সতী
ফারজানা নীলা।।
প্রবল জ্বরের ভেতর ভুল বকে যাচ্ছে তপতী। যেন মদ খাওয়া কোনও মাতাল। এমন প্রবল প্রলাপ সে যেদিন চরমভাবে মাতাল হয়েছিল সেদিনও বলে নি। তার জীবনের দ্বিতীয় পান আসরে সে মাত্রারিক্ত মাতাল হয়ে যায়। স্থানটি ছিল কক্সবাজার। ছিল এক বন্ধুর বাড়ি। তারা চারজন বন্ধু মিলে গিয়েছিল প্রথমবার সমুদ্র বেড়াতে। প্রথম সমুদ্র দর্শন সাথে প্রথমবার সব বন্ধু মিলে পানের আসর। উত্তেজনায় চারজনের মধ্যে তপতীই সবচেয়ে বেশি গিলে ফেলে।
এরপর সে আকাশ পাতাল এক করে উড়ে বেড়াচ্ছিল ঘরময়। তাকে ধরে রাখতে পারে নি কেউ জোর করে বা বকে বা আদর করে বা ঠাট্টা করে। সে হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি দিচ্ছিল যেন বিলাপ করছে। অথচ আনন্দের বন্যায় তার সর্বাঙ্গ ভিজে যাচ্ছিল, সে দৃশ্য কেউ দেখতে পায় নি। চোখের সামনে সে দেখছে আধো অন্ধকার আধো আলো। আধো জাগরণ আধো ঘুম। বলে যাচ্ছে রাজ্যের কথা। কী কথা কেন কথা কিসের কথা কেউ জানে না বোঝেও না। কিন্তু ভেতরে তার কথার লিচু বাগান হয়েছিল যেন। একনাগাড়ে এত কথা বলতে তাকে কেউ দেখে নি কোনোদিন। মুখচোরা কথা বলতে না জানা অতি নগণ্য কেউ ছিল সবার মাঝে। সেদিন সে উজাড় করে দিচ্ছিল যেন নিজেকে।
এরপর শরীর গোলাতে শুরু করে। স্থির হয়ে বসে থাকা দায় হয়ে যায়। সে প্রলাপ বকে, সে মারা যাচ্ছে। সে এখনই মারা যাবে। আর বাঁচবে না সে। বন্ধুরা তাকে বোঝায়, সে বুঝ মানে না। সে নির্বোধের মত বলতেই থাকে সে এখনই লাশ হয়ে যাবে।
প্রচণ্ড মাথা ব্যথায় যখন মাথাটাই কেটে ফেলে দিতে চাইছিল সে, তখন দুজন বন্ধু তার তাকে ধরে বাথরুমে নিয়ে যায় গলায় আঙ্গুল দিয়ে বমি করাতে। তপতী ভয় পাচ্ছিল। ভয় পেয়েই বমি করে দেয়। এরপর পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ঘুমটা তার চোখে নেমে আসে। সে মরে না কিন্তু বেঁচে গিয়ে ঘুমিয়ে থাকে বন্ধুর বিছানায়।
আজ, সেদিনের মত তপতী বলতে থাকে, সে মরে যাবে, সে লাশ হয়ে যাবে এখনই। অথচ আজ সে মাতাল নয়। আজ সে অসুস্থ , শারীরিক ও মানসিক জ্বরে সে বিষাক্ত হয়ে আছে।
তপতীর ঘুম ভাঙ্গে ভোরে। এক নরম তুলতুলে, আওয়াজ-বেমানান, চোখ না খোলা শুভ্র ভোরে। তার জ্বর নেমে যায় শেষ রাতে। পর্দা সরানো জানালা দিয়ে সে ধূসর আকাশকে কমলা হতে দেখে। দেখতে দেখতে আবারো ঘুম পায় তপতীর। সে পাশ ফিরে তার স্বামীকে দেখে। দেখতেই থাকে। মানুষটা হালকা নাক ডাকে ঘুমের ঘোরে। প্রকাণ্ড স্বাস্থ্য দিন দিন আরও বাড়ছে। মানুষটার সাথে তার তিন বছরের বাস। হাস্যউজ্জল চঞ্চল প্রাণবন্ত একটা মানুষ। শুধু…
