November 2, 2024
ফিচার ২মুক্তমত

সানি লিওনের চরিত্র মাপার যোগ্যতা আপনাদের নেই

বিকাশ ভৌমিক।। বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকে পীর হাবিবুর রহমান নামক জনৈক সাংবাদিক করোনা ভাইরাসের মিউটেশনকে সানি লিওনের চরিত্রের সাথে তুলনা করেছেন। অর্থাৎ সানি লিওন চরিত্রহীনা। আচ্ছা,খুব ভালো কথা, চরিত্রের বিচারে পরে আসছি, সানি সম্পর্কে আগে একটু জেনে আসি।

সানি লিওন ভারতীয় বংশদ্ভুত কানাডিয়ান একজন সাবেক পর্ণস্টার। পর্ণ ইন্ডাস্ট্রি আমাদের উপমহাদেশিয় পতিতালয়গুলোর মত নয়, যেখানে নারীদের বিক্রি করে, জোর করে এ পথে নামানো হয়। বরং অধিকাংশ নারী পুরুষই স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করে থাকে (যদিও এদেশীয় পুরুষদের মস্তিষ্কে কনসেন্ট নামক শব্দটি জায়গা পায়না)। এটা একটা বিগ বাজেটের ইন্ডাস্ট্রি। আপনি যে ২৭ বা ৩০ মিনিটের নীল ছবি দেখছেন তা আদতে আর দশটা মুভির মতই স্ক্রিপ্ট সমেত শ্যুট করা, যা হয়ত আপনাকে সাময়িক প্লেজার দিয়ে থাকে, এর বেশি কিচ্ছু না।

সানি এখন বলিউডের সেরা দশজন পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রীদের একজন। অতীত জীবন নিয়ে তার নিজের বা তার স্বামীর কোনো অনুশোচনা নেই কারন আর পাঁচটা কাজের মতই সেটাও একটা কাজ ছিল। তারা দিব্যি সুখি। নিজেদের দুটি সন্তানের পাশাপাশি একটি অনাথ শিশুর অভিভাবকত্ব নিয়েছেন সানি।
সানি লিওন বেশ কিছু ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাথে জড়িত। ২০১৮ তে কেরালার বন্যার সময় সানি প্রায় ৫ কোটি টাকা সমমূল্যের খাদ্য সরবরাহ করেন। বিশ্বখ্যাত এনিম্যাল রাইটস অর্গানাইজেশন পেটা‘র (PETA) ভারতীয় প্রতিনিধি। কাজ করছেন প্রাণির প্রতি নিষ্ঠুরতাবিরোধী ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির দাবিতে। চামড়াজাত পণ্যবিরোধী তিনি। একইসাথে প্রসাধন তৈরিতে প্রাণিদের ওপর পরীক্ষা চালানোর বিপক্ষেও প্রচারণা চালাচ্ছেন।

দরিদ্র শিশুদের জন্য মুম্বাইতে একটি স্কুল গড়ে দিয়েছেন এই তারকা। এছাড়া বয়োবৃদ্ধ অনেক দম্পতির দায়িত্বও নিয়েছেন তিনি। সামাজিক ইস্যুতে তিনি সবসময় সোচ্চার। প্রতিবাদী একজন মানুষ। ধর্ষণের শিকার বহু নারীর চিকিৎসায় তিনি এগিয়ে এসেছেন। পর্ণগ্রাফিতে শিশুদের ব্যবহারের ঘোর বিরোধী তিনি এবং এটি বন্ধের দাবিতে কাজ করে যাচ্ছেন।

আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটিরও একজন সদস্য সানি লিওন। একবার দারুন সব ছবি এঁকেছিলেন  নিজে। এরপর সেই ছবি বিক্রি করে পুরো অর্থ দান করেন ক্যান্সার আক্রান্তদের চিকিৎসায়।  এরকম আরো অনেক কিছু আছে সানির দারুন সব সামাজিক কল্যাণমূলক কাজের রেকর্ড হিসেবে।

এখন একটি প্রশ্ন রাখি জনাব পীর হাবিবকে। জনাব পীর হাবিব, আপনি এ রকম কাজ কী কী করেছেন?

এখন আসি চরিত্রের বিচারে। আপনাদের বিচারে একদম একলাইনে যদি বলি, একটি নারীদেহ এবং তার ভ্যাজাইনা যদি একজন পুরুষের জন্যই বরাদ্দ থাকে বা ব্যবহৃত হয় তবেই সেই নারীকে সৎ চরিত্র বলা যায়, তাইতো? আর চাটুকার, দলকানা, পাচাটা, অন্যের সম্পদ মেরে কেটে খাওয়া কোন পুরুষ, এমনকি তার পুরুষদণ্ডটি বহু জায়গায় ব্যবহৃত হলেও চরিত্রটি থাকবে অমলিন। খুব সুন্দর হিসেব নিকেশ।

যারা সানি লিওনের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তারা আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে একবার দেখে নিক এইবেলা।

নারীর ভ্যাজাইনাভিত্তিক চরিত্র বিশ্লেষণ বন্ধ হোক। পুরুষের চোখে নারীকে মেপে দেখার যে নোংরা অভ্যাস, তা দূর হোক এই সমাজ থেকে।

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব মতামত]