‘‘আমার জীবনযুদ্ধের রক্তক্ষরণটা অনেক বেশি”
একজন সেলিনা শেলী- কিন্তু তার পরিচয় অনেকগুলো, বহুমুখী। তিনি একজন নাট্যকর্মী, লেখক; অন্যদিকে সফল উন্নয়নকর্মী, পেশাগতভাবে সফল এক নারী। তিনি একজন নারী অধিকারকর্মীও। সেলিনা শেলী অনেক নারীর জন্য এক অনুপ্রেরণার নাম। নারী জীবনের যুদ্ধ, সংগ্রাম, আত্মবিশ্বাস ও অধ্যবসায়- এমন সব অনন্য শব্দের জাল বুনতে হয় শেলী’র জীবনের গল্পটা বলতে গেলে।
ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরের সাথে আড্ডায় নিজের জীবনের ছোট ছোট গল্প, যুদ্ধ, টিকে থাকা, দর্শন, কৌশল- এরকম আরো অনেক কথা বলেছেন শেলী। আড্ডায় উঠে আসা সেই আনন্দ বেদনার গল্পগুলো ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরের পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হল।।
‘‘৪৭ এ দেশভাগের পর আমার দাদা ও নানাবাড়ির দুই পরিবারই অ্যাফেক্টেড হয়। বাবা চাকরিজীবী ছিলেন। আর মা একটা কাঠের কারখানা গড়ে তুলেছিলেন নিজের উদ্যোগ আর পরিশ্রম দিয়ে। পরে এই কারখানাটা আব্বা বিক্রি করে দেন আম্মার সিদ্ধান্ত ছাড়াই। আম্মা খুব শকড হয়েছিলেন।”
নিজের শৈশবের গল্পটা বলতে শুরু করেন শেলী। পাবনা গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি, পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। কিন্তু অংকে বেজায় কাঁচা ছিলেন। এদিকে পরিবারের ইচ্ছে অনুসারে ডাক্তারিটা পড়তেই হবে। তাই সাইন্স নেয়াটা জোর করেই চাপিয়ে দেয়া হল। অনুনয় বিনয়ে কাজ হল না। এদিকে বাবার খুব আদরের ছিলেন। বাবা তার এই সন্তানটিকে ‘জুয়েল’ বলতেন। তাই বাবার বিশ্বাস ছিল, শেলী অংকের ভীতি উৎতে যেতে পারবেন ঠিকই।
এদিকে শেলীর মন তো পড়ে রয়েছে নাটকে। পাড়ায় ছেলেদের নাটকের দল নাটক করে। তাতে নিজের বড় ভাই- বকুল ভাই আছেন। তবে নাটক দলে মেয়েদের প্রবেশাধিকার নেই। যদিও বড় ভাই চাইতেন বোন নাটকে আসুক। কিন্তু অনুমতি পাওয়া গেল না। তবে বাড়িতে গান, কবিতা আবৃত্তির চল আছে। কিন্তু সে সবকিছুতেও সীমারেখা বেধে দেয়া। বেশি কিছু করা যাবে না। তো নাচ গান আবৃত্তি- সেসবই করতেন শেলী। আর পড়তেন বই। একটু বেশিই পড়তেন বলা যায়। ঈদে অন্য বোনেরা যখন জামা কাপড় নিতো, শেলী চেয়ে নিতেন ঈদ সংখ্যা পত্রিকা। আর গোগ্রাসে গিলতেন পত্রিকায় প্রকাশিত গল্প কবিতা উপন্যাস প্রবন্ধ সব।
এদিকে মাথার ভেতরে নাটকের ইচ্ছেটা রয়েই গেছে। পাবনার পরিবেশটাও ছিল বেশ সংস্কৃতমনা। নাচ শিখতেন। কিন্তু তাতেও নানান বাধা। নাচের ঘুঙুরের বল খুলে দিলেন মা, যেন শব্দ কারুর কানে না যায়। স্কুলে পড়াকালীন ৭১ সাল এলো। মুক্তিযুদ্ধ। শেলী বলেন, ‘‘একাত্তরে স্বাধীনতার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ মেয়েদের এগিয়ে দিয়েছে অনেকটা। সেসময় মেয়েরা ঘরের বাইরে আসতে শুরু করলো। নানারকম সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও জড়িত হতে শুরু করলো।”
