November 24, 2024
কলামফিচার ২

সম্পর্কে ফুটন্ত ব্যাঙ সিন্ড্রোম – বের হবেন কীভাবে?

মেহেরুন নূর রহমান ।। বয়েলিং ফ্রগ বা ফুটন্ত ব্যাঙ সিন্ড্রোম এর নাম শুনেছেন? সেদিন নেটফ্লিক্সে একটি মুভি দেখতে গিয়ে এই শব্দটি শুনলাম। যে কনটেক্সটে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছিল সেটা দেখার পর এ সম্পর্কে জানার ইচ্ছে হলো।

ফুটন্ত জলে যদি একটি ব্যাঙকে ফেলার চেষ্টা করা হয় তাহলে অতি গরম জলের মুখোমুখি হওয়া মাত্র ব্যাঙটি লাফ দিয়ে বেরিয়ে আসবে এবং নিজেকে মরার হাত থেকে বাঁচাবে। কিন্তু ব্যাঙটিকে যদি ঠান্ডা জলে রাখা হয় এবং ধীরে ধীরে উত্তপ্ত করা হয়, তাহলে ব্যাঙ তার বিপদ বুঝতে ব্যর্থ হবে অথবা দেরি করবে। একসময় জল ফুটতে শুরু করবে এবং সে সেদ্ধ হয়ে মারা যাবে।

দুঃখের বিষয় হলো, জলের তাপমাত্রা যখন বাড়তে থাকে, বোকা ব্যাঙ বিপদ আচঁ করার পরিবর্তে সমস্ত সহ্য শক্তি দিয়ে এই পরিবর্তনশীল তাপমাত্রার সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়াটা চেষ্টা করে। যখন এই সমঝোতা সহ্যের বাইরে চলে যায় তখন দেরি হয়ে গেছে, ফুটন্ত জল থেকে লাফিয়ে বেরুবার শক্তি আর তার থাকে না। এই যে ব্যাঙ তার বিচার করার ক্ষমতা হারাচ্ছে, নিজের বিবেচনাবোধকে ধর্তব্যের মধ্যে না এনে ক্রমে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এটি এই লেখার মূল উপজীব্য। মৃত্যু এখানে রূপক মাত্র।

অভিযোজন বা পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্যতা তৈরি করে বেঁচে থাকা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, কিন্তু অভিযোজিত হবার প্রবণতা কখনও কখনও আমাদের উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে এবং আমাদের যন্ত্রনাময় পরিণতির দিকে এগিয়ে নেয়।

বিষাক্ত সম্পর্ক এবং বয়েলিং ফ্রগ সিন্ড্রোম – এটা আমার আজকের লেখার বিষয়বস্তু। একটি বিপজ্জনক বা ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতিতে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া, যার কারণে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি এতটাই অসাড় হয়ে যায় যে সময়মতো ‘লাফ’ দিয়ে বের হয়ে আসার শক্তি শেষ হয়ে যায়, আমাদের অক্ষম করে তোলে। লেখাটি নারী এবং পুরুষ সবার জন্যই প্রযোজ্য, কিন্তু নারীরা যেহেতু হিংসাত্মক সম্পর্কের শিকার বেশি, তাই তাদের উদেশ্য করেই আমি লেখাটি লিখছি ।

একটি সম্পর্কে একজন সঙ্গী যদি বিষাক্ত, ম্যানিউপুলেটিভ, ডমেনেটিং, কন্ট্রোলিং এবং এবিউসিভ (ভার্বাল বা ফিজিক্যাল) হয় তখন কী করে বুঝবেন আপনি ‘ফুটন্ত ব্যাঙ সিন্ড্রোম’ এ ভুগছেন?

