November 22, 2024
ফিচার ২মুক্তমত

পুরুষতন্ত্র নাকি রাক্ষসতন্ত্র?

প্রিথুলা মারজান।। আমার মাঝেমাঝেই গা রি রি করে উঠে, ভয়ে কেঁপে উঠি, এ আমি কি হয়ে উঠতেছি? আমার শরীরে বোধ হয় অন্য কেউ বাস করে, যাকে আমার বাবা মনে হয়!

আমাদের সমাজে বাবা মানে দেখানো হয় রোজগার করে আনা, পরিবারের লোকদের ভরণপোষণের জন্য খেটে মরা একজন মহান ব্যাক্তি হিসেবে। তার বিরুদ্ধে কোনো কথাই বলা যায় না কারণ তার পক্ষে অনেক সিম্প্যাথি আছে।

আমার কোনো বোন নেই। আম্মু যখনই রুটি বানানোর কথা ভাবতো তখনই আমি তার প্রধান সহযোগী হয়ে উঠতাম। আম্মু রুটি বানাইতো আর আমি সেঁকতাম। বাবা দেখলেই চড়া গলায় আম্মুকে গালি দিয়ে উঠতো, ‘‘নিজে তো মাগ* ছেলেটাকেও মাগ* বানাইতে চায়।’’

কোনো কোনোদিন খাবার শেষে প্লেট ধুতে গেলে বাবা বলে উঠতো ‘‘ওগুলা মেয়েদের কাজ।’’ রুম ঝাট দিতে গেলে বলতো, ‘‘ছেলেদের কাজ বাইরে গিয়ে খেলাধুলা করা, ঘরে বসে মেয়েলীপনা করা নয়।’’

আমি একটু চুপচাপ ধরণের এবং খুব নিম্নস্বরে কথা বলি যাকে ক্লোজ বুক বলা যায়। বাবার বন্ধুরা আমাকে নিয়ে নাকি আলোচনা করে, তারা বলে আমার ভিতর নাকি মেয়েলীভাব আছে। বাবা আমাকে চিৎকার করে কথা বলতে বলে, এমনকি এক হাতের মধ্যে থাকলেও। আমি বুঝে উঠতে পারতাম না এগুলা কী চলে!

আমি নিজেকে আবিষ্কার করছি ধীরে ধীরে। এখন আমার মেজাজাটা সবসময় চড়া থাকে। এখন আর আমি আম্মুর রুটি বানানোতে সাহায্য তো দূরের কথা তার সাথে মানুষের মতো করে কথা পর্যন্ত বলি না। আমার কণ্ঠস্বরকে মেশিনের মত মনে হয়। নাই কোনো মিষ্টতা, নাই কোনো সম্মানের ধাচ।

এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজ। কী শেখায় এ সমাজ?

সারাদিন কাজ করে এসে রাতে স্ত্রীর উপর হামলা, ছেলেকে এক চাপড় আর মেয়েকে এক ঝাড়ি এবং ভোরে উঠে স্ত্রীর মা তুলে গালি দেওয়ার শিক্ষা দেয় এ সমাজ!

পিতৃতান্ত্রিক সমাজে সন্তান হয়ে পিতৃতান্ত্রিক বংশানুক্রমিক শুকর হয়ে ওঠা যে সারাদিনই শুধু রাক্ষস হয়ে ওঠার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়।

 

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]