‘যখন নিজের চেয়েও আরেকজনের ভালো চাইবেন, সেই হলো প্রেম’
গ্লোরিয়া মারিয়া স্টেইনেম একজন আমেরিকান নারীবাদী, সাংবাদিক এবং সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মী। ষাট ও সত্তরের দশকে আমেরিকায় যখন নারীবাদী আন্দোলনের ঝড় উঠেছে তখন তিনি হয়ে উঠেছিলেন আমেরিকান নারীবাদীদের একজন গ্রহণযোগ্য নেতা ও মুখপাত্র। স্টেইনেম বহু বইয়ের লেখক। তার লেখা মাই লাইফ অন দ্য রোড একটি বেস্টসেলার। নারীবাদী বিখ্যাত ম্যাগাজিন এমএস ম্যাগাজিন-এরও প্রতিষ্ঠাতা তিনি। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা নিয়ে নির্মিত তার ডকুমেন্টারি সিরিজ উইমেন প্রকাশের আগে এই সাক্ষাৎকারটি নেয় দ্য গার্ডিয়ান, প্রকাশ হয় ৪ মার্চ ২০১৭ সালে। ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন আতিকুল ইসলাম ইমন।
আপনার সবচেয়ে বড় ভয় কী?
ঠিক মরতে চলেছি আর তখন বলছি, ‘কিন্তু…’
শৈশবের প্রথম স্মৃতিটি কী?
বাবা গাড়ি চালাচ্ছিলেন আর আমি মায়ের কোলে শুয়ে ছিলাম।
জীবিত কোন ব্যক্তিকে আপনি সবচেয়ে বেশি প্রশংসা করবেন?
ডা. ডেনিস মুকওয়েগে। কারণ তিনি নারীর প্রতি যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে তত বড় এক চরিত্র ঠিক বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে নেলসন ম্যান্ডেলা যত বড়।
আপনার কোন বৈশিষ্ট্যটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আক্ষেপ করেন?
শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করা।
অন্যদের মধ্যে কোন বৈশিষ্ট্য দেখলে সবচেয়ে বেশি আক্ষেপ করেন?
একই ব্যক্তির মধ্যে সহানুভূতি ও সেন্স অব হিউমার না থাকা।
সম্পত্তি ছাড়া আপনার কেনা সবচেয়ে দামি জিনিস কী?
বয়স যখন ত্রিশের ঘরে তখন দোকানের জানালা দিয়ে এক জোড়া দামি জুতার দিকে তাকাচ্ছিলাম। তখন ফটোগ্রাফার গর্ডন পার্কস আমার পিছনে এসে দাঁড়ান। তিনি তখন আমার অনুভূতি সহজেই বুঝতে পারেন কারণ তিনি আমার চেয়েও গরীব ঘরে বেড়ে উঠেছিলেন। তিনি তাৎক্ষনিক আমাকে বাধ্য করেন আমার ক্রেডিট কার্ড দিয়ে এই বুটজোড়া কিনতে।
যদি কোনো সুপারপাওয়ারের অধিকারী হন তবে কোন সুপারপাওয়ারটি চান?
মানুষকে দেখাতে সক্ষম হতে চাই যে আমরা একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত, কেউ কারো চেয়ে উপরে বা নিচে নয়।
আপনার চেহারার কোন বিষয়টি সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করেন?
আমি চেয়েছিলাম আমার মুখমণ্ডলের গঠন যেন কৌণিক হয়। এছাড়া যে পৃথিবীতে বেশিরভাগ মানুষের গায়ের রঙ মধুরঙ থেকে শুরু করে কৃষ্ণবর্ণ সেখানে সাদা হওয়ায় অদ্ভুত লাগে। বিশেষত এই ব্যাপারটি আমাকে প্রচুর মানুষের সঙ্গে একই দলে ফেলে যারা মনে করে শুভ্র রঙের এক উচ্চতর অর্থ রয়েছে।
আপনার জীবনীর উপর নির্মিত চলচ্চিত্রে আপনার চরিত্রে কার অভিনয় করা উচিত?
আমার ছোটবেলার চরিত্রে নাটালি উড। বেড়ে ওঠার কালে যদি আড্রে হ্যাপবার্ন থেকে সিসিলি টাইসনে যেতে পারতাম। আমি মারিসা টোমি ও মেরিল স্ট্রিপের গুণকীর্তন করি। অবশ্যই স্ট্রিপ মানুষ বা প্রাণি- যে কোনো চরিত্রে অভিনয় করতে পারেন। পাশাপাশি উনি একজন দুর্দান্ত রাজনৈতিক কর্মীও।
আপনার সবচেয়ে বিরক্তিকর অভ্যাসটি কী ?
যতটুকু করতে পারব তার চেয়েও বেশি করার জন্য নিজের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া। আমার চোখ আমার পেটের চেয়েও বড়।
প্রিয় গন্ধ ?
ভ্যানিলা
প্রিয় শব্দ কী?
