ফিদেল কাস্ত্রো- এক নারীবাদীর নাম!
বিদেশি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধটির ভাবানুবাদ করেছেন সাদিয়া মেহজাবিন।।
ফিদেল কাস্ত্রো’র নারীবাদী সত্তাটার কথা আমরা অনেকেই জানি না। আজকের প্রবন্ধে সেই অজানা দিকটিরই সন্ধান করতে পারি।
২০০৮ সালে কাস্ত্রোর ভাই শাসনভার নেওয়ার আগে, কাস্ত্রো প্রায় ৫০ বছরের মত কিউবা শাসন করেছেন, আমেরিকার অগণিত হত্যা প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে গেছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা নজর দেব, ক্যাস্ট্রোর জীবন দর্শনের অন্য একটি দিক নিয়ে- নারীদের পাশে তার অবস্থান এবং দ্বীপের নারীদের অধিকার সুনিশ্চিতে তার পদক্ষেপ, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তার জায়গাটি ধরার চেষ্টা করবো।
কাস্ত্রোর সময়কালে বহু নারী অধিকার সংস্থা গঠন হয়েছিল এবং সেসব সংগঠন এখনো শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
ফিদেল কাস্ত্রো নারীবাদীদের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করেছিলেন। ফিদেল কাস্ত্রো ও রাউল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে, “নারীর কাজ, কিউবায় লিঙ্গ সমতা এবং ভবিষ্যতে কিউবায় নারীর শাসন গড়ে তুলতে” গুরুত্বপূর্ণ আইন তৈরি এবং আইনের প্রয়োগ বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, নারীর অগ্রগতির জন্যে কিউবা বিশ্বের অন্যতম অগ্রসর দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল।
“লোকে বলে, আমরা কীভাবে নারীদের রাইফেল দিতে পারি যেখানে বেশিরভাগ পুরুষ নিরস্ত্র? জবাব হলো- কারণ তারা তোমাদের থেকেও ভালো যোদ্ধা আর শৃঙ্খলাবদ্ধ”- ফিদেল কাস্ত্রো
১৯৫৮ সালে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাতিস্তা সরকারের নৃশংসতার বিরুদ্ধে বিপ্লব যুদ্ধের সময়ে “দ্য মারিয়ানা গ্রেজলেস উইমেন প্লাটুন” ফ্রিদেলের দ্বারা গঠিত হয়। জরিপ মোতাবেক, ১৩ জন নারীকে সংঘবদ্ধ করা হয়েছিল যুদ্ধের জন্যে। এই বিশ্ব মনে রাখবে এটিই প্রথম শীর্ষস্থানীয় নারী যোদ্ধাদের মিশ্রণে গঠিত প্লাটুন, যা বিপ্লব যুদ্ধের শেষ অবধি ছিল এবং যা কিনা পরবর্তী সময়ে কিউবার নারীদের জন্য বিপ্লবী যোদ্ধা হিসেবে দুয়ার খুলে দেয়।
যুদ্ধের শীর্ষস্থানীয় এক নারী যোদ্ধা বলেন, টেট পুয়েব্লার (যিনি প্লাটুনের সেকেন্ড ইন কমান্ডার হিসেবে কাজ করছিলেন) বই মারিয়ানার লড়াই আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছে এবং গুরুত্বের সাথে ফিদেলের সময়ে বৈষম্য কাটিয়ে উঠতে কিউবার নারীদের সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
১৯৫৯ সালে, কিউবা থেকে বাতিস্তা ফ্লাইটের ধর্মঘটের পরের দিন, ফিদেল কাস্ত্রো একটি বক্তৃতায় কিউবায় নারীদের প্রতি হওয়া অন্যায় অত্যাচার ও নিপীড়ন থেকে মুক্তি পেতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ের উপর নজরপাত করেন। তিনি নারীদের অবশ্যই বিপ্লব যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্যে তার চিন্তার কথা বলেন। তিনি কিউবানদের বললেন, “এমন এক জাতি যেখানে নারীরাও পুরুষদের পাশাপাশি লড়াই করে- মানুষ অদম্য……”
ফিদেল বিভিন্ন নারীগোষ্ঠী স্থাপন করতে সাহায্য করেছেন যার মধ্যে ১৯৬০ সালে ফেডারেশন অব কিউবান উইমেন (এফএমসি) এর নাম উল্লেখ করতেই হয়। কিউবান নারীদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এফএমসি ফোরাম গঠিত হয়েছিল। ১৬ বছর বয়সের কিউবার ৮৫%-৯০% নারী এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং অবশ্যই আজকে কিউবায় এটি অন্যতম জনসংঘ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
সে সময়ে, শতাধিক নারী মিলিশিয়া এবং সিডিআরইতে যোগদান করেছিল যেখানে তাদের বিপ্লবী প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণে সাহায্য করা হয়েছিল। সব দিক থেকে, সে মহিলারাই তাদের আত্মবিশ্বাস নিয়ে এবং পুরানো গতানুগতিক ভাবনা থেকে বের হয়ে নিজেদের ভেঙ্গে সম্ভাবনাময়ী হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছিলেন।
ফিদেল কাস্ত্রো- যার সে সময়ে বহু নারীর সাথে সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়। কিন্তু তার যুক্তিপূর্ণ, দারুন সব বক্তৃতা এবং নানান যুগান্তকারী পদক্ষেপের মাধ্যমে তিনি কিউবার নারীদের বিরুদ্ধে টিকে থাকা দীর্ঘদিনের কুসংস্কার ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। ফিদেলের সাথে কিউবার নারীদের মেলামেলা ও চলাচল কিউবার সমাজে বিপ্লবী রূপান্তর আনতে সাহায্য করেছিল।
আজকের এই বিশ্বে কিউবার নারীরা রয়েছেন কিউবার সামরিক বাহিনীর প্রথম সারিতে। কিউবার নারী কর্মী নিয়ে ৪৩.৫% (১৯৫৩ সালে ১৯.২% তুলনায়) কারিগরি ও পেশাদার ভূমিকায় বেশি কর্মসংস্থান গঠন করা হয়েছে। শুনতে বেশ ভালো লাগবে, কিউবার ২৫% নারী কংগ্রেসে এবং ৫০% নারী চিকিৎসা খাতে আছেন। বলা আবশ্যক, এফএমসি পতিতাবৃত্তি প্রায় অপসারণ করতে পেরেছে।