নারী, তুমি নিজেকে সম্মান করো তো?
নুসরাত নুরশিয়া।। ‘‘হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গলো সকালে, বুঝলাম, ভালোবাসি না ওকে আমি। কিন্তু একটা মেয়েমানুষ হিসেবে সংসারটা টিকিয়েই রাখতে হবে, ভালোবাসা থাক আর না থাক!’’
আহ ঈশ্বর! আপনাদের কি ঘেন্না লাগে না ওই স্বামী নামের পুরুষটির সাথে এভাবে জীবন কাটাতে? আমার ঘেন্না লাগে আপনার এই আদিখ্যেতা দেখতে।”
ইদানীং কিছু মেয়েদের দেখি তারা মুখে মুখে সম অধিকারের যতই বুলি আউড়ান না কেন, নিজের বেলায় চরিত্রহীন স্বামীটিকে তারা চোখের কাজল, আর শাড়ীর আঁচলে বাধতে চান। প্রতিবাদ তো অনেক দূরের ব্যাপার, স্বামীর হয়ে সাফাই গাইতেই আপনারা জানেন।
খুব কাছের পরিচিত একজন আপাকে চিনি, যার তথাকথিত সুদর্শন স্বামী দিনের পর দিন ওনাকে রেখে অন্য একজন মহিলা সঙ্গীর সঙ্গে দিন, রাত সবই কাটিয়ে আসেন। আপা ঘটনা জেনেও না জানার ভান করে থাকেন, এরপরে ওনার স্বামী একদিন তার বান্ধবীসমেত ওনার কাছে সামনাসামনি হয়ে যায়। আমার সেই পরিচিত আপা তখন এই বলে পরিস্থিতি সামাল দেন যে, এই ধরনের ঘটনা না জানাজানি হওয়াই সংসারের জন্য ভালো! সুযোগ্য স্বামী এর পরিপূর্ণ ফায়দা নিলো এবং বহাল তবিয়তে আছে।
এখন বিষয় হচ্ছে ওই আপুর প্রতি আমার যতটা না বিরক্তি কাজ করে তার চেয়ে বেশি মায়া হয়। আপুরও নিশ্চয়ই ভালো লাগে না অন্যত্র নোংরা হয়ে আসা শরীরটা রোজ সহ্য করতে, কিন্তুু জীবনের টানাপোড়েনে ওনাকে এটা সহ্য করতে হয়।
ম্যারিটাল রেপ- এটা যতক্ষণ না আপনার সাথে হবে আপনি ধারনাও করতে পারবেন না বিষয়টি ঠিক কতটা যন্ত্রণার আর অসহ্যকর। এটা সবাই অসহ্য হয়েই সহ্য করে।
অনেক শিক্ষিত কিন্তু অসভ্য টাইপ ছেলেদের এই বিষয়টি নিয়ে ট্রল করতে দেখলাম ফেসবুকে, কারণ তাদের সেই জায়গায় একটু কম হলে খুব অসুবিধা,আর অন্যদের বেলায় কী?
আমার শরীর আমার সিদ্ধান্ত- এ কনসেপ্ট নারী সমাজে এখনও অপ্রচলিত। অথচ খেয়াল করলে দেখবেন ফেয়ার এন্ড লাভলী বা গ্লো বাজারে বেশ প্রচলিত, আর সেই কাজটি সহজ করছে আমার সিদ্ধান্তহীন আপুরা।
শরীর যার, সিদ্ধান্ত তার- এমনটাই হওয়া উচিত। কিন্তুু দুঃখজনকভাবে সেটা “নারী সমাজকে” জানতে না দেয়ার একটা চেষ্টা চালানো হয়।এবং ফলশ্রুতিতে আমরা অজ্ঞ থেকে যাই। ঠিক কী যুক্তিতে নারী নিজের শরীরের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না বা পারে নি- এর কোন সুনির্দিষ্ট সুস্পষ্ট ব্যাখা নেই। হাস্যকর!
অনেকে বলতেই পারেন, এখন সময় পাল্টেছে, মেয়েরা এগিয়েছে, তারা অনেক কিছু জানে এবং জানার সুযোগ রয়েছে; তাদের জ্ঞাতার্থে বলে রাখছি মোটেও সেরকম কিছু না। শরীর নিয়ে কথা বলা এখনও একটা ট্যাবু!
যখন থেকে নারী নিজের শরীরকে বুঝতে শুরু করে তাকে কি বলে দেয়ার কেউ থাকে যে, তোমার শারীরিক সিদ্ধান্ত তোমার। বরং উল্টোটা হয়। আসলে সহজভাবে একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায়,মানুষ মাত্রই নিজের শরীরের সিদ্ধান্ত নিজের নেয়ার ক্ষমতা রয়েছে, নারী সেটা থেকে বঞ্চিত।
দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারার বৈবাহিক ধর্ষণ সম্পর্কিত ব্যতিক্রম দফা এবং এ সংশ্লিষ্ট দণ্ডবিধির ৩৭৬ ধারা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯ (১) ধারা, যেগুলো বিবাহিত নারী ও কিশোরীদের (১৩ বছরের ঊর্ধ্বে) স্বামীর মাধ্যমে ধর্ষণের বিচার পাওয়ার অধিকার ক্ষুন্ন করে।
এখানে অবশ্যই ভেবে দেখা জরুরি, নারী, তুমি নিজেকে সম্মান কর তো?
আমি বলি মর্যাদাহীন জীবনটাকে ঢেকে রাখার ঢাকনাটা খুলে দাও, উড়ে যাও, মেলে দাও পাখনা…!
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]