September 20, 2024
কলামফিচার ৩

ব্যাটাগিরির নাম মেন্সপ্লেইনিং

উম্মে ফারহানা।। রেবেকা সলনিট Men Explain Things to Me গ্রন্থে যা বলেছেন তার প্রতিটি কথা, আমার ধারণা, নারীরা খুব সহজে বুঝতে পারবেন, ইংরেজিতে আমরা যাকে বলি রিলেট করতে পারা। সলনিট শুরু করেছেন নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে। এক পার্টিতে তিনি আর তাঁর এক বান্ধবী গেছেন, নিমন্ত্রণকারী বেশ ভদ্রতা করে বললেন, আরেকটু বসতে, কিছুক্ষণ আলাপ করা যাক। সলনিটের বান্ধবীর কাছ থেকে জেনেছেন তিনি নাকি দুটি বই লিখেছেন, কী বিষয়ের উপরে বই, জানতে চাইলেন ভদ্রলোক। সলনিট জানালেন আসলে তিনি বেশ কয়েকটি গ্রন্থের লেখক। সর্বশেষ বইটি Edweard Muybridge-কে নিয়ে জানার পর ভদ্রলোক উৎসাহিত হয়ে বললেন Muybridge প্রসঙ্গে খুবই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ একটি বই সম্প্রতি বেরিয়েছে, সেটার ব্যাপারে সলনিট শুনেছেন কিনা। সলনিট স্বভাবতই আগ্রহী হলেন, নিজের পছন্দের বিষয়ে জরুরি বই, তাও আবার সম্প্রতি বেরিয়েছে, মিস করলেন কীভাবে। জনাব ‘গুরুত্বপূর্ণ’ এই ব্যাপারে আর দুই একটা কথা বলার পরই সলনিটের বান্ধবী স্যালি ভদ্রলোককে থামিয়ে দিয়ে বললেন, “এটাই ওর বই”। ভদ্রলোক সহসা থামলেন না, অন্তত তিনবার বলতে হলো যে বইটির কথা তিনি উল্লেখ করছেন, সেটা রেবেকা সলনিটের লেখা বই এবং সেই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ গ্রন্থের লেখকের সঙ্গেই তিনি কথা বলছেন। বইটা না পড়ে, শুধুমাত্র নিউ ইয়র্ক টাইমসের বুক রিভিউতে  নামটা দেখে ভাসাভাসা জ্ঞানেই তিনি আলাপ চালিয়ে যেতে চাচ্ছিলেন, এমনকি লেখকের নামটাও হয়তো ভালোমতো লক্ষ্য করেননি তাই বুঝতে পারেননি যে সেই বইয়ের লেখকই তাঁর সামনে এই মুহুর্তে বসে রয়েছেন।

রেবেকা সলনিটের উল্লেখিত এই ঘটনার কাছাকাছি ঘটনা আমাদের জীবনে প্রায়ই ঘটে, পুরুষেরা নারীদের বুদ্ধিমত্তা বা জ্ঞানের উপর আস্থা রাখতে পারেন না, ধরেই নেন যে উনি নিজেই বেশি জানেন। সলনিট বলছেন, যে যা জানে তাঁর কাছ থেকে সেই ব্যাপারে বিস্তারিত শুনতে তাঁর আপত্তি নেই, সবার কাছ থেকেই জানার বা শেখার আছে, কিন্তু যে যা জানে না, তা নিয়ে জ্ঞান কপচাতে যাওয়া, এবং সেই বিষয়ের এক্সপার্টের সঙ্গে- এটা তখনই ঘটে যখন জ্ঞান কপচানো পুরুষটি দেখে তার সামনে বসে আছে একজন নারী।

