November 2, 2024
ফিচার ৩ফিটনেস ও সুস্থতা

পিরিয়ডের সময় কী কী খাবেন আর কী কী খাবেন না?

ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর ডেস্ক।। মেয়ে মাত্রই জানেন পিরিয়ডের সময় কেমন বোধ হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে তেমন কোন সমস্যা না হলেও অনেকেই আছেন পিরিয়ডের সময় বিছানা থেকেও নামতে পারেন না। পেটে ব্যাথা, ক্র্যাম্পিং, বমি ভাব, মাথাব্যাথাসহ নানা উপসর্গ দেখা যায়।

আমাদের সুস্থ থাকা অনেকটাই নির্ভর করে খাদ্যাভ্যাসের উপর। পিরিয়ডের সময় শরীর থেকে যথেষ্ট পরিমানে রক্ত বেরিয়ে যাওয়ার জন্য এ সময় পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। আসুন দেখে নেই পিরিয়ডের সময় ক্র্যাম্পস, পেট ফোলা, ব্যাথা, মুড সুইং কমানোর জন্য কী খাবেন আর কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন।

পিরিয়ডের সময় যা যা খাবেন

১. স্যামন মাছ

এই মাছে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট গুণের অধিকারী। এটি ক্র্যাম্পিং দূর করতে সাহায্য করে। ওমেগা-৩ ছাড়াও স্যামনে আছে প্রোটিন ও ভিটামিন বি।

২. কলা

পিরিয়ডের কারণে অনেকের ডায়রিয়া হয়। এটি উপশমে কলা দারুণ উপকারি। কলায় থাকা পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং খাদ্যআঁশ অন্ত্রব্যবস্থা সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। মুডও ভালো রাখে এটি। এতে থাকা ম্যাগনেশিয়াম পেশি শিথিল করে ক্র্যাম্পিং দূর করতে সাহায্য করে।

৩. ডার্ক চকলেট

পিরিয়ডে মুড ভালো রাখতে সাহায্য করে ডার্ক চকলেট।

৪. ব্রকোলি

পিরিয়ডের সময় খুব ক্লান্ত লাগলে সেটি দূর করতে সাহায্য করবে ব্রকোলি। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন ও খাদ্যআঁশ যা শরীরকে পরিপুষ্ট করে, অন্ত্র সুস্থ রাখে ও পেটফাঁপা কমায়। পিরিয়ডের রক্তপাতের ফলে যে আয়রনের ঘাটতি হয়, তা পূরণে সাহায্য করে ব্রকোলি। একইসঙ্গে ব্রকোলিতে থাকা প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম পিএমএস বা প্রিমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোমের কষ্ট কমায়।

৫. কমলালেবু

পিরিয়ডের উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে কমলালেবু। এতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি উদ্বিগ্নতা ও বিষণ্ণতা কমায়। এছাড়াও কমলালেবুর খাদ্যআঁশ হজমের সমস্যা দূর করে। অস্বাস্থ্যকর মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার ইচ্ছাও কমায় মিষ্টি স্বাদের কমলা।

৬. তরমুজ, ফিগ ও পাম

ভিটামিনে ভরপুর এই ফলগুলো পেটফাঁপা ও ক্র্যাম্পিং দূর করতে সাহায্য করে। শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে অর্থাৎ পানিশূন্যতা রোধ করে। মুডও ভালো রাখে মিষ্টি এই ফলগুলো।

৭. লেবু

যেকোন লেবুজাতীয় ফলই মনকে তরতাজা করে ভালো বোধ করায়, ক্লান্তি দূর করে শক্তি এনে দেয়। এতে যেমন থাকে ভিটামিন তেমনি থাকে খাদ্যআঁশ। ফলে পেট ফাঁপা দূর করতেও সাহায্য করে। এছাড়াও লেবু প্রচন্ড রসালো হওয়ায় এর পুষ্টি উপাদান খুব সহজেই রক্ত মিশে যায়। শরবত করে, সালাদে বা অন্য খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন লেবু। তবে পিরিয়ডের সময় একবারে খুব বেশি লেবুজাতীয় খাবার খেলে পেটে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই পরিমাণে অল্প খান।

