December 23, 2024
ফিচার ৩ফিটনেস ও সুস্থতা

নারীরও হতে পারে যৌন অক্ষমতা!

ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর ডেস্ক।। শুধু পুরুষ নয়, বহু নারী যৌনতা নিয়ে নানা সমস্যায় ভোগেন। এমনকি এসব সমস্যা জীবনভর তাদের ভোগায়, তাদের সঙ্গীকেও ভুগতে বাধ্য করে। এ ধরণের সমস্যা নারীর যেকোন বয়সে দেখা দিতে পারে। সমস্যাগুলো কোন একটি নির্দিষ্ট ইস্যুতে হতে পারে, আবার বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রেও একইসাথে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

যৌনতার ইচ্ছে ও যৌনতার প্রতি সাড়া দেবার আগ্রহহীনতা, অর্গাজম না হওয়া এবং যৌনমিলনের সময় যন্ত্রণা অনুভব করা- বহু নারীর জীবনে এই সমস্যাগুলো রয়েছে। এগুলো এমন এক একটি সমস্যা যা জীবনকে বিষময় করে তুলতে পারে, সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। এই সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে নারীর যৌন অক্ষমতা বা সেক্সুয়াল ডিসফাংশান হিসেবে।

যৌনতার অনেকগুলো জটিল বিষয় আছে। এরমধ্যে আছে শরীরের পারস্পরিক বোঝাপড়া, আদানপ্রদান, আবেগ, অভিজ্ঞতা, বিশ্বাস, জীবনযাপন ও সম্পর্ক। এই উপাদানগুলো যেকোন একটির অকার্যকারিতা যৌনইচ্ছা, যৌনউত্তেজনা ও যৌনতৃপ্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। শেষ পর্যন্ত তা যৌনজীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর এসব ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট চিকিৎসাই সমস্যার সমাধান করে না, দরকার হয় আরো অনেক কিছু। তাই সবার আগে বোঝা দরকার, নারীর যৌন অক্ষমতার লক্ষণগুলো কী, এবং এর কারণই বা কী!

লক্ষণ:

নানা রকম লক্ষণ দেয়া হল, এগুলো দেখে আগে মিলিয়ে নিন, কোন ধরণের সেক্সুয়াল ডিসফাংশানে ভুগছেন আপনি।

যৌনতার প্রতি আগ্রহ বা ইচ্ছে কমে যাওয়া: এটি সবচেয়ে কমন সমস্যা, যৌনতার ইচ্ছে চলে যাওয়া বা একদম কমে যাওয়া।

সেক্সুয়াল অ্যারাউসাল ডিসঅর্ডার: যৌনতার প্রতি হয়তো আপনার ইচ্ছেটা রয়েছে, কিন্তু আপনি যৌনমিলনের সময় যথেষ্ট জেগে উঠতে পারেন না, কিংবা উত্তেজিত বোধ করেন না। অথবা এসব ঘটলেও ইন্টারকোর্সের পুরো সময়ের কোন এক সময় সক্রিয় থাকার ইচ্ছে চলে যায় বা যথেষ্ট উত্তেজনা ধরে রাখতে পারেন না।

অর্গাজম না হওয়া: যথেষ্ট ইচ্ছে ও উত্তেজিত হবার পরও আপনার চরম পুলক বা অর্গাজম ঘটছে না।

ব্যাথা বা যন্ত্রণা: ইন্টারকোর্সের সময় আপনি ব্যাথা পাচ্ছেন।

 

কখন যাবেন চিকিৎসকের কাছে?

উপরের সমস্যাগুলোর কোন একটি যদি আপনাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে বা আপনার যৌথজীবনে প্রভাব ফেলে, তাহলে অবশ্যই একজন যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কারণ:

নারীর যৌনতাবিষয়ক সমস্যা ঘটে সাধারণত হরমোনের ওঠানামার কারণে। হতে পারে আপনি সন্তান ধারণ করেছেন বা সদ্য প্রসূতি, অথবা মেনোপজের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া বড় ধরণের শারীরিক অসুস্থতা যেমন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা রক্তচাপজনিত রোগের কারণেও এ ধরণের সমস্যা হতে পারে। বিষয়গুলো সবই একটির সাথে অপরটির সম্পর্ক আছে।

