November 21, 2024
জীবনের গল্পফিচার ৩

পর্ব-১৫: যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, বঙ্গবন্ধুরে মারল; এইসবের মইধ্যেও ওগো মাইয়া মাইনষের শরিল লাগে

শাহাজাদী বেগম পেশাগত জীবনে একজন উন্নয়নকর্মী, ১৮ বছর ধরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। উনি বাংলাদেশে যৌনকর্মী ও শিশুদের মানবাধিকার রক্ষা, এইচআইভি ও এইডসসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, পাচারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে গবেষনার কাজ করছেন। এই কাজগুলোর জন্য তাকে দেশের যৌনপল্লীগুলোতে অসংখ্যবার যেতে হয়েছে।  সেই অভিজ্ঞতাগুলোকেই গল্পে রূপান্তর করে লেখা  হয়েছে “গুহান্তরাল”, ফেমিনিস্ট ফ্যাক্টরে ধারাবাহিক আকারে প্রকাশ হচ্ছে। আজ পড়ুন এর পনেরোতম পর্ব।।

মার্চের প্রথম সপ্তাহে সুরমা পটুয়াখালী যৌনপল্লী ভিজিটের দিন ঠিক করলো। যাওয়া-আসাসহ পুরো পাঁচ দিনের পরিকল্পনা, একেবারে রবি থেকে বৃহস্পতি পর্যন্ত। রেগুলার মনিটরিং- আউটরিচ, রেকর্ড কিপিং, ক্লিনিক এইসব দেখাশোনা, মেয়েদের সাথে কথা বলা, সংগঠনের সাথে বসা, রোগীদের সাথে কথা বলা ইত্যাদি। এর মাঝে শিউলির সাথে সময় নিয়ে বসতে হবে, সত্যি কারণটা তার জানা দরকার; দুই দিনের নেটওয়ার্কিং অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ট্রেইনিং আছে আর এনজিও কোঅর্ডিনেশন মিটিংয়ে প্রেজেন্টেশন দিতে হবে। পাঁচ দিনের জন্য লাগেজটা বড় হয়ে গেল, এবারে ব্যাগ গোছাতে একটু সময়ও লাগলো। মার্চ এলেই লাল সবুজ পরার বাতিক আছে, তার সাথে রঙ আর থিম মেলানো গয়নাগাটি।

পটুয়াখালী যৌনপল্লী শহরের পৌরসভা এলাকার মধ্যেই গড়ে উঠেছে ২-৩ বিঘা জমি জুড়ে। এটা  একদম শহরের মধ্যে বাসস্ট্যান্ডের পাশে। আশেপাশের মানুষ মনে করতে পারে না কবে কখন এইটা গড়ে উঠেছে। জমিটা ব্যাক্তিমালিকানাধীন, ১২ জন মালিক আছে। ১৭টা ইটের বাড়িতে ১২৫টা ঘর আছে। অন্যান্য ব্রোথেলের মত এখানেও যৌনকর্মীরা দিন চুক্তিতে ঘরভাড়া নিয়ে থাকে। ১১৩ জন যৌনকর্মী ৩৩ জন সন্তান সাথে নিয়ে বসবাস করে এখানে।

রবিবারে পটুয়াখালী পৌঁছতে বিকেল হয়ে গেল। সোজা হোটেলে উঠল। পরদিন সকালে যৌনপল্লীর ভিতরে প্রকল্প অফিসে পৌঁছে দেখে অফিসের সকলে এসে গেছে। কোর্ডিনেটর রাশেদ আগেই সবকিছু পুরো টিমের সাথে জানিয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। তবুও সুরমা একবার তাদের সাথে বসে আবার আলোচনা করে নিল। এ বেলা কাগজপত্র নিয়ে বসলো, রিপোর্টের কমেন্টগুলো নিয়ে কথা বলল, কনডম বিতরনের হিসাবটা নিয়ে সমস্যা আছে, সহসাথী শিক্ষায় (পিয়ার এডুকেশন) নতুন মেয়ের সংখ্যাটাও অনেক বেশি। কিছু কিছু হিসাব মিলাতে পিয়ার এডুকেটরদের রিপোর্টও দেখতে হচ্ছে। দুপুরের খাবারের পর যৌনকর্মী সংগঠনের কমিটির সাথে কথাবার্তা। তবে তার আগে শিউলির সাথে কথা বলবে, তাকে বলা আছে। শিউলির কথা মনে পড়তেই সুরমার বুকের মধ্যে ঢিপ ঢিপ করা শুরু হলো। মেয়েটার প্রতি তার অনেক মায়া। কেন মেয়েটা পালিয়ে আবার ব্রোথেলে এলো এটা তাকে জানতেই হবে। এত চেষ্টা করেও শেষ মুহুর্তে হাল ছেড়ে দিলো! সে শিউলির কেইস ফাইলটা খুলে চোখ বুলাতে থাকে।