ক্লাস ফাইভে, এইটে বৃত্তি পেয়েছিলেন মেধাবী শেলী। পড়াশোনা চলছিল জোরেশোরে। সঙ্গে নানারকম সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে শুরু করলেন। কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছিলেন সব জায়গায়। কিন্তু অংকে দুর্বলতাটা খুব ভোগাচ্ছিল। সাহিত্য পড়তে ভালো লাগতো এদিকে। বোনের বিএ ক্লাসের সাহিত্য সিলেবাস পড়ে শেষ করেছিলেন ছোট্ট শেলী। এদিকে নাটকের প্রতি দুর্নিবার আগ্রহ। বড় ভাই শামসুল আলম বকুলের নাটক করা আরো আগ্রহী করে তুলতো শেলীকে। কিন্তু বকুল ভাইয়ের নাটকের দল শুধু ছেলেদের। মেয়েদের নাটক করার সুযোগ নেই। কী আর করেন! শেষে নিজেই নিজের জন্য কয়েকটা স্ক্রিপ্ট লিখে ফেললেন, আমজাদ হোসেনের সুন্দরী, সৈয়দ শামসুল হকের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় এবং রবিঠাকুরের দুই বোন থেকে তিনটা ছোট স্ক্রিপ্ট বানিয়ে নিলেন নিজের একক অভিনয়ের জন্য। সেটাই নিজে নিজে অনুশীলন করতেন। ধীরে ধীরে সেগুলো অন্যদের সামনেও পরিবেশন করতে শুরু করলেন। প্রশংসা পেলেন খুব।
এদিকে অংক নিয়ে যুদ্ধ চলছে। ইন্টারমিডিয়েটে কোনোমতে উৎরে গেলেন। ডাক্তারি পড়ানোর জন্য পারিবারিক চাপ আর নানা ঝামেলা পার হয়ে শেষাব্দি ভর্তি হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। শিল্পী কোটায় ঢুকলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। শেলীর একক অভিনয় শিক্ষকদের মুগ্ধ করেছিল। তাই শিক্ষকদের নাটক দলে তার জায়গা হল। নিয়মিত নাটক করতে শুরু করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেই শুরু। এরপর নাটক তাকে ছেড়ে যায়নি এক মুহুর্ত, যদিও পেশাগত কাজের চাপ নাট্যকর্মী জীবনকে টুকটাক বাধা দিয়েছে। কিন্তু নাটকের সাথে বিচ্ছেদ ঘটেনি কখনো।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রোকেয়া হলে থাকতেন। নাটক করতেন অনুশীলন নামের নাট্যদলের হয়ে। পরিচয় হল মাসুম রেজার সাথে। খ্যাতিমান নাট্যজন, লেখক মাসুম রেজা তখন তরুণ নাট্যযোদ্ধা, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। দু’জনের বন্ধুত্ব থেকে প্রেম এবং এক সময় পরিনয়। সবকিছু ছাপিয়ে বন্ধুত্বটা বেশি শক্তিশালী হয়ে থেকেছে এই দম্পতির ভেতরে। তাই তো দু’জন দু’জনের কাজকে সম্মান ও সহযোগিতা দিতে পেরেছেন সারাজীবন। নিজেদের জীবন দর্শন অনুসারে সাজিয়েছেন পরিবার। জমজ কন্যা সন্তানদের বড় করেছেন দু’জন মিলে।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শেলী বলেন, ‘‘অনুশীলন নামের নাট্যদল করতাম। মাসুম তখন বিরসাকাব্য নামের নাটকটা করলো। বিরসাকব্যের ব্যাকগ্রাউন্ড রিসার্চ করি আমি। মুন্ডা বিদ্রোহের ইতিহাস নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করতে হল। এই নাটকের প্রপস, মেকাপ, ড্রেস- সবই আমার করা। নাটক করার সময় দলের সাংগনিক কাজও করতে হয় প্রচুর। করেছি। আমার প্রথম মঞ্চ নাটক ছিল মনোজ মিত্রের চাক ভাঙা মধু। আলী আনোয়ারের নির্দেশনায়।”
