November 24, 2024
সম্পাদকীয়

অফ হোয়াইট কামিজে লেগে থাকা রক্ত ছোপ আমাদের মুখে লাথি কষিয়েছে

শারমিন শামস্।। মাত্র কদিন আগে মারমা একটি মেয়েকে, যার বয়স মাত্র ১৪ বছর, সেই শিশু মেয়েকে গণধর্ষণ করলো বান্দরবনে। সেই ধর্ষণের বিচার করে দিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি ১০ হাজার টাকায় রফা করলেন পুরো বিষয়টার। একটি শিশু ধর্ষণের বিচার হল ধর্ষকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে আর তার পরিমান ১০ হাজার টাকা। পুরো ঘটনায় ধর্ষকের স্বীকারোক্তি ছিল। ঘটনাটি থানার ওসি জানতেন, স্থানীয় লোকজন জানতেন, স্থানীয় নেতা জানতেন, তবু সবার নাকের ডগা দিয়ে একটা শিশু ধর্ষণের ঘটনা রফা হয়ে গেল। কীভাবে? খুব সোজা। কারণ ভিক্টিমের পরিচয় সে একটি মারমা মেয়ে। মারমা শিশু। আদিবাসী শিশু। তার বাবা মা প্রান্তিক দরিদ্র পাহাড়ের মানুষ। শিশুটি স্থানীয় স্কুলে পড়তো। এরপর তার আর পড়া হবে কি না কে জানে। আদৌ সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে কি না তাও জানা নেই। না ফেরার সম্ভাবনাই বেশি।

আবারো গণধর্ষণ হয়েছে। আবারো সেই পাহাড়ে। খাগড়াছড়িতে। নয়জন ধর্ষক পুরুষ একটি আদিবাসী চাকমা পরিবারেরর ঘরে ঢুকে পড়েছে গভীর রাতে। বাবা আর মাকে আটকে রেখে সারারাত ধর্ষণ করেছে বাড়ির মেয়েটিকে। মেয়েটি প্রতিবন্ধী। আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে সেই গণধর্ষণ পরবর্তী একটি রক্তাত্ত ছবি। যে ছবিটি আমরা ঘুরে ফিরে দেখছি, সেই ছবিতে মেয়েটি আর তার বাবা-মাকে হেঁটে যেতে দেখা যাচ্ছে। পিছন থেকে নেয়া শট। মেয়েটির অফ হোয়াইট কামিজের নিচের অংশে, হালকা সবুজ সালোয়ারে, তার পায়ের ত্বকে ছোপ ছোপ গাঢ় রক্তের দাগ লেগে আছে। মা আর বাবা পরম মমতায় মেয়েটাকে ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন।

আমি স্তব্ধ হয়ে বসে আছি। আমরা হতভম্ব হয়ে বসে আছি। এই বীভৎস ছবিটা আমাদের মুখে একটা লাথি মেরেছে। মেয়েটার অফ হোয়াইট কামিজে লেগে থাকা রক্তের ছোপ আমাদের মুখে লাথি কষিয়েছে। মেয়েটার পা গড়িয়ে নেমে আসা রক্তস্রোত আমাদের পশ্চাৎদেশে জুতো মেরেছে। আমরা সমস্ত বাঙালি এই ধর্ষণের দায় মাথায় নিতে বাধ্য। সমস্ত সেটেলার ধর্ষক বাঙালির যুগ যুগ ধরে করা অপরাধ, নৃশংসতার দায় এড়ানোর কোন সুযোগ আমাদের নাই। কারণ আমাদের বিচার ব্যবস্থা ওদের বিচার করেনি। ওদের দখলবাজি, হামলা, খুন, ধর্ষণ, যাবতীয় শয়তানিকে আমরাই প্রশ্রয় দিয়ে গেছি। যাচ্ছি। ওদের বিচার হয় না। ওরা সদর্পে একের পর এক ধর্ষণ করে যাচ্ছে। ওদের কিচ্ছু হবে কোনোবার।

বিচার কেন চাই, যখন জানিই যে বিচার হবে না? তাই মাথা নত করে রাখি। তাই মুখ লুকিয়ে রাখি। তাই ঘেন্নায় নিজের পরিচয় লুকাই। আমাদের ক্ষমা চাইবারও কোন সুযোগ নেই। আদিবাসী সকল নিপীড়িত মানুষের কাছে ক্ষমা চাইবো কোন মুখে? কেনই বা আমাদের আর ক্ষমা করবেন তারা?