নারীর মেধা বা প্রজ্ঞাকে আমলে না নেওয়ার এই প্রবণতাকে সলনিট বলেছেন ঐতিহাসিক, ট্রয়ের রাজকন্যা ক্যাসান্ড্রাকে স্মরণ করেছেন তিনি, যার নির্ভুল ভবিষ্যৎবাণী কেউ কখনো বিশ্বাস করেনি, বিপরীতে লোকগল্পের যে ছেলেটি নেকড়ে আসার কথা বলে চিৎকার করছিল, সবাই বেশ কয়েকবার তাকে বিশ্বাস করে সাহায্যের জন্য এগিয়ে গেছে। নারীকে অবিশ্বাস করার এই সার্বিক প্রবণতার জন্যই নারীর প্রতি সহিংসতা বা নির্যাতনের কোনো প্রতিকার হয় না দুনিয়াজোড়া। নিজের এক প্রাক্তন প্রেমিকের উল্লেখ করেছেন সলনিট, যে খুব হেসে হেসে বলছিল যে তাদের এক প্রতিবেশী মহিলা রাতের বেলা নগ্ন অবস্থায় ঘর থেকে দৌড়ে বের হয়ে এসেছিলেন এবং বলছিলেন যে তার স্বামী তাকে হত্যা করার চেষ্টা করছে, মহিলা নিশ্চয়ই উন্মাদ। সলনিট তখন জিজ্ঞেস করেছিলেন, “কেন মনে হলো ভদ্রমহিলা উন্মাদ এবং ভুল বকছেন, এমনওতো হতে পারে যে আসলেই তার স্বামী তাঁকে মেরে ফেলতে চাইছে”। উত্তরে সলনিটের প্রেমিক বলে, “তা কী করে হবে, ওরা তো সব শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মানুষ, সম্মানিত নাগরিক”। অধিকাংশ পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায় কেননা নারীর অভিযোগগুলোকে বিশ্বাস করার ব্যাপারে সমাজের সকল স্তরের মানুষের, বিশেষত নীতিনির্ধারক এবং কর্তৃপক্ষ পর্যায়ের পুরুষদের দারুণ অনীহা।
দিল্লির গণধর্ষণের যে ঘটনাটি দুনিয়াজোড়া সাড়া ফেলে দিলো, সেই ধর্ষিত এবং নিহত মেয়ে, জ্যোতি সিংকেও স্মরণ করেছেন লেখক। পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে আছে, জ্যোতির ধর্ষকদের মধ্যে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী মুকেশ সিং ইন্ডিয়াস ডটার শীর্ষক ডকুমেন্টারির নির্মাতা লেসলি এডউইনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছিল যে জ্যোতির মতন যে মেয়েরা রাতবিরেতে বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরে বেড়ায় তাদের ধর্ষিত হওয়া উচিৎ এবং ধর্ষণে বাধা দিলে নৃশংসভাবে খুন হয়ে যাওয়াটাও তাদের প্রাপ্য।  নারীর কী করা উচিৎ আর কী করা উচিৎ নয় সেই ব্যাপারে একজন অশিক্ষিত বাস ড্রাইভারেরও সুনির্দিষ্ট মতামত রয়েছে। কারণ পুরুষ ধরেই নেয় যে সে বেশি জানে, বেশি বোঝে, নারী তারচেয়ে বেশি শিক্ষিত বা উচ্চতর শ্রেণিতে বসবাস করলেও তার বিবেচনাবোধ, ঠিকভুল সম্পর্কে বিচারবুদ্ধি পুরুষের চেয়ে কমই হবে।

