September 20, 2024
নারী'র খবরবিদেশফিচার ৩

সারা বিশ্বেই পুরুষ সঙ্গীর চেয়ে আয় কম মেয়েদের

ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টর ডেস্ক ।। সবচেয়ে বেশি লিঙ্গ বৈষম্য পরিবারের ভেতরেই। সারা পৃথিবীতে অধিকাংশ দম্পতির মধ্যে নারী সঙ্গীর আয় পুরুষ সঙ্গীর চেয়ে কম। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এটি উঠে এসেছে।

এই প্রথমবারের মতো মজুরি সমতা নিয়ে] বৈশ্বিক এই গবেষণাটিতে দম্পতিদের আয়ের সামঞ্জস্য জরিপ করা হয়। গবেষণাটি সমন্বয় করে অলাভজনক সংস্থা লুক্সেমবার্গ ইনকাম স্টাডি (এলআইএস)। গবেষণায় ১৯৭৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত গত চার দশকে ৪৫টি দেশ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী ২৮ লাখ ৫০ হাজার দম্পতির মধ্যে বেশিরভাগ নারীই জানিয়েছেন, তারা সঙ্গীর চেয়ে কম আয় করেন। খবর বিবিসি নিউজের।

বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ফর পাবলিক পলিসির অধ্যাপক হেমা স্বামীনাথন এবং অধ্যাপক দীপক মালগন বলেন, ‘প্রচলিত দারিদ্রের অনুমান পরিবারকে একটি একক হিসেবে দেখে। সাধারণ ধারণা হলো পরিবারের মধ্যে আয়গুলো সমানভাবে বণ্টিত হবে। কিন্তু পরিবারই সবচেয়ে বড় অসমতার স্থান এবং আমরা এটি প্রকাশ করতে চেয়েছি।’

প্রতিবেদনে পরিবারকে ‘ব্ল্যাকবক্স’ বর্ণনা করে স্বামীনাথন বলেন, আমরা কখনোই নিজের ভেতরটা দেখি না। প্রচলিত দৃষ্টিতে ভারতে নারীর মজুরি এবং আয় কম হিসেবে দেখা হয়। তবে বিশ্বব্যাপী চিত্র মূল্যায়ন করে বলা হয়, নর্ডিক দেশগুলোকে লিঙ্গসমতার উদাহরণ হিসেবে দেখা হলেও সেখানে কি কাজের বন্টন এবং ঘরের মধ্যে সম্পদ সমান? গবেষকদের মতে, লিঙ্গ বৈষম্য দেশ, সময়, ধনী, দরিদ্র সবক্ষেত্রে বিদ্যমান। সাম্প্রতিক তথ্যে আমরা দেখেছি দম্পতিদের মধ্যে উভয়ই চাকরি করেন কিন্তু এমন একটিও দেশ নেই, এমনকি ধনী বা উন্নত দেশও নয়, যেখানে সামগ্রিকভাবে স্ত্রীরা তাদের সঙ্গীর মতো উপার্জন করেন। এমনকি লিঙ্গ বৈষম্যের হার সর্বনিম্ন স্তরে থাকা নর্ডিক দেশগুলোতেও নারীর ভাগ সবর্ত্র ৫০ শতাংশেরও কম।

গবেষণায় বলা হয়, নারীর কম উপার্জনের কিছু কারণ সার্বজনীন। সাংস্কৃতিকভাবেই পুরুষের আয়কে পরিবারের রুটি-রোজগারের মাধ্যম হিসেবে দেখা হয় আর নারীকে গৃহিণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অনেক নারী সন্তান জন্ম নেয়ার পর বিরতি নেন বা বেতনভূক্ত কাজও ছেড়ে দেন। সেই সঙ্গে রয়েছে মজুরি বৈষম্য। একই কাজের জন্য পুরুষের তুলনায় নারীকে কম বেতন দেয়া হয়। বিশ্বের অনেক স্থানেই নারী পুরুষের বেতনের ব্যবধান ও অসম বেতন স্বাভাবিক বাস্তবতা। এবং অবৈতনিক কাজ যেমন গৃহকর্ম, পরিবারের সদস্যদের যত্ন এখনো নারীর দায়িত্ব হিসেবেই রয়ে গিয়েছে।

২০২৮ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার একটি প্রতিবেদন অনুসারে, নারীরা পরিবারের সদস্যদের যত্নে গড়ে ৭৬.২ শতাংশ মোট কর্মঘণ্টা ব্যয় করেন, অবৈতনিক এই কাজটি পুরুষের চেয়ে তিনগুণ বেশি। এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এই হার ৮০ শতাংশের বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অবৈতনিক গৃহকর্ম এবং যত্নের দায়ভারই শ্রমশক্তিতে নারীর প্রবেশ এবং অগ্রগতিতে প্রধান বাধা। গবেষকরা বলেছেন, নারীর কম আয় অর্থনীতির বাইরে পরিবারের লিঙ্গ গতিশীলতাকে প্রভাবিত করে এবং নারীকে অসুবিধার মধ্যে ফেলে দেয়।

স্বামীনাথন বলেন, ‘গৃহিণী হিসেবে স্ত্রীর অবদান অদৃশ্য কিন্তু নগদ অর্থ দৃশ্যমান। তাই যে স্ত্রী টাকা আয় করেন তারা পরিবারে একটি বিশেষ মর্যাদা পান। এটি পরিবারের মধ্যে তাকে একটি কণ্ঠস্বর দেয়। বর্ধিত আয় তার সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ এবং বোঝাপোড়ার বিষয়টিকে মজবুত করে, এমনকি তাকে যে কোনো অপমানজনক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে।’ আর্থিক অসঙ্গতি দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে। প্রফেসর মালগান বলেন, ‘যেহেতু নারীর সঞ্চয় ও সম্পদ কম এবং বৃদ্ধ বয়সে আয় কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে তাই পেনশন পলিসিগুলো উপার্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।’

তবে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ১৯৭৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে পরিবারের মধ্যে আন্তঃবৈষম্য ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। প্রফেসর স্বামীনাথন বলেন, ‘বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি ঘটেছে এবং শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। বিশ্বের অনেক জায়গায় আরো বেশি নারীবান্ধব নীতি অর্থনৈতিক ব্যবধানকে সংকুচিত করেছে। কিন্তু বৈষম্যের হার কিছুটা হ্রাস সত্ত্বেও বর্তমান বৈষম্যহারের স্তরগুলো অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং এই ব্যবধান আরো কমাতে হবে। সরকার এখনো এই বিষয়ে ভালোভাবে কথা বলছে না। কোম্পানিগুলো নারীদের নিয়োগ করছে না। পরিবারের সদস্যদের যত্ন এবং অবৈতনিক গৃহকর্মের শাস্তি পাচ্ছে নারীরা। তাই আমাদের জিজ্ঞাসা করতে হচ্ছে; নারীর কাজ কি স্বীকৃত হচ্ছে? পরিবার-বান্ধব এবং শিশু-বান্ধব নীতি কি আছে কি? আমাদের মানুষ হিসেবে ভালো হতে হবে। অবৈতনিক কাজের বোঝা ভাগ করে নিতে হবে। সরকার এবং সমাজ অনেক কিছুই করতে পারে। এটা কিছুতেই এভাবে চলতে পারে না’।

বিবিসি থেকে অনুবাদ: লিহান লিমা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *