সবুজের কাছাকাছি থাকলে কম হয় পিএমএস উপসর্গ
পিএমএস বা প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিন্ড্রোম বেশিরভাগ নারীর জীবনে ঘটে যাওয়া এমন একটি ঘটনা যাকে অনেক ক্ষেত্রে নারী নিজেও খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। খিটখিটে লাগা, মেজাজ অকারণে খারাপ থাকা, মানসিক বিষাদ, ডিপ্রেশন, মানসিক চাপ, শরীরের বিভিন্ন উপসর্গকে অনেক নারীই অবহেলা করেন। যারা এ নিয়ে কথা বলতে চান, তাদেরকেও চুপ করিয়ে দেয়া হয় এই বলে যে এসব রোগ এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।
অথচ পিএমএস থেকে অনেক নারী পরবর্তীতে ভয়াবহ রোগের শিকার হতে পারেন। তাই পিএমএস সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। পিএমএস উপসর্গ কীভাবে কমানো যায় এবং এক্ষেত্রে সবুজ পরিবেশ কীভাবে ভূমিকা রাখে তা নিয়ে “দ্য গার্ডিয়ান”-এ সম্প্রতি প্রকাশিত হয় একটি প্রবন্ধ, ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরের পাঠকদের জন্য সেটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন ফাতেমা তুজ জোহরা ।।
সবুজের কাছাকাছি থাকলে বা বাস করলে প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিন্ড্রোম বা পিএমএসের শারীরিক ও মানসিক উপসর্গ কমাতে পারে বলে গবেষকরা গবেষণায় পেয়েছেন।
নরওয়ে ও সুইডেনে বসবাসকারী ১৮ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ১০০০-এরও বেশি নারীর উপর প্রাথমিক গবেষণা চালানোর পর দেখা গেছে যে যারা যারা তাদের জীবনভর সবুজ জায়গার আশেপাশে বসবাস করেছেন তাদের মধ্যে পিএমএসের লক্ষণগুলি তুলনামূলক কম।
বার্সেলোনা ইন্সটিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথ এবং ইউনিভার্সিটি অফ বার্গেন-এর বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে যেসব নারীরা বেশি সবুজ জায়গার আশেপাশে থাকেন তাদের পিএমএস উপসর্গের পাশাপাশি উদ্বেগ, বিষন্নতা বা ডিপ্রেশন, অনিদ্রা, পেট ফুলে যাওয়া বা স্তনে চাকা বেঁধে যাওয়ার মত সমস্যা কম দেখা দেয়।
যদিও প্রজনন ক্ষমতার সময়কালে প্রায় শতকরা ২০ ভাগ নারীরই পিএমএস উপসর্গ থাকে, তবে সবুজ জায়গায় বাস করার সাথে পিএমএস এর উপসর্গের সম্পর্ক নিয়ে আগে তেমন কোনো গবেষণা হয়নি।
এনভায়রনমেন্টাল ইন্টারন্যাশনাল-এ প্রকাশিত এই সমীক্ষায় প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে শারীরিক সুস্থতা-অসুস্থতার সম্পর্ক প্রমাণ করা হয়েছে।
এই সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী নারীরা ছিলেন নরওয়ের বার্গেন, সুইডেনের গোথেনবার্গ, উমিয়া এবং উপস্লার অধিবাসী। তাদেরকে একটি প্রশ্নপত্র দেয়া হয়েছিলো যাতে খুব সাধারণ কিছু পিএমএস উপসর্গ যেমন বিরক্তি, উদ্বেগ, অকারণ কান্না, ডিপ্রেশন, অসংবেদনশীলতা, ঘুমের সমস্যা, পেট ফোলা, মাথা ব্যথা জাতীয় কোনো সমস্যা অনুভব করেছেন কি না সে বিষয়ে উল্লেখ ছিল।
এই গবেষণায় কোন জায়গাটিকে আসলে সবুজ জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা হবে তার জন্য নরমালাইজড ডিফারেন্স ভেজিটেশন ইনডেক্স ব্যবহার করা হয়েছে। এই গবেষণার লক্ষ্য ছিল নারীরা শহরে সবুজ জায়গার কাছাকাছি বসবাস করলে পিএমএস উপসর্গের উন্নতি হতে পারে। এমনকি পিএমএস যদি বায়ু দূষণ বা অন্য যে কোনো শারীরিক কারণেও হয় তবুও সবুজ প্রকৃতির কাছাকাছি থাকলে এই সমস্যার অনেকটাই উন্নতি হয়।
বার্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কাই ট্রিবনার এর মতে, “সবুজের সংস্পর্শে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বেশিরভাগ সমস্যারই সমাধান ঘটে। প্রকৃতির আশেপাশে থাকলে মানুষের উদ্বেগের মাত্রা ও মানসিক চাপ যেমন কমে, তেমন মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।”
ট্রিবনার আরো বলেন, “প্রকৃতির সবুজ শরীরে কর্টিসলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। অনেক সময় মানসিক চাপের ফলে শরীরে কর্টিসলের মাত্রা বেড়ে যায় এবং এর ফলে প্রজেস্টেরন নিঃসরণের মাত্রাও বেড়ে যায়। যার ফলে পিএমএস এর লক্ষণগুলি তীব্র আকারে প্রকাশ পেতে পারে।” এই গবেষণার আরেকটি দিক হল সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য কোন শর্তগুলি প্রয়োজনীয় তা এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে সবুজের সংস্পর্শে লম্বা সময় ধরে থাকলে নারীর শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বার্সেলোনা ইন্সটিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথ, আইএস গ্লোবালের এক গবেষক ও গবেষণা সমন্বয়কারী পেয়াম দাদভান্দ বলেন, “নির্দিষ্ট একটি সময়ে সবুজের কাছাকাছি থাকলে পিএমএস এর উপসর্গ বিষয়ে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ফলাফল পাওয়া যায় না। তাই আমরা দীর্ঘমেয়াদীভাবে সবুজ স্থানের কাছাকাছি থাকার ফলাফলকেই গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ দীর্ঘমেয়াদে যারা সবুজ স্থানের সংস্পর্শে বেশি থেকেছেন তাদের মধ্যে পিএমএস লক্ষণগুলি কম।”
আগের গবেষণা থেকে আমরা জেনেছি যে শারীরিক সুস্থতার উপর প্রকৃতির কতখানি প্রভাব রয়েছে তা নির্ভর করে বায়ু দূষণ কতোটা কম ও শরীরচর্চা কতখানি করা হচ্ছে তার উপর। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে এই বিষয়গুলির তেমন কোনো প্রভাব পিএমএস এর উপসর্গের উপর নেই।
দাদভান্দ বলেন, “শারীরিক সুস্থতার উপর প্রকৃতি ও সবুজের প্রভাব থাকা সত্ত্বেও অনেক শহরেই যথেষ্ট পরিমাণ সবুজ স্থান নেই। শহরের কর্মকর্তাদের সবার স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।”