আপনি হয়তো দেখতে পেলেন আপনি অনেকদিন ধরেই আপনার প্রত্যাশা, ভালোলাগা না লাগা, ইচ্ছা অনিচ্ছা অন্যের জন্য অ্যাডজাস্ট করে নিচ্ছেন, এবং তার জন্য যুক্তিও দাঁড় করাচ্ছেন, যে সব বিষয়গুলো আপনার সারাজীবনের অপছন্দ ছিল, সেগুলো  আপনার পার্টনারের জন্য খোঁড়া যুক্তি দিয়ে মেনে নেয়ার চেষ্টা করেছেন! আপনি ঝগড়া চেঁচামেচি, অন্যকে অপমান করা, মারধর করা এসব পছন্দ করেননা। প্রেমে পড়ার পর দেখলেন আপনার প্রেমিক/প্রেমিকা ভীষণ রাগী। কারণে অকারণে চিৎকার চেঁচামেচি করে, রিকশাওয়ালাকে চড় মারে, ড্রাইভার, ওয়েটার এদের সাথে মিসবিহেইভ করে, তাদের অপমান করে। এসব কিছু কিন্তু ওই মানুষটার টক্সিক স্বভাব সম্পর্কে আপনাকে অগ্রিম জানান দিচ্ছে, কিন্তু আপনি ভালোবাসাতে এতটাই বুঁদ যে তাকে জোরালোভাবে কিছু বলতে পারছেন না, বা বললেও সে যেসব কুযুক্তি দিচ্ছে তা মেনে নিচ্ছেন বা নিজেকে মানিয়ে নিতে বাধ্য করছেন।

আপনি এক ধরনের পোশাক পরতে পছন্দ করেন, কিন্তু আপনার পার্টনার তা পছন্দ করে না বলে আপনি আপনার ভালোলাগাকে বদলে ফেলছেন। আপনার প্রিয় বন্ধুকে আপনার পার্টনার পছন্দ করে না, তাই আপনি আপনার প্রিয় বন্ধুকে এড়িয়ে চলছেন। আপনার পার্টনার অল্পতেই বাজে ব্যবহার করে তাই আপনি অতি সচেতন হয়ে তার সাথে কথা বলছেন। আপনি দেখতে পাচ্ছেন কেউ আপনার প্রশংসা করলে আপনার পার্টনার বিরক্ত হয় তারপরও আপনি তাকে খুশি রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন শুধু এই ভেবে যেন আপনাদের সম্পর্ক ভালো থাকে – শুধু টের পাচ্ছেন না আপনার চারপাশের পানি ক্রমাগত গরম হচ্ছে।

আপনি বুঝতে পারছেন আপনার পার্টনার আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে, আপনার প্রতিটি পদক্ষপের হিসাব রাখে কিন্তু আপনি তা মেনে নিচ্ছেন। সময়ের সাথে সাথে আপনি এসবে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে যাবেন যে এসব কিছু আপনি আর সেভাবে লক্ষ্যও করবেন না। বরং আপনি নিজেকে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে শুরু করবেন যে সে যে ব্যবহার করে তা আপনাকে ভালোবাসে বলেই করে। আপনি বুঝতে ব্যর্থ হবেন যে এমন ব্যবহার আপনার প্রাপ্য নয়। অথবা খানিক্ষণ খারাপ লাগলেও নিজেকে নানাভাবে বুঝিয়ে শান্ত করবেন এবং এর চেয়ে খারাপ হলে কী হতে পারতো এটা ভেবে খুশি থাকবেন। যেমন পাশের বাড়ির ভাবীর স্বামীর মত আমার স্বামী তো আমাকে মারছে না বা রুনার বরের মত  আমার স্বামী তো পরকীয়া করছে না, না হয় খানিক গায়ে হাত তুললো ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা সকলেই ভাবি, আর একটু চেষ্টা করলে হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে, আর একটু অ্যাডজাস্ট করলে পরিস্থিতি ভালো হবে কিন্তু অনেক সময় এ শুধু অরণ্যে রোদন হয়।