শুধু ভাবতে গিয়ে তপতীর দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে যায়। সে আর ভাবতে চায় না। সে ঘুমুতে চায়। সে যতক্ষণ ঘুমে থাকে ততক্ষণ সুখে থাকে। তৃপ্ত থাকে। ঘুম ভাঙতেই জ্বালা শুরু হয়। সর্বাঙ্গে জ্বালা। বিরক্তিকর অসহ্যকর জ্বালা।
রুবেল বের হয়ে যায় অফিসের জন্য। তপতীর জ্বর আছে কিনা জানতে চায় কিন্তু ইদানীং সে তপতীকে এড়িয়ে চলে। তপতীও বুঝতে পারে রুবেল তার সামনে আসতে চায় না। এখন সে রাত করে ফেরে। শক্রুবারেও বিভিন্ন বাহানায় বের হয়ে যায়। তপতী কিছু বলে না। বলতে চায়ও না। বলতে চেয়েছিল অনেকবার। রুবেল শোনে নি। সেই না শুনতে চাওয়া আজ তাদের মধ্যে চুম্বকীয় বিকর্ষণ তৈরি করেছে।
তপতী আজও অফিসে যাবে না ঠিক করে। শাশুড়ি রুমে উঁকি দেয়।
তিনিও কি বুঝতে পেরেছেন? ইদানিং কি একটু বেশি যত্ন নিচ্ছেন না তপতীর?
আসলেই কি বেশি ? নাকি সত্যি এমন যত্ন তিনি নিতেই পারেন!
বিকেলের দিকে তপতীর শরীর বেশ ভাল লাগায় সে একটু বেড়িয়ে আসতে চায়। রেডি হয় বিশাল আয়নার সামনে। এই আয়নাটা তার ভীষণ প্রিয়। বিয়ের দিন প্রথম এই আয়না দেখে সে পুলকিত হয়েছিল। পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখা যায় স্পষ্ট। সব খুঁত চোখে পড়ে। সব দাগ চোখে পড়ে। সব বাক দেখা যায়। সব উচ্চতা বুঝা যায়। সব কোমলতা স্পর্শ করা যায়।
কালো সিল্কের শাড়ি গায়ে জড়ানোর সময় তপতীর ইচ্ছে করে শরীরে হাত বুলায়। তার কোমর ঘিরে শাড়ির যে পাড় লেগে আছে তাকে তার পরম আপন মনে হয়। তার নাভি বরাবর নিচে যে কুচিগুলো গুজে দিয়েছে তাদের মনে হয় তার সই। যে আঁচল বুক ঢেকে কাঁধ নেমে পিঠে ঢলে পড়ে সে আঁচল যেন জানে তার জীবনের চরম গোপনীয়তা। তার সকল দীর্ঘশ্বাসের নীরব সাক্ষী।
তপতী নিজেকে দেখে। গভীরভাবে দেখে। আয়নায় দাঁড়ালেই তার নিজেকে দেখতে খুব ইচ্ছে করে। দেখতে দেখতে সে ভেতরে ভেতরে ফুলতে থাকে। জ্বলতে শুরু করে। রাগে ফুসতে শুরু করে। এই রাগ কার উপর সে জানে না। সে অজানাটাই তাকে কষ্ট দেয় সবচেয়ে বেশি।
বের হতে গিয়ে দরজায় গিয়ে তপতী শুনতে পায় তার শাশুড়ি ফোনে বলছে,
“সবই কপাল আপা। এত বছরেও কিছু হইল না। মেয়ে তো আনছিলাম সুন্দর দেখেই। লাভ হইল না কিছু। এখন কী আর করার। মানি নিতে হবে আপা। বৌ মানুষদের মেনে নেওয়া ছাড়া আর কি উপায় বলেন!”
