পর্ব-২: খানকিগো আবার দাফন কীসের?
শাহাজাদী বেগম পেশাগত জীবনে একজন উন্নয়নকর্মী, ১৮ বছর ধরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। উনি বাংলাদেশে যৌনকর্মী ও শিশুদের মানবাধিকার রক্ষা, এইচআইভি ও এইডসসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, পাচারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে গবেষনার কাজ করছেন। এই কাজগুলোর জন্য তাকে দেশের যৌনপল্লীগুলোতে অসংখ্যবার যেতে হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতাগুলোকেই গল্পে রূপান্তর করে লেখা “গুহান্তরাল” ধারাবাহিক আকারে প্রকাশ হচ্ছে ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে। আজ পড়ুন এর দ্বিতীয় পর্ব।।
ঢাকায় ফিরে সুরমা ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আম্মুর শরীরটা খারাপ, তাকে নিয়ে ডক্তারের কাছে যাওয়া পরীক্ষার পর পরীক্ষা। অফিসে রিজিওনাল অফিসের টিম এসেছে তাদের সাথে আলোচনা, ঢাকায় সরকারি লোকজনদের সাথে মিটিংগুলোতে সাথে থাকা, তাদের ফিল্ড ভিজিটের ব্যবস্থা করা কোথায় যাবে- যে যাবে সাথে, কোন্ কো্ কাজ দেখবে ইত্যাদি। নিয়মিত কাজগুলোতো আছেই। কিন্তু প্রিন্সেসের প্রশ্নগুলো মাথা থেকে বের করতে পারে না। ওদিকে স্বর্নার মায়ের আকুতিও তাকে তাড়া করে ফেরে। সে চেষ্টা করে কোন একটা এনজিও শেল্টার হোমে ব্যবস্থা করা যায় কি না। কয়েকদিন পরে স্বর্নার মা ফোন দিয়ে জানায়, স্বর্নাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে, পাশের গ্রামে তার একটা “ধর্মের বোন” আছে তার কাছে, মাসে মাসে খরচপাতি পাঠিয়ে দেবে। তারাই স্বর্নাকে স্কুলে ভর্তি করে দেবে।
সুরমা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, এক সমস্যা থেকে বেঁচে মেয়েটি আরেকটি সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে। নিজের আত্মীয়রা যেখানে কেউ কারো দায়িত্ব নেয় না, সেখানে “ধর্মের বোন” কতটা দায়িত্ব পালন করবে সেটা তো বলাই বাহুল্য। মাঝখান থেকে নিজের উপার্জনের সব টাকাগুলা খোয়াবে, মেয়েটাও অন্য কোন হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হবে।
পুরো সপ্তাহটা দম বন্ধ করা ব্যস্ততা শেষে বৃহঃস্পতিবার সন্ধ্যায় বন্ধুরা মিলে মুভি দেখতে গেল, ডিনার শেষে বাসায় ফিরতে রাত প্রায় ১১টা। শুক্রবার দুপুর অব্দি ঘুমাবে ভেবে ফোনটা সাইলেন্ট করে শুতে গেল। সকাল ৭ টার দিকে আম্মুর ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙ্গে। দরজা খুললে জানলো অফিস থেকে বাসার নম্বরে ফোন দিয়েছিল মোবাইলের ফোন ধরছিল না জন্য। আম্মুকে চায়ের কথা বলে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে ১৭টা মিসড কল আর ১ টা ম্যাসেজ, মামুন ভাই তাদের ম্যানেজার, লিখেছেন ফোন দিতে। সুরমা তখনো ঘুমে কাতর, মিসকলগুলো দেখতে কষ্ট হচ্ছে। তখনই আবার ফোন
আপা, ফরিদপুরে তো তুমুল ঝামেলা বেধে গেছে, রব্বানী সাহেব মহা আতংকে বললেন।
-কি হয়েছে?