– সুরমা আপা, শিউলি এসেছে।

অফিস সহকারি এসে জানালো

‘‘ওকে কাউন্সেলিং রুমে বসতে দেন”, রাশেদ বললো।

সুরমা দুরুদুরু বুকে পাশের কাউন্সেলিং রুমে গেল। শিউলি মাটির দিকে তাকিয়ে বসে আছে। ওর মাঝেও কি সংকোচ নাকি অপরাধবোধ? সুরমা কিছুটা দূরত্বে বসলো, একটু সময় দিয়ে আন্তরিকতা নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘‘কেমন আছেন শিউলি?”

শিউলি কোন উত্তর দিলো না, মাটির দিকে তাকিয়ে চুপ করে আছে।

– শিউলি, কেমন আছেন? (শিউলি নিরুত্তর)

– অফিসের কাজে আমাকে নিয়মিত আসতে হয়। এলামই যখন তখন ভাবলাম আপনার সাথে কথা বলি। আপনি যদি কথা না বলতে চান ঠিক আছে, তাহলে আর কিছু জিজ্ঞেস করবো না।

– ভালো আছি আপা

নিচের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বললো।

– মুখ তোলেন, আমরা কথা বলি।

শিউলি মুখ তোলে, চোখে মুখে অপরাধবোধ। বলে, ‘‘আপনাদেরকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, এখন আবার অনেক ঝামেলা দিচ্ছি।”

– ঝামেলা হচ্ছে, সেগুলো সামলানোর জন্যই আমরা চাকরি করি। কিন্তু আসলে কী হয়েছিল? ঐ ৫ দিন কোথায় ছিলেন? কেন পালালেন? আর মাত্র দুইটা মাস পরেই কোর্সটা শেষ হত, চাকরির ব্যবস্থাও করা ছিল। এই শেষ সময়ে এসে হেরে গেলেন?

শিউলি একটু হাসার চেষ্টা করে বললো, ‘‘হারজিত তো খেলাতে হয়। জীবনটা খেলা কিংবা যুদ্ধ নয়, এখানে হারজিতের কোন বিষয় নেই। জীবন একটা সময়, যে নিজের মত বয়ে চলে। প্রত্যেক মানুষ যতটা সম্ভব নিজের মত করে সময়টাকে কাটানোর চেষ্টা করে। তাই প্রত্যেকের নিজের জীবন হয়। যার যার সময় তার তার জীবন। এখানে হারজিতের কিছু নাই, আপা। যেই সময়ে যা হয় সেটাই সেই সময়ের জন্য সবচেয়ে ভাল। অন্য সময়ে বা অন্যের কাছে সেটাকে ভুল বা হার মনে হতে পারে।

সুরমা মনে মনে একটু বিরক্ত হয়। এতগুলো মানুষ, সংস্থার এতো চেষ্টা জলে গেলো, এখনো কত হাঙ্গামা। আসল কারণটাতো বললোই না, উল্টা জ্ঞান দিচ্ছে। যতটা সম্ভব আরো আন্তরিক হয়ে  আবারো জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছিল?”