শেলী আরো বলেন, ‘‘এরশাদ আমলের পুরো সময়টা আমাদের সেশন জটে নষ্ট হয়। সেসময় ছাত্র রাজনীতি ব্যান করা হল। তো সাংস্কৃতিক আন্দোলনটা চলছিল। রাকসু ছেড়ে দেয়া হলো নাটকের রিহার্সেলের জন্য। তখন এক সাংস্কৃতিক উত্থানের সময় বলা যায়।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকলো। চাকরিতে ঢুকলেন। মিত্র অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসে জরিপের কাজ, জেন্ডার বিষয়ক নানান জরিপ করতে করতে বিষয়টা নিয়ে ভাবতে শুরু করলেন। সে সময়ে কাজের অভিজ্ঞতাগুলো লিখতেও শুরু করলেন। প্রকাশিত হল অনন্যা পত্রিকায় কলাম আকারে। এরপর সবগুলো লেখা একসাথে বই আকারে বের হয় পরে।
পেশাগত কাজের ভেতরেই যুক্ত হলেন আরণ্যক নাট্যদলের সাথে। প্রয়াত নাট্যজন মান্নান হীরার লেখা একটি পথনাটকের কাজ করলেন ঢাকা ও ঢাকার বাইরে। এরপরই আরণ্যক ছেড়ে যোগ দিলেন দেশ নাটকে। দেশ নাটকেই আছেন এখনও।
এদিকে চাকরির স্থান বদল হল। মাসুম রেজাও যোগ দিয়েছেন কর্মস্থলে। দুজনে একটা স্কলারশিপ পেলেন ভারতের মাদ্রাজে। সেখানে দুবছর কাটলো। এরপর কাজের নানা অভিজ্ঞতা সেলিনা শেলীর পেশাগত জীবনে এক একটা রঙীন পালক যুক্ত করেছে। কাজ করেছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় উচ্চপদে। দেশে ও বিদেশে। দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটাতে হয়েছে কর্মসূত্রে। নানা সংগ্রাম আর ঘটনাপ্রবাহে কেটেছে জীবন, এখনও কাটছে নানা উত্থান পতনে। কিন্তু যুদ্ধটা জারি আছে ঠিক- আদর্শ আর নিজস্ব দর্শন সমুন্নত রেখে। বর্তমানে উচ্চপদে কাজ করছেন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপি’তে। পেশাগত কাজের বাইরে সমাজসেবামূলক কাজও করছেন। বন্ধুদের সাথে গড়ে তুলেছেন ‘যুক্ত প্রকাশনা ও সাংস্কৃতিক সংগঠন’, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে যুক্ত’র জনগল্প’৭১ উদ্যোগটির একজন সক্রিয় সংগঠক তিনি।
‘‘আমার জীবনযুদ্ধের রক্তক্ষরণটা অনেক বেশি” বলেন শেলী। ‘‘জীবনের কিছু কিছু ঘটনা আমাকে কালচারালি ডেসপারেট করেছে। অনেক না পাওয়া আর সীমাবদ্ধতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু থেমে যাইনি কোনোদিন। সংস্কৃতির সাথে আমার যোগাযোগটা কখনো বিচ্ছিন্ন হয়নি। ছোটবেলায় কবিকণ্ঠ নামের একটা সংগঠন করতাম। সেখানে অনেক বন্ধু পেয়েছিলাম, তারা সেসময় নানাভাবে আমাকে সহযোগিতা করেছে। আমাকে উজ্জীবিত করেছে। বন্ধুরা আমাকে শক্তি দিয়েছে।”
প্রশ্ন: আপনি কি নিজেকে ‘নারীবাদী’ বলবেন?
