তোর গল্প
মেহেরুন নূর রহমান।।
বেশি কথা বলা মেয়ে তোর স্বামীর পছন্দ নয়
সে বলেছে, মেয়েরা হবে শান্ত, লক্ষ্মী, মেয়েলী
বকবক করা চঞ্চল মেয়েরা অনাকর্ষণীয়
তার চোখে আকর্ষণীয় হবি বলে, ছটফটে তুই শান্ত হতে থাকলি ধীরে ধীরে
শাড়ি পরতে শিখলি, সাজতে শিখলি
সময় লেগেছিল, অনেক কটুবাক্য শুনেছিস
একসময় রূপচর্চায় পারদর্শী ধীরস্থির লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে হয়ে গেলি
নীল তোর প্রিয় রঙ নয় আমি জানি, তোর প্রিয় রঙ হলুদাভ সবুজ
তবু নীল শাড়িতে নিজেকে সাজাস তোর স্বামী চায় বলে
টিপ তোর খুব প্রিয় ছিল, ছোট্ট মিষ্টি লাল টিপ
তোর শাশুড়ির টিপ পছন্দ নয়, শাশুড়ির প্রিয়পাত্রী হতে টিপ পরা ছাড়লি
বিয়ের পর শাশুড়ি এবং স্বামী বললো চাকরি ছাড়তে হবে
চাকুরে মেয়েরা ঘরোয়া হয় না
তোরও মনে হলো তাই তো, কী দরকার বাবা ঝামেলার
প্রাতিষ্ঠানিক উজ্জ্বল ডিগ্রিগুলো কাগজ হয়ে পড়ে রইলো দেরাজে
বাড়ির রান্না হয় শাশুড়ি কিংবা স্বামীর পছন্দে, তাই খাস তুই সোনামুখ করে
নাটক পাড়ায় আর যাস না, এসব তোর বরের বোরিং লাগে
স্বামী তোর রাগী, অল্পতেই চীৎকার, চেঁচামেচি
শাশুড়ি বলে, রাগ পৌরুষের লক্ষণ, তুমি শান্ত থাকো
স্বামীর মন মজলো অন্য কোথাও
শাশুড়ি বোঝালো, ছেলেরা এরম একটু আধটু করেই, ওসব কিছু না
ঘরের ছেলে ঘরেই ফিরে আসবে, তুমি বাড়াবাড়ি করো না
আশ্চৰ্য তুইও সব মেনে নিলি
এভাবে মানতে মানতে, বদলাতে বদলাতে, তুই কেমন অন্যরকম হয়ে গেলি
কেমন ঘুরিয়ে কথা বলা শিখেছিস
গল্প কবিতা নয়, শাড়ি গয়না রান্নাবান্নার গল্প শুধু মুখে
বৃষ্টি জ্যোৎস্না এখন বোধকরি তোকে আর টানে না
বরং কোথায় কোন নতুন প্লট কিনলি তাই বলতে ভালবাসিস
আমার চিরচেনা তুই আজ কেমন অচেনা
তারপরও
আর কেউ না বুঝুক আমি তোকে বুঝি, আর কেউ না জানুক, আমি কিন্তু জানি
গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে তোর বুক ভার হয় হাহাকারে
যখন তখন বাথরুমে কল ছেড়ে কাঁদিস জোরে
সাজতে গিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখে চমকে উঠিস
কারণ ওপাশে যে দাঁড়িয়ে সে তো অন্য কেউ, তুই না
নিজেকে ফিরে পাবার ব্যাকুল বাসনায় লেপ্টে যেতে থাকে তোর কাজল