করোনাতঙ্কের বন্দী দিনে মানসিক সুস্থতার উপায়
ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর ডেস্ক।। করোনা নিয়ে আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তা ক্রমে আমাদের মানসিকভাবে অসুস্থ করে ফেলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুধু নয়, ব্যাক্তিগত পারিবারিক এমনকি সামাজিক জীবনেও সরাসরি এর আভাস মিলছে। কোভিড-১৯ এর মহামারী নিয়ে ক্রমাগত আতঙ্ক, দুশ্চিন্তা তো আছেই, সেই সাথে যুক্ত হয়েছে দিনের পর দিন ঘরে বন্দী থাকার স্ট্রেস। বন্দী ও কর্মহীন মানুষ এমনিতেই নানা উল্টোপাল্টা চিন্তা করে। এখন দুশ্চিন্তা নিয়ে ঘরের ভেতরে থাকার কারণে অনেকেই মানসিক সুস্থতা হারাবেন, আশংকা করা হচ্ছে। নিজের জন্য দুশ্চিন্তা তো বটেই, সেইসাথে পরিবার, আপনজনসহ পুরো দেশ ও সমাজ নিয়েও চিন্তিত হচ্ছি আমরা। এর প্রভাব আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যে পড়ছে, যা এখন হয়তো আমরা খুব বেশি টেরও পাচ্ছি না এখনই।
করোনাভাইরাস নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটি আমরা এর আগে কখনো দেখিনি। আমাদের জীবনে এ ধরণের অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম। এই সংক্রমণের ভয়, চিকিৎসা না পাবার ভয়, মৃত্যুর আশংকার সাথে ঘরের ভেতরে এভাবে অনিশ্চিত দিন কাটানো- এর কোনটার সাথেই আমাদের আগে পরিচয় ছিল না। এমন অবস্থায় যারা সাধারণ মানুষ তারা তো বটেই, এমনকি যারা কঠিন মানসিক শক্তির অধিকারী, তারাও ধীরে ধীরে মনোবল হারাচ্ছেন। হতাশায় আক্রান্ত হচ্ছেন। বলা হচ্ছে কয়েক ধরণের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য এ সময় বেশি হুমকির মুখে। তারা হলেন-
– বয়স্ক ব্যাক্তি এবং যাদের ক্রনিক কোন অসুখ আছে, ফলে তারা করোনা ঝুঁকিতে বেশি রয়েছেন বলে মানসিকভাবেও দুর্বল আছেন
– শিশু এবং টিনএজাররা
– করোনা প্রতিরোধ ও প্রতিকার কাজে যারা সরাসরি জড়িত, যেমন ডাক্তার নার্স বা হেলথ কেয়ার ওয়ার্কার, তারা
– যেসব মানুষ আগে থেকেই কোন একটি মানসিক সমস্যায় ভুগছেন, তারা।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এ সময় যে ধরণের মানসিক সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে তা হল-
– নিজের এবং প্রিয়জনের আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা নিয়ে অতিরিক্ত আতঙ্কে থাকা
– ঘুমের প্যাটার্ন ও খাওয়ার রুচিতে পরিবর্তন
– ঘুম না হওয়া এবং কোন কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা
– ক্রনিক স্বাস্থ্যসমস্যা যাদের আছে, তাদের অবস্থার অবিনতি হওয়া
– মদ্যপান, ধুমপান ও অন্যান্য নেশাজাতীয় জিনিস নেবার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া
মনোরোগ চিকিৎসকরা বলছেন, এগুলোর কোনটাকেই তুচ্ছ করে দেখার সুযোগ নেই। বরং নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখতে হবে।
এ সময় মানসিক সুস্থতা ধরে রাখতে যা যা করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, তা হল-
– সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করোনা সংক্রান্ত যা কিছু শুনলে, পড়লে বা দেখলে আপনি আপসেট হয়ে পড়ছেন, তা থেকে দূরে থাকুন।
– শরীরের যত্ন নিন। লম্বা শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন। ইয়োগা, স্ট্রেচিং ও মেডিটেশন করতে পারেন।
– শখের কাজগুলো করুন, যা করতে আপনার ভাল লাগে।
– আপনজনের সাথে ফোনে বা যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলুন। পরিবারের সদস্যদের সাথে আপনার মনের কথা শেয়ার করুন।
শিশুদের ক্ষেত্রে: বড়দের মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়তে দেখলে শিশুরাও হতাশাও ভুগবে। বড়রা শক্তভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করলে শিশুদেরও দেখভাল করতে পারবেন। শিশু মানসিক সমস্যায় পড়লে যা যা করতে পারে, তাহলো-
– অতিরিক্ত কান্নাকাটি, বিরক্তির প্রকাশ
– যেখানে যেখানে টয়লেট করে দেয়া বা রাতে বিছানা ভিজিয়ে ফেলা
– চিন্তিত ও মনমরা থাকা
– অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা ও ঘুমের সমস্যা
– মনোযোগের অভাব
– এড়িয়ে চলার প্রবণতা
এসব ক্ষেত্রে-
– আপনার পরিবারের শিশু কিংবা টিনএজারের সাথে কোভিড-১৯ নিয়ে আলোচনা করুন, তার প্রশ্নের উত্তর দিন।
– শিশুকে বুঝিয়ে বলুন যে সে নিরাপদ আছে।
– করোনাবিষয়ক খবর বা কোনকিছু শিশুর সামনে আলোচনা করবেন না
– শিশুর নিয়মিত কাজগুলো ঠিক রাখুন। পড়া, খেলা, অন্যান্য যা কিছু সে স্বাভাবিক সময়ে করে
– আপনি যা করবেন, আপনার শিশুও তাই করবে। সময়মত ঘুমান, খান, রেস্ট নিন, ঘরের কাজ করুন, গান শুনুন বা মুভি দেখুন, ভাল বই পড়ুন। শিশুও আপনাকে অনুসরণ করবে ও ভাল থাকবে।