শেলী: হ্যাঁ আমি নারীবাদী, ফেমিনিস্ট। যদিও আমি বলবো না যে নারীবাদ নিয়ে আমি অনেক পড়ালেখা করেছি। কিন্তু আমার নারী অধিকার নিয়ে চিন্তার জায়গাটা পরিস্কার। আমি আমার সাধ্যমত মেয়েদের পাশে থাকি, মানসিকভাবে সমর্থণ ও সহযোগিতা দিই যেন তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। এই যে এটা করা- এটাই আমার ফেমিনিজম। আমি তর্ক বা ঝগড়া চাই না। কারণ লোকে কী বলবে- এরকম কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি তো, তাই আমি এখন খুব কৌশলী। সামনাসামনি তর্ক কম করি। এতো এনার্জি তর্কে দিয়ে লাভ নেই। আমি আমার কাজটা একটু অন্যভাবে করতে চাই।
প্রশ্ন: ফেমিনিস্টদের কি রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হওয়া দরকার বলে মনে করেন?
শেলী: পার্টিজান পলিটিকসে আমি বিশ্বাসী নই। বরং আমি মনে করি প্রতিটা পরিবারেই একটা করে রাজনীতি আছে। সেই রাজনীতিটা ধরতে হবে। সেটা দাঁড় করাতে হবে। যে মেয়ে নিজে সচেতন, তার নিজস্ব একটা কৌশল থাকবেই। কৌশলী হতে হবে সব মেয়েকে। আর পরিবারেরও দায়িত্ব মেয়েদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া এটা, অধিকার সচেতন করে তোলা তাদের।
প্রশ্ন: মেয়েদের সচেতন করবে পরিবার, তাহলে পরিবারগুলোকে সচেতন করবে কে?
শেলী: মিডিয়া, গণমাধ্যমকে ভূমিকা রাখতে হবে। অনেক লেখালেখি প্রয়োজন। আমাদের সময় প্রচুর অসাধারণ নাটক দেখেছি। কুশল সংবাদ, ইডিয়ট, রক্তকরবী। এমন নাটকের অভাব বোধ করি। আকাশ সংস্কৃতির অনেক নেতিবাচক দিক আছে। যার প্রভাবে আমাদের এখন ভুগতে হচ্ছে। এগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। সত্যিকার মেধাবীদের জায়গা করে দিতে হবে যাতে তারা কাজ করতে পারে।
প্রশ্ন: আপনার যমুনা নাটকটি নিয়ে বলুন, প্রচুর আলোচিত হয়েছিল এ নাটকটি…
অক্সফোর্ডে থাকতে যমুনা লিখেছিলাম। বলা যায় এই নাটকটা দিয়ে পুরোদমে নাটক জগতে আসলাম। ওটা একটা কমপ্লেক্স জায়গা থেকে লেখা। অল্পবয়সী মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হলে আত্মহত্যা করে। এটা কেন করে? কেন তারা ভাবে যে সব শেষ হয়ে গেল! এই ভাবনা থেকে লিখতে শুরু করি। জীবন তো ঘুরে দাঁড়ানোর। ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর জীবন তো ঘুরে দাঁড়াবার উদাহরণ। যমুনা ইজ ইন্সপায়ার্ড বাই হার স্টোরি বাট নট হার স্টোরি।
যখন যমুনা লিখছি তখন যুদ্ধপরাধের বিচার চলছে। ট্রাইব্যুনাল গঠন হয়েছে। অক্সফোর্ডে সে সময় নাটকটা নামাই। এই যমুনা নাটকটাকেই বাংলায় করবো এবার। নাম দিয়েছি- শক্তিরূপ।
প্রশ্ন: নাটকে ফিরছেন তাহলে পুরোদমে?