তপতীর বুকটা ছ্যাঁত করে উঠে। “মেনে নিতে হবে” আরও?
কতদিন? তিন বছর গেলো মাত্র। আরও কি ত্রিশ বছর?
তপতীর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। সে প্রায় দৌঁড়ে বের হয়ে যায়।
টিএসসির চায়ের দোকানে সে এককাপ রঙ চা নিয়ে জাহেদের জন্য অপেক্ষা করে। অফিস শেষ করে আসতে আসতে জাহেদের দেরি হচ্ছে। তপতী এলোচুলে চায়ে চুমুক দিচ্ছে আর আশেপাশে মশগুল তরুণ তরুণীদের সমাবেশ দেখছে। ঠিক এমনই ছিল তার জীবন এক সময়। ঠিক এমন প্রাণময় উচ্ছল সজীব জাগ্রত।
ঐ যে মেয়েটা ফতুয়া আর জিন্স পরে কাঁধে পাটের ব্যাগ ঝুলিয়ে, চা হাতে নিয়ে পাশে বসা ছেলে বন্ধুটার কাঁধে ঢলে পড়ছে হাসির দমকে ঠিক সেই ছিল তপতী।
জাহেদের সাথে তার সম্পর্ক বিশুদ্ধ বন্ধুত্বের। অথচ ক্যাম্পাস জুড়ে সবাই ভাবত তারা জুটি। সেই কক্সবাজারে সে জাহেদের সাথে শুয়েছে, এমন কত রসালো কাহিনী শুনেছে তারা।
রসালো কাহিনীও চলেছে, চলেছে জাহেদের অন্যদের নিয়ে রকমারি প্রেম।
“তপতী না?”
তপতী মুখ তুলে দেখেই চিনে ফেলে, সুমি। জাঁদরেল ছাত্রনেত্রী। এখনো রাজনীতি করে যাচ্ছে। ক্ষমতায় যারা আছে তাদের সুমি কী যেন হয়, ভুলে গেছে তপতী।
“সুমি, কী খবর তোর? এখানে?” তপতীর শান্ত ভদ্র জবাব।
সুমি পাশে বসতে বসতে বলল “আমাকে তো প্রায়ই আসতে হয়, পিচ্চি পিচ্চি পোলাপানদের রাজনীতি বুঝাতে। তুই এখানে কী করিস? চাকরি নাই?”
আছে। আজ যাই নি।
তো জামাই কেমন আছে?
তপতীর শান্ত জবাব, ভাল আছে।
বাহ! আছিস মজায়। চাকরি বাকরিও ভাল, জামাই ভাল। আরামে তো তোরা থাকিস। আমাদের তো মরণ। আজ এখানে তো কাল ওখানে। রোদে পুড়ে দেখ গায়ের রঙ পাতিলের তলা হয়ে গেছে।
সুমি পুড়ে যাওয়া হাত তপতীর চোখের সামনে মেলে ধরে।
তপতী হেসে কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু থেমে যায়। সুমির দিকে তাকাতেই সুমির কান বরাবর গলায় একটা কালশিটে দাগ দেখতে পায়। এই দাগে তপতীর চোখ গেঁথে যায়। গেঁথে গিয়ে ভাবতে থাকে, সুমির বিয়ে হয় নি তাতে কী। সে তো ভোগ করছে যা তার এখন এই সময়ে এই বয়সে ভোগ করার কথা। সে রোদে পুড়ে ছাই হচ্ছে তাতে কী? সে শুষে নিচ্ছে যা তার এখন পান করার কথা। তার মুখে চামড়ায় নেই লাবণ্য? তাতে কী? সেখানে দেখা দিচ্ছে স্বর্গ সুখের চিহ্ন। তার পোশাকে নেই শ্রী? তাতে কী? তার উপর সুখ মধু ঢেলে নেমে পড়ে।
আর বিপরীতে তপতী? থাকে এসির হাওয়ার তলে। শরীরের বাকে বাকে কমনীয়তা, রূপে ত্বকে লাবণ্য চুইয়ে চুইয়ে পড়ে। পোশাক থেকে ভেসে আসে আন্তর্জাতিক সৌরভ। তাতে কী? তাতে কি সে এখনো জানতে পেরেছে সুখ কাকে বলে? জানতে পেরেছে ওই কালশিটে দাগের সুখ কেমন? নখের আঁচড়ের সুখ কেমন? জানতে পেরেছে শরীর থেকে মধু নামলে কেমন লাগে? বা মধু ঢাললে কেমন বোধ হয়?