-গতরাতে রথখোলা ব্রোথেলের এক যৌনকর্মী ফরিদপুর সরকারি হাসপাতালে মারা গেছে। নেত্রীরা মিলে রাতেই লাশ নিয়ে এসেছে। ভেবেছিল ভোরের আলো ফোটার আগেই ইমাম সাহেবকে বলে জানাজা পড়িয়ে দাফন করে ফেলবে। কিন্তু ফজরের ওয়াক্তে মুসল্লিরা এসে ঝামেলা বাধিয়েছে। তারা বলছে, “নটীগো আবার জানাজা কিসের, খানকিগো আবার দাফন কীসের? গাঙ্গের পানিত ভাসাইয়া দে। আমাগো গোরস্থানে তোগর যায়গা নাই, কোন পাপীর জায়গা নাই!” ইমাম সাহেব বোঝানোর চেষ্টা করেছেন “লাশের কোন জাত-পাত নেই”। কিন্তু উত্তেজিত লোকজন কিছুই শুনছে না। এখন তারা এলাকায় আরো মানুষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। জুম্মার নামাজের পরে একটা বড় সমস্যা হতে পারে।
-থানায় জানানো হয়েছে? সাংবাদিকদের জানানো দরকার। মানবাধিকার সংগঠন, নারী সংগঠন, মেম্বার-চেয়ারম্যানদের সাথে যোগাযোগ করা দরকার। আপনাদের নির্বাহী পরিচালক এর সাথে পরামর্শ করেন, ওনাকেও এলাকার গন্যমান্য লোকের সাথে কথা বলতে বলেন। সেন্সিটিভ ইস্যু, ঠান্ডা মাথায় কথা বলতে হবে যেন কোন ধরনের দাঙ্গা না বাধে।
-আপা, এত সকালে কেউ ঘুম থেকে ওঠেনি। আজ আবার শুক্রবার। ঢাকার যৌনকর্মীদের নেত্রীদেরকে জানানো হয়েছে। ওনারা বলেছেন, কেন্দ্রীয় নারী নেত্রীদের জানাবেন। নিজেদের একটা দল পাঠিয়ে দিয়েছেন এবং অন্য সবাইকে নিয়ে আরেকটি দল আসবে। লাশটার দাফন হওয়ার দরকার আপা।
-লাশটা কোথায়?
-গাঙ্গের পাড়ে। অন্য দুইজন বয়স্ক মহিলা (প্রাক্তন যৌনকর্মী)পাশে বসে আছে। নিরুপমা মাসী সুর করে হরিনাম জপ করছে , ফাতেমা খালা কালেমা শাহাদত পড়ছে আর আহাজারি করে কাঁদছে। দুজনেই রথখোলা যৌনপল্লীতে বুয়ার কাজ করে।
-মেয়েটার বয়স কেমন? আমি কি চিনি?
-২২ বছর, দেখেছেন আপনি।
সুরমা ফোন রেখে দেয়, চোখের সামনে ভেসে ওঠে পদ্মার পাড়ে পড়ে থাকা একটা লাশ, মেয়ের লাশ, ২২ বছরের তরুণীর লাশ! পায়ের শেষ অংশ পানিতে গিয়ে মিশেছে। হঠাৎ সুরমা কেঁপে ওঠে। ওর মনে হয় নদীর ঢেউ ওর পায়ের পাতা স্পর্শ করলো। আচ্ছা মেয়েটি কি আলতা পড়তে পছন্দ করতো সুরমার মত? সুরমার চোখ ভিজে যায়, গা শিরশির করে ওঠে!
আম্মুই চা নিয়ে আসে, কাপটা বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে “সুমু, কি হয়েছে? বড় কোন সমস্যা?”
সুরমা মাকে কিছু না বলে চায়ের কাপে চুমুক দেয়। লাশেরও জেন্ডার আছে, পাপ আছে, মরেও মুক্তি নাই। রাতের অন্ধকারে যে খদ্দেরগুলো মেয়েটিকে রাণি বানাতো, চিতকারে শীৎকারে শরীর খুঁড়ে খুঁড়ে সুখ খুঁজতো, ঔচিত্যের বেড়াজাল ভেঙ্গে যাবতীয় প্রয়োজন মিটিয়ে নিতো শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে, তারাই এখন এই লাশ দাফনের ঘোর বিরোধী। কি অদ্ভুত পৃথিবী!
