December 23, 2024
কলামফিচার ২

ডা. সাবরিনার পোশাক না, সিস্টেমরে কচলান

শাশ্বতী বিপ্লব।। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক মগজ তিনমাস ধইরা ব্যাপক খরায় ভুগতেসিলো। লকডাউনের কারণে নারী বিষয়ক বিনোদনের বড়ই অভাব চারিদিকে। পাবলিক বাসে লুলামির সুযোগ নাই, ধর্ষণের মহোৎসব নাই, স্কুল/বিশ্ববিদ্যালয়/মাদ্রাসাগুলাও বন্ধ। এমনকি, অফিস টফিসের নারী সহকর্মীদের নিয়া রসালো আলাপও নাই। কিয়েক্টা অবস্থা! এইভাবে বাঁচা যায়! আহারে, বড় দুঃখ!

এই ভুখা-নাঙ্গা পুরুষতান্ত্রিক মগজরে আরাম দিতে দৃশ্যপটে পূর্ণদৈর্ঘ্য রঙিন সিনেমার মতো হাজির হইসেন দুর্নীতিবাজ ডাক্তার সাবরিনা চৌধুরী। এর মাঝে অবশ্য মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার শাড়ি নিয়া কচলায়া হালকা আরাম পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু বেশি একটা সুবিধা হয় নাই। কারণ একমাত্র শাড়ি গুনা ছাড়া মীরজাদীর তেমন কোন রঙীন ছবি জোগাড় করা যায় নাই। কিন্তু এইবার ড. সাবরিনাকে যুৎমতো পাওয়া গেছে। সাবরিনার বয়স কম, সে সুন্দরী এবং তার নানা ঢংয়ের ছবি আছে। সেইসব ছবি দেইখা যৌনতার খরায় ভোগা এই পুরুষতান্ত্রিক মগজগুলার ঘরে ঘরে আনন্দের বান উথলায়া উঠতেসে। এই শরীর সাবরিনা কতো উপায়ে ব্যবহার করেছে তার কাল্পনিক গল্প আঁকিবুঁকি কেটে চলেছে পুরুষতান্ত্রিক হৃদয়ে।

তো, গরুর রচনা মুখস্ত করা এই সমাজ, যেকোন রচনারেই যেমন গরুর রচনা বানায়া ফেলে, তেমনি কোথাও কোন নারীরে দেখলেই তারে পর্নোগ্রাফি বানায়া ফেলে। চোখ কান বন্ধ কইরা খালি শরীর আর পোশাক দেখে। সাবরিনারে নিয়াও তাই দেখবে, সে আর আশ্চর্য কি!

শোনেন হে মর্ষকামী ভাই ও বোনলোগ, ডা. সাবরিনা জোচ্চোর, মিথ্যাবাদী, ভণ্ড, দুর্নীতিবাজ, এইটাই আসল কথা। সে সাতপ্যাঁচ হিজাব পড়লেও যা, না পড়লেও তাই। সে সুন্দরী হইলেও যা, না হইলেও তাই। তার রঙিন ছবি থাকলেও যা, না থাকলেও তাই। এবং সে নারী হইলেও যা, পুরুষ হইলেও তাই। একজন জোচ্চোর হইলো জোচ্চোর। সে জোচ্চোর হইসে তার মগজ দিয়া, শরীর দিয়া বা পোশাক দিয়া না। ভুইলা গেছেন, কুড়িগ্রামের দুর্নীতিবাজ ডিসি সুলতানা পারভীনের কথা? সে কিন্তু পুরাদস্তুর হিজাবী ছিলো জনাব। চোখ কান খোলা রাখলে এমন আরো অনেক দুর্নীতিবাজ পাইবেন, যে নারী কিংবা পুরুষ, হিজাবী কিংবা হিজাবী না, কালো কিংবা ফর্সা, কম বয়সী কিংবা বয়ষ্ক, দাড়ি-টুপি ওয়ালা কিংবা ক্লিন শেভড, কপালে নামাজের দাগ পড়সে কিংবা পড়ে নাই, ইত্যাদি ইত্যাদি।

আপনেগো এই রোগটা কবে সারবে কন দেখি? আপনেরা মেধাবী নারী দেখলে তার মেধা না দেইখা শরীর আর পোশাক দেখেন; নারী ধর্ষণের শিকার হইলে পুরুষের খাইসলত না দেইখা নারীর শরীর আর পোশাক দেখেন, দুর্নীতি করলেও সেই শরীর আর পোশাকই দেখেন। রাস্তায়, বাসে, ট্রেনে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে, যেইখানেই আপনারা নারী দেখেন, ওই একটা জিনিসই দেখতে পান। নারীর শরীর নিয়া কচলাইতে মজা লাগে, তাইনা? আপনাদের এই বিকৃত কাম এইবার বন্ধ করেন।  সাবরিনা এবং তার স্বামী আরিফুল হক দুর্নীতি করতে পারসেন সিস্টেমের দোষে, তাদের লিঙ্গের দোষে না। কচলাইতে হয় তো, এই দেশের সিস্টেমরে কচলান। নারীর শরীর আর পোশাকরে এইবার ক্ষ্যামা দেন দয়া কইরা।

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত কলাম লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]