ভুল ভালোবাসার ফুল নয়, আত্মপলব্ধিই সেরা উপহার
রুখসানা কাঁকন।। ভ্যালেন্টাইনস ডে কে ঘিরে নানা রকম রোমান্টিক স্বপ্ন অনেকের মনে ঘুরে বেড়াচ্ছে যেখানে প্রাত্যহিক জীবন যাপনে অনেক সামান্য প্রত্যাশা পূরন হয় না। আমরা আশা করি অন্যের কাছ থেকে ভালোবাসা পাবার, কিন্তু একবারও কি ভেবেছি আমরা আসলে নিজের কাছে কি কোনোদিন ভালোবাসা খুঁজেছি? নিজেকে ভালবেসেছি?
ঘরে দিনের পর দিন অবহেলা অবজ্ঞা দিয়ে ফেসবুকে এক তোড়া গোলাপ হাতে ভ্যালেন্টাইন ফটো পোস্ট করার ক্রেডিটটা কোথায় ?
ভুল ভালোবাসা ভুল সম্পর্কে থেকে ভ্যলেন্টাইন অভিনয় করার আগে একবার নিজেকে ভালোবাসতে শিখুন। আজকে এই লাল গোলাপের দিনে নিজেকে নিয়ে ভাবুন। আপনি কী চান আর কী পেয়েছেন? আপনার যোগ্যতা ভালোবাসার কোন স্থানে রাখতে পারে আপনাকে? ভুল ভালোবাসার কাছ থেকে ফুল না নিয়ে নিজেকে নিয়ে কি এমন করে ভাবা যায় না ?
নিজের সম্পর্ক নিয়ে ভাবুন: ভেবে দেখতে শুরু করুন আপনার ভালোবাসা কি সুস্থ? আপনি যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন সেখান থেকে আপনি সূর্য না কালো মেঘ দেখতে পান? যেটা আপনার ভুল সেটা কি ঠিক করার সম্ভব? যেটা আপনার সঙ্গীর ভুল সেটা কি তার ঠিক করা সম্ভব?
ভালোবাসাতে জোর থাকলে আলো জ্বলে ওঠে। কুপির মৃদু আলোতে ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষা নিভে যায় ক্রমশ।
নিজেকে ক্ষমা করেন: ভুলের হিসাব করুন। মনকে জিজ্ঞেস করুন এই যে এত যন্ত্রনা আর বেদনা তার কাছ থেকে আমি কী শিখলাম? ফিনিক্স পাখির মৃত্যু হয় না। ঝড়ের পরে মানুষ নতুন ঘর তোলে, চরের বালি জেগে ওঠে আবার। ভ্যালেন্টাইন আবার আসবে, নতুন করে ভালবাসবে।
জীবনে সুর জাগান: এই সুরটি উপলদ্ধি সবাই করতে পারে না। নিজের ভিতরের সে বাঁশির ডাকটি শুনুন। লাল গোলাপের দিনে মনের ভিতর যে বাঁশিই বাজে সেই বাঁশির সুরে যে আসে সে আপনার কতটা ভ্যালেন্টাইন তা বুঝে নিন। ২৫ বছর একসাথে থেকেও আপনার ভিতরের সেই সুর কি আপনি জাগিয়েছেন? নিজের মন আর শরীরের যত্ন করুন। হতাশার যে কালি চোখের নিচে পড়েছে তার দিকে তাকান। ভালোবাসার অবহেলায় নিজেকে না রেখে নিজের ফিটনেস, মানসিক আর শারীরিক যত্ন করুন।
সঙ্গীহীন ভ্যালেন্টাইনস ডে যাদের, তারা আজকে ঘরটা গুছান, সুন্দর করে সাজুন। আয়নাকে বলুন- বলো তো আয়না আয়না কে বেশি সুন্দর! নিজের সাথে এই যে কথা বলা, নিজেকে এই যে ভালোবাসা তা হাজার বেলুন আর গোলাপ ফুলেও আসে না। কারণ নিজেকে ভালোবাসা আত্মপলব্ধি সঙ্গীর সাথে ভালোবাসার সহাবস্থান শেখায়।
নিজেকে একটা ভালবাসার চিঠি লিখুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন কেন আপনার একলা জীবন আপনাকে ভাবায়? কেন এক সাথে থেকেও আপনার ভালবাসার অভাব। নিজের মনের শক্তি আর প্রাচুর্যকে নিয়ে নিজেকে নিজে লিখুন। এটাই আপনার ভ্যালেন্টাইনস ডে’র উপহার হতে পারে। নিজের ভিতর যে দুশ্চিন্তা তা নিজের আত্মউপলদ্ধির বাণী দূর করতে পারে। কেন এমন? কে আমি? কি চাই ? কীভাবে চাই?- লিখুন। নিজেকে জানুন।
একটা বই খুলে নিন, কফির মগে প্রেম মেশান। ভ্যালেনটাইনস ডে তে আপনার সেলফ লাভের যত্ন করুন। নিজেকে যে ভালোবাসে না সে অন্যকে ভালবাসবে কেমন করে ? সন্তান, প্রেম, স্বামী, প্রেমিক এসব সুখ বয়ে আনে না যদি না আপনি নিজেকে ভালোবাসেন। নিজের ভিতরের শক্তি আপনাকে শেখায় সম্পর্ক বুননে। Women empowerment কথাটার পুরোটাই সেল্ফ লাভ থেকে তৈরি হয়েছে। নিজের কাছে নিজের শক্তি অজানা যদি থাকে তবে ভালোবাসার ঘর তৈরি হবে কীভাবে! নিজের একটা জব, শিক্ষা- এর মাঝে যেমন একটা মেয়ের শক্তি বা সাধনার প্রকাশ হয়, ঠিক তেমনি করেই ভালোবাসার ঘর তৈরিতে নিজের ভিতরের বাইরের চেহারা গুছিয়ে আনতে হয়। সংসার সুখী হয় নিজের আত্মবিশ্বাস আর আত্মোপলব্ধির মধ্যে দিয়ে। ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসুন সবার আগে নিজেকে।
ভালবাসা দিবসের শুভেচ্ছা সবাইকে।