ফরিদপুর জেলার প্রাণকেন্দ্রে পাইকারী বাজার এবং ট্রাক স্ট্যান্ডের পাশেই গড়ে উঠেছে রথখোলা ব্রোথেল, খুবই ঘনবসতিপূর্ণ প্রায় এক একর জমি জুড়ে। তাতে প্রায় ৪০০ নারীর বাস। শোনা যায় প্রায় ১০০ বছর আগে এক হিন্দু জমিদার এই জায়গাটা দিয়েছিলেন নর্তকীদের থাকার জন্য। তখন এখানে একটি মেলা হত এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে নাচের মেয়েরা আসতো। পরবর্তীতে ৬০’র দশকে এখানে যৌনপল্লী স্থাপিত হয় এবং জায়গাটি এই পল্লীর জন্যই দান করা হয়। ৫জন এই জায়গাটির মালিক হিসাবে আছে এবং তারাই মূল নিয়ন্ত্রণকারী। এনজিওদের সহযোগিতায় এখানে একটি সংগঠন আছে যেটি সরকারি অফিসে নিবন্ধিত। এখানে অনেক কিশোরী যৌনকর্মী আছে। এখানে বাবুদের সংখ্যাও বেশি। ছুকরী (বন্ডেড সেক্স ওয়ার্কার) আছে প্রচুর, অত্যাচার, নিপীড়নও বেশী।
সুরমা মামুন ভাইকে ফোন দেবার আগে মিসকলগুলো দেখে। মমতাজ আপা- জাতীয় মোর্চার নেত্রী, আলেয়া আপা- নারীনেত্রী, রশীদ ভাই- অন্য একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করে। সে একে একে সবার সাথে ফোন ব্যাক করে কথা বলে নেয়, তাৎক্ষনিক একটা আলোচনা সেরে ফেলে কী করা যেতে পারে। সব শেষে মামুন ভাইকে ফোন করে। পুরোটা শুনে তিনি সুরমাকে ডিসি সাহেবকে একটা ফোন দিতে বলেন। মামুন ভাই জাতিসংঘের লোকজন, ফরিদপুর সদরের সংসদ সদস্যকে যোগাযোগের দায়িত্ব নেন। সুরমা গোসল সেরে নাস্তার টেবিলে বসে, ওর মুখে কিছু রোচে না, খালি মনে হয় পদ্মার ঢেউটা এসে ওর পায়ের পাতায় আছড়ে পড়ছে।
বেলা ১০টা নাগাদ ডিসি সেহেবকে ফোন দেয়। ওপাশে কেউ ধরে না দেখে সুরমা একটা মেসেজ পাঠিয়ে রাখে। ঢাকার কিছু পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলকে জানায়। এমন সময় সাংবাদিক আশিক ফোন দেয়। জানায় পরিস্থিতি খুবই উত্তপ্ত। যৌনকর্মীদের একটা অংশ, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার কর্মী আর কিছু স্থানীয় এনজিও এবং আরো কিছু লোকজন মিলে ডিসি অফিসের সামনে অবস্থান করেছে, তাদের হাতে প্ল্যাকার্ড, মুখে স্লোগান, দাবি- লাশটিকে তার নিজের ধর্ম অনুসারে দাফন করতে হবে। বিকালে প্রেসক্লাবে একটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। ডিসি সাহেব ঢাকায় ডিসি সমাবেশে গেছেন। একটি স্থানীয় পত্রিকা থেকে ফেইসবুক লাইভ প্রচার করা শুরু হয়েছে।
-আশিক সাহেব, থানার ভূমিকা কী? জুম্মার পরে যেন সহিংস কিছু না হয়। আসলে কোন হাঙ্গামা না করে শুধু লাশটার দাফনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। নইলে আবারো ব্রোথেল উচ্ছেদ করার চেষ্টা করবে। ঘটনা অন্যদিকে যাবে। কাজেই পুলিশের বড় সাপোর্ট লাগবে।
– থানাকে জানানো হয়েছে, কিন্তু মনে হচ্ছে তাদের আড়মোড় ভাংতে সময় লাগবে।
সুরমা ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন রেখে দেয়। এরই মধ্যে ঢাকা ও দেশের অন্যান্য ব্রোথেল থেকে নেত্রী ও মানবাধিকার কর্মীরা বিবৃতি দিয়েছে, কেউ কেউ ফরিদপুরে আসার জন্য রওয়ানা হয়েছে।
একটা অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন, “সুরমা আপা, আমি লুতফা, রথখোলা যৌনকর্মীদের সংগঠনের ক্যাশিয়ার। আপা মাইয়াডা মরছে রাইত ১২টা। অহন বেলা ১১ টা। লাশ ফুইলা ওঠছে, গন্ধ বাইরাইতাছে। কুকুরগুলান আশপাশ দিয়া ঘুরাঘুরি করে, সুযোগ পাইলেই নাড়িভূড়ি নিয়া দৌড় দিব। আপা কিছু একটা করেন । একটা মানুষ মরনের পরেও কি মাটি পাইবো না? এ কেমন বিচার, কন?”
