November 21, 2024
ফিচার ৩মুক্তমত

পুত্র সন্তানকে মানুষ হিসেবে বড় করছেন তো?

সিদ্রাত মুনতাহা।। একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর আপনার সন্তান যখন খেলতে বা দৌঁড়াতে গিয়ে পড়ে যাবে তখন তাকে আপনি আর ধরতে যাবেন না, দাঁড়িয়ে দেখবেন সে কীভাবে কী করে, কীভাবে উঠে আসে আর আপনাকে বুঝতে হবে সেই সময় বা বয়সটা কখন, সেটা কি অনেক পরে? নিশ্চয়ই না, যখন সে হাঁটাচলা করা পুরোপুরি শিখে যাবে তখন থেকেই প্রতিবার আছাড় খেয়ে পড়ে যাওয়ার পর বারবার আহ্লাদ করা যাবেনা, তাকে একা একা উঠে দাঁড়াতে শিখতে দিতে হবে।

অনেক মা বাবাই আফসোস করেন বা কষ্ট পান এই বলে যে, তারা সন্তানকে ছোটবেলা থেকে অনেক আদরে মানুষ করেছেন, ফুলের টোকা লাগতে দেননি আর এখন বড় হয়ে সন্তান একা থাকে, অনেক কষ্ট করে, কোনকিছু ঠিকভাবে করতে পারেনা, সেটা নিয়ে তারা চিন্তিত থাকেন। অথচ এই চিন্তার পেছনে দায়ী কিন্তু মা বাবাই, তারা কেন সন্তানকে যথেষ্ট বড় হওয়ার পরেও অতি আরামে রাখবেন? অন্তত সন্তানের ভবিষ্যৎ এর কথা ভেবে হলেও উচিত নয় কি তাদের আস্তে আস্তে কাজ শেখানো, অন্তত নিজের কাজ নিজে করতে শেখানো?

এসব বললে অনেক মা বাবাই বলেন ও তো এখনো ছোট, বড় হলে শিখবে। কিন্তু বলুনতো বড় হলে শিখবে কী করে যদি ছোটবেলা থেকেই ব্যাপারটার বীজ ভেতরে বপন করা না হয়? ছোট্ট বাচ্চাদের ভেতর আপনি যে বীজ বপন করবেন সেটাই তার ভেতর লালিত হবে, প্রস্ফুটিত হবে। এই অতি আরামে মানুষ করার মানসিকতা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ছেলে সন্তানদের ক্ষেত্রে বেশি খাটে, কিন্তু প্রতিটা মা বাবার মনে রাখা উচিত আপনার সন্তান শুধু আপনার সন্তানই নয়, একসময় সে কারো স্বামী হবে, কারো বাবা হবে, আপনার শিক্ষার উপর অনেকাংশে নির্ভর করে সে স্বামী হিসেবে কেমন হবে। সারাজীবন এক গ্লাস পানি নিজে না ঢেলে খাওয়া ছেলে স্ত্রীর প্রতি সহযোগী হবে না এটাই স্বাভাবিক। অতি আদরে মানুষ করা গর্বের ব্যাপার না, আপনার অতি আদরের ননীর পুতুলের জন্য কোন মেয়ে কষ্ট করবে এটা মেনে নেওয়ার মতন না।

কিছুদিন আগে দেখলাম এক মেয়ে তার প্রেগন্যান্সি জার্নির বিশাল গল্প শেয়ার করেছেন। সেখানে দেখলাম মা বাবার অতি আদরে মানুষ হওয়া তার স্বামী কিভাবে তার প্রেগন্যান্সির পুরো সময়টাতে কোন রকম সাপোর্ট দেননি, এর কারণ তার স্বামী নাকি অনেক আদরে মানুষ হয়েছেন এবং সংসারের কোন কাজ পারেন না। এটা নিশ্চয়ই গর্বের কথা নয় যে সে বাড়ির কোন কাজ পারেনা, এমনকি পারলেও সেটাও গর্বের না বরং স্বাভাবিকই হওয়া উচিত।

আমার দেখা যেসব পুরুষ যারা ঘরের কাজ করেন, তারা প্রত্যেকে পারিবারিক শিক্ষা পেয়ে এমন। প্রতিটা মা বাবার কি উচিত না তাদের ছেলে সন্তানকে নিজের কাজ এবং ঘরের কাজ সর্ম্পকে সঠিক শিক্ষা দেওয়া? আর এজন্য বাবাকেও হেল্পফুল হতে হবে, ছোটবেলা থেকে বাবাকে শুধুমাত্র আরাম করে বসে খেতে দেখলে সন্তানের মনে এটা সেট করা কঠিন হবে যে তারও উচিত সংসারের কাজ করা এবং নিজের কাজ নিজে করা, যেহেতু বাচ্চারা অনুকরন প্রিয় তারা সবচেয়ে বেশী অনুকরন করে কিন্তু মা বাবাকেই, তাই সন্তানকে ননীর পুতুল না বানিয়ে একা একা ঘুরে দাঁড়াতে শেখান, একটা সময় পর স্কুল ব্যাগ একা গোছাতে শেখান, খেলা শেষে ব্যাটটি নিজে থেকে মুছতে দিন, আর এ ধরনের প্রতিটা কাছে উৎসাহ দিন এবং ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখান, কড়া শাসন নয় ভালোবাসা দিয়েও এসব শেখানো যায়, আপনার সন্তানের সুশিক্ষার দায়িত্ব কিন্তু সবচেয়ে প্রথমে আপনারই, সন্তানকে পুরুষ মানুষ হিসেবে নয় মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন এতে সে ভবিষ্যৎ এ আপনাদের প্রতিও দায়িত্বশীল হবে এবং তার ব্যক্তিগত জীবনের জন্য ও ভালো হবে।

 

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]