কোভিডে আক্রান্ত হলে প্রথমেই যা যা অবশ্যই করবেন
ডাঃ সানজিদা শহীদ।। প্রতিদিন ডিনারের পর হাঁটার সময় প্রায়ই ইবনে বতুতার একটা কথা মনে পড়ে- “হে প্রভু, তুমি আমাকে একটি দীর্ঘ জীবন দিও না, তুমি আমাকে একটি বিস্তৃত জীবন দাও।” কিন্তু সেই ছোট জীবন অন্তত কোভিডে ঝরে যাক অকালে, তা চাই না কখনো। আজ চিকিৎসক হিসেবে কোভিডে আমার টানা দায়িত্ব ও অভিজ্ঞতা থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই।
আমার অভিজ্ঞতা বলে- কোভিড টেস্টের উপর নির্ভর করে থাকবেন না। অধিকাংশ সময়েই ৩৫-৪০% কেসে ফলস নেগেটিভ আসে। রোগীর অনেক সময়ই সাইলেন্টলি ডেথও হয়।
যদি কোভিড সন্দেহ হয়, কোভিড টেস্টের সাথে অবশ্যই একটা বুকের এক্স রে করে ফেলুন। এটা দিয়ে অনেক কিছু নিশ্চিত হয়ে যায়।
যদি শ্বাসকষ্ট বা জ্বর বা অন্য উপসর্গ বেশি হয়, সবচেয়ে কনফার্মেটরী টেস্ট হচ্ছে- High Resolution CT Scan of both lungs. এটা করিয়ে ফেলবেন সময় নষ্ট না করে।
অক্সিজেন স্যাচুরেশন মেশিনে নিজেই পরীক্ষা করুন বাসায় আপনার স্যাচুরেশন কতো। যদি ৯৫% এর নিচে নেমে আসে, অবশ্যই হাসপাতালে অ্যাডমিশন নেবেন।
ভাত, রুটি জাতীয় কার্ব যতো কম খাওয়া যায়, তাই করুন। এগুলো শ্বাসনালীর ইনফেকশন আরো বাড়িয়ে দেয়। প্রোটিন,ভিটামিন সি জাতীয় ফল বেশি খান। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। প্রতিদিন হাঁটুন, হাঁটলে আমাদের শরীরের ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।
বেশি শুয়ে থাকবেন না, বেশি শুয়ে থাকলে মাথার অক্সিজেন সাপ্লাই এমনিতেও কমে যায়।
যারা ভাবছেন একবার কোভিড হয়ে গিয়েছে, আর হবে না- ভুল খুবই ভুল। এর এন্টিবডি ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো বড়জোর এক দেড় মাস শরীরে থাকে। আবার হওয়ার চান্স আছে। আমাদের এক ডাঃ কলিগ এই নিয়ে তিনবার আক্রান্ত হয়েছেন। আবার কেউ একবার আক্রান্ত হয়েই হয়তো ৩৫-৪০ দিন ভুগেছেন।
স্ট্রোক বা কিডনি ফেইলিউর বা মাল্টি অর্গান ফেইলিওরের অন্যতম কারণ হিসেবে এ সময় অন্যান্য কারণের সাথে মাথায় রাখবেন কোভিডের কথা। কোভিডজনিত জটিলতায় এসব হতে পারে অনায়াসে।
বাতাসে বিশুদ্ধ অক্সিজেনের বড় অভাব গেলো সারাটা বছর ধরে। মাস্ক পড়ুন, সচেতন হন। প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। চিকিৎসকদের কথা কেউ না শুনলেও আপনাদের কথা অন্তত শোনে।
সবার জন্য শুভকামনা।
ডাঃ সানজিদা শহীদ: মেডিকেল অফিসার,সার্জারী
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল,বরিশাল