-লুতফা, এর আগে কাউকে আপনারা দাফন করেছেন?
-না আপা
– কী করেন আপনারা কেউ মারা গেলে?
-আপা, এত বছর ধইরা পানিতে ভাসাইয়া দিত। এখন আমরা আপনাগো কাছ থিকা মানবাধিকারের ট্রেনিং পাইছি। আপনারাই আমাগো শিখাইছেন সমাজের অন্য মানুষের মতন আমরাও সমান অধিকারের মালিক। আমরা আমাগো অধিকার আদায় করতে চাই। মরণের পরে ধর্মীয় নিয়মে সৎকারের অধিকার চাই। এনজিওরাই আমাগোরে নিজেরে “মানুষ” ভাবতে শিখাইছে।
সুরমা সহসা কোন কথা বলতে পারে না। লুতফা এবার চিৎকার করে বলতে থাকে
-আপা একটা লাশ গাঙ্গের পাড়ে পইড়া আছে। কুকুর শকুন ধইরা অহন টানাটানি করবো, আপা বোঝতে পারতেছেন আমি কী কইতাছি?
লুতফার যাবতীয় ক্ষোভ যেন সুরমার বিরুদ্ধে, ওইতো মানবাধিকারের সেশনটা নিয়েছিল। পুরো সমাজের উপর যাবতীয় ক্ষোভ লুতফা সুরমার উপরে উগড়ে ফেলে, কাঁদতে কাদঁতে ফোন রেখে দেয়।
স্থানীয় সহযোগি সংস্থার ইডি রাকীব ভাই জানালেন ওনারা স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে দেখা করার অনুমতি পেয়েছেন, বেলা তিনটায় এলাকার গন্যমান্য লোকজনসহ একটি দল ওনার সাথে দেখা করতে যাবে। সুরমা কিছুটা কঠিন গলায় বলে, লাশটা পচে যাচ্ছে রাকীব ভাই, ওটা সৎকার করা প্রয়োজন এখনই।
রাকীব ভাই তার অপারগতা জানালেন। এখনো সেটার জন্য কোন ব্যবস্থা করা যায়নি।
জুম্মার নামাজের খুতবা পাঠের সময় ইমাম সাহেব বললেন, “পাপকে ঘৃণা কর, পাপীকে নয়। আমাদের ধর্মে একটি লাশকে পূর্ণ মর্যাদায় দাফনের কথা বলা আছে”।
অমনি মুসল্লিদের ভিতর গুঞ্জন শুরু হয়ে গেল। একজন জোরে বলে উঠলো “ঐ শালা ভন্ড ইমাম, বেশ্যার আবার মর্যাদা কি রে?” আরেকজন আরো উত্তেজিত হয়ে বলল, “নিশ্চয় ঐ ভন্ড ইমাম রাতের অন্ধকারে ঐ মাগীপাড়ায় যায়। ঐ শালারে ধর, মার শালারে…” সমবেত চিৎকার “মা… মার… শালারে…”। উত্তেজিত মুসুল্লি নামাজ বাদ দিয়ে ইমামের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
একটা সময় ইমাম সাহেব মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। উত্তেজিত মুসুল্লিরা রথখোলা ব্রোথেল অভিমুখে রওয়ানা হয়। মুহুর্তেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে সারা শহরে। দলে দলে লোক মুসল্লিদের সাথে যোগ দিতে থাকে।
ফেইসবুকে লাইভ প্রচার হচ্ছে। সেগুলোতে অসংখ্য কমেন্ট, বেশিরভাগই গালাগালি। সুরমা এই ভয়টিই করছিল । এখন ফেবুতে দেখে দেশের অন্যান্য স্থানেও ছড়িয়ে পড়বে, অন্য ব্রোথেলগুলো ঝুঁকির মুখে পড়বে, প্রাণহানি হবে। সে অস্থির হয়ে পড়ে, মরিয়া হয়ে আরেকবার ডিসি সাহেবকে ফোন দেয়।
