েছে, যার কোনো ভিত্তিই নেই, আরো বলেন তারা। খবর ডেইলি মেইল অনলাইনের।

প্রায় ১০ হাজার মানুষের উপর চালানো একটি গবেষণা এই সিদ্ধান্তের কথা জানাচ্ছে। এই ১০ হাজার নারী পুরুষের মধ্যে নারীবাদীরাও রয়েছেন। গবেষণার ফলাফলে উঠে এসেছে যে এদের অধিকাংশই পুরুষের প্রতি ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইটালি, জাপানসহ ৯টি দেশে এই গবেষণা চালানো হয়। গবেষণায় ১০ হাজার মানুষের প্রতি প্রশ্ন রাখা হয়, পুরুষের প্রতি তারা কতটা উষ্ণ মনোভাব পোষণ করেন, পুরুষকে কতটা পছন্দ করেন, কতটা বিশ্বাস করেন, কতটা ইতিবাচক ও স্নেহশীল তারা পুরুষের ব্যাপারে, নাকি পুরুষকে তারা সম্মানের যোগ্যই মনে করেন না। উত্তরে নারীবাদী ও নারীবাদী নন – দুই পক্ষই পুরুষের প্রতি ইতিবাচক চিন্তাভাবনা ধারন করেন বলে জানান। বেশিরভাগের চিন্তাধারাই এক ছিল, সামান্য কিছু অমিল ছাড়া।

প্রকৃতপক্ষে এই গবেষণার সময় নারী ও পুরুষ উভয়কেই প্রশ্ন রাখা হয় পুরুষের ব্যাপারে তাদের অনুভূতি কী সে সম্পর্কে। এতে দেখা যায় নারীবাদীদের চেয়ে পুরুষরাই বরং পুরুষদের বেশি ঘৃণা করেন।

গবেষণায় দেখা যায়, নারীবাদীরা মনে করেন, সমতা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পুরুষ কিছুটা হুমকিস্বরূপ, এটি আবার যারা নারীবাদী নন তারা অতটা মনে করেন না। নারীবাদীরা মত দিয়েছেন যে, নারীরা পুরুষের আক্রমণাত্মক আচরণকে ভয় পায়। তবে তারা নারী ও পুরুষকে একই মনে করেন, আর এক বলেই সমতায় বিশ্বাস করেন তারা। পুরুষকে নারীর মতো একজন মানুষ ভাবার কারণেই নারীবাদীরা পুরুষের প্রতিও সহানুভূতিশীল।

ইংল্যান্ডের স্যুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ ড. আলফে হপকিন্স ডয়লে’র নেতৃত্বে এই গবেষণাটি হয়। তিনি বলেন, নারীবাদীরা পূর্ণবয়স্ক নারী ও বালিকা-কিশোরীদের জন্য যেমন সফল ভূমিকা রেখেছেন, ঠিক একই রকম ভূমিকা তারা রেখেছেন পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ও বালক-কিশোরদের জন্যও। অথচ নারীবাদীদের নিয়ে সেই ১৯ শতক থেকে একথা প্রচার করা হয়েছে যে নারীবাদ মানেই পুরুষের বিরুদ্ধচারণ ও পুরুষবিদ্বেষ। নারীবাদীদের নিয়ে এই ধারণাকে গবেষকরা ‘‘Damaging steritype’’ বলে আখ্যায়িত করেছেন, যা ভুল ও মিথ্যা এবং এটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করেন তারা। তারা আরো বলেন, নারীবাদীরা পুরুষের প্রতি সহানুভূতিশীল। যে সাধারণ সহানুভূতির অভাব রয়েছে, তাকে তাদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য রাজনীতিকরণের কারণ নেই, বিশেষ করে এর সাথে পুরুষবিদ্বেষের কোনো সংযোগও নেই।

Psychology of Women নামের জার্নালে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে বর্ণনা করা হয়েছে কীভাবে নারীবাদীদের চিরকাল অনারীসুলভ, পুরুষবিদ্বেষী ও লেসবিয়ান বলে প্রচারণা চালানো হয়েছে। আর এই প্রচারণাই নারীকে নারীবাদী হতে নিরুৎসাহিত করে এসেছে, আর পুরুষকে উৎসাহিত করেছে নারীবাদের বিরোধিতা করতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *