May 17, 2024
নারী'র খবরদেশবিদেশফিচার ৩

ফোর্বসের পাতায় প্রশংসিত শেখ হাসিনাসহ আট নারী সরকারপ্রধান

ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর ডেস্ক।। এবার জনপ্রিয় আমেরিকান বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বসের পাতায় নারী সরকারপ্রধান হিসেবে প্রশংসিত হলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আট জন। পত্রিকাটির মতামত বিভাগে কলামিস্ট এভিভা ওইটেনবার্গ কক্স লিখেছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় আটজন নারী সরকারপ্রধানের নাম, যারা সফলতার সাথে সব দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি আরেকটি কলাম লেখেন যেখানে জার্মানি, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও তাইওয়ানের সরকারপ্রধানদের নাম উল্লেখ করে তাদের কাজের প্রশংসা করেছিলেন। এইবার তিনি এইসব নামের সাথে যুক্ত করলেন আরো আটটি নাম। যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামও রয়েছে।

নিচে এভিভা ওইটেনবার্গ কক্সের লেখাটির একটি ভাবানুবাদ দেয়া হল:

বিশ্বে বর্তমানে ১৮টি দেশে ৫৪৫ মিলিয়ন অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশের সরকারপ্রধান নারী। বাংলাদেশ থেকে ইথিওপিয়া, জর্জিয়া ও সিংগাপুর নারীদের বিশ্ব রাজনীতিতে উত্থান ঘটছে। বর্তমান করোনাভাইরাস সংকটে তাদের মেধারও প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। আমার আগের লেখায় লিখেছিলাম নারী সরকারপ্রধান রয়েছেন এমন সাতটি দেশের পরিস্থিতি নিয়ে। এখানে আরও ৮টি নারী সরকারপ্রধানের কথা বলব যারা তাদের যোগ্যতার স্বীকৃতি পাওয়ার দাবীদার। তাদের নাম মনে রাখবেন, এরাই ভবিষ্যৎ বদলে দিচ্ছে।

সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুব ও হংকং এর প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম যেভাবে শুরুতে সংকট মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন তা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। এখন সিংগাপুরে ভাইরাসটির দ্বিতীয় তরঙ্গের সংক্রমণে ভুগছে তবে হংকংয়ের ক্যারি লাম শুরুতেই ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব রুখে দিয়েছেন।

ইথিওপিয়ার প্রেসিডেন্ট সাহলে ওর্ক জেওডে যিনি সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুব ও আরও তিনজনের সঙ্গে  ফাইন্যানসিয়াল টাইমসে বৈশ্বিক সহায়তার জন্য যৌথ একটি প্রবন্ধ লেখেন। এতে তারা লেখেন, এমন সংকটে মানুষের চূড়ান্ত ভালো ও খারাপ দুটোই বের হয়ে আসে। নেতা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব, ভালো প্রবৃত্তিকে উৎসাহ দেওয়া ও খারাপকে দমিয়ে রাখা।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জর্জিয়া একটি সাফল্যের গল্প। দেশটির প্রসিডেন্ট সালোমেজ জওরাবিচভিলির নেতৃত্বে জর্জিয়াই ইউরোপের মধ্যে প্রথম দেশ যারা করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছিলো। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেন। ভাইরাসের সম্ভাব্য সকল হটস্পটে বিমান চলাচল স্থগিত করেন, বিদেশ থেকে তার দেশে প্রবেশ করা প্রত্যেককে কোয়ারেনটাইনে পাঠান। ইউরোপের অন্যান্য দেশ কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার বহু আগে তিনি সত্য তথ্য প্রচারের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করেন। জর্জিয়ায় স্কুল বন্ধ করা হয় এবং মাত্র তিনজন করোনা আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশে লকডাউন পরিকল্পনা করেন।

প্রায় ১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য সংকট মোকাবিলায় নতুন কেউ নন। এই সংকট মোকাবিলার ক্ষেত্রে তিনি দ্রুতই সাড়া দেন। শেখ হাসিনার এমন তড়িৎ সিদ্ধান্তকে ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম প্রশংসনীয় বলে উল্লেখ করেছে। দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা ফেব্রুয়ারির শুরুতেই চীন থেকে দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে আসার পদক্ষেপ নেন। মার্চের শুরুতে প্রথম সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন। এছাড়া সকল কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেন। তিনি দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে স্ক্রিনিং মেশিন স্থাপন করেন যার মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে পরীক্ষা করা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ৩৭ হাজারকে দ্রুত কোয়েরেনটাইনে পাঠানো হয়েছে। এমন কাজ যুক্তরাজ্যও এখনও করতে পারেনি।

বলভিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট জেনাইন অ্যানেজ সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস দেশ ছেড়ে পালানোর পর দায়িত্বে আছে। এর কয়েক মাস পরই তিনি ভাইরাস মোকাবিলায় দেশে লকডাউন ঘোষণা করেন। করোনাভাইরাস বলভিয়া উইকিপিডিয়া পেইজ খুলে সেখানে একাধিক নির্দেশনা  ও তথ্য দেওয়া হয়। কঠিন অর্থনৈতিক জটিলতায় থাকা ১ কোটি ২০ লাখ মানুষের দেশটিতে এ পর্যন্ত (২২ এপ্রিল) ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

নামবিয়ার সারা কুগংগেলোয়া অবশ্য কোভিড-১৯ পরিস্থিতি শুরু হওয়ার আগে থেকেই তার দেশে জরুরি স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুতির ওপর জোর দিচ্ছিলেন। নেপালের প্রেসিডেন্ট বান্দারি তার দুই মাসের বেতন করোনাভাইরাস তহবিলে জমা দিয়েছেন।

এই রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা তাদের মেধা দিয়ে আগামী বিশ্বকে পরিবর্তন করে দেওয়ার অপেক্ষায়।