পুরুষ কেন ঠিক করবে কে সতী আর কে পারফেক্ট!
ইসরাত দেওয়ান মিম।। ‘আমার শরীর, আমার সিদ্ধান্ত’- বাক্যটি শুনলে মনে হয় এ যেন স্বাধীনচেতা আধুনিক অহংকারী কোন নারীর কথা। কিন্তু যদি যুক্তি দিয়ে ভাবি তবেই অনুধাবন করি যে এ সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত সব নারীর।
আমরা প্রায়ই বলি, মাথা যার যার,ব্যথা তার তার। শরীরের একটি অঙ্গ মাথা ব্যাথা হলে, তা ব্যাক্তিকেই বয়ে বেড়ানো লাগে। সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ শরীরের অধিকার যার, উচিত অনুচিত নির্ধারণ কেনই বা অন্য কোনো ব্যাক্তি বা সমাজ করবে? যে পুরুষ একজন নারীর শরীরে প্রতিমাসে রক্তক্ষরণের ভোগান্তি আন্দাজ করতে পারে না, যে পুরুষ নারীর প্রসব বেদনা শারীরিক বা মানসিকভাবে টের পায় না বা পাবার ইচ্ছাটুকুও যাদের মধ্যে নেই, সে পুরুষ কীভাবে নির্ধারণ করে দেয় কোন নারী পারফেক্ট বা কোন নারী সতী!
যে সমাজে মাসিকের রক্ত ভুলে জামায় লাগলেও নারীকে অপরাধী চোখে দেখা হয়, যে সমাজে বয়ঃসন্ধি, সেক্স, শারীরিক চাহিদা নিয়ে কথা বলা আজও ট্যাবু, আর সে কারণেই প্রতিদিন এত এত নারী, শিশু, নাবালিকা দেশের আনাচে কানাচে ধর্ষণের শিকার যা আমরা প্রতিদিন টিভি, নিউজপেপার, অনলাইনে প্রকাশিত হতে দেখেছি, সে সমাজ কীভাবে নির্ধারণ করে দেয় যে কতটুকু পোশাক পরিধান করলে একজন নারী সুশীল আর সমাজের দাড়িপাল্লা মোতাবেক না মিললেই ‘অশ্লীল’!
এ অন্ধ সমাজের গুটি কয়েক মুর্খ মানুষের কাছে মেয়েদের শরীর কিংবা পোশাক একজন মেয়ের চরিত্র কিংবা পেশা নির্ধারণের নূন্যতম বাহানা মাত্র।
একজন নারী সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টিগুলোর অন্যতম। নারী তার নিজের শিক্ষা, শক্তি ও আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান। আমরা তাদের কয়েক টুকরো কাপড় কিংবা শারীরিক মাপ দিয়ে পরিমাপ কেন করি?
নারী মোটা হোক, কালো হোক, ফর্সা হোক, হোক বেঁটে, হোক শ্যামবর্ণ, হোক পাতলা, অতিকায় লম্বা, কিংবা প্রতিবন্ধী; আসুন আমরা তাদের নারী হিসেবে আগে সম্মান করতে শিখি। নারীর কাজ, মেধা, বুদ্ধিমত্তা,পদবী দিয়ে তাকে মূল্যায়ন করতে শিখি। একজন সাবালক শিক্ষিত নারীর নিশ্চয়ই নিজের ইচ্ছা, শখ, রুচি, প্রয়োজন বুঝে নিজের পোশাক অথবা শরীরের কাঠামো নির্ধারণের অধিকার রয়েছে।
দিনশেষে আমার শরীর আমার সিদ্ধান্ত- আমার কাছেই মূল্যবান। এ সিদ্ধান্তে পরিবারের মানুষ অথবা সমাজের থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার কেউই নাক গলানোর অধিকার বা যৌক্তিকতা রাখেনা ।
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]