মেনোপজের আগে পেরিমেনোপজ
বিদেশি পত্রিকার প্রবন্ধ অবলম্বনে লিখেছেন সাদিয়া মেহজাবিন
৪০ বছর বয়সে হয়ে যাওয়া হরমোনের পরিবর্তনগুলোর সম্পর্কে সচেতনতা আপনার জীবনকে আরো সহজ করে তুলতে পারে। একজন নারীর শরীরে বয়স বৃদ্ধির সাথে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে। প্রজননকালীন সময়ে নারীর শরীরে হরমোন ভারসাম্যপূর্ণ থাকে। নিয়মিত মাসিক বা পিরিয়ড হয়। তবে ৪০ বছর বয়স থেকে হরমোনের পরিবর্তন হতে শুরু করে এবং অস্বস্তিকর উপসর্গের সৃষ্টি হতে পারে।
আপনি যদি ৪০’র কাছাকাছি বয়সের একজন নারী হন তাহলে পেরিমেনোপজের লক্ষণগুলো সামলাতে ও হরমোনগুলোর ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে করণীয় সম্পর্কে আপনার জানা উচিত। যা আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করবে।
পেরিমেনোপজ কী?
পেরিমেনোপজ ৩০ বছরের শেষের দিকে অথবা ৪০ এর শুরুতে হতে পারে। এ সময় নারীর প্রজনন ক্ষমতা ধীরগতিসম্পন্ন হয় ও হরমোনের পরিবর্তন হতে শুরু করে। প্রাথমিকভাবে দেখা যায়, ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের উৎপাদন হ্রাস পায় এবং মাসিক অনিয়মিত হয়। এগুলো ঠিক মেনোপজের পূর্বে হয় তবে সম্পূর্ণভাবে ডিম্বানু তৈরি বন্ধ হওয়াই মেনোপজ।
পেরিমেনোপজ সাধারণত চার বছর স্থায়ী হয় তবে অনেকের ক্ষেত্রে তা দশ মাস বা দীর্ঘ দশ বছর স্থায়ী হতে পারে। পেরিমেনোপজ শেষ হয় যখন, কোনো নারীর মাসিক টানা এক বছর বন্ধ থাকে।
পেরিমেনোপজের লক্ষণগুলো কী কী?
পেরিমেনোপজের লক্ষণগুলো নারীভেদে ভিন্ন হয়, তবে সাধারণ লক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
অনিয়মিত মাসিক
পিরিয়ডের মধ্যবর্তী সময় সাধারণের চেয়ে কম বা বেশি হতে পারে, সময়ের আগে পিরিয়ড হওয়া বা সময়মত না হওয়া। সম্পূর্ণভাবে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে গেলে পেরিমেনোপজ শেষ হয়।
হট ফ্ল্যাশেস
হট ফ্ল্যাশ মূলত সে সময় যখন শরীর হঠাৎ তীব্র তাপ অনুভব করে। বয়স বৃদ্ধির সাথে মুখের কাছাকাছি থাকা রক্তনালীগুলো খুলে যায় ফলে অতিরিক্ত ঘাম হয়। হট ফ্ল্যাশের সাথে ঠান্ডা লাগা ও হৃদস্পন্দনও বেড়ে যেতে পারে। বেশ সংখ্যক নারী এ সময় গরম ঝলকানির মত অনুভব করেন যা অনেক বছর অব্দি দীর্ঘ হতে পারে।
রাতে অস্বাভাবিকভাবে ঘামানো
রাতে অস্বাভাবিকভাবে ঘামানো হট ফ্ল্যাশের মতই তবে এটি রাতে ঘুমানোর সময় হয়। যদি কেউ বদ্ধ ঘরে বা কম্বল জড়িয়ে থাকে, প্রাকৃতিকভাবে ঘামার চেয়েও এটি অস্বাভাবিকভাবে হয়।
ঘুমের সমস্যা
পেরিমেনোপজাল নারীরা সাধারণত অনিদ্রা বা নিয়মিত ঘুমের চক্রে অসুবিধা অনুভব করতে পারে।
জরায়ুর রক্তপাত বৃদ্ধি
শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের ফলে মাসিকের সময় জরায়ুর রক্তপাত বাড়তে পারে।
প্রিমেনেস্ট্রুয়াল সিনড্রোমের পরিবর্তন ও সামগ্রিকভাবে মেজাজের পরিবর্তন
প্রিমেনেস্ট্রুয়াল সিনড্রোম সাধারণত নারীর মাসিকের আগে দেখা দেয় তবে পেরিমেনোপোজের ক্ষেত্রে এর লক্ষণ গুরুতর হতে পারে। পেরিমেনোপজে ভোগা নারীরা চাপ, উদ্বেগ, বিরক্তি ও হতাশায় ভুগতে পারে। যাদের জীবনের মানসিক চাপ ও মেজাজের সমস্যা ছিল, তাদের পেরিমেনোপজে এ সমস্যাগুলো আরো ভয়াবহভাবে হতে পারে।
স্মৃতিশক্তি দুর্বল ও মনোযোগী হতে সমস্যা
স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া ও যেকোনো কাজে মনোযোগ না দিতে পারার মত সমস্যাগুলো নারীদের বেশি হতে পারে।
যোনিপথের শুষ্কতা
যোনিপথের অস্বাভাবিক শুষ্কতা অস্বস্তির কারণ হয়, যা পরে সহবাসেও সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
৪০’র পরে হরমোনের পরিবর্তনজনিত সমস্যার কী চিকিৎসা আছে?
মেনোপজ ও পেরিমেনোপজের মতো সমস্যার জন্যে অনেক ডাক্তারের বিভিন্ন সুপরামর্শ রয়েছে। খাদ্যাভাস, ব্যায়াম, ভেষজ খাবার ও নিজের প্রতি যত্ন খেয়াল রাখলে পেরিমেনোপজের লক্ষণগুলো অন্তত উপশম হতে সাহায্য হবে। যেহেতু প্রতিটি ক্ষেত্রই ভিন্ন, তাই কোনটি আপনার জন্যে বেশি উপযোগী তা নির্ধারণে চিকিৎসকের পরামর্শ আপনাকে বিশেষ সহায়তা করবে।