আপনার কোনো বন্ধু যদি আপনার সম্পর্কের সত্যচিত্র তুলে ধরে আপনি খুব প্রতিক্রিয়া দেখান। সম্পর্কের ভেতরে থেকে সম্পর্কের খুঁত ধরা কঠিন। আবার বুঝতে পারলেও আমরা মেনে নিতে অস্বীকার করি। আমরা যখন একটি সম্পর্কে থাকি তখন সঙ্গীর সাথে আমাদের অ্যাটাচমেন্ট একটি ইমোশনাল ফিল্টার তৈরি করে যার ভেতর দিয়ে আমরা আমাদের নিজস্ব পরিস্থিতি দেখি, তার তাই সম্পর্কের কুৎসিত দিকগুলো আমাদের চোখে সহজে ধরা পড়েনা। আর পড়লেও নানা যুক্তি দিয়ে আমরা সেগুলোকে সুন্দর করার চেষ্টা  করি। ধ্বংসাত্মক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, এই  ইমোশনাল ফিল্টারে তৈরি আত্ম-বিভ্রমের জগতে আমরা বাস করি।

ফুটন্ত ব্যাঙ সিন্ড্রোমে ভোগা ব্যক্তি সবকিছুর সাথে সমঝোতা এবং আপোষ করতে এতই ব্যস্ত থাকেন যে নিজের প্রয়োজনগুলি একসময় ভুলে যান। আপনি যখন একটি স্ট্রেসফুল এবং অস্থির সম্পর্কের মধ্যে থাকেন, তখন সম্ভাবনা থাকে যে আপনি আপনাকে সে সম্পর্কের মধ্যে অ্যাডজাস্ট করতে এতো ব্যস্ত থাকেন এবং এতো সময় এবং এনার্জি বিনিয়োগ করেন যে নিজের প্রয়োজনগুলো ভুলতে বসেন।

বিষাক্ত সম্পর্ক, যেখানে একজন নিয়ন্ত্রণকারীর ভূমিকা পালন করে, পাওয়ার প্লে করে এবং  যেখানে অবিশ্বস্ততা থাকে, সেখানে অপর সঙ্গী নিজেকে সারাক্ষণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দেখে, সারাক্ষণ দৌড়ের উপর থাকে পরিস্থিতি সামলাতে। নিজের ভালোমন্দের দিকে নজর দেবার পরিবর্তে, নিজের উন্নয়নের পরিবর্তে, নিজের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিবর্তে সম্পর্ক ভালো করার জন্য সে বহু সময় ও শক্তি ব্যয় করেন এই আশায় যে, একসময় সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনি আসলে ধীরে  ধীরে গরম করার প্রক্রিয়া চলাকালীন সময় ব্যাঙের মতো সম্পর্কের মধ্যে সারাক্ষন পরিবর্তনশীল তাপমাত্রার সাথে সামঞ্জস্য করছেন। এটি আপনার মানসিক এবং শারীরিক শক্তি কমিয়ে আনে এবং আপনার নিজের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়ার সক্ষমতা আরো কমে যেতে থাকে।

এই সিন্ড্রোমে ভোগার আরেকটি লক্ষণ হলো যে কোন মূল্যে সম্পর্ককে আঁকড়ে ধরে রাখার প্রবণতা যা বিধ্বংসী সম্পর্কের উপর পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত রাখে।

ভারসাম্যহীনতার কারণে অনেক সম্পর্ক ভেঙে যায়। অনেক সম্পর্কে একজন বেশি বিনিয়োগ করছেন, বেশি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে, বেশি সৎ থাকে আর অপরজন তার সুযোগ নিয়ে সম্পর্কে কন্ট্রোল করে অ্যাবিউসিভ বিহেভিয়ার, গ্যাস লাইটিং ইত্যাদিকে হাতিয়ার করে। এটা দুঃখজনক একজন পার্টনার অতি ভালোবাসার বা অতি নির্ভরতার কারণে অপরজনকে সুযোগ দেয় তাকে কন্ট্রোল করার বা তার উপর সুযোগ নেয়ার। কৃতজ্ঞতাবোধ এবং ভালোবাসা প্রকাশের ভঙ্গি যেন এতটা  উপচে না পরে যে অপরজনকে আপনাকে টেকেন ফর গ্র্যান্টেড ভেবে নেয় এবং যা তা ব্যবহার করে এই ভেবে যে সে ছাড়া আপনার জীবন মূল্যহীন। আমরা অনেক সময় নিজেরাই নিজেদের ব্যবহারের মাধ্যমে এই বার্তাটি সঙ্গীকে দেই।

ভাবুন একটি সম্পর্কে আপনি কতটা দিচ্ছেন এবং আপনার সঙ্গী কতটা দিচ্ছে। নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে খুব জরুরি।

জল ফোটার আগে বের হওয়া – কীভাবে লাফ দেওয়া যায়?

