November 2, 2024
ফিচার ৩মুক্তমত

‘তুমি আমার মায়ের মত হতে পারোনি’

ফারজানা ইয়াসমিন।। এই দেশের একজন নারীর নানা চাওয়ার একটি চাওয়া হচ্ছে নিজের সংসার। স্বামী ও সংসার নিয়ে তাদের কৌতুহলের শেষ নেই। কতো কী স্বপ্ন বোনে মনের ভেতর। যখন সে সংসারে প্রবেশ করে তার কৌতুহলী মনের জট খুলতে থাকে। সে জীবনের বাস্তবতাকে অবলোকন করতে থাকে ধীরে ধীরে।

সব পুরুষ এক না হলেও তাদের প্রায় সবার মনের কথা যেন একই।

‘তুমি আমার মায়ের মত হতে পারোনি। সারাদিন কী করো? ইস্, তোমারই এত কষ্ট! বাচ্চা কাচ্চা তো আমার মাকেও দেখেছি লালন পালন করতে, কই তাদের তো তোমার মতো ন্যাকামি করতে দেখিনি। অল্পতেই তুমি কাতর হয়ে যাও! কী এত কাজ করো সারাদিন? আমার মা গেরস্থ / বড় বাড়ির বউ ছিল। তাকে কী কী করতে হয়েছে জানো? তার কিছুই তো তুমি করো না। খাওদাও আর ঘুমাও।’

সার্ভিস না করা নারীকে প্রায়ই শুনতে হয়, ‘একদিন অফিসে গিয়ে দেখো না কেমন লাগে। আমার মায়ের রান্না অনেক মজা হয়। সেরকম রান্না করা শিখে নিও। এতো চাই চাই করো? নিজে রোজগার করে কিনে দেখো কেমন লাগে। তুমি অনেক ভালো ঠিক আছে তবে তোমার আমার মায়ের মতো ধৈর্য নাই। আমার বাবাও আমার মাকে অনেক কষ্টে রেখেছিল, তোমার মতো আমার মা ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দিত না’

সার্ভিস করলেও শুনতে হয়, ‘নিজে রোজগার করো আমার কাছে চাও কেন আবার? নিজের টাকায় চালিয়ে নাও।’

এরকম হাজারও কথা আছে।

বেশিরভাগ নারীই স্বামীর কাছে তার মায়ের মত হতে পারে না কারণ স্বামীর চোখ আর সন্তানের দৃষ্টি এক না। একজন স্বামী আজ যাকে এতোটা তুচ্ছ করে কথা বলছে সেই নারীই কিন্তু একদিন তার সন্তানের মা হয়ে তাদের কাছে অতুলনীয় হবেন।

একজন সন্তান ছোটবেলা থেকেই মায়ের কাছে থেকে ধীরে ধীরে বড় হয় এবং মায়ের আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তাই মায়ের সব কিছুই তার ভালো লাগে এবং অনুকরণীয় মনে হয়। মায়ের আদর সেবা তার জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয় মনে হতে থাকে। সেই সন্তান যখন বড় হয় তখন মায়ের সেরকম সেবাই আশা করে যা প্রকৃতপক্ষে পাওয়া অসম্ভব। মা ঐশ্বরিক এক অনুভূতির নাম। অন্য কারও জন্য এমন অনুভূতি তৈরি হবে না। যেহেতু মায়ের সাথে পৃথিবীর কোনো কিছুর তুলনা হয় না সেহেতু পুরুষরা যা ধারণা করেন, অবশ্যই তা ভুল। নিজের স্ত্রীকে স্ত্রী হিসেবেই দেখা উচিত। অন্য পরিবার থেকে এসে সে আপনার জন্য সব করবে এটাও বা কমে কিসের?  আপনি কী পারবেন তার হয়ে তার পরিবারের সেবা যত্ন করতে?

সারাদিনই কিন্তু একজন নারীকে পরিবারের জন্য পরিশ্রম করতে হয়। সবার সব কাজ শেষ করেই তাকে ঘুমোতে যেতে হয়। তার কোনো নির্দিষ্ট বিশ্রামের সময়ও থাকে না। একজন পুরুষ অফিস বা তার কর্মস্থল থেকে এসে বিশ্রাম নেন। তাকে দিয়ে আর কিছুই যেন করানো সম্ভব না কিন্তু একজন নারীর ডিউটি ২৪ ঘন্টাই বলা যেতে পারে। সবার প্রয়োজনে তাকে মানসিকভাবে সজাগ থাকতে হয়। সবার মন রক্ষা করে চলতে হয়। এই যে পুরুষরা বলে, রান্নাটা আমার মায়ের মতো হয়নি, এই না হওয়াতেও নারীর অনেক পরিশ্রম থাকে। কষ্ট হয় কিন্তু শুনতে, সবাই মুখ ফুটে বলেও না। তবুও কি দিব্যি সংসারের কাজ করে যায়। কাজের বিনিময় না থাকলেও যদি কেউ একটু কাজের প্রশংসা করে তাতেই পৃথিবীর সব কিছু ভুলে নিজেকে পরিপূর্ণ করতে ব্যস্ত হয়ে যায়। এ সবই তো একটা পরিবারকে ভালো রাখার জন্য।

ভেবে দেখেছেন কখনও? আপনি পুরুষ যখন অফিসে কাজের প্রশংসা না পান ঐ অফিসে কাজ করতে মন চায় আপনার? তখন চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। তাহলে নারীর ক্ষেত্রেও তাই হওয়ার কথা কিন্তু না, নারীরা তা করতে পারে না। তাদের দায়িত্বের কাছে তারা আটকা পড়া।

আজ যাকে এতো পোড়াচ্ছন কাল সেই আগুনেই পুড়ে যাবেন না তো? আজ আপনার স্ত্রী আপনার কাছে পার্ফেক্ট না, কিন্তু তার সন্তানের কাছে তিনি পার্ফেক্ট মা হিসেবেই গণ্য হবেন। তখন বাবা হয়েও আপনি স্ত্রীর সমপর্যায়ে যেতে পারবেন না কারণ সন্তানের কাছে বরাবরই তার মা-ই শ্রেষ্ঠ।

[ফেমিনস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব মতামত]