উৎসবের আনন্দ অশ্রুতে ভাসিয়ে দিলো যারা, তাদের বিচার করুন
ধর্ষণ শক্তির প্রদর্শনী। যৌনতার কোনো বিষয়ই না এটা। যৌনকর্ম করলেই যৌনতা হয় না। যৌনতাকে অপরাধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার নামই ধর্ষণ।
ধর্ষণ ঘটে, কারণ পুরুষ নারীর উপর শক্তি প্রদর্শন করতে চায়। নারীর উপর জোর করার মধ্যদিয়ে পুরুষের শক্তি ও ক্ষমতার প্রকাশ ও প্রমাণ রাখতে চায়। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ পুরুষকে ক্ষমতাবান করেছে। পুরুষ সেই ক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যমে নিজেকে বারবার শ্রেষ্ঠ হিসেবে দেখতে চায়। সেই সাথে নারীকে তার অধীন, অবনত ও সেবারত দেখার ভেতর দিয়ে পুরুষ পিতৃতান্ত্রিক ক্ষমতাকে বারবার চেটে চুষে লেহন করে আনন্দ পেতে ভালবাসে। এই আনন্দ পুরুষতান্ত্রিক আনন্দ এবং বিবৃতির প্রকাশ। পুরুষতন্ত্র বিকৃত। পুরুষতন্ত্রে আক্রান্ত আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র, ধর্ম ও সমস্তকিছু।
রাষ্ট্র পুরুষতন্ত্রকে সমর্থন করে বলেই পুরুষতন্ত্র টিকে আছে। রাষ্ট্র পুরুষতন্ত্রকে সমর্থন করে, কারণ ধর্মও পুরুষতান্ত্রিক। রাষ্ট্র ধর্মের এই পুরুষতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে না। ভয় পায়। পুরুষতন্ত্র একটা নেটওয়ার্কের মতো। সমাজ, ধর্ম, রাষ্ট্র- সমস্তকিছুই পিতৃতন্ত্রের সুতো দিয়ে বাধা, এদের পাইপলাইন একের সাথে অন্যেকে যুক্ত করে রেখেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর নির্যাতন, বিশেষ করে নারীদের উপর অত্যাচার সেই পাইপ লাইন থেকে নির্গত একটি ঘটনা, যা ঘটবারই ছিল। ঘটবেই। ঘটা বন্ধ হবে না। যতদিন পর্যন্ত না পিতৃতন্ত্রের বিনাশ হবে। পুরুষতন্ত্র নিপাত যাবে।
বাংলাদেশ ধর্মনিরেপক্ষ রাষ্ট্র বলে নিজেকে দাবি করে। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাসহ বহু বছর ধরে যা ঘটে চলেছে, তার কোনোটাই এই ধর্মনিরপেক্ষতার প্রমাণ দিতে পারেনি। ব্যর্থ হয়েছে। আমরা মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারিনি। আমরা ধর্মের নামে ব্যবসা ও রাজনীতি জিইয়ে রাখতে দিয়েছি। আমরা ভিন্নমতকে রক্তাত্ত হাতে দমন করতে চেয়েছি।
এই অসভ্য উন্মত্ততার শেষ হবে কবে? এই মৌলবাদ ও হিংসার বিনাশ হবে কবে? এর উপযুক্ত জবাব রাষ্ট্রকে দিতে হবে। বিচার করতে হবে। যারা মানুষের উৎসবের আনন্দকে অশ্রুতে ভাসিয়ে দিলো, যতক্ষণ তাদের বিচার না হবে এই দেশের একজন নাগরিক হিসেবে ততক্ষণ আমরা নিজেকে ধিক্কার জানিয়ে যাবো, যেতে হবে!