নিজের শরীর ও সিদ্ধান্ত বুঝতে আগে সচেতন হোন
সাদিয়া মেহজাবিন।। জৈবিক শরীর তখনই আমার নিজের হিসেবে আমি গণ্য করি, যখন আমার শরীরের সাথে আমার মনের এক সেতুবন্ধন হয়েছে বলে নিশ্চিত হতে পারি। আমরা মূলত সমুদ্রের এক কিনারায় দাঁড়িয়ে, কিনারায় যে দাঁড়িয়ে তা শরীরের এক জৈবিক রূপ, উত্তাল সমুদ্র আমাদের মন এবং এর আরেক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আমার আমি। যে এই সমুদ্র পাড়ি দিয়ে নিজেকে চিনেছে, নিজেকে জেনেছে। নিজেকে চেনেন তখনই দাবি করা শ্রেয় যখন আপনি বুঝতে পেরেছেন আপনার শরীর-মনের সংযোগ করতে সক্ষম হয়েছেন, শরীরের আত্মিক ও জৈবিক চাহিদা সম্পর্কে অবগত আছেন, আপনার জানার উপর ভিত্তি করে অধিকার স্থাপন করতে পারছেন এবং আপনি অধিকার সম্পর্কে সচেতন। যেহেতু আমরা এখনো শরীর সম্পর্কে সচেতন নই, সেখানে কীভাবে এর সিদ্ধান্ত নেবেন? আর সিদ্ধান্ত নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগবেন না? তাহলে নিজেকে চিনুন।
আমরা অনেকেই নারীর অর্গাজম নিয়ে জানি না। অর্গাজম হচ্ছে সঙ্গমের সর্বাধিক সুখ। আপনি সচেতন না হলেও পুরুষ সচেতন তার শারীরিক এই চাহিদা নিয়ে। তাহলে আমাদের প্রয়োজন আগে সচেতনতা এবং জানা। এখন দেখা যায় অনেকেই সচেতন তবে তারা সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে না। তাদের হয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এই সমাজ, পরিবার, মা, বাবা, ভাই, স্বামী। দেশের কোনো আইন বা মনুষ্যত্বের আইনেও নিজের সিদ্ধান্ত নিজেকেই নিতে বলা হয়। আমার বাবার এক উক্তি খুব মনে পড়ছে, “অন্যের বুদ্ধিতে বাদশা হওয়ার চেয়ে মা নিজের বুদ্ধিতে ফকির হওয়া ভালো।” মানে আপনি যদি একটি ভুল সিদ্ধান্ত নেন তবে তা একান্ত আপনার।
নিজের সব কিছুই নিজের কাছে আপন। আপনি বলতে পারেন আমার শরীরের আবার কীসের সিদ্ধান্ত! আমাদের শরীরের সিদ্ধান্ত বলতে বোঝায় নিজের শরীর সংক্রান্ত বিবিধ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আপনার আছে। আপনি যদি ওড়না ভালো না বাসেন বা পরতে মন না চায় তাহলে পরবেন না। এখানে আপনাকে কেউ এসে আইন খুলে যেন বলতে না পারে, “মাইয়ারা ওড়না না পরলে বুক দেখা যায়।”এখন যদি কেউ নিজের ইচ্ছায় বুক হাত পা দেখাতে চায় এখানে কোন সমস্যা নাই। কিন্তু যদি অন্যের চাপে পড়ে নিজেকে বিবস্ত্র করতে হয় তাহলে তা অন্যায়। কেননা আপনার উপর চাপ প্রয়োগের অধিকার কারো নেই। যদি আপনি এক্ষেত্রে নিজের পেশা হিসেবে যৌনকর্মীর কাজ বেছে নেন তাও একান্ত আপনারই সিদ্ধান্ত। এখানে অন্য কারো মতামত বা জোর প্রয়োগের অধিকার নেই।
ধরুন আপনার পার্টনারের সাথে আজকে আপনার যৌনমিলনের ইচ্ছে নেই। তাহলে নিজেকে জোর করবেন না। অন্যের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে করা যে কোন কিছুই অন্যায়। এখন তা আপনার ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য তা অন্য সকলের ক্ষেত্রেও বহাল থাকে। একজন পুরুষ যদি গরম লাগলে উদোম শরীরে সারা দুনিয়া ঘোরাকে ঠিক মনে করে তাহলে আপনার গরম লাগলেও তা ঠিক হতে পারে। এখন যদি আপনাকে দেখে কারু সমস্যা হয়, তবে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা তার ব্যাপার। আপনার মাথা ব্যাথা না। একে অন্যের প্রতি চাহিদা থাকা অন্যায় কিছু না তবে আপনাকে মানা করার অধিকার রাখা এবং তা হরণ না করাই হচ্ছে মূল বিষয়। এবং আপনার নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়া, তাতে বহাল থাকা সবই আপনার অধিকার।
নিজেকে অন্যের দাসী মনে করলেই আপনি শরীর, মন সব কিছুর উপর থেকেই অধিকার হারাবেন। অনাকাক্ষিত সন্তান রাখবেন নাকি না, তা পার্টনারের সাথে মতের মিলের উপর যেমন নির্ভর করে তেমন চাইলেই আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গর্ভপাত করানো যাবে না। সন্তান নেবেন নাকি না, এসব বিষয়ে আপনার মতামত সমান গুরুত্বপূর্ণ। এসকল বিষয়ে সচেতনতাই আমাদেরকে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে এক কদম এগিয়ে রাখে। তাহলে নিজের শরীর, নিজের সিদ্ধান্তকে বহাল করুন। আর আমার কাছে এখনো মনে হয় এটা আমাদের বোকামি যে আমরা এসব নিয়ে সচেতন নই।
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]