বোরখা পরাটা কি ‘মাই চয়েজ’?
তানজিয়া রহমান।। সমাজ কি বোরখা পরা নারী আর বোরখা না পরা নারীকে এক চোখে দেখে? একজন বোরখা পরা নারীকে বলা হয়, “বাহ, কি সুন্দর পর্দানশীন। দেখেই চোখ জুড়ায়।” সেই নারীই যদি বোরখা ছাড়া বের হয় তখন বলে, “গেল.. গেল.. ধ্বংস হয়ে গেল।” বাপের, বাপের বাপ, তার দাদার দাদা যদি মওলানা হয় সেইটা টেনে বলা হয়, “ও হইছে মওলানা বাড়ির মেয়ে বা বউ আর ও বোরখা পরে না। নিজে তো জাহান্নামে যাবে সাথে গুষ্টির সবাইকে নিয়া যাবে।”
নারীর যৌন হয়রানি, ধর্ষণের জন্য সমাজ পোশাককে দায়ী করে না? একটা কমন ডায়লগ হচ্ছে,“আমরা বাপু উদাম ঘুরিও না, আমাদের মানুষ এত নজরও দেয় না।” আসলে উদাম কী? উদাম কিন্তু যার যার কাছে। কারো কাছে সালোয়ার কামিজ উদাম, কারো কাছে বিকিনি উদাম আবার কারো কারো কাছে এসব কিছুই অতি স্বাভাবিক। পুরুষের কটুদৃষ্টির পরিবর্তন না করে নিজেকে প্রচন্ড গরমে হাত, পা, নাক, মুখ, কান সহ সারা দেহ তিন চার পরতের ভারি কাপড়ে আবৃতি করাটা কীভাবে নিজের পছন্দ হয় জানা নেই।
বোরখা পড়াটা ধর্মে নারীদের জন্য ফরজ করা হয়েছে। না পরলে নারী দেহ পরপুরুষ দেখবে যা গুনাহ। আবার নারীর চুল দেখা গেলে তার পরিনতিও ভয়ংকর। একেকটা চুলের জন্য হাজার হাজার সাপ হয়ে তা হাজার হাজার বছর দংশন করবে। হাদিসেও আছে, বেপর্দা নারী ও বেপর্দা নারীর স্বামী, বাপ, ভাইও জাহান্নামী। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বর্ণনা করেন রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তিন শ্রেণির লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
এক. পিতা-মাতার অবাধ্যকারী।
দুই. দাইয়ুস (অর্থাৎ এমন পুরুষ, যে তার অধীনস্ত নারীদেরকে পর্দায় রাখে না)।
তিন. পুরুষের ন্যায় চলাফেরা করা নারী (অর্থাৎ বেপর্দা নারী)। (মুসতাদরাকুল হাকিম: ২৪৪)
অনেক নারী আছে তারা ধর্মকর্ম খুব একটা করে না। কিন্তু বোরখা পরে। সে চিন্তা করে তার গায়ে পরপুরুষের হাত তো দূরের কথা যেন নজরও না পরে। যদিও নির্যাতকেরা পোশাক দেখে না। তারা মাথা থেকে পা ঢাকা মেয়ের গায়ে ঠিক তেমন ভাবেই হাত দেয় যেভাবে একটা জিন্স টপস পরা মেয়ের গায়ে দেয়। উদাহরণ- নুসরাত। তাই বলি কি এই ভয়ে বোরখা পরা বাদ দিয়ে নিজের স্বস্তি মত পোশাক পরে যৌন নির্যাতকের গালে কষে চর মারা শিখেন। সেটা ভালো হবে।
কোনো বোরখা পরা নারী বলতে পারবে যে সে চাইলে সেই মুহুর্তে বোরখা বাদ দিতে পারবে? বলতে পারবে না। বাদ দিতে গেলে তাকে হাজার হাজার কৈফিয়ত দিতে হবে। তাকে পরকালের শাস্তি মেনে নিতে হবে।
পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে, নিজের স্বস্তিদায়ক পোশাক পরাটা চয়েজ। পরকালের ভয় পেয়ে, মানুষের কটু কথার ভয়ে, পরিবারের চাপে, পুরুষের নজর এড়াতে, বিয়ের পরে স্বামীর কাছে নিজেকে ইন্ট্যাক্ট তুলে দিতে বোরখা পরাটা আর যাই হোক “মাই চয়েজ” না।
(ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য)