“হ্যালো”? বিদ্রূপ অর্থে। এছাড়া “Fanfuckingtastic!”
কী আপনাকে অসন্তুষ্ট করে তোলে?
দেখতে দেখতে কারো অদৃশ্য হয়ে যাওয়া।
কোন বইটি আপনার জীবন পরিবর্তন করেছে?
শৈশবে, লিটল ওম্যান।
আপনাকে কেউ বলেছে, এরকম সবচেয়ে খারাপ কথাটি কী ?
আমি গভীরভাবে কেয়ার করি এমন কিছু বা কারো প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছি।
যখন বড় হয়েছিলেন তখন কী হতে চেয়েছিলেন?
প্রথমে ঘোড়ার র্যাঞ্চার হতে চেয়েছিলাম, পরে ড্যান্সার।
বাবা-মার কাছে আপনার ঋণ কী?
আমার মায়ের প্রতি আমি বিশাল ঋণী কারণ তিনি আমার জন্য একটি প্রেমময় শৈশব তৈরি করেছিলেন। যদিও তার নিজের এমন একটি দারুণ শৈশব ছিল না। আর আমার বাবার প্রতি- নিরাপত্তাহীনতার ব্যাপারেও ঠিকঠাক থাকার জন্য, তিনি সবসময় বলতেন, “আগামীকাল কী হবে যদি না জানতাম তবে আরো ভালো হতো”।
কাকে ‘দুঃখিত’ কথাটি সবচেয়ে বেশিবার বলতে চান এবং কেন?
আমার পুরনো দুই প্রেমিকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছিলাম। কয়েক বছর পর ক্ষমা চাইতে একজনকে লাঞ্চে ডেকেছিলাম, তখন ব্যাপারটি আরো খারাপ হয়েছিল।
প্রেমের অনুভূতি কেমন?
প্রেম হলো এমন অনুভূতি তখন আপনি আপনার নিজের চেয়েও বেশি আরেকজনের ভালো চাইবেন।
জীবনে শ্রেষ্ঠ চুম্বন কোনটা?
ম্যানহাটনে গ্রীষ্মের এক রাতের শেষের দিকে- একটি রাস্তার পূর্ব ও পশ্চিম দিক থেকে হাঁটতে-হাঁটতে শেষ পর্যন্ত যখন আমরা রাস্তার মাঝখানে দেখা করি।
জীবিত ব্যক্তিদের মধ্যে কাকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করেন এবং কেন?
এই মুহূর্তে ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই মুহূর্তে ঘৃণার বেলায় তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে এমন কেউ নেই। এমনকি পুতিন বা প্রধানমন্ত্রী মোদিও না। তবে তারাও একই জায়গায় রয়েছেন।
সবচেয়ে কম বেতনের কোন চাকরিটি করেছিলেন?
একটি বেবিশপে সেলসগার্ল। যেখানে অন্যরা বলত, “মেয়েটি ইহুদি কিন্তু ছেলেটি আমেরিকান”। আর কলেজের পর লন্ডনে ওয়েট্রেসের চাকরি করেছিলাম।
আপনার সবচেয়ে বড় হতাশাটি কী?
ভবিষ্যতের মৃত্যু দেখা, ববি কেনেডি থেকে শুরু করে সব প্রিয় বন্ধুদের মৃত্যু।
রিলাক্সড থাকেন কীভাবে?
বন্ধুদের সঙ্গে ডিনার, শহরে ঘুরে বেড়ানো, আমার বিড়ালটিকে কোলে নিয়ে বই পড়া। আমি কখনো খেলাধুলা করিনি। যদি বসে থাকার জন্য অলিম্পিকে কোনো খেলা যুক্ত হয় তবে হয়ত আমি সেখানে থাকব।
আপনি কতবার সেক্স করেন?
৭০ বা তার বেশি বয়েসের পর মস্তিষ্কের যৌন বিষয়ক সকল কোষ অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এটি খারাপ বা ভালো নয়, কেবল আলাদা একটি বিষয়। এবং একইভাবে আগের মতোই দুর্দান্ত।
মৃত্যুর সবচেয়ে কাছাকাছি এসেছিলেন কবে?
আমি তিন বার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছি, কখনোই মৃত্যুর কাছাকাছি আছি অনুভব করিনি। তবে একবার আমি পার্কে হাঁটছিলাম এবং একটি গাড়ি আমার নাকের ডগা দিয়ে চলে গিয়েছিল।
আপনার সবচেয়ে বড় অর্জন কোনটি বলে বিবেচনা করেন ?
এখনও সেরকম কোনো অর্জন নেই।
আপনাকে মানুষ কীভাবে মনে রাখুক বলে চাইবেন?
এমন একজন হিসেবে যে তার আশেপাশের পৃথিবীকে আরেকটু বেশি মানবিক ও আরেকটু কম শ্রেণি-বিভাজিত অবস্থায় রেখে বিদায় নিয়েছে।