শারীরিক কারণ: এক বা একাধিক শারীরিক অসুস্থতা যেমন হৃদরোগ, কিডনি বিকল, রক্তচাপজনিত সমস্যা, ব্লাডারে সমস্যা ইত্যাদি নারীর যৌন অক্ষমতার কারণ হতে পারে। কিছু ওষুধের কারণেও এটি ঘটতে পারে। বিষন্নতারোধক ওষুধ, ব্লাড প্রেশার, অ্যান্টিহিস্টামিন বা কেমোথেরাপির কারণেও নারীর যৌনইচ্ছা কমে যেতে পারে, নাই হয়ে যেতে পারে এবং অর্গাজম না হতে পারে।

হরমোনাল কারণ: মেনোপজের পরে এস্ট্রোজেন হরমোনের প্রবাহ কমে যায়। যৌনতায় সম্পৃক্ত টিস্যুগুলোর কিছু পরিবর্তন আসে। এস্ট্রোজেনের স্তর কমে গেলে সেটি যৌনাঙ্গে রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দেয়। ফলে যৌনইচ্ছা ও উত্তেজনা কমে যাওয়া এবং অর্গাজম না হবার এটিও একটি কারণ হতে পারে। এদিকে নারী যদি দীর্ঘদিন সেক্সুয়ালি অ্যাকটিভ না থাকেন, তবে ভ্যাজাইনাল লাইনিং পাতলা হয়ে যায় এবং স্থিতিস্থাপকতা কমে যায়। এর ফলে যৌনমিলনের সময় যন্ত্রণা হতে পারে।

সন্তান জন্ম দেবার পর এবং বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়টিতে নারীর হরমোন লেভেল ওঠানামা করে। এটি ভ্যাজাইনার শুষ্কতার জন্য দায়ী এবং এটি যৌনইচ্ছার উপরও প্রভাব ফেলে।

মানসিক ও সামাজিক কারণ: বিষন্নতা কিংবা দুশ্চিন্তা, নারীর যৌন অক্ষমতার কারণ হতে পারে। দীর্ঘদিন বিষন্নতায় ভুগছেন, দুশ্চিন্তা করছেন অথচ চিকিৎসা নেননি, এর প্রভাব পড়তে পারে আপনার যৌনজীবনে। দীর্ঘদিন ধরে বয়ে বেড়াচ্ছেন এমন কোন টেনশন, স্ট্রেস এমনকি শৈশবে ঘটা যৌন নিপীড়নের ঘটনাও নারীর জীবনে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে, যার শেষ হয় যৌন অক্ষমতার মধ্যদিয়ে। আবার গর্ভধারণের দুশ্চিন্তা কিংবা চিন্তা, নতুন মা হবার স্ট্রেসও নারীর যৌন অক্ষমতা ঘটাতে পারে।

আবার সঙ্গীর সাথে যৌনসম্পর্ক বা সম্পর্কের অন্য কোন ইস্যু নিয়ে সমস্যা যদি দীর্ঘদিন ধরে চলে, সেটিও নারীর যৌনইচ্ছা ও অর্গাজমে প্রভাব রাখে। এমনকি নারীর শরীর নিয়ে সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিও নারীর যৌনতার ইচ্ছা কমিয়ে দিতে পারে।

রিস্ক ফ্যাক্টরস:

এবার মাথায় রাখুন কোন্ বিষয়গুলো আপনার যৌন অক্ষমতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে-

১. বিষন্নতা ও ‍দুশ্চিন্তা

২. হৃদরোগ ও রক্তচাপজনিত অসুখ

৩. স্নায়ুতন্ত্রের অসুখ

৪. স্ত্রীরোগ

৫. কিছু ওষুধ, যেমন বিষন্নতারোধী অথবা ব্লাডপ্রেশার নিরাময়ের ওষুধ খাওয়া

৬. আবেগীয় অথবা মানসিক চাপ, বিশেষ করে সঙ্গীর সাথে

৭. যৌননিপীড়নের ইতিহাস

 

[মায়ো ক্লিনিকের প্রবন্ধ অবলম্বনে]