ভার্জিন বলতে যা বুঝায় তাই ছিল তপতী বিয়ের সময়। প্রেম করা হয়ে উঠে নি। তাই বাবা মার পছন্দের ছেলেকে মানা করার কোনও কারণ পায় নি। স্বেচ্ছায় খুশি মনে বিয়ে করেছিল।
বিয়ের পর সময় যায়। দুজনের প্রথম, দুজনের অজানা, দুজনের ভয়, দুজনের লজ্জা বলে হয়ত কেউ কারো খুব কাছে যাওয়ার সাহস করছিল না। এমনটাই ভেবে যাচ্ছিল বিয়ের প্রথম ছয় মাস তপতী। এরপর নিজেই লাজ ভাঙে। নিজেই কাছে যায়। কাছে নেয়। কাছে আসেও। কিন্তু শেষটা হয় না। রুবেল জাগ্রত হয় না। তবুও তপতী এটাকে লজ্জাই মনে করেছিল। কিন্তু ভেতরের ভয়টা সে নিজে উচ্চারণও করতে চাইত না।
শেষমেশ রুবেল জাগ্রত হয়। তবে শরীরে না, আওয়াজে। বলে ফেলে, তুমি এসব ছাড়া কিছু বুঝো না?
তপতী হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিল রবেলের দিকে।
কী উত্তর দেবে সে এর? কী উত্তর দেওয়া যায়? সে বহুদিন এর উত্তর খোঁজে। পায় না।
মাস যায়। যেতেই থাকে। রুবেল মাঝে মাঝে একটু কাছে আসে, এরপর নির্ঘুম রাত পার করে তপতী।
বহু চেষ্টায় তপতী ডাক্তার দেখানোর কথা বলতে পারে রুবেলকে। রুবেল এক ঝটকায় উঠে যায় সেখান থেকে। এরপরও বহুবার বহু রকম চেষ্টায় তপতী ডাক্তার দেখাতে চেয়েছে রুবেলকে। ব্যর্থ হয় প্রতিবার।
ব্যর্থ হতে হতে সে এখন নির্জীব। তার আর জোর নেই কিছু বলার, কিছু করার। সে শুধু জানতে চায়, কার কাছে গেলে সে মুক্তি পাবে। রেহাই পাবে।
জাহেদ আসে সন্ধ্যার মুখে। তপতীর মুখ কালো দেখে সে জানতে চায় অনেক কিছু। কিন্তু তপতী নির্বাক বসে থাকে।
রাত গড়ালে জাহেদ তপতী রিকশায় ওঠে। রিকশায় উঠতেই তপতীর কি হয় কে জানে। সে তর তর করে সব বলে দেয় জাহেদকে।
বলেই যেন তপতীর মনে হয় বুকে আটকে থাকা একটা শ্বাস বের হয়ে গেলো।
জাহেদ কিছুক্ষণ ভাবল।
ভেবে বলল “ভাবিস না। তুই তো পচে যাস নি। চাইলেই প্রেম করতে পারিস। ক্ষতি কী? এগুলো এখন ডালভাত। ডিভোর্স টিভোর্স এসব হাঙ্গামার মধ্যে যাওয়ার দরকার কী। রুবেল তো খারাপ না। ওই একটু দাঁড়ায় না আর কি। হেহে। সেটা তুই বাইরে পুষিয়ে নে।”
বলে জাহেদ সিগারেটে লম্বা টান দিল। তপতী বিস্ফোরিত চোখে জাহেদের দিকে তাকায়।
জাহেদ সেই দৃষ্টি দেখে বলে “কী? এমন হা করে তাকাচ্ছিস কেন? এখন সতীসাধ্বীর যুগ নেই। স্বামী ঈশ্বর মনে করে বসে থাকার কিছু নেই। স্বামী পারে না। তুমি বাইরে যাও। ব্যাস। তুই তো ইচ্ছে করে যাচ্ছিস না। স্বামী পারে না বলেই যাচ্ছিস। তাইলে আর ক্ষতি কি!”
