পুরুষেরও হয় মেনোপজ: জানুন, বুঝুন, যত্ন নিন
ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর ডেস্ক।। মেনোপজ শব্দটা শুধু নারীর জন্য তোলা ছিল। মানে আমরা যা জানতাম আর কি। কিন্তু মেনোপজ শুধু মেয়েদের নয়। হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। শুধু নারীরই মেনোপজ হয়, এটি ঠিক নয়। মেনোপজ হয় পুরুষেরও। এটা আমরা অনেকেই জানি না।
সাধারণত ৪৫-৫০ বছর বয়সী কোনও মহিলার টানা এক বছর ঋতুস্রাব না হলে ধরে নেয়া হয় তার মেনোপজ হয়েছে। ডিম্বাশয় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীর কিছু শারীরিক পরিবর্তন হয়। আসে মানসিক পরিবর্তনও। এটা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয় আজকাল। তবে জেনে রাখা দরকার যে শুধু নারীই নন, ৩০ বছরের পর থেকে প্রতি বছর পুরুষের শরীরেও টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা ১ শতাংশ করে কমতে থাকে। এক সময় পুরুষদেরও জীবনে আসে মেনোপজ। আর পুরুষের এই মেনোপজকে অ্যান্ড্রোপজ বলা হয়।
অ্যান্ড্রোপজ আসলে কী?
পুরুষের শারীরিক পুরুষালি বৈশিষ্ঠ্যের জন্য জন্য দায়ী হরমোন টেস্টোস্টেরন, এর মাত্রা সময়ের সাথে ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং এই পরিবর্তন কয়েক বছর ধরে চলে। তবে মেনোপজের মতো অ্যান্ড্রোপজ শুধুই বয়স বাড়ার সাথেই ঘটে, তা নয়। স্ট্রেস, অবসাদ, ডায়াবেটিস, ক্লান্তি, দুর্বলতাসহ নানারকম যৌন সমস্যার কারণেও টেস্টোস্টেরন উৎপাদন কমে যেতে পারে। ফলে অ্যান্ড্রোপজ হয়।
আবার মেনোপজের তুলনায় অ্যান্ড্রোপজের গতি ধীর। মেনোপজে ডিম্বাশয় সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। এদিকে পুরুষের দেহে শুক্রাশয় সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয় না। অল্প মাত্রায় হলেও টেস্টোস্টেরন তৈরি হয়। সুস্থ পুরুষের ৮০ বছর বয়সেও শুক্রাণু তৈরি হতে পারে। তবে ৫০ থেকে ৭০ বছরের পুরুষের শুক্রাণুর কার্যকারিতায় পরিবর্তন আসে।
লক্ষণ
অ্যান্ড্রোপজের কারণে পুরুষের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। পুরুষের স্বাভাবিক যৌনাচরণের পরিবর্তন আসে। অনেকের অণ্ডকোষ আকৃতিতে ছোট হয়ে যায় এবং যৌন দুর্বলতা দেখা দেয়। শরীরে চর্বির পরিমাণ বেড়ে যায়, পেশির পরিমাণ কমে যায়। হাড়ের ঘনত্ব কমে । অনেক পুরুষের ব্যথাযুক্ত স্তন বৃদ্ধি ঘটে অনেকের মাথার চুল ওে লোম পড়ে যায়। হটফ্ল্যাশ হতে পারে। অবসাদ আসে, উদ্দীপনার অভাব ঘটে। ইনসমনিয়াও দেখা দিতে পারে। স্মৃতিশক্তি কমে যায়। মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে। বিষন্নতাও আসতে পারে।
টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি হঠাৎ করে টের পাওয়া যায় না। ফলে অ্যান্ড্রোপজ কখন হলো, তা অনেক পুরুষই বুঝতে পারেন না। টেস্টোস্টেরন হরমোনের অভাবে পুরুষের যৌন চাহিদা, মানসিক শক্তি ইত্যাদি ক্রমশ পরিবর্তিত হতে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৩০ বছর বয়সের পর থেকে এর মাত্রা প্রতিবছর ১% করে কমে; ৭০ বছর বয়স্ক পুরুষের শরীরে এর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেক কমে যায়। কারো কারো আরও কমতে পারে। একজন পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বয়স বাড়ার জন্য, নাকি অন্য কোনো রোগের জন্য কমেছে তা বোঝার প্রয়োজন।
টেস্টোস্টেরন কমে যাওয়ার পরিনত বয়সে অ্যান্ড্রোপজ হওয়া পুরুষের কোনো অসুখ নয়। এটি জীবনের একটি পরিবর্তিত পর্যায় মাত্র। এটাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়া প্রয়োজন। টেস্টোস্টেরন নতুন করে তৈরি হবে, এমন সম্ভাবনা নেই। তাই জীবনের স্বাভাবিক ধাপ হিসেবে এ সময়টিতে নিজের যত্ন নিয়ে নিজের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত। দরকারে চিকিৎসকের সরাসরি কথা বলতে পারেন। স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার, ব্যায়াম, প্রয়োজনীয় ঘুম ও বিশ্রাম খুব কাজে দেবে। অতিরিক্ত পরিশ্রম এ সময় বিষন্নতা বাড়াবে, মেজাজ খিটখিটে করবে। তাই নিজেকে সময় দিন। আনন্দে থাকুন। হুট করে কোনো ভেষজ চিকিৎসা নেবেন না। বরং অ্যান্ড্রোপজ সম্পর্কে জানুন ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।