একেই বুঝি ধর্ষণ বলে!
তানজিয়া রহমান।। বয়স হলো আমার ছয় যুগ। মানে ৭২। বয়স তো আর কম না। আর কয়দিন বাঁঁচবো। ঘরেই থাকি। টিভি দেখি, পত্রিকা পড়ি। এইভাবে জীবনের শেষ সময় পার করছি। চারিদিকে হৈ হৈ পরেছিল কিছুদিন আগে, নয় মাসের শিশু নাকি ধর্ষণ হইছে। আমার বিশ্বাস হয়নি। বাচ্চাটা খালি ঘরে ছিল। কেমনে কি ব্যাথা পেয়েছে হয়তো ‘ওই জায়গায়’। আবার কিছুদিন পর শুনলাম, পাঁচ বছরের কম দুই শিশুকে বিস্কিটের লোভ দেখিয়ে ধর্ষণ। এইটা কি সম্ভব? এত ছোট বাচ্চাগুলাকে কীভাবে রেপ করবে? তাদের দেখে কি যৌন আকর্ষণ হবে? দুইটা ছোট পরী।
সাভারে ১১ বছরের এক মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। রাস্তায় খেলছিল মেয়েটা তারপর ধর্ষণ হয়েছে। এই বয়সে বুক পানি উঠা শুরু করে। এই সময় কেউ মেয়েদের বাইরে খেলতে দেয়?
সেভেনে পড়া মেয়েকে কোচিং এ আটকে রেখে ধর্ষণ করছে আর ছবিও তুলছে। সেই ছবি নেটে ছড়ায়ে দেবে বলে আরো কয়েকবার ধর্ষণ করছে। পরে মেয়ে প্রেগন্যান্ট হলে জানাজানি হইছে। আমার কি মনে হয় জানেন? ওই মেয়ে ইচ্ছা করেই শারীরিক সম্পর্ক করছে। নাহলে কয়েকবার করতে দেয় নাকি? পরে প্রেগন্যান্ট হয়ে গেছে দেখে স্যারের উপর দোষ দিছে।
রাজশাহীতে ১৫ বছরের এক মেয়ে ঘাস কাটতে যেয়ে ধর্ষণের শিকার হইছে। তাও আবার গির্জার ফাদার দ্বারা টানা তিন দিন।
আবার এক হুজুর ৮ জন শিশুকে ধর্ষণ করেছেন। করে আবার কোরান শরীফে হাত রেখে শপথ করিয়েছেন যেন এইসব কাউকে না বলে। এইগুলা সব ভন্ডের দল। হুজুর, ফাদার এরা হয়েছেন যার যার ধর্মের শান্তি প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু এইরকম কিছু অসভ্য হুজুর, ফাদারের জন্য সব হুজুর, ফাদার গালি খায়।
ধামরাইয়ে বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে এক কলেজ ছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। কেন বন্ধুদের সাথে বেড়াতে যেতে হবে? বিয়ের পর স্বামীর সাথে যাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার পথে সন্ধ্যা কুর্মিটোলা বাসস্ট্যান্ডের কাছে ধর্ষণের শিকার হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উঠে ছেলে মেয়েগুলা বেপরোয়া হয়ে যায়। রাতে মেয়ের একা বের হওয়া কি দরকার। তাও আবার বন্ধুর বাসায় যাওয়ার জন্য।
এমসি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে নিজেদের গাড়িতে বসে গল্প করছিলো স্বামী স্ত্রী। কয়েকজন যুবক তাদের গাড়িটি ঘিরে ধরে তাদের নামিয়ে স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যায়। স্বামীকে আটকে রাখে। ঘণ্টাখানেক পর স্ত্রীকে বিধ্বস্ত অবস্থায় পান স্বামী। স্ত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। এত জন খারাপ লোকের সাথে কি আর স্বামী পারবে?
নোয়াখালীতে বিবস্ত্র করে এক নারীকে নির্যাতন করছে। যোনীতে হাত আর লাঠি দিচ্ছে। এটাও ধর্ষণ। আমি এই নির্যাতনের ঘোর বিরোধী। কিন্তু ওই মহিলা সম্ভব ১৭০ জন খারাপ লোক, ৩৩ জন হুজুর, ২২ জন কিশোর, ৩৪ জন মুরুব্বিকে জেনা কাজ করতে সুযোগ করে দিয়েছে। আপনার ভাই, চাচা আমার ভাই, দুলাভাই ঐ মেশিন মাগনা পেলে যাতায়াত করবে নিশ্চয়ই। ওই মহিলার নির্যাতনকারীদের শাস্তি দাবি করছি। সেই সাথে ওই মহিলারও। হুম!
পঞ্চাশোর্ধ নারী ধর্ষণের শিকার। বয়স হয়ে গেছে। কেমনে চলে কি জানি। ঢেকে ঢুকে চলা উচিত। বুড়ো বয়সে উদাম ঘুরলে ছোট ছোট ছেলেপেলের ভুল হতেই পারে। আর আশকারা না দিলে মাঝবয়েসী মহিলার গায়ে হাত দেয়ার সাহস হবে নাকি?
জীবনে ধর্ষণের ঘটনা কম শুনলাম না। কি জানি কেমনে এত ধর্ষণ হয়। শিশু ধর্ষণ, কিশোরী ধর্ষণ, গৃহবধূ ধর্ষণ, পঞ্চাশোর্ধ নারী ধর্ষণ, আদিবাসী ধর্ষণ আরো কত ঘটনা শুনি। ধর্ষণ বাদেও নাকি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় কত নারী। আজকাল পত্রিকায় এইসব খবর বেশি ছাপে। এত নির্যাতন, এত ধর্ষণ, এত গণধর্ষণের ঘটনা কি ঘটে?
যাই অজু করে আসি। এশার নামাজটা পরতে হবে। এই কে কে তোমরা?…… এই কই নিয়ে যাও আমাকে?……. ছাড়…………
একেই বুঝি ধর্ষণ বলে! গণধর্ষণ! আমার মত বৃদ্ধাকেও ধর্ষণ করেছে! এরাই তাহলে ধর্ষক। ধর্ষক দেখতে তো মানুষের মতোই ছিল। শুধু আচরণ ছিল হিংস্র। এত দিনের ধর্ষণের খবরগুলো যে পড়তাম সেগুলো তবে সত্যি। এরাই করে তাহলে…. ধর্ষক তো বয়স দেখে না, দেখে না পোশাকও। এ জীবনে যে ধর্ষণের ঘটনাগুলো শুনেছি সবগুলো এমন বেদনার হয়? এটা ভুলতে পারবো কোনোদিন? বাবা, ভাই, চাচা, ফুপা, মামা, খালু, দাদা, নানা, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ড্রাইভার, চোর কার কাছে নারী নিরাপদ বলবেন কেউ আমাকে? আমাকে যে ধর্ষণ করেছে সে কি কারো ছেলে না? সে কি কারো ভাই, স্বামী, বাবা না? তার কাছে তার পরিবার, আত্মীয়, সহকর্মী কেউ কি নিরাপদ? সকল বয়সের নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। নারীরা কি নিরাপদে জীবন যাপন করতে পারবে নাকি ধর্ষকের জন্য যোনী পেতে বসে থাকবে?
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]