সহিংসতার ঘটনাগুলোর পেছনে মূলত পুরুষের এই মেগালোম্যানিয়াই দায়ী। প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ার প্রতিশোধ হিসেবে পুরুষ নারীকে খুন বা ধর্ষণ করে, নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নারী নিজে নিতে পারে না বলে বিশ্বাস করে পুরুষ, ব্যক্তি হিসেবে নারীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোন গুরুত্ব নেই বলেই প্রত্যাখ্যানের বিপরীতে কষ্ট পাওয়া বা হতাশ হওয়ার চেয়ে বদলা নেওয়া তার কাছে বেশি সুবিধাজনক হয়ে পড়ে। সুজান স্যারন্ডন আর জিনা ডেভিস অভিনীত থেলমা অ্যান্ড লুইস ছবিটি যদি আপনি দেখে থাকেন, তাহলে আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে জিনা ডেভিসকে প্ররোচিৎ করতে চাওয়া পুরুষটি যখন বলে ‘‘লেটস হ্যাভ সাম ফান”, থেলমারূপী জিনা ডেভিস নিষেধ করে বলে, “আমি বিবাহিত”, লোকটা পাত্তা না দিয়ে বলে, “তাতে কী? আমিও তো বিবাহিত”। পুরুষ সবসময় ধরেই নেয় যে তার বিচার বিবেচনাই শ্রেষ্ঠ, তার ন্যায়অন্যায় বোধের (পড়ুন বোধের অভাবের) উপরে আর কোন কথা চলে না। থেলমার আপত্তি অগ্রাহ্য করে সে এগিয়ে যায়, যার ফলশ্রুতিতে লুইস (সুজান স্যারন্ডন) লোকটিকে গুলি করতে বাধ্য হয়।

বেশ কিছু পরিসংখ্যান দিয়েছেন সলনিট, আমেরিকায় তিন বছরে যত নারী পারিবারিক সহিংসতার  (পড়ুন বিবাহিত সঙ্গীর হাতে মার খাওয়া), প্রেমিক/প্রাক্তন প্রেমিকের এবং সম্পূর্ণ অপরিচিত পুরুষ দ্বারা  আক্রান্ত হয়ে খুন হন তার সংখ্যা এগার সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ার ধ্বংসের দিনে মৃতের সংখ্যার চেয়ে বেশি। তিনি ক্যাম্পাস রেইপ এবং ডেইট রেইপের প্রতিকার হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ক্যাম্পাসে সন্ধ্যার পর মেয়েদের একা ঘোরাঘুরি করতে নিরুৎসাহিত করার উল্লেখ করে বলেন যে ধর্ষণের হার কমাতে নারীর চলাফেরা সীমিত করার চেয়ে ভালো কোন রাস্তা কারো জানা নেই, ধর্ষককে শাস্তি দেওয়া যেন কোন পথ নয়। মধ্যপ্রাচ্যের শরিয়া আইনের কথাও উল্লেখ করেছেন সলনিট, ইসলামী শরিয়া আইনে ধর্ষণের জন্য কঠিন শাস্তির বিধান আছে, কিন্তু ঘটনা প্রমাণের জন্য দুইজন পুরুষসাক্ষীর সাক্ষ্য দরকার। তা দুইজন পুরুষ যদি ধর্ষকের সহযোগী না হয়ে থাকে, তাহলে তো তারা ঘটনার সময়েই মেয়েটির সাহায্যে এগিয়ে আসতো, আর সাহায্যে এগিয়ে আসার সাহস যাদের নেই, তারা কোন সাহসে সাক্ষ্য দেবে?

মেনসপ্লেইনিং (Mensplaining) টার্মটির সঙ্গে সলনিটের আগে লেখা এক প্রবন্ধের যোগ রয়েছে, তবুও তিনি খুব বেশি এই টার্ম ব্যবহার করেন না বলে জানান এই বইতে। তিনি তাঁর জীবনে এমন অনেক বন্ধু, সহকর্মী, সম্পাদক, প্রকাশক পেয়েছেন যারা তাঁর কাজকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন, প্রকাশ করেছেন, তাঁর যোগ্যতা সম্পর্কে আস্থাবান ছিলেন এমন অনেক পুরুষের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। কাজেই মোটা দাগে সকল পুরুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য হিসেবে ‘মেনসপ্লেইনিং’ নামের টার্মটিকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া যায় না। সলনিট বলেন, ‘কিছু পুরুষ’ এই রোগে আক্রান্ত, এই রোগে আক্রান্ত পুরুষেরা নারীর বিরুদ্ধে সকল ধরনের অপরাধ করেন, সেটা সহিংসতা, ধর্ষণ, স্লাটশেইমিং থেকে শুরু করে বুলিয়িং এবং নারীর মেধা, বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান এবং যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ, বুদ্ধিবৃত্তিক স্তরে অবমাননা পর্যন্ত নানান স্তরে বিভক্ত।

