November 21, 2024
সাহিত্যকবিতা

কেউ জিগায় নাই

শাশ্বতী বিপ্লব।। 

আমাগের মতিন ভাইজান
আপনেরা সগ্গলেই তারে চেনেন
বীর মুক্তিযোদ্ধা আছিল
স্বাধীন দ্যাশে সগ্গলে বাড়ি ফিরলেও
মতিন ভাইজান ফিরে নাই।
জয়নব খালাও ছাওয়ালের দুঃখে মইরা গেলো
বেশিদিন বাঁচে নাই।
তয়, দ্যাশের মানুষ ভুলে নাই তারে
বুক ফুকায়া আইজও গর্ব করে
গেরামে ঢুকনের মুখেই ওইযে ইস্কুলখান
ওইখানে বাঁইচা আছেন মতিন ভাইজান
“শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন প্রাথমিক বিদ্যালয়”
মাথা উঁচা কইরা ঘোষণা করে মতিন ভাইজানের বিজয়।

যুদ্ধে জীবন দিসিলো মোমেনা খালাও
রাজাকারের দল পাকিগুলারে বাড়িত ডাইকা আনে যখন
মোমেনা খালা ঢাল হইয়া দাঁড়ায় তখন
শরীলডারে খুবলায়া ছিঁড়তে দেয় শুয়োরগুলারে
ধর্ষণের শিকার হইতে হইতে খালি দোয়া পড়ে
“হে খোদা, আমার ভাইগুলারে তুমি নিরাপদে রাইখো
কেউ যেন ধরা না পড়ে, খালি এইটুকুন দেইখো।
তোমার কাছে কোনদিন কিছু চাই নাই
আমি মরি, তবু বাঁচুক আমার মুক্তিযোদ্ধা ভাই।”
একখান কাটা স্তন আর শইল্লে বীভৎস অত্যাচারের চিহ্ন নিয়া
খালার উদাম শরীরডা পইড়া ছিলো উঠানে
তবু শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বইলা তারে কেউ রাখে নাই মনে
তার নামে কেউ বানায় কোন ইস্কুল
মোমেনা খালা গেরামের গর্ব হইতে পারে নাই
কবরে তার কেউ দেয় নাই ফুল।

যুদ্ধ শ্যাষে বীরের বেশে ফিরসিলো রমিজ কাকা
গ্রেনেড হামলায় উইড়া গেসিলো ডান পাখান
তারে ফিরা পাইয়া সগ্গলে খুশীতে হইসিলো আটখান
জড়ায়া ধরসিলো বুকে
আপনজন ফিরা আসনের সুখে।
পেত্তেক বছর ১৬ই ডিসেম্বরে
ইস্কুলের বড় মাঠটায় যে অনুষ্ঠান হয়
রমিজ কাকা সেইখানে মুক্তিযুদ্ধের গল্প কয়।

গেরামে ফিরসিলো মল্লিকাদিদিও
কনসেনট্রেশান ক্যাম্পে নয়মাসের যুদ্ধ শ্যাষে
ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, ভরা পোয়াতির বেশে।
মল্লিকাদি ফিরা আসনে খুশি হয় নাই কেউ
জায়গা হয় নাই আপন বাপ, ভাইয়ের ঘরে।
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা বইলাও কেউ ভাবে নাই তারে।

রমিজ ভাইয়ের যুদ্ধ শ্যাষ হইসে ভালোবাসায়
মল্লিকাদির যুদ্ধটা চলসে আজীবন ঘৃণা আর অবহেলায়
যুদ্ধের গল্পটা কইতে পারতো সেও
কইতে পারতো কী হারাইসে তার
কইতে পারতো স্বাধীন দেশে সম্মান না পাওয়ার হাহাকার!
মুক্তিযোদ্ধা বইলা তারে ডাকেনা কেউ
কোনো তালিকায় ওঠে না তার নাম
“বীরাঙ্গনা” আর “সম্ভ্রম” হারানির তকমায়
খুশি হইসে দেশ
মল্লিকাদি খুশি হইসে কিনা, কেউ জিগায় নাই।