কেন স্বাধীন দেশে এই নারকীয় ঘটনার জন্ম হবে?
ক্যামেলিয়া আলম।। চারপাশে কী হচ্ছে? কী চলছে এসব! একে দম্ভ বলব নাকি মানসিক বিকৃতি বলব, ভাষা হারিয়ে ফেলছি। বারেবারে লেখা থেমে যাচ্ছে। প্রবল আক্রোশে দুনিয়াটা পুরো উল্টে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।
৪ অক্টোবর রাতে হঠাৎ এক খবরে চোখ আটকে গেল। ভিডিও লিংকও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটা দেখতে পারলাম না পুরোটা। এক নারী, হ্যাঁ, এই বাংলাদেশেরই এক নারী বিবস্ত্র হয়ে আছে এক আলো আধারের ঘরে। কখনও প্রবলবেগে বিছানার চাদর টেনে ধরছে, কখনও এক টুকরো কাপড় বুকের ওপরে টেনে নগ্নতা ঢাকবার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। ভিডিওতে কিছু যুবকের আনাগোনা টের পাওয়া যাচ্ছিলো। কেউ একজন ভিডিও করছে, আরেকজন নারীটিকে টেনে শুইয়ে গলায় পা তুলে দিচ্ছে। নাহ, এর চেয়ে বেশি দেখা গেল না। দেখতে পারলাম না।
ঘটনাটি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের। নারীটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে কিনা এখনও জানি না। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশের পর সে আর কী কী ফেইস করবে কে জানে? এখন তার বসতভিটায় তালা। মামলা করেনি। এমন এক সমাজে মামলা করার সাহস কার থাকে? তাহলে জানা গেল কী করে? ঘটনার ৩২ দিন পর গৃহবধুুকে নির্যাতনের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায়। ভিডিওটি ভাইরাল হলে টনক নড়ে স্থানীয় প্রশাসনের।
আমি যখন লিখছি, এই পর্যন্ত, এর বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। হয়তো এ লেখা প্রকাশ হতে হতে বাকিদেরও ধরা হবে।
ভিকটিম মুখ খুুলে জনসমক্ষে বলার সাহসটুকু পেলেই কেবল সব ঘটনা জানতে পারবো। আমি শুধু জানতে চাই, কেন হচ্ছে এসব? কেন এক স্বাধীন দেশে এই নারকীয় ঘটনার জন্ম হবে? নোয়াখালির মতো ধর্মপরায়ণ এলাকায় এত বড় ঘটনা কী করে ঘটে? এই নারীর চিৎকার কেউই শুনতে পায়নি? কিছুুতেই বিশ্বাস করব না তা। আমি নিজে বহু ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। একজন নারী যখন বিপদে পড়ে, চিৎকার করে, সেই চিৎকারকে পাশ কাটায় সব ‘ফ্যামিলি ম্যাটার’ বলে। এই ‘তাদের ম্যাটার’ মনে করা জাতিরাই শতভাগ সমাজের দূষণের জন্য দায়ী। আমরা ধীরে ধীরে পাশ কাটানো জাতি হয়ে যাচ্ছি কী করে? আর কতটা অবক্ষয়ে এই সমাজ ধাক্কা দিয়ে জঞ্জাল সরাবে? মনে হচ্ছে না মধ্যযুগে ফিরে যাচ্ছি আমরা? যখন কেবল মুক্তচিন্তার অপরাধে নারীদের লুসিফার আখ্যা দিয়ে পুড়িয়ে মারা হতো। এই কী সভ্যতা?
নারীরা এখনও এক সাথে দাঁড়াবেন না? নাকি আমি ভাই নারীবাদী হতে চাই না – বলে টিভির রিমোট চেপে অনুন্নত, শিক্ষাহীন, বরের অত্যাচার সওয়া নারীর ভুসভুসে কান্নার সিরিয়াল দেখে নিজের চোখ ভাসাবেন? আর সব দোষ নারীরই বলে অত্যাচারীকে এভাবেই প্রশ্রয় দিয়ে যাবেন? সরকারের বড় ভূমিকা থাকে নিয়ন্ত্রণের। কিন্তু সমাজ যদি সহায়ক না থাকে, অত্যাচারিতের প্রতি সংবেদনশীল না থাকে, সরকার একা কী করবে?
তবু বলবো, সরকার বৈধ কর্তৃত্ববলে জোড়ালো পদক্ষেপ নিতে পারে যতটা, তা ব্যক্তি পর্যায়ে সম্ভব না। করোনাকালীন সময়ে নারী নির্যাতন ভয়াবহ আকারে বেড়েছে। ধীরে ধীরে বিভৎসতার দিকে চলে যাচ্ছে তা। সরকারের কঠোর আইনি পদক্ষেপের বাস্তবায়ন ছাড়া এই সামাজিক বিশৃংখলা রোধ করা যাবে না। আর একবার যদি দেশের আইনি কাঠামো ভেঙ্গে পড়ে কিছুই আর নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।
নোয়াখালিতে ঘটে যাওয়া বর্বর ঘটনায় নারীটির পাশে এবার সবাই থাকি। হ্যাঁ জানি, এইসব অহরহ ঘটছে। তবু আমাদের গা কাঁপুক, অত্যাচারীর বিপক্ষে হাতের মুষ্টি শক্ত হোক।
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত কলাম লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]