শেলী: যদি পারতাম তাহলে সব ছেড়েছুঁড়ে সারাক্ষণ নাটক নিয়েই থাকতাম। হ্যাঁ, নাটকে ফিরছি। আসলে ফিরেছি আগেই। মাসুমের জলবাসরে অভিনয় করেছি। আশাতীত প্রশংসা পেয়েছি। আবারো কাজ করবো নিশ্চয়ই।
প্রশ্ন: মাসুম ভাইয়ের সাথে আপনার কেমিষ্ট্রিটা দারুন। বিশেষ করে, আপনাদের বন্ডিং এর ভেতর একটা ফেমিনিস্ট দর্শন আছে। যেমন মাসুম ভাই তার পাসপোর্টে লিখেছেন- হাউজ হাসব্যান্ড। আপনি বাইরে চাকরি করেছেন। মাসুম ভাই ঘরদোর সামলেছেন আর নাটক লিখেছেন। আপনাদের ভেতর সেই তথাকথিত জেন্ডার রোল নেই। আপনারা সেটা ভেঙ্গেছেন।
শেলী: আমরা ভালো বন্ধু ছিলাম, আছি। এই বন্ধুত্বটার বড় ভূমিকা আছে এসবের পেছনে। আমি জানি, সবাই লিখতে পারে না। মাসুম পারে। ও যখন নিয়মিত চাকরি বাকরি নিয়ে হাঁপিয়ে উঠলো, তখন আমিই বললাম, তুমি চাকরি ছেড়ে দাও। লেখালেখিতেই মন দাও। বাকিটা আমি দেখবো। তো সেভাবেই হয়েছে সব। তার মানে এই নয় যে আমাদের চলার রাস্তাটা খুব কুসুমাস্তীর্ণ ছিল। জার্নি ওয়াজ নট দ্যাট স্মুদ। মাসুমের বড় গুণ যে ওকে যদি যুক্তি দিয়ে কিছু বোঝানো যায়, তাহলে ও বোঝে এবং চেষ্টা করে। হি ডাজন্ট প্রিটেন্ড। ও রান্না করে। আমি কাজে ব্যস্ত থাকলে সংসার সামলায়। মেয়েদের বড় করেছি একসাথে। যখন দেশের বাইরে ছিলাম, বহুদিন আমার কাজের চাপে বিশ্রামের সময়ও পেতাম না। এরকম বহুদিন হয়েছে যে আমাকে অফিস থেকে নিয়ে আসবার আগেই ডিনার রেডি করে রেখেছে ও। এরকম অনেক কিছু ওর মধ্যে আছে, যা আমাদের চলার পথকে সহজ করেছে।
প্রশ্ন: মেয়েরা যুদ্ধ করে অধিকার আদায়ের জন্য। এই যুদ্ধ করা মেয়েদের জন্য আপনার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু বলতে চান?
শেলী: আমি বলবো, সব মেয়েকে ‘না’ বলাটা শিখতে হবে। সমাজ মেয়েদের শেখায় যে কোনো কাজে ‘না’ করা যাবে না। এটা ভাঙা দরকার। সব কাজই যে মুখ বুঁজে করতে হবে, তা না। আবার আমি পুরুষদেরও দোষ দিই না। ছেলে বাচ্চাকে সঠিক শিক্ষা দিয়ে বড় করা উচিত। এদেশের ছেলেরা বউয়ের ভেতরে মা’কে দেখতে চায়। বউ সব করবে- জুতা পরিস্কার, রান্না করা থেকে বিছানায় সঙ্গ দেয়া- সব। এই ভুলগুলো ভাঙা দরকার। বন্ধুত্ব দিয়েই ভাঙা দরকার। ঘরের শান্তি থেকেই সমাজে শান্তি আসবে- এটা পুরুষকে বুঝতে হবে। তাই আমাদের বেসিকটা পরিস্কার রাখা খুব জরুরি। আর একটা জিনিস। মেয়েদের আয় করা প্রয়োজন। আর্নিংটা মাস্ট, যেন পরিবারে তার কন্ট্রিবিউশান থাকে। এই বিষয়গুলো বাচ্চাদের মাথায় ঢুকাতে হবে।
প্রশ্ন: আপনার দুই মেয়ের কথা শুনি একটু…
শেলী: ওরা দুজন দেশের বাইরে, পড়ছে। চুপকথা অক্সফোর্ডে মাস্টার্স করছে। আর রূপকথা ইউসিএল এ। ছোটবেলা থেকেই আমরা দুজন ওদের শিখিয়েছি নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ব্যাপারটা। নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেবার প্রয়োজনটাও। আসলে বাচ্চাদের মাথা পরিস্কার রাখাটা খুব জরুরি। সন্তান বড় করার সময়ই মাথা পরিস্কার করে দিতে হয়। আমার মেয়েরা এখন নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধি ব্যবহার করে জীবন গড়ছে। সেটাই আমরা চেয়েছি সবসময়।