May 16, 2024
ফিচার ১কলাম

আকাশ থেকে নামিয়ে এনে স্বপ্ন বুনে যাই…

শাওন মাহমুদ।।

আমি কেবলই স্বপনও করেছি বপনও, আকাশে আমি –
স্বপ্ন তো আকাশেই বুনতে হয়। শেকড় বড় হয়ে সবুজ পাতা ছড়াতে ছড়াতে ধরাদামে এসে পৌঁছায়। মাটির কাছে আসলে তাতে ফুল ফোটে, ফল আসে।

আমরা নারী, জীবন যাত্রার লয়ে হাঁটতে হাঁটতে কখনোই খেয়াল করি না, কতগুলো স্বপ্ন আকাশের কাছে জমা দিয়েছি, দিচ্ছি। শেকড় বড় হয়ে হাতে এসে পৌঁছালেও ছুঁয়ে দেখার সময় পাই না। যখন পেছনে ফিরে আবারও টেনে ধরতে চাই, ততক্ষণে শুকনো হয়ে ঝরে যায় স্বপ্ন শেকড়। অথচ সময়টা কিন্তু নিজের ছিল।

একদম কুট্টিকালে সকালবেলায় সোয়ান লেক ব্যালের মিউজিক স্কোর আমাদের ঘরের এলপি প্লেয়ারে চলতো, তখন সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে ব্যালেরিনা হবার স্বপ্ন বুনতাম। বড় হবার সাথে সাথে ভুলে গিয়েছিলাম সেই স্বপ্নটির কথা। যখন মনে পরলো, তখন অনেক সময় চলে গেছে। হঠাৎ মনে হয়েছিল ব্যালে শিখতে পারিনি বলে কি আর কিছু শিখবো না! বয়সকে সাথে নিয়েই স্কোয়াশ খেলা শিখতে শুরু করলাম। অনেকে অবাক হয়েছে, হেসেছে। তিন বছরের মাথায় স্কোয়াশে পারদর্শী হয়ে, টুর্নামেন্টে রানারস্ আপ মেডেল নিয়ে ঘরে ফিরেছিলাম।

গান, সুর, তাল আর লয়ে বড় হবার মাঝে আরেকটি স্বপ্ন বুনেছিলাম, পিয়ানোতে মাস্টার হবো। সময় মতন, সময় করে পিয়ানো শেখা হয়নি আর। দুটো হাতের দিকে তাকালে প্রায়ই মনে হতো, আমার তো পিয়ানোর কর্ডে হাতের আঙ্গুল চালানোর কথা ছিল। স্বপ্ন পূরণ হয়নি তো কী হয়েছে! ছাদবাগানে মাটির সাথে সবুজের মাঝে দুটো হাত যখন ফুল ফোঁটায় তখন পিয়ানোর মূর্চ্ছনা শুনতে পাই আমি। মাটিতে হাত বুলিয়ে সুর তুলি, রচনা করি সবুজ স্বপ্ন।

পড়াশোনায় বরাবর মেধাবী ছিলাম আমি। প্রচুর পড়বো, বড় বড় ডিগ্রী নেবো বলে পণ করেছিলাম। জীবন যাত্রায় সে স্বপ্নের ছন্দপতন হয়েছিল আমার। বয়স বাড়বার পর যখন অঢেল সময় পেলাম তখন দেখলাম পড়বার বয়স আর নেই। শুরু করে দিলাম ঘরেই পড়াশোনা। কলাম লিখতে বসলাম। আমি যা জানি, সেই জ্ঞানেই লেখা শুরু। যতটা জানি ততটাই জানাতে চেয়েছি আমার লেখায়। চাষাবাদ, সূঁইসুতোর কাজ, রান্না, জীবন যুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধ সহজাত চর্চার অভ্যাস। আমার কলামে এসবের প্রতিচ্ছবি সবাইকে জানাতে শুরু করলাম। লিখছি এখনও। লেখার জন্য পড়ছি। পড়তেই থাকবো আজীবন।

স্বপ্ন সবসময় বড় হতে হয়। সব স্বপ্ন পূরণ করবার সাধ্য কারো নেই। তবে নিজ সাধ্য অনুযায়ী বড় স্বপ্নগুলোকে নিজের মতন করে সাজিয়ে তুলতে পারাটাই সার্থকতা। বয়স একটা সংখ্যা মাত্র। সবার জীবনে বিষন্নতা, আক্ষেপ, বঞ্চনা আসবেই। সেগুলো সময়ের সাথে বিলীন করে দেয়ার দায়িত্ব শুধুমাত্র নিজ কাঁধেই বর্তায়। অন্যকে দোষারোপ করা সহজ। এই সহজ প্রক্রিয়া থেকে বের হতে হয় নিজেকেই। না পাওয়ার হিসেব কষাটা খারাপ নয়, তবে দীর্ঘ সময় ধরে হিসেব করাটায় ঝামেলা আসে। সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হয় নিজ গুণের হাত ধরে, নিজ সাধ্য মতন।

প্রতিটি দিন নতুন। প্রতিদিন নতুন পৃথিবী। ভালো থাকতে কারো জন্য অপেক্ষা নয়। স্বপ্নগুলো আকাশ থেকে নামিয়ে এনে নিজের মতন করে বুনে নিতে হয়। অন্যের সাথে তুলনা নয়, নিজ তুলনায় নিজেকে সাজানোর পথে, পৃথিবীর সকল নারীর প্রতি আহ্বান জানাই।

নারী নয়, মানুষ হিসেবে মানুষের জয় হোক। ভালোবাসাময় হোক প্রতিটি মুহূর্ত।