September 20, 2024
মুক্তমত

‘যা চুড়ি পরে বাসায় বসে থাকগে!’

কানিজ ফাতেমা।। ‘নিষেধ অমান্য করে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ-রুখতে পারছে না পুলিশ। চুড়ি পরে বাসায় বসে থাকা উচিত এমন পুলিশদের।’

‘পাশের বাসার ভাবীর ছেলে আরেক এলাকার ছেলের সাথে ঝগড়া করতে গিয়ে মার খেয়ে এসছে। ছি এ কেমন কথা! ছেলে হয়ে মার খেয়ে আসে! চুড়ি পরে বসে বাসায় থাকা উচিত এমন ছেলের।’

‘এ টুকু বিষয়ে মেয়েদের মতো ওমন করে কান্নাকাটি করার কি আছে? ছেলেরা আবার কাঁদে নাকি? ছেলেদের এতো নরম হলে হয় নাকি! ওমন মেয়েস্বভাবী ছেলের তো মেয়েদের মতো চুড়ি পরে বাসায় বসে থাকলেই হয়।’

‘ছি! এই এইটুকু পারলে না৷ তুমি চুড়ি পরে থাকো বাসায়। আমি বের হই।’

অমুকে তমুক করতে পারলো না কিংবা তমুকে অমুক করতে পারলো না। এই যে পারলো না, মানে ব্যর্থ হলো এখন তাকে হেয় করতে আমরা বলবো ‘যা চুড়ি পরে বাসায় বসে থাকগে!’

মানে কেবল পুরুষ নয়, যে কেউ যেকোনো কাজে ব্যর্থ হলেই তাকে তুচ্ছ করে বলা অনেকগুলো কথার মধ্যে ‘যা চুড়ি পরে বাসায় বসে থাকগে।’  একটা কমন বাক্য। এবং দেখা যাচ্ছে আমরা নারীরাই পুরুষদের এই কথাটা বেশি বলে থাকি। এবং নিজের অজান্তেই আমরা তাদের বোঝাতে চাই-  যে হাত চুড়ি পরে সে হাত দুর্বল।

আসলে কি তাই? চুড়ি পরা হাতগুলো কি আসলেই দুর্বল?

চুড়ি পরা হাত কি পারে না বোঝা বইতে?

বিশ্বের সবচেয়ে উঁচুতে দেশের পতাকা উড়াতে কি পারে না চুড়ি পরা হাতগুলো?

বাড়িতে বাড়িতে কাপড় ধুয়ে ঘর মুছে সন্তান সংসার সামলাতে কি পারছে না চুড়ি পরা হাতগুলো?

কি? পারছে না? কই,  আমি তো দেখছি চুড়ি পরে সংসার থেকে রাষ্ট্র সবই দিব্যি সামলে নিচ্ছে হাতগুলো।

চুড়ি পরা হাত মানেই ঘরে বসে থাকা? তাহলে আমি কেন ঘরে বাইরে সর্বত্রই এ হাতগুলো দেখি? শুধু এখনই না, মানুষের বেড়ে ওঠার ইতিহাস জুড়েই তো এই চুড়ি পরা হাতের অবদানের ইতিহাস। তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা কি চুড়িতে, নাকি আপনার-আমার মানসিকতায়?

চুড়ি পরা হাত দুর্বল হাত না। যে মানুষের হাতে চুড়ি থাকে সে মানুষটি সবসময় কেবল বসে থাকে না। চুড়ি পরা হাতটি সবসময় স্থির থাকে না। চুড়িকে ব্যর্থতার প্রতীক মনে করার ধারনাটি ভুল। চুড়ি পরা হাত দুর্বল এই ধারনাটি ভুল। আমরা যা ভুল করছি, মারাত্মক ভুল করছি। প্রয়োজন পড়লে ‘চুড়ি ছাড়া’ তথাকথিত শক্ত হাতের চেয়ে লক্ষগুন শক্ত হওয়ার শক্তি রাখে এই চুড়ি পরা হাতগুলো।

দুর্বলতা চুড়িতে নয়, দুর্বলতা আপনার আমার চিন্তাভাবনায়, আমাদের শিক্ষায়, মনের ব্যাপ্তিতে, মানসিকতায়।

শুধু একটু চিন্তাভাবনা বদলে দেখুন, দেখবেন সমাজ বদলে যাবে।

বলি কি একবার মস্তিষ্কের আবর্জনা স্তুপ পরিষ্কার করে দেখেন আশপাশ পরিচ্ছন্ন মনে হবে। আমরা নিজের চিন্তাধারাকে যদি একটু একটু করে বদলাতে পারি তাহলে সমাজ ও বদলাবে, হ্যাঁ পরিবর্তন আসবেই সমাজে। আজ না হয় কাল, কাল না হয় পরশু তবে আসবেই পরিবর্তন। তবে তার জন্য দরকার সুস্থ চিন্তা চেতনা, মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন মস্তিষ্ক। সম্মান করতে না শেখালে সম্মান আশা করাটা নিতান্তই বোকামি।

ছেলেদেরকে ‘যা মেয়েদের মতো চুড়ি পরে বসে থাকগে’ না বলে লাল, সবুজ চুড়ি পরা হাতে হাত রেখে একসাথে বিশ্বজয়ের কথা বলুন। সম্মান করতে শেখান। দেখবেন সমাজ সুন্দর হবে। সম্মান বাড়বে। বাড়বে ভালবাসা।

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]