September 20, 2024
ফিচার ৩ফিটনেস ও সুস্থতা

৪০-এর পর যৌনজীবন: বদলে কি যায় অনেক কিছু?

যৌন জীবনের নানা জটিলতা ও প্রশ্ন নিয়ে কাজ করেন আমেরিকার সাংবাদিক মাইকেল ক্যাসেলমেন, এমএ। ৪৬ বছর ধরে তিনি যৌনতা ও যৌন বিষয়ক গবেষণা সম্পর্কিত লেখালেখি করে আসছেন। অসংখ্য লাইফস্টাইল ও স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন ও ওয়েবসাইটে পাঠকের করা অন্তত ১২ হাজার যৌনতা বিষয়ক প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি (১২ জানুয়ারি, ২০২১) তার লেখা বই Sizzling Sex for Life: Everything You Need to Know to Maximize Erotic Pleasure at Any Age প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে ২০০৮ সালে তার আরেকটি বই Great Sex: The Man’s Guide to Whole-Body Sensualityআমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব সেক্স এডুকেটর, কাউন্সেলর অ্যান্ড থেরাপিস্ট- এর বর্ষসেরা বই হিসেবে মনোনয়ন পায়। তার মোট প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৮। আমেরিকার বিখ্যাত লাইব্রেরি জার্নাল মাইকেল ক্যাসেলমেনকে সেদেশে স্বাস্থ্য বিষয়ে একজন শীর্ষ লেখক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। যৌন বিষয়ক লেখালেখির পাশাপাশি তিনি অন্যান্য স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখালেখিও করে থাকেন নিয়মিত। এবার যৌন জীবনে বয়সজনিত পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সমস্যায় মাইকেল ক্যাসেলমেনের পরামর্শগুলো ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরের পাঠকদের কাছে তুলে ধরতে তার লেখা একটি প্রবন্ধ অনুবাদ করে প্রকাশ করা হলো।

আমার স্ত্রী ও আমি- আমাদের প্রথম ডেটের ৪২তম বার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছি। চমৎকার এক বিবাহিত জীবন পার করছি আমরা, কিন্তু আর দশজনের মতো আমরাও বয়সজনিত কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলো মোকাবিলা করছি, যেসব সমস্যা আমাদের প্রেম জীবনকে প্রভাবিত করে সেগুলোও আছে এর মধ্যে।

বয়স ৪০ পেরিয়ে গেলে সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতা যতটুকু মনোযোগ দাবি করে ততটুকু পায় না। এক্ষেত্রে খারাপ খবরটি হলো- জীবনের দ্বিতীয়ভাগে যৌন জীবনে পরিবর্তন আসে। আর পরিবর্তন বরাবরই কঠিন একটি বিষয়। কিন্তু এখানে সুখবরটি হলো- সামান্য কিছু সমন্বয় করলে ৪০, ৫০, ৬০-এর পর শারীরিক ঘনিষ্ঠতা আগের মতোই সন্তোষজনক, এমনকি আগের চেয়েও চমৎকার হতে পারে, এবং প্রেম আরও গভীর হতে পারে।

বয়সজনিত যৌন পরিবর্তন আসে ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে। এই সময়টি নারীদের পেরিমেনোপসাল সময়, যখন এস্ট্রোজেন কমতে থাকে এবং পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে যায়। অনেক নারী এ সময় যৌনাঙ্গের শুষ্কতাজনিত সমস্যায় পড়েন যা সঙ্গমে অস্বস্তির কারণ হয়। আশার কথাটি হলো- এই সমস্যায় লুব্রিকেন্ট দ্রুত ও কার্যকর একটি সমাধান।

এদিকে, ৪০ থেকে ৫০-এর মধ্যে বেশিরভাগ পুরুষ লিঙ্গ উত্থানজনিত (ইরেকশন) পরিবর্তনের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যান। যৌন কল্পনা এ সময় লিঙ্গ উত্থানের জন্য আর যথেষ্ট হয় না। তখন পুরুষের দরকার হয় যৌনাঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শ। ওই বয়েসে লিঙ্গ উত্থিত হলেও তা ২০ বছর বয়সকালের মতো দৃঢ় হয় না। এবং সামান্য অমনোযোগিতা বা বিভ্রান্তির কারণে লিঙ্গ দৃঢ়তা হারায়। এটি অবশ্য ইরেকটাইল ডিসফাংশন (লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যা- ইডি) নয়। এটি হচ্ছে মধ্য বয়েসের উত্থানজনিত অসন্তুষ্টি।

