November 2, 2024
ফিচার ৩মুক্তমত

চাচা’র ঘিনঘিনে চোখ- খুবলে দিতে ইচ্ছে হয়!

ইসমত আরা চৈতী।। বেড়ে ওঠা মফস্বলে। থাকি যৌথ পরিবারে। ছোটবেলায় প্রচন্ড দুরন্ত ছিলাম। সেই দুরন্ত আমি হঠাৎ হোচট খেলাম টিনএইজে এসে। আমার চাচা নামের কিম্ভুত প্রাণি যেদিন থেকে আমার সদ্য বাড়ন্ত শরীরের দিকে খুব লোভ নিয়ে তাকাতে শুরু করলেন, ঠিক সেদিন থেকেই।

থমকে গেলাম। গায়ে ওড়না উঠলো, দুদ্দার ছোটাছুটি কমে গেলো। নানান রকম ঘটনাচক্রে পরিবারে বিচ্ছিন্নতা বাড়তে লাগলো। সুযোগ পেলে কী করতো জানি না। সেই কমবয়সী আমি’টার মুখে তেজ আর শিরদাঁড়া শক্ত ছিল বিধায় হয়তো সুযোগ কাজে লাগানোর দুঃসাহস করে নি কখনো।

তারপর স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হলো। নিজের ডানায় ভর দিয়ে ওড়ার স্বপ্ন নিয়ে যে শহরে পা রেখেছিলাম, সেই তিলোত্তমা ঢাকা আমাকে পদে পদে শিখিয়েছে, এই শহর পুরুষের। তাই প্রতি সপ্তাহে লোকাল বাসের ভিড় ঠেলে হাজারটা লোকের লকলকে চোখ দেখে যখন বাড়ি ফিরি, চাচা বলে যাকে ডাকতে হয়, তার চোখের নোংরামিতে তখন আর তেমন কিছু যেতো আসতো না।

নতুন করে গায়ে জ্বালা ধরেছে আটমাস হলো। মহামারীতে হল বন্ধ। রোজ আমার পরম পূজনীয় চাচার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আরামের টি শার্ট ছেড়ে দিলাম। জর্জেট ওড়নার বদলে সুতিতে মুড়িয়ে থাকার চেষ্টা করলাম। সুতি ওড়নার ফাঁকফোকড়েও কোথাও যেন তার চোখ বিচিত্র কিছু খুঁজতে থাকে। আমি যন্ত্রের মতো কাজ শেষ করে নিজের ঘরে ছুটি। সেই ছোট্টবেলায় অজানা ভয় হতো ওই চোখ দুটোর জন্য। এখন হয় আক্রোশ। খুবলে দিতে ইচ্ছে হয়। তীব্র অপমানে ঝলসে দিতে ইচ্ছে হয়। বাধা হয়ে দাঁড়ায় সম্পর্ক, সামাজিকতা।

সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া হতবাক আমি’টার কাউকে বলার ছিল না সেই ঘিনঘিনে  নোংরা চোখের কথা। আজও নেই। কারণ আমার হাতে প্রমাণ নেই, মেডিক্যাল রিপোর্ট নেই। নেহাত চোখের চাউনি। সুযোগের অভাবে হাজার হাজার চাচা মামা খালুরা ঘিনঘিনে চোখ নিয়ে ঘুরে বেড়ায় এই নোংরা পৃথিবীতে। এর কোনো প্রতিকার নেই। আমারও কোনো অভিযোগ নেই। ঘরে বাইরে কোথাও এখনও  ধর্ষিত হই নি, এই তো ঢের!

 

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]