সলনিট অনলাইন ফেমিনিজমের ধারায় #YesAllWomen হ্যাশট্যাগ দিয়ে ফেইসবুক বা টুইটারে কিছু পোস্ট করলে পুরুষদের কাছ থেকে যে রকম হেইট স্পিচ বা রেইপ থ্রেটের মুখোমুখি হতে হয় তার উল্লেখ করে বলেছেন, অধিকাংশ পুরুষ নারীর প্রতিবাদ বা রুখে দাঁড়ানো দেখে যতটা রাগান্বিত হয়, নারীর প্রতি সহিংসতা দেখে ততটা হয় না। ধর্ষক বা হত্যাকারীর শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য কোনো আন্দোলন হলে তারা ততটা আগ্রহে শামিল হয় না, একজন নারীবাদীর কোনো বক্তব্যের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হতে যতটা আগ্রহী হয়। একইভাবে পুরুষদের কেউ বলে না একা মেয়ে দেখলেই ধর্ষণ করো না, উলটো মেয়েদের বলে এখানে যেওনা, সেটা করো না, এভাবে কাপড় পরো না, ইত্যাদি নানা পরামর্শ। তার মানে পুরুষ যা করে বা করছে তা ঠিকই আছে, নারীকেই নিজের পরিসর সীমিত করতে হবে, চলাফেরা গতিবিধি সীমিত করতে হবে, তা না হলে ভয়ানক পরিণতি হবে তার।

সাইলেন্সিং বা চুপ করিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সলনিট বলেন যে তিনি জানেন তাঁর অনেক বেশি সুযোগ আছে নিজের কথা বলার, জানানোর এবং মত প্রকাশের। তবুও তাকে মেনস্প্লেইনিং তথা পুরুষের জ্ঞান কপচানোর ব্যাপারটি নিয়মিত মোকাবিলা করতে হয়। তাহলে আরো প্রান্তিক, আরো কম বয়সী, আরো কম প্রিভিলেজড নারীদের সঙ্গে কী হয় তা সহজে অনুমেয়। এ ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে আমার বোন উম্মে রায়হানা মুমু আরো একটি অভিজ্ঞতা জানালো। মুমুর ছেলেকে তাঁর কোনো দুই বন্ধু দাবা খেলা শিখিয়েছে, এজন্য মুমু বিরক্ত। এইটুকু শুনেই আরো দুই বন্ধু হা হা করে তেড়ে এসে মুমুকে জ্ঞান দিতে এলো, “আপনি কি আপনার ছেলেকে গাধা বানাতে চান?’ মুমু বললো, “তোর মা কি তোকে গাধা বানাতে চেয়েছিলেন?”, উত্তরে সে বলল, “না সেজন্যেই আমাকে যত্ন করে দাবা খেলা শেখানো হয়েছে”, মুমু বললো, “পয়েন্ট সেটাই, ওরা যত্ন করে শেখায়নি, যেভাবে শিখিয়েছে তা ওর কোনো কাজে আসবে না”। দাবা খেলা শিখলে যে শিশুর বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ হয় সেটা মুমু জানে না ধরে নিয়ে তাঁর কথা শেষ হবার আগেই দুই অবিবাহিত বন্ধু মুমুকে প্যারেন্টিং শেখাতে এগিয়ে এসেছিলেন। বলা বাহুল্য নয়, আমি মুমু এবং আমার বড় ভাই পাঁচ ছয় বছর বয়স থেকে দাবা খেলতে জানি। আব্বা আমাদের এক জন্মদিনে ম্যাগনেট দেওয়া দাবার সেট উপহার দিয়েছিলেন, তখনো আমরা সবে ক্লাস টু কিংবা থ্রিতে।