বিষাক্ত সঙ্গীরা কিন্তু বেশিক্ষণ মুখোশ পরে থাকতে পারেনা। আপনি সম্পর্ক শুরুর কিছুদিন পরেই তার ব্যবহারে অনেক রেড ফ্ল্যাগস দেখতে পাবেন কিন্তু বেশিরভাগ সময় আমরা তা উপেক্ষা করি। উপেক্ষা না করে আসুন এ ব্যাপারে সচেতন হই ।

নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনার সম্পর্কটি এখন যে অবস্থায় আছে, এরকম একটি সম্পর্কের স্বপ্ন কি আপনি দেখেছিলেন? আপনার বর্তমান সঙ্গী যেমন, তার মন মানসিকতা, ব্যবহার যেমন, তেমন কাউকে কি আপনি আপনার জীবনসঙ্গী হিসেবে চেয়েছিলেন? এরকম একজনের সাথে কি আপনি আপনার জীবন কাটাতে চান?

মানুষ যে কোনো ধরনের পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত হতে পারে, সেটা ভালো হোক বা খারাপ। পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হবার সম্ভাবনা কতটুকু তা শুরুতেই যতটা সম্ভব ইমপার্শিয়ালি বিবেচনা করুন। সঙ্গীর ব্যবহারের অসঙ্গতি নিয়ে ভালোভাবে ভাবুন। বিশ্বস্ত বন্ধুর সাথে কথা বলুন, দরকার হলে কোনো এক্সপার্টের সাথে কথা বলুন। কিছু কিছু ব্যবহার সময়ে ঠিক হয়ে যাবে আমাদের এই শুভ চিন্তা ঠিক নাও যেতে পারে। একজন এক্সপার্ট (সাইকায়াট্রিস্ট/ সাইকো-অ্যানালিষ্ট/ সাইকো সোশ্যাল কাউন্সিলর) আপনাকে একজন মানুষের কোন ধরনের ব্যবহারের পরিণতি কী হতে পারে সে সম্পর্কে অবহিত করতে পারেন।

আমার এক বান্ধবীর স্বামী প্রেম চলাকালীন সময়ে সারাক্ষন আত্মহত্যার ভয় দেখিয়ে কন্ট্রোল করতো। আর একজন রেগে গেলে দেয়ালে মাথা ঠুকতো, ছুরি নিয়ে নিজেকে মেরে ফেলবে এই কথা বলতো। আরো একজন ক্রমাগত অন্য মেয়েদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতো, পরে আমার বান্ধবীর পায়ে ধরে মাফ চাইতো। আর একজন রেগে গেলে প্রেমিকার গায়ে হাত তুলতো। দুঃখের ব্যাপার, উপরের উদাহরণের মেয়েগুলো এই সব ব্যবহারকে ভালোবাসা ভেবে মাফ করেছে, বিয়ে করেছে এবং তাদের বৈবাহিক জীবন হয়েছে ভয়াবহ।

মানুষ সবচেয়ে ভয় পায় কীসে? অজানাকে, অনিশ্চয়তাকে। অজানা বা অনিশ্চতাকে প্রায়ই আমাদের পরিচিত একটি খারাপ পরিস্থিতির চেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর বলে মনে হতে পারে। আমরা  প্রায়শই দেখি মানুষ তাদের  ‘কমফোর্ট জোন’ থেকে বের হতে চায়না। অনেক সময় এই ‘কমফোর্ট জোন’ কিন্তু সুখকর অভিজ্ঞতাও নয়, তারপরও মানুষ অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং বর্তমান বিষাক্ত সস্পর্ক ভেঙে অনিশ্চতার দিকে পা বাড়াতে ভয় পায়।