৪০ এর পর সম্ভবত যৌন জীবনে উদ্বেগজনক পরিবর্তনের কারণগুলো বিবর্তনীয় ধারণার সঙ্গে যুক্ত। জীবনের জৈবিক উদ্দেশ্য হচ্ছে পুনরুৎপাদন (নতুন প্রাণের জন্ম দেওয়া)। যেহেতু নারীরা তাদের প্রজনন বয়স পার করে এসেছেন তাই তখন আর প্রজনের উদ্দেশ্যে যৌনতা অব্যাহত রাখার কোনো বিবর্তনীয় কারণ থাকে না, অর্থাৎ তখন আর পুনরুৎপাদনের উদ্দেশ্যে যৌনতার প্রয়োজন হয় না, ফলে আরামদায়ক সঙ্গমের জন্য প্রাকৃতিকভাবে যৌনাঙ্গ পিচ্ছিল হওয়ার কোনো জৈবিক কারণ থাকে না। অন্যদিকে পুরুষরা এই বয়সেও বাবা হতে পারে, কিন্তু প্রজাতি বিবর্তনে খুব কম পুরুষই ৪০ এর বেশি বেঁচেছিল এবং এ বয়েসের পরে সন্তানের বাবা হয়েছিল। ফলে এই বয়েসের পর প্রজনন কার্য জারি রাখার জন্য কোনো বিবর্তনীয় কারণ ছিল না। জৈবিকভাবে বয়স্ক পুরুষের এই বয়েসে আর প্রজনন স্বার্থে সঙ্গমের প্রয়োজন থাকে না, তাই লিঙ্গ যথেষ্ট পরিমাণে দৃঢ় হয় না। কিন্তু এখন বয়সজনিত যৌন পরিবর্তন যতই হোক না কেন, বেশিরভাগ বয়স্ক যুগল সঙ্গমের চেষ্টা করেন। কিছু সময়ের জন্য লুব্রিকেন্ট ও অন্যান্য ইরেকশন ড্রাগস এক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করে।

৫০ এর পর যৌন পরিবর্তনগুলো বাড়তে থাকে। সে বয়েসে নারীদের জন্য লুব্রিকেন্ট ব্যবহার করেও সঙ্গম অস্বস্তিকর হয়ে যায়। এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে এমনকি ওষুধ নিয়েও উত্থানজনিত সমস্যায় ভোগেন তারা। কেউ কেউ আবার ইডি (ইরেকটাইল ডিসফাংশন) সমস্যাও বাধিয়ে ফেলেন। এই পরিবর্তনগুলো সঙ্গমকে আরও সমস্যাযুক্ত করে ফেলে, এবং অনেক বয়স্ক দম্পতির জন্য সঙ্গম অসম্ভব হয়ে পড়ে।

দুর্ভাগ্যক্রমে অনেকেই মনে করেন, যৌনতা ও সঙ্গম সমার্থক শব্দ। তাদের ধারণা- যদি পুরনো ‘ইন-আউট’ আর উপভোগ করতে না পারা যায় তবে যৌন জীবনই শেষ। এটি একটি লজ্জার বিষয়। লাভার হওয়া থেকে অবসর নেওয়ার ফলে সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতা কমে যায় এবং মানুষের গভীর চাওয়া যেমন মৃদু, কাম-উত্তেজক স্পর্শ ইত্যাদিকে উপেক্ষা করা হয়। আবার অন্য দম্পতিরা যারা যৌনতা বলতেই শুধু সঙ্গম মনে করে না, তারা বয়সজনিত পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যৌনতায়ও পরিবর্তন আনে। এর অর্থ হলো, সঙ্গম না করে— চুম্বন, আলিঙ্গন, পুরো শরীরে মাসাজ, টয় ও ওরাল সেক্সের মতো বিকল্প যৌন ক্রিয়া বাড়িয়ে দিয়ে যৌনতা জারি রাখা।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, বয়স্ক দম্পতিদের মধ্যে যারা আনন্দের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক টিকিয়ে রেখেছেন তারা যৌনতাকে সঙ্গম থেকে দূরে রেখেছেন। কয়েক হাজার পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব পুরুষের উপর চালানো দুটি গবেষণায় দেখা যায়, এত এত মিডিয়া হাইপ ও বিজ্ঞাপনের পরেও মাত্র ১০ শতাংশ পুরুষ ওষুধ সেবন করে লিঙ্গ উত্থানজনিত জটিলতা দূর করার চেষ্টা করেছেন। নিয়মিত ওষুধ নেওয়া তো দূরের কথা, বেশিরভাগ বয়স্ক পুরুষ বলেছেন, ‘আমি যদি সঙ্গম না করি, তাহলে আমার ইরেকশনের দরকার পড়ে না, তাহলে আমি কেন ওষুধ নেব?’

মূলত পুরুষদের অর্গাজমের জন্য ইরেকশন লাগে না। আরামদায়ক ব্যবস্থা, প্রাণবন্ত যৌন কল্পনা, এবং নারীর প্রেমময় ও প্রাণবন্ত সংযোগে এমনকি বয়স্ক, অনিচ্ছুক লিঙ্গ নিয়েও পুরুষ আগের মতোই চূড়ান্ত উত্তেজনায় পৌঁছাতে পারে এবং অর্গাজম উপভোগ করতে পারে।

আমার স্ত্রী ও আমি ঠিক করেছি বয়স যেন আমাদের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতায় হস্তক্ষেপ করতে না পারে। পরিবর্তন সবসময় চ্যালেঞ্জিং, বিশেষত যৌন পরিবর্তন। কিন্তু যদি বয়স্ক দম্পতি সঙ্গম থেকে দূরে সরে যাওয়ার এই অন্তর্বর্তীকালে একে অপরকে সাহায্য করে তবে তারা মূলত আরও গভীরতর, সমৃদ্ধ প্রেমময় যৌনতা আবিষ্কার করতে পারে। এবং আরও বেশি একে অপরের প্রেমে পড়ে।