November 2, 2024
মুক্তমত

কোনটা বেশি জরুরি- মানসম্মান না আত্মসম্মান?

সিদ্রাত মুনতাহা।। মানসম্মান এবং আত্মসম্মান দুটো কি একই জিনিস? মানসম্মানবোধ বলতে আমরা কী বুঝি? আর আত্মসম্মানবোধ বলতে কী বুঝি? কোনটা বেশি জরুরি?

চলুন একটু আলোচনা করা যাক। তথাকথিত সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের জন্য বরাবরই আত্মসম্মান এর চেয়ে মানসম্মান এর গুরুত্ব বেশি। এখন কথা হচ্ছে মানসম্মান কী? মানসম্মান কই থাকে? আমাদের সমাজে নারীর মানসম্মান বলতেই তার সম্ভ্রম এবং সতীত্বকে বুঝানো হয়। সতীত্ব চলে যাওয়া অর্থ মানসম্মান চলে যাওয়া। যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে, তার মানসম্মান সব চলে গেছে এমনটাই ভাবে সবাই। কেন ভাবে? কারণ ঐ যে মানসম্মান বলতেই নারীদেহ। নারীদেহ উলঙ্গ হওয়া মানে মানসম্মানহীন হয়ে যাওয়া। এমনকি অনেকক্ষেত্রে প্রেম করলেও তাকে মানসম্মানহীন ধরা হয়।

একজন নারী ব্যক্তিত্বহীন হতে পারে। অশিক্ষিত হতে পারে। জড়বুদ্ধি সম্পন্ন হতে পারে। সবই গ্রহনযোগ্য কিন্তু মানসম্মান না থাকলে অগ্রহণযোগ্য। মানসম্মান ব্যাপারটা পুরোটাই যেন নারীর শরীরকেন্দ্রিক।

অপরদিকে আছে আত্মসম্মান।

আত্মসম্মানবোধ বলতে আমরা কী বুঝি? যে নিজের সম্মান নিজে রক্ষা করতে জানে তাকেই আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে জানি। আর নিজের সম্মান রক্ষা মানে নিজের দেহের সম্মান বা সতীত্ব রক্ষাকে কিন্তু বুঝায় না। আত্মসম্মান রক্ষা মানে নিজেকে পুরোপুরিভাবে সম্মান করা। হোক তা শারীরিকভাবে বা মানসিকভাবে। নিজেকে ছোট হতে না দেওয়া। নিজের সম্মান বজায় রেখে চলা।

আপনার সাথে যেকোন দুর্ঘটনাই ঘটতে পারে। আপনি ‘‘সতীত্ব’’ নামে সমাজের বেধে দেয়া এক অলীক বস্তু হারালেন বলে নিজেকে সস্তা ভাবা শুরু করলেন এবং মাথা নিচু করে চলা শুরু করলেন। এর মানে আপনার আত্মসম্মানবোধ নেই। যদি থাকত আপনি আপনার সম্মান শুধু আপনার শরীর দিয়ে বিচার করতেন না। আর এই আত্মসম্মানবোধটা থাকা উচিত সব ক্ষেত্রে। প্রতিটা সর্ম্পকের ক্ষেত্রে। আপনি যতক্ষন নিজেকে অসম্মান না করবেন বা নিজেকে অসম্মান করার সুযোগ না দেবেন, কেউ আপনাকে অসম্মান করতে পারবে না, কিংবা যদি কেউ আপনাকে অনবরত অসম্মান করে আপনার উচিত নিজ দায়িত্বে সে সর্ম্পক থেকে বের হয়ে যাওয়া যদি আপনার আত্মসম্মানবোধ থাকে।

সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীদের জীবনে এই আত্মসম্মান শব্দটার প্রয়োগ গুরুত্বহীন বরং মানসম্মান রক্ষার গুরুত্ব বেশি। আর এটাই অন্যতম কারণ নারীদের সবকিছুতে ভুক্তভোগী  হওয়ার। অথচ একটা নারীর জন্য “আত্মসম্মানবোধ ” অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অর্থবহ একটা শব্দ।

একটা কথা মনে রাখবেন, আত্মসম্মান বজায় রেখে চললে কখনো মানসম্মানহীন হবেন না। কিন্তু সেই মানসম্মান শব্দটার কদর বেশি করে তা রক্ষা করতে গেলে হতে পারে আপনাকে আত্মসম্মানহীন হতে হচ্ছে। এখন সিদ্ধান্ত আপনার। আপনি নিজেকে নিজে সম্মান করে চলবেন নাকি সমাজের চোখে তথাকথিত মানসম্মান রক্ষার জন্য নিজের সত্তা বিসর্জন দিয়ে দেবেন। ভাবুন।

 

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত মুক্তমত লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]