কিছু মানুষ স্বাস্থ্যকর সম্পর্কের সাথেই পরিচিত নয়, ফলে নিজের বিষাক্ত সম্পর্ক নিয়ে সে ততটা ওয়াকিবহাল নয় বা বুঝতে পারেনা। আশেপাশের খারাপ উদাহারণও তাকে প্রভাবিত করে।

চোখ বন্ধ করে ভাবুন। আপনি কি আপনার বর্তমান সম্পর্ক নিয়ে সুখি? কিছু সমস্যা থাকতেই পারে কিন্তু সমস্যাগুলো কি এতটাই বড় যে আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে? আপনার সঙ্গীর ব্যবহার কি আপনাকে ভয়ানক পীড়া দিচ্ছ? ভালোভাবে ভাবুন এবং সেইমত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

লাফ দিয়ে বেরিয়ে আসা এবং নিরাময়

হতে পারে আপনি এই লেখাটি পড়ছেন এবং ভাবছেন আমার জন্য হিটিং প্রসেস তো ইতিমধ্যে চালু হয়ে গেছে, এবং যথেষ্ট সচেতন হওয়া সত্ত্বেও আমি একই অবস্থানে আছি । জেনে নিন বেশি দেরি হয়নি। এখনো সময় আছে। আপনি ভাবছেন, সচেতন হচ্ছেন এবং স্বীকার করছেন। এখন শুধু প্রথম পদক্ষেপ বাকি – এই ফুটন্ত পাত্র থেকে বের হয়ে আসার।

আপনি যদি একটি ধ্বংসাত্মক সম্পর্কের মধ্যে অনেকদিনের  জন্য আটকে থাকেন তবে আপনার ইন্দ্রিয়গুলি সত্যিই ভোঁতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জানি এটা  স্বীকার করা সত্যি কষ্টের হবে যে আমরা যা বিশ্বাস করেছি তা আমাদের জন্য ঠিকমত ঘটলো না। নিজের প্রতি দয়ালু হন, নিজেকে সাহায্য করুন।

আপনি একটি খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে ছিলেন এবং তা চিনতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। আপনার সঙ্গী অতি চালাকির সাথে আপনাকে ব্যবহার করেছে, আপনার আত্মবিশ্বাসকে চুরমার করেছে। এই ধরনের ক্ষতির নিরাময় প্রয়োজন। আপনার একটি ভালো সাপোর্ট সিস্টেম দরকার। হতে পারে তা আপনার পরিবার, বন্ধুবান্ধব  এবং এক্সপার্ট গ্রুপ। কাউন্সেলিং, থেরাপি আপনার নিরাময় দ্রুততর করবে।

একটি খারাপ সম্পর্ক থেকে সরাসরি অন্য সম্পর্কে যাওয়া কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ। আপনি  ভালো-মন্দের পার্থক্য করতে ভুল করতে পারেন এবং আবারও একটি ভুল সম্পর্কে জড়িয়ে যেতে পারেন। আবার অনেক সময় তাড়াহুড়োয় পুরোনো সম্পর্কের স্মৃতি নতুন ভালো সম্পর্ককেও ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই তাড়াহুড়ো করার দরকার নাই। সময় নিন।  শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ  হন প্রথম তারপর জীবন সাজান নতুন করে, সুন্দরভাবে ।

সবশেষে বলবো, অনেক সময় খারাপ সম্পর্কের ভেতর থাকার পর, বুঝতে পারার পরও আমরা স্বীকার করতে রাজি হইনা। এ যেন ব্যক্তিগত জয় পরাজয়। মনে রাখবেন আপনার শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার চেয়ে বড় কিছুই নাই। পাছে লোকে কিছু বলে বা আমি হেরে গেলাম – এই মনোভাব আপনাকে শুধু পেছনের দিকে টেনে নেবে। পৃথিবীতে কোনো মানুষ বা সম্পর্কই শেষ কথা নয়। জীবন চলমান। আনন্দের সাথে বেঁচে থাকা খুব জরুরি

[ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে প্রকাশিত কলাম লেখকের নিজস্ব বক্তব্য]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *