November 2, 2024
ফিচার ৩মুক্তমত

ভার্জিনিটি কখনো নারীর চরিত্রের সূচক হতে পারে না

তৌকির ইসলাম।। সমাজের পুরুষতান্ত্রিক ও পক্ষপাতমূলক নৈতিকতার বড় উদাহরণ হচ্ছে কুমারিত্ব দিয়ে নারীর তথাকথিত চরিত্রের মূল্যায়ন করা। অথচ শুধু নারীই নয়, যেকোনো মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় তার শরীরের ব্যাপারে স্বাধীন। ব্যক্তি হিসেবে নিজের শরীর নিয়ে যা খুশি করার অধিকার তার রয়েছে। কিন্তু উপমহাদেশীয় সমাজ ব্যবস্থায় নারীর শরীরের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে এই ভার্জিনিটি ধারণার মধ্য দিয়ে।

একজন নারী ভালো কিংবা মন্দ, শিক্ষিত নাকি অল্প শিক্ষিত, এসব কোন কিছুই আমলে নেওয়া হয় না। সমাজ নারীর ভাল বা মন্দ বিচার করে ফেলে ভার্জিনিটি দিয়ে। পুরো সমাজ এবং পরিবার ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে এভাবেই। এবং পুরো ব্যবস্থাই পুরুষতান্ত্রিক। বিয়ের ক্ষেত্রে নারীর চরিত্রের মাপকাঠিও তার ভার্জিনিটি। কিন্তু মেয়ের পরিবার ছেলের ভার্জিনিটি নিয়ে কোনো প্রশ্নই করছে না। এমন কি সমাজ এবং পরিবারের এক বদ্ধমূল ধারণাই হচ্ছে পুরুষের আবার ভার্জিনিটি কী! অর্থাৎ পুরুষের ভার্জিনিটি কনসেপ্টটাই সমাজে অনুপস্থিত। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে সেটাই প্রকট আকারে আছে।

ভার্জিনিটির চেয়েও বড় ইস্যু মনুষ্যবোধ। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে ভার্জিনিটির আড়ালে সব ঢাকা পড়ে যায়। যে কোন ক্ষেত্রেই নারীর চরিত্র বিচারের মানদণ্ড হয়ে যায় এই একটি মাত্র ইস্যু। কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে একটু ভেবে দেখুন। সমাজে যদি একজন পুরুষ একাধিক নারীর সাথে সম্পর্ক রাখে তাকে গর্বের সাথে বলা হয় প্লেবয়। আর নারীর ক্ষেত্রে কোন কিছুর ব্যত্যয় ঘটলেই আঘাত হানা হয় তার চরিত্রের উপর শুধুমাত্র ভার্জিনিটির উপর ভিত্তি করে।

একটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে নারীর ভার্জিনিটিকে যেভাবে বিচার করা হয় সেভাবে পুরুষকে বিচার করলে পৃথিবীতে ২৫ শতাংশ ভার্জিন পুরুষ পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। মানুষ হিসেবে একজন নারীর চরিত্রের সূচক হতে পারে তার মানবিক গুণাবলী। কিন্তু তার পরিবর্তে যখন নারীকে শুধুমাত্র একটি ইস্যুতে বিবেচনা করা হয় এবং বিবেচ্য বিষয় নির্ধারিত হয় শুধুমাত্র ব্যক্তি নারী বলে সেই সমাজ ব্যবস্থায় নৈতিকতার বাণী কৌতুক ছাড়া আর কিছু নয়।

যদি নারীর চরিত্রের মানদণ্ড হয় ভার্জিনিটি তবে পুরুষের চরিত্রের মানদণ্ডও হওয়া উচিত ভার্জিনিটি। একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে এই রকম একটি অসম সামাজিক ব্যবস্থা নারীর প্রতি চরম অবিচার। ধরে নেয়া যাক পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার মানদণ্ডে একজন নারী ভার্জিন। কিন্তু তার পার্টনার ভার্জিন নয় এবং সে একথা জেনেও বলতে পারছে না। এবং নীরবে এই মানসিক যন্ত্রণা সে ভোগ করছে। এবার একজন পুরুষ হিসেবে আপনি চিন্তা করে দেখুন আপনার পার্টনার ভার্জিন নয় এটা জেনেও আপনি কি চুপ থাকতেন কিনা! পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে আপনি তা মেনে নিয়ে সম্পর্ক চলমান রাখতে পারতেন কিনা! আপনার পার্টনারের প্রতি সম্মান রাখতে পারতেন কিনা! সবগুলো প্রশ্নের উত্তর হবে ‘না’। একজন নারী সব জেনে বুঝেও হয়তো চুপ থাকেন। কারণ, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় সে জানে সম্পর্কের ইতি টানলে পার্টনারের নয় তার চরিত্র তথা নির্দিষ্টভাবে তার ভার্জিনিটি নিয়ে প্রশ্ন করা হবে।

ভার্জিনিটি শুধু নারী নয় কোন মানুষের চরিত্রের সূচক হতে পারে না। মানুষের চরিত্রের সূচক মানবিক গুণাবলী অথবা অন্য কিছু। আর যদি ভার্জিনিটি মানতেই হয় তবে নারী-পুরুষ সবার জন্যই মানুন। শ্লীলতাহানি শব্দটি শুধু নারী নয়, পুরুষের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করুন।

একটি জৈবিক বিষয় দিয়ে যখন সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে বিচার করা হয় তখন সেই সমাজে সমতা থাকে না। অসম সমাজে অসঙ্গতি স্বাভাবিক।

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]