প্রসঙ্গ: ৩৮তম বিসিএস ও যৌতুক
ভগবতী রায়।। ৩৮তম বিসিএসের ফলাফল প্রকাশিত হল। সেখানে মেধাবী মেয়ে ও মেধাবী ছেলেরা সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে। শুধু ৩৮তম বিসিএস-ই নয় বরং যেকোন চাকরির পরীক্ষায় মেয়ে ও ছেলেরা চাকরিপ্রাপ্ত হয়। মেয়ে ও ছেলে- দু’পক্ষ চাকরিপ্রাপ্ত হলেও মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা সেক্ষেত্রে বেশি সুবিধা পায়। চাকরি পাওয়ার পর সাধারনত বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলেদের বাজারদর (যৌতুকের পরিমান) হুহু করে বাড়তে থাকে। আবার এটারও একটা মাপকাঠি আছে আমাদের সমাজে। কোন বিশেষ শ্রেণির চাকরি বা ক্যাডারের ক্ষেত্রে সেই বাজারদর (যৌতুকের পরিমান) ২০-৩০ লক্ষ থেকে শুরু করে কোটি পর্যন্ত উঠে যায়। অবশ্য চাকরিপ্রাপ্ত হওয়ার পরও বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েদের বাজারদর ( চাকরিজীবী মেয়েকে বিয়ে করতে গেলে প্রদেয় টাকার পরিমাণ) তেমন একটা নাই বললেই চলে ।
তবে আমাদের সমাজে চাকরিপ্রাপ্ত ছেলেরা চাকরিপ্রাপ্ত মেয়েদেরকে একটু করুণা করে মাত্র। তখন তাদের বক্তব্য এরকম হয় যে, যেহেতু মেয়ে চাকরি করে সেহেতু টাকা পয়সা (যৌতুক) লাগবে না। তবে এর মধ্যে একটা অন্তনির্হিত সত্য এই যে, চাকরিজীবী ছেলেটি কিন্তু চাকরিজীবী মেয়েটির বেতনকে আদতে যৌতুক হিসেবে গণ্য করে বিধায় চাকরিজীবী মেয়েপক্ষকে তখন চাকরিজীবী ছেলেপক্ষকে বাজারদর স্বরূপ আর কোন উপঢৌকন দিতে হচ্ছে না। এ কথাও সত্যি যে, এখনও কিছু কিছু ছেলে আছে যারা যৌতুকহীন অবস্থায় বিয়ের পিঁড়িতে বসছে। তবে সেই সংখ্যা হাতেগোনা মাত্র।
একটি মেয়ে যখন স্কুল জীবন শেষ করে এসএসসি দেয় এবং অকৃতকার্য হয় তখনই কিন্তু সেই পরিবারের কর্তাব্যক্তিরা সেই মেয়ের বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়। এর জন্য দায় যে শুধু মেয়ের পরিবারের, তা কিন্তু নয়। আমাদের পুরো সমাজব্যবস্থা, আমাদের সনাতনী চিন্তাভাবনা মেয়েদের প্রতি এই বৈষম্যের জন্য দায়ী। ঠিক একই ঘটনা যদি ছেলের ক্ষেত্রে ঘটে তখন কিন্তু আমরা উল্টো চিত্র দেখতে পাই। যদিও কোন কোন পরিবার মেয়েদের পড়াশোনা ও আত্মনির্ভরশীল হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক উদ্যোগী।
শিক্ষাজীবনের এই চলতি পথে কোন মেয়ে হয়তো কোন একটা সময় কোন ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে গেল, তারপর সম্পর্কটা কোন না কোন কারণে হয়তো স্থায়ী হলনা। যাই হোক পরবর্তীতে মেয়েটা হয়তো ভাল চাকরিও পেল। এরপর আসবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পালা। যেহেতু মেয়ে চাকরি করে তাই বরপক্ষ করুণাবশত বরের যে বাজারদর (যৌতুকের পরিমান) সেটা মওকুফ করে দিল। এরপর সংসার করার পালা। এই যে এতকিছুর পর মেয়েটি যখন সংসার জীবনে প্রবেশ করে তখন শুরু হয় আর এক অশান্তি। আর সেটা হচ্ছে মেয়েটি বিয়ের আগে অন্য একটা ছেলের সাথে সম্পর্কে ছিল। এবং এটি তখন সেই স্বামী আর শ্বশুরবাড়ির লোকেদের কাছে মুড়ি মুড়কির মত মুখরোচক গল্প হয়ে যায়। একইভাবে কোন ছেলে যদি বিবাহের পূর্বে কোন সম্পর্ক করে এবং হয়তো সেই সম্পর্ক স্থায়ী হল না; পরবর্তীতে সেই ছেলে বিয়েও করে, তবে এই যে বিয়ের পূর্বে ছেলেটির সম্পর্ক ছিল এই বিষয়টা কিন্তু তার স্ত্রী ও স্ত্রীর বাপের বাড়ির লোকেদের কাছে মুড়ি মুড়কির মত মুখরোচক গল্প হয়ে দাঁড়ায় না।
সমাজ ছেলেদের জন্য অনেক সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করলেও মেয়েদের জন্য এর সিকি পরিমান সুবিধার ব্যবস্থা করে না। উল্টো মেয়েদের উপর চাপিয়ে দেয় নানা বিধিনিষেধ। যদিও অনেক খ্যাতিমান লেখক, কবি, ঔপন্যাসিক তাদের কবিতায়, উপন্যাসে মেয়েদের অনেক জয়গান গেয়েছেন। তবে সেটা কেবল তাদের লেখনীতেই সীমাবদ্ধ, সমাজে ও জীবন বাস্তবতায় নয়।
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]