করোনাকালে অভিভাবকেরা কেমন আছেন?
শাশ্বতী বিপ্লব।। দীর্ঘ পাঁচ মাসের বেশি হতে চললো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। চার দেয়ালের মাঝে বন্দী হয়ে আছে আমাদের সন্তানেরা। বাইরে যাওয়া নাই, আড্ডা-গল্প নাই, নিজের মতো করে মুক্ত সময় কাটানো নাই। জীবন আটকে গেছে ছোট্ট ইলেকট্রনিক ডিভাইসে। এতো দমবন্ধ পরিবেশ আগে কখনোই আসে নাই ওদের জীবনে। আসে নাই অভিভাবকদের জীবনেও। কেমন আছেন এই করোনাকালে শহরে বাস করা অভিভাবকেরা? বিশেষ করে যাদের ঘরে কিশোর-কিশোরী সন্তান আছে, কেমন আছেন তারা?
এতোটা কিংকর্তব্যবিমুঢ় সম্ভবত কখনোই হতে হয় নাই অভিভাবকদের এর আগে। অনেক বাঘা বাঘা, সমঝদার অভিভাবকও অসহায় বোধ করছেন কিশোর-কিশোরী সন্তান সামলাতে গিয়ে। তাদের আচার-আচরণ বদলে গেছে হঠাৎ করেই। অনেকেই বাবা-মায়ের কথা শুনছে না, মুখেমুখে তর্ক করছে। কেউ বিষাদে ভুগছে তো কেউ বদমেজাজী হয়ে উঠেছে।
কিশোর বয়সটা এমনিতেই নাজুক। তার উপর সারাক্ষণ বাবা-মায়ের চোখের সামনে থাকাটাও কেমন যেন বাড়তি সমস্যা তৈরি করছে ওদের জন্য। সন্তানকে অভিভাবকের কিংবা অভিভাবককে সন্তানের এতোটা মুখোমুখি থাকতে হয় নাই আগে কখনো। সন্তান স্কুলে গেছে, বাবা-মা অফিসে গেছেন। যার যার কাজ শেষে আবার সবার দেখা হয়েছে ঘরে। আর এখন শুধু স্কুলই নয়, অফিসটাও ঘরেই চলছে। কমেছে পরিবারের সকলের ব্রিদিং স্পেস।
সারাক্ষণ জুম মিটিং, হোয়াটসঅ্যাপে টেক্সটিং কিংবা ল্যাপটপে লেখালেখি চলছে। তার উপর মোবাইল ফোন তো আছেই। এইসবের হাত ধরে ঘরে ঢুকে গেছে কর্মক্ষেত্রের ব্যস্ততা, টেনশানও। ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ এর ফাঁদে পড়ে, অভিভাবকেরা না পুরোদমে ‘ওয়ার্কে’ আছেন, না ‘হোমে’। ফলে তৈরি হচ্ছে বাড়তি মানসিক চাপ। সন্তানদের ক্ষেত্রেও তাই। পাঁচ পাঁচটা মাস ধরে টোয়েন্টিফোর সেভেন প্রত্যেকে প্রত্যেকের এই বাড়তি মানসিক চাপ আর অস্থিরতা সহ্য করে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়।
প্যারেন্টিং সহজ নয় সেটা জানাই ছিলো শহুরে বাবা-মায়ের। কিন্তু এতোটা কঠিন সেটা এর আগে টের পান নাই তারা। প্যারেন্টিংয়ের গতানুগতিক কিংবা আধুনিক কৌশল, কোনোটাই যেন ঠিক কাজে দিচ্ছে না। মারধোর, বকাঝকা বা রাগ দেখানো তো দূরের ব্যাপার, সন্তানের সাথে বেশি সময় কাটানোটাও কেমন লেজেগোবরে পাকিয়ে যাচ্ছে অনেকের।
জানিনা এই দুঃসময় কবে শেষ হবে। তবে এটুকু জানি, ব্যাপকভাবে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার দরকার এই সময়। সন্তানদের যেমন, তেমনি অভিভাবকদেরও। এই করোনাকালে সন্তানকে নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি অভিভাবকদের অবশ্যই মনোবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত। এতে সংকোচের কিছু নাই। একা একা সবসময় সবকিছু সমাধান করা যায় না। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। সময়টা অনুকূল নয়, এটুকু আমাদের মেনে নিতেই হবে। সকল অভিভাবকেরা এই দুঃসময় কাটিয়ে উঠুক। ভালো থাকুক আমাদের সন্তানেরা।
[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত কলাম লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]