নতুন সময়ে উৎসব যেন সার্বজনীন হয়ে ওঠে
শারমিন শামস্।। নতুন বছরের শুরুতে কি আমরা প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির হিসেব কষি? আমরা কি নতুন করে স্বপ্ন দেখি? আমরা কি পুরোনো স্বপ্নগুলোকেই নতুনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য নতুন উদ্যমে জেগে উঠি? নতুন বছর কি আমাদের দেহে মনে চিন্তায় আবেগে নতুন শক্তি সঞ্চার করে?
হ্যাঁ, করে। আজো নতুন বছর আমাদের ভেতরে প্রাণ সঞ্চার করে। আমাদের জাগায়। নতুন স্বপ্নে ভাসায়। আমরা তাই গভীর বিষাদে নিমজ্জিত হতে হতেও শেষ মুহুর্তে ভেসে উঠি। নতুন ভোরের আলো গায়ে মাখি। খড়কুটো আঁকড়ে ধরি। বলি, আমি চোখ মেললুম আকাশে। জ্বলে উঠলো আলো পূবে পশ্চিমে, গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম, সুন্দর। সুন্দর হলো সে…
নতুন বছরে সবকিছুই হয়তো সুন্দর লাগে। ভাল লাগে। এই তীব্র হতাশার কালে, কোভিড মহামারির অনিশ্চয়তা আর মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে আমাদের জীবনে তবু পয়লা বৈশাখ আসে।
হয়তো এই বৈখাখে মঙ্গল শোভাযাত্রায় পা মেলানো নেই, ছায়ানটের গানে গলা মেলানো নেই। তপ্ত রৌদ্রে বসে পান্তা খাওয়া নেই। সাদা শাড়িতে লাল টিপ চুঁড়ো খোপা নেই। পাঞ্জাবী নেই। আলপনা নেই। তবু নতুন বছর তো এসেছে! এত এত বিষাদ আর বিপন্নতাকে অগ্রাহ্য করে নতুন বছর ঠিকই উপস্থিত নিয়ম করে। নিয়মকে এড়ানোর সাধ্য তার নেই।
লক ডাউন চলছে। কোটি কোটি শ্রমজীবী মানুষ চরম অনিশ্চয়তায় বসে রয়েছে ঘরে। সকালের শুকনো রুটি চিবুতে চিবুতে হয়তো ভাবছে দুপুরে কী খাবেন! পান্তা ইলিশের লাক্সারি করবার ভাগ্য তাদের নেই। ইলিশের দাম দু হাজার টাকার উপরে। গরীবের পাতে এমনিতেও ইলিশ পড়ে না।
যে অমানিশার কাল আমরা পাড়ি দিচ্ছি, সেই কাল আর কোনো কালের মতো নয়। এটি আমাদের মেনে নিতে হবে। উৎসব আনন্দকে যে ভঙ্গিতে এতদিন উদযাপন করেছি, তাতে পরিবর্তন এসেছে, আরো আসবে। এসব বদলের অনেকটাই মন খারাপ করা। তবে হয়তো তা সাময়িক। কারণ করোনা কাল একদিন সহনীয় হবে। আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবো। পয়লা বৈশাখের ভোরে আবার বেরিয়ে পড়বো মঙ্গল শোভাযাত্রার সাথে। সাদা শাড়ি পাঞ্জাবিতে হুল্লোর করবো। একতারা দোতারা বাজিয়ে গান গাইবো। নাচবো। পান্তা খাবো। কিন্তু সেই সময়, সেই পরিবর্তিত কালে আমরা যেন একটু খানি বদলে নিতে পারি নিজেকেও। এই উৎসবটিকে যেন সকলে মিলে সার্বজনীন করে তুলতে পারি। সব শ্রেণির মানুষের উৎসব যেন হয় পয়লা বৈশাখ। ইলিশের টুকরো আর দৈ মিষ্টির বরাদ্দ যেন সবার কাছে পৌঁছায় সেটি যেন নিশ্চিত হয়। রাষ্ট্র যেন তার দায়িত্ব পালন করতে পারে যথাযথভাবে। পাশাপাশি আমরাও যেন মনুষ্যত্ব আর মানবিকতার চর্চা করতে পারি। সবাই মিলে ভাগ বটোয়ারা করে উপভোগ করতে শিখি যেন। আমরা যেন একা একা ভোগ না করি। বিলাস না করি। যাকে যে যতটা পারি, ততটা দেবার মন যেন আমাদের তৈরি হয়। শুকনো ক্ষুধার্ত মুখে যারা হাত পেতে দাঁড়ায় সামনে, তাদের দুই হাত ভ’রে যেন ভালবাসা তুলে দিতে পারি।
সবার মঙ্গল হোক। শুভ নববর্ষ। শুভ হোক ১৪২৮।