কয়েকজন যৌনকর্মী ও কয়েকজন এনজিওকর্মী একটা কলার ভেলাতে লাশটাকে তোলে। লাশ ছুঁইয়ে তারা শপথ নেয় আজ পারলো না কিন্তু একদিন তারা তাদের অধিকার আদায় করবে। নিহারিকা মাসী দুটো ফুল এনে লাশের কপালে ছুঁইয়ে মাথার পাশে রাখে। ফাতেমা খালা একটা তসবি লাশের বুকের উপরে রাখে। সবাই মিলে পানিতে ঠেলে ভেলাটি ভাসিয়ে দেয়। কাঁদতে কাঁদতে তারা ফিরতি পথ ধরে।
অফিসের সামনে যৌনকর্মীদের অবস্থানের খবর ডিসি সাহেব সকালেই পেয়েছিলেন। এসপি সাহেব যথারীতি ব্যবস্থাও নিয়েছেন। নামাজের বিরতিতে সুরমার মেসেজটি দেখেন, ঠিক তখনই মসজিদে ইমামের উপর হামলার খবরটি পান। উত্তেজিত মুসুল্লি নামাজ বাদ দিয়ে রথখোলার দিকে যাচ্ছে- সবকিছু জানতে পারেন। ঠিক এই সময় সুরমার ফোন আসে “স্যার, পুলিশ ফোর্স ছাড়া কোনভাবেই এটা ঠেকানো যাবে না। ফেইসবুকে লাইভ প্রচার হচ্ছে, এসব দেখে অন্য জায়গাতেও উত্তেজনা তৈরি হবে। সহিংসতা, রক্তপাত, প্রাণহানি যে কোন কিছু হয়ে যেতে পারে স্যার। কিছু একটা করেন স্যার প্লিজ।”
-আমি দেখছি কি করা যায়।
বলেই উনি ফোন রেখে দিয়ে এসপি সাহেবের সাথে কথা বলেন।
যৌনকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, এলাকার কিছু লোকজন, সাংবাদিক, কলেজের শিক্ষক এমন কিছু শুভাকাংখী মানুষ রথখোলা ব্রোথেলের সামনের দিকটা মানববন্ধন করে ঘিরে রেখেছে। উত্তেজিত জনতারা এদিকেই আসছে। হঠাৎ করে অনেকগুলো পুলিশের গাড়ির সাইরেন বেজে ওঠে। বিপুল সংখ্যক পুলিশ এসে অবস্থান নেয়। উত্তেজিত জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
(চলবে…)
পড়ুন দ্বিতীয় পর্ব- পর্ব-২: খানকিগো আবার দাফন কীসের?
পর্ব-৩: টাঙ্গাইলের পুণ্যভূমিতে পাপীষ্ঠাদের আর জায়গা হবে না
পর্ব-৪: ‘ভালো হইতে চাইছিলাম, দিলেন কই?’
পর্ব-৫: ‘আমরা তো খারাপ কাজ করি, তাই দোয়া চাই আল্লাহর কাছে’
পর্ব-৬: ‘পিন্দনের কাপড় খুইলা টাকা কামাই, পিন্দনেরই কাপড় কেনার লাইগা’
পর্ব-৭: ‘সমাজে যেমুন ব্যাডারা বউরে পিডায়, আমাগোও বাবুরা মারে’
পর্ব-৮: ‘সারাদিন ভালবাসলো, সন্ধ্যায় যৌনপল্লীতে নিয়া বেইচা দিয়া গেল’
পর্ব-৯: ‘‘এই যৌনপল্লীর মাইয়াগো উন্নতি করতে চাই”
পর্ব-১০: “একজন খদ্দের না পাইলে ভাত পাবো কোম্মে”
পর্ব-১১: ‘আমি ভালোবাসি মাইয়াগো, ব্যাডাগো সাথে শুইলে আমার গা গোলায়!’
পর্ব-১২: “এসএসসি’র নিবন্ধনের সময় মাইয়ারে নিজের বইলা স্বীকৃতি দিলো”
পর্ব-১৩: “যৌনপল্লী না থাকলে সমাজে কোন পরকীয়া, সুইসাইড থাকবে না”
পর্ব-১৪: টিকে থাকাই জীবন, বেঁচে থাকাই জীবন
পর্ব-১৫: যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, বঙ্গবন্ধুরে মারল; এইসবের মইধ্যেও ওগো মাইয়া মাইনষের শরিল লাগে
শেষ পর্ব: আমার আকাশে পাখি হয়ে উড়বেন?