নিজের আরো দুই একটি অভিজ্ঞতা বলে শেষ করি। আমি তখন সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এক সমবয়সী বন্ধু গ্যেটের ফাউস্ট সম্পর্কে আলাপ করছিল, আহমদ ছফার অনুবাদটি তার কাছে আছে, ক্রিস্টোফার মার্লোর ডক্টর ফস্টাসের অনুবাদের খোঁজ জানি কিনা জিজ্ঞেস করলো। আমি বললাম, ওটা তো ইংরেজিতে লেখা, ইংরেজিতে পড়াটাই ভালো হবে, জার্মান যেহেতু আমরা জানি না, বাধ্য হয়ে অনুবাদ পড়তে হয়, কিন্তু ইংরেজি তো কিছুটা হলেও পড়তে পারি সবাই, ইংরেজি কপিটা চাইলে দিতে পারবো। তখন সে বললো, ডক্টর ফস্টাসও তো জার্মানেই লেখা, সেটার যে ভার্সন আমরা পড়ি সেটাও নাকি অনুবাদই। উল্লেখ্য যে, আমি ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী, ডক্টর ফস্টাস আমার সিলেবাসে ছিল। কিন্তু সেই পুরুষ বন্ধুর মনে হয়েছে আমি না জেনেই বলেছি মার্লোর লেখা নাটকটি ইংরেজি ভাষায় লেখা হয়েছিল। আরেক বন্ধু আমাকে বলেছিল, তোদের কী পড়ায়? রামজি লালের শেক্সপিয়ার? আমি অস্বীকার করছি না যে ভারতীয় লেখক রামজিলালের গাইড বইগুলো ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়, কিন্তু শ্রেণিকক্ষে কেউ কখনো স্বীকার করেনা যে সে পপি গাইডের মতন সেই গাইড পড়ে, শিক্ষকেরাও কোনদিন সেসব বই পড়ে পরীক্ষা পাশের ব্যাপারে উৎসাহ দেন না। এই বন্ধুটি আমাকে আমার নারীবাদী বোঝাপড়ায় সাহায্য করার জন্য একটি প্রবন্ধ পড়ার পরামর্শ দিয়েছিল, ‘ওয়ান’’স ওউন রুম’, আমি তাকে শুধরে দিয়ে বললাম, ‘আ রুম অব ওয়ান’স ওউন’, বলা বাহুল্য, ভার্জিনিয়া উলফের এই প্রবন্ধটিও প্রথম বর্ষে আমার পাঠ্যসুচীতে ছিল। হাসনাত আবদুল হাইয়ের নভেরা উপন্যাসটি ক্লাস ফাইভে থাকতে (১৯৯৩ সালে) পড়েছি দাবি করাতে আমার বোনকে উনি বলছিলেন বইটা তো ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয়েছে। আমি এবং আমার বোন বিচিত্রা ঈদ সংখ্যায় ১৯৯৩ সালে এটি প্রথম বের হয়েছিল বলার পর বন্ধুটি মানতে বাধ্য হন যে আমরা মাতবরি করার জন্য সময়কাল এগিয়ে বলছি না।

মেনসপ্লেইনিং-এর সবচেয়ে বড় শিকার আমরা নারীবাদীরা। নিউক্লিয়ার ফিজিক্স বা মেরিন বায়োলজি, বৈশ্বিক অর্থনীতি বা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, যে কোন ব্যাপারে তো বটেই, নারীবাদের বোঝাপড়াতেও পুরুষই এগিয়ে- এটা প্রমাণের জন্য কিছু জ্ঞানী পুরুষের আবির্ভাব হয়েছে বাংলাদেশে। যারা সারাক্ষণ নারীবাদীদের বোঝাতে আসেন “ইহা সহি নারীবাদ নহে, আপনার পঠনপাঠনে খামতি রহিয়াছে, আমার শিষ্যত্ব গ্রহণ করুন তাহা হইলে সহি নারীবাদ সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাইবেন”।
কিছু পুরুষ সবক্ষেত্রেই ব্যাটাগিরি করে থাকেন, বুদ্ধিবৃত্তিক স্তরের এই ব্যাটাগিরিকে মেনসপ্লেইনিং নামে আখ্যা দেওয়াটা বেশ লাগসই হয়েছে।

(Men Explain Things to Me শিরোনামের ৯০ পৃষ্ঠার ইবুক অনলাইনে কিনতে পারবেন।)

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত কলাম লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]