একটা স্পিড ব্রেকের ধাক্কায় তপতীর হুশ ফেরে। এই ধাক্কাটার প্রয়োজন ছিল। সে ধাক্কা খেয়েছে। খেয়ে এখন জেগেছে।
বাসার সামনে নামল তপতী। জাহেদের দিকে একবার ঘৃণাভরা চোখে তাকালো। জাহেদ হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল “কী হলো? এমন করে তাকাচ্ছিস কেন?”
তপতী শান্ত গলায় বলল “কিছু না। তোকে চিনলাম আজ।”
জাহেদ কিছু বলতে চাচ্ছিল, তপতী সে সুযোগ না দিয়ে বাসায় ঢুকে গেলো।
রুবেল সোফায় বসে টিভি দেখছে। তপতীকে দেখে বলল “অসুস্থ শরীর নিয়ে এত বাইরে যাওয়ার কী আছে। একদিন রেস্ট করলে তো পারো।”
রেস্ট করেছি। তপতীর জবাব।
সেও সোফায় বসে রুবেলের দিকে সোজা তাকায়।
“রুবেল কথা ছিল তোমার সাথে।”
রুবেল একটু চকিত হয়। সে হয়ত বুঝতে পারে তপতী কী বলবে। তাই সে বলে “ক্ষুধা লাগছে আগে খেয়ে নেই।”
তপতী তীক্ষ্ণ স্বরে বলে, “তোমাকে যদি এখন খেতে না দেই তুমি কি করবে?”
রুবেল অবাক হয়ে তপতীর দিকে চায়। “খেতে দেবে না মানে?”
তপতী সেই তীক্ষ্ণ আর শান্ত স্বরে বলে “দিনের পর দিন তোমার যদি ক্ষুধা লাগে আর তোমার সামনে খাবার সাজিয়ে রাখা সত্ত্বেও যদি তুমি খেতে না পারো, তবে তুমি কী করবে?”
রুবেল কিছু বুঝে উঠতে পারে না। “কী বলছ এসব তুমি?”
“জবাব দাও রুবেল।”
বিরক্ত হয়ে রুবেল বলে, “আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে। এমন হলে ডাক্তার দেখাবো”
তপতী শব্দ করে শ্বাস ফেলে।
রুবেল ভ্রু কুচকে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকে।
তপতী উঠে নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে বলে, “তুমি ডাক্তার দেখাবে রুবেল। যদি না দেখাও আমাদের আর একসাথে থাকা সম্ভব না।”
বহুক্ষণ নীরবে কেটে যায়। পাশের রুম থেকে তপতীর শাশুড়িও শোনে সব। এবার তিনি আর থাকতে না পেরে ছেলের কাছে যান। ছেলেকে সম্ভবত ডাক্তার দেখানোর জন্য জোরাজোরি করে। রুবেলের চিৎকার শোনা যাচ্ছে।
তপতীর আর ভাল লাগে না। সে একটু বাঁচতে চায়, মুক্ত হয়ে থাকতে চায়।
সে তার ব্যাগ গোছায়। মা ছেলের সামনে দিয়ে যখন সে বের হয়ে যাচ্ছিল, দুজনেই বিস্ফোরিত চোখে বৌয়ের দিকে তাকিয়ে ছিল।
“আমি যাচ্ছি। যেদিন ডাক্তার দেখাবে সেদিন আমাকে জানিও, এর আগে আমাকে ফোন কোরো না।”