যে জগতে সেক্সিজমের শিকার পুরুষ আর নারীর কাজ খবরদারি!
রাজনীন ফারজানা।। ১৯০৫ সালে বেগম রোকেয়ার অনবদ্য সৃষ্টি সুলতানা’স ড্রিম বা সুলতানার স্বপ্ন নারীবাদী ইউটোপিয়ান সাহিত্যের অন্যতম নিদর্শন। বইয়ের প্রধান চরিত্র সুলতানা একদিন স্বপ্ন দেখেন তার চারপাশের দুনিয়াটা বদলে গেছে। বেগম রোকেয়া এমন একটি নারীস্থানের বর্ণনা দিয়েছেন, যেখানে সমাজে নারী ও পুরুষের প্রচলিত ভূমিকা বদলে গেছে। নারীরা সমাজের যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের প্রধান চালিকাশক্তি আর পুরুষেরা প্রায় গৃহবন্দী। এই সমাজে কোন অপরাধ নেই, এখানে প্রচলিত ধর্ম হল- ‘ভালোবাসা ও সত্য’।
শতবছর পরে ফরাসি পরিচালক ইলিওনর পুরিয়াত ফরাসি ভাষায় এমনই একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন যার শিরোনাম জে নে সুই পাস উন হোমি ফ্যাসিলে। সিনেমাটির ইংরেজি নাম- আই এম নট এন ইজি ম্যান।
২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটির প্রধান চরিত্র চরম পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার ডেমিয়েন। নির্লজ্জের মত পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বাস করার সমস্ত সুবিধা সে ভোগ করে। মেয়েদের সঙ্গে ফ্লার্ট করা, যৌন সুবিধা ভোগ করা তার অন্যতম আনন্দ। এই দুনিয়ায় তার বন্ধু প্রভাবশালী পুরুষ লেখক যার সেক্রেটারি একজন সুন্দরী তরুণী। লেখক বন্ধুটির স্ত্রী সন্তান সংসার সামলাতে সামলাতে হিমশিম খাওয়া ‘অসুন্দর’ গৃহবধূ।
একদিন মাথায় আচমকা গুতো খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায় ডেমিয়েন। কিন্তু চোখ মেলে দেখে তার চারপাশের দুনিয়া বদলে গেছে। রীতিমতো ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে ডেমিয়েনের চিরচেনা জগৎ। সে নিজেকে আবিষ্কার করে নামকরা এক লেখিকার সেক্সি তরুণ সেক্রেটারি হিসেবে। এই জগতের সেই লেখিকা আর কেউ নয়, ওই জগতে তার বন্ধুর সুন্দরী সেই সেক্রেটারিটিই। আর তার বন্ধু, সেই বিখ্যাত লেখক এখানে একজন অসহায় গৃহস্বামী।
অর্থাৎ এই জগতে নারী ও পুরুষের জেন্ডার রোল পুরোপুরি বদলে গেছে। এখানে সমাজ, রাষ্ট্র আর প্রতিষ্ঠানের প্রধান নারীরা। আর পুরুষরা তাদের ডমিন্যান্ট। এই জগতে পুরুষদের ছোট আর টাইট স্কার্ট পরতে হয়, যতভাবে সম্ভব শরীর ফুটে ওঠে এমন পোশাক পরতে হয়। এখানে পুরুষদের সঙ্গে সেক্সিষ্ট কৌতুক করা হয়, তাদের শরীরের সুবিধা নেওয়া হয়, তাদেরকে ঘরের কাজ আর সন্তান দেখাশোনা করতে বাধ্য করা হয়৷
এমন দুনিয়ায় এসে হতভম্ব হয়ে যায় ডেমিয়েন। সবধরণের সেক্সিজমের শিকার হয়ে সে নিজের জায়গা খোঁজার চেষ্টা করতে থাকে অপরিচিত এই দুনিয়ায়। তার বস আলেক্সান্ড্রা যে নিজে একজন ফিমেল শভিনিস্ট , তাকে পটানোর চেষ্টা করে।
কী হয় তারপর? সিনেমাটির শেষে এমন একটি সমান্তরাল পৃথিবী দেখানো হয় যেখানে প্রচলিত লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা (জেন্ডার রোল) বদলে গেছে। সেই দুনিয়ায় নারী ও পুরুষ সমানে সমান।
রাজনীন ফারজানা: সাংবাদিক