৮. ডিম

ডিম অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। ডিমের কুসুমে প্রচুর পরিমাণ আয়রন, ভিটামিন, প্রোটিন ও এসেনশিয়াল ফ্যাটি এসিড রয়েছে। ফলে পিরিয়ডের সময় ডিম খাওয়া ভালো। তবে অনেকের গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় পিরিয়ড চলাকালীন হার্ড বয়েলড বা অতিরিক্ত শক্ত করে সেদ্ধ করা ডিম খাবেন না।

৯. ক্যামোমাইল

ক্যামোমাইল চা শুধুমাত্র জরায়ুর সুস্থতায় কাজে লাগে তা না, এটি আমাদের স্নায়ুতন্ত্রও ভালো রাখে। বিষন্নতা, পিরিয়ডের সময় হওয়া ক্র্যাম্পস ও উদ্বিগ্নতা কমায়। সেই সঙ্গে ক্লান্তি দূর করে দ্রুত ঘুম আনতেও সহায়ক ক্যামোমাইল চা।

১০. মশলা

ধনে, মৌরি, দারুচিনি, জাফরান ইত্যাদি মসলাও পিএমএসের উপসর্গ কমাতে দারুণ উপকারি।

পিরিয়ড চলাকালীন এড়িয়ে চলবেন যেসব খাবার

পিরিয়ডের সময় আমাদের শরীর যেমন একদিকে হরমোনাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। আবার ওদিকে রক্ত ঝরতে থাকে। তাই এ সময়ে খাবারের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। খাদ্যআঁশ, প্রোটিন, ভিটামিন ইত্যাদিতে ভরা পুষ্টিকর খাবার খেলেও এসময় খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে কিছু খাবার।

১. প্রক্রিয়াজাত খাবার

প্রক্রিয়াজাত খাবার অর্থাৎ ক্যানে সংরক্ষিত খাবার, প্যাকেটজাত মাংস, সবজি, মাছ, দুধ ইত্যাদি। এসব খাবারে নানারকম রাসায়নিক থাকে যা পেট ফাঁপার জন্য দায়ী। এছাড়া প্রক্রিয়াজাত খাবারে লবণ ও চিনিও থাকে বেশি যা পিরিয়ড তো বটেই অন্য সময়েও শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

২. ক্যান্ডি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার

এসব খাবারে রিফাইন্ড চিনি থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। যতটা সম্ভব ঘরে তৈরি ও তাজা খাবার খান। কেক, বিস্কিট, পুডিং, নানারকম পিঠা, জ্যাম, জেলিসহ নানারকম ঘরে তৈরি খাবারেই মিটতে পারে স্ন্যাকসের চাহিদা।

৩. লবণ

যাই খান না কেন চেষ্টা করুন লবণ কম খেতে। এটি শরীরে অতিরিক্ত পানি ধরে রাখে। ফলে এ সময়ে পেটফাঁপা কমাতে লবণ কম খেতে চেষ্টা করুন।

৪. অ্যালকোহল

পিরিয়ডের সময় ভুলেও অ্যালকোহল পান করা যাবে না। পিরিয়ডের সময় শরীর থেকে রক্ত বেরিয়ে যাওয়ার কারণে রক্তচাপ কমে যেতে পারে তাই এ সময়ে অ্যালকোহল পান করা মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। এটি অনেকসময় রক্তপ্রবাহ বাড়িয়েও দিতে পারে।

৫. অতিরিক্ত ঝালযুক্ত খাবার

পিরিয়ড চলাকালীন অতিরিক্ত মশলা ও ঝাল দেওয়া খাবার এড়িয়ে চলা ভালো। কারণ অনেকেরই তীব্র ব্যাথা, প্রচুর রক্তপাত, অতিরিক্ত ক্লান্তির মত উপসর্গ দেখা যায়। স্পাইসি বা ঝাল খাবারে গ্যাস বা বদহজম দেখা দিতে পারে যা পেটফাঁপার লক্ষণ বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে বাসায় রান্না করা খাবারে কাঁচামরিচ বা অন্যান্য মশলার পরিমিত ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ এগুলোর প্রদাহ ও ক্যানসারনিরোধী গুণাগুণ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।