শিউলি এবার বলতে শুরু করলো- ‘‘আমি গার্ড এর সাথে প্রেমের নাটক করি, বিয়ে করবো শুনে সে আমাকে নিয়ে পালালো। আমাকে তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেল। সেখানে তার এক বছর আগে বিয়ে করা বউ আছে। তার মা আর বউ তার সাথে প্রচণ্ড ঝগড়া করে। আমি তো আসলে তারে বিয়ে করবো না, আমি শুধু পালানোর পথ খুঁজছিলাম। আমি তার বউয়ের সাথে খাতির করি। বলি আমারে একটা ফোন করার ব্যবস্থা করে দিলে আমি তার বররে বিয়ে না করে চলে যাবো। সে আমাকে তারই ব্যবস্থা করে দেয়। আমি শাহেদকে ফোন দিই।”

– শাহেদ? আপনার সেই প্রেমিক? যে আপনাকে দুইবার যৌনপল্লীতে বিক্রি করেছে?

সুরমা ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে।

– জি আপা। কারণ যৌনপল্লীতে আসতে হলে আমার তার সাহায্য দরকার। সে যেহেতু খারাপ মানুষ, তাই লোভে পড়ে আসবে। দুইদিন পরে সে আসলো। গার্ডের বৌয়ের সহযোগিতায় আমি শাহেদের সাথে পালালাম।

– আর সে এখানে নিয়ে এসে তৃতীয়বারের মত আপনাকে বিক্রি করলো, তাইতো?

সুরমার কণ্ঠে একটু শ্লেষ।

‘‘শুধু কি তাই? আমার কাছে হাত খরচ থেকে জমানো কিছু টাকা ছিলো সেখান থেকে তার যাওয়া আসার ভাড়াসহ আরো কিছু টাকা দিয়েছি। কোন যৌনপল্লীতে ঢোকা সহজ হবে, সেগুলো সবই সে করেছে। আমার যেহেতু লাইসেন্স (নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে ডিক্লারেশন) আছে, আমি স্বাধীনভাবেও কাজ করতে পারতাম। কিন্তু এই যে আমার পালিয়ে আসা নিয়ে থানা পুলিশ হবে এগুলো সামাল দেওয়ার জন্য মাথার উপর সর্দার্নীকে লাগবে’’, শিউলির স্বাভাবিক গলায় উত্তর।

– সবই তো বুঝলাম, কিন্তু কেন পালিয়ে এলেন সেটা এখনো বুঝলাম না।

– সব কথা সবাইকে বলা যায় না আপা।

– আমাকে অন্তত বলতে পারতেন

‘‘না, আপনাকে বলতে পারতাম না। সব কথা আপনাকে আমি বলতে পারি না’’, শিউলি একটু গলা চড়িয়ে উষ্মার সাথে বললো। একটু থেমে আবার বললো, ‘‘সব কথা বলার মত আমার কেউ ওখানে ছিল না।’’

এবার সুরমা কিছুটা ধৈর্য হারা হয়ে যায়। মরিয়া হয়ে বলে, “না বললে আমরা বুঝবো কী করে? শিউলি, আমাকে অন্তত বলেন। আপনাকে বলতেই হবে। নইলে সবাই হতাশ হবে। আর কোন শিউলির জন্য কেউ কোনো চেষ্টা করবে না। আবারো অন্য কোন শিউলির জন্য যখন চেষ্টা হবে তখন সেই বিষয়গুলো বিবেচনা করবে। আপনার হলো না। কিন্তু অন্য কারো জন্য চেষ্টা বন্ধ হয়ে যাক সেটা নিশ্চয় আপনি চান না।”

শিউলি সুরমার দিকে তাকিয়েই চোখ নামিয়ে ফেলে। আস্তে আস্তে বলে, ‘‘যৌনপল্লীতে থাকতে আমি প্রতিদিন ৬-৮ টা কাস্টমার নিতাম। আমার একটা শারীরিক –মানসিক অভ্যস্ততা তৈরি হয়েছিল। কখনো ভেবে দেখেছেন হোস্টেলে আমার সময় কীভাবে গেছে?  কি ভয়ানক অসহ্য যন্ত্রনা অথচ কাউকে কিচ্ছু বলতে পারতাম না। আমার মাস্টারবেট করার অভ্যাস তৈরি হয়নি, পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। নিজের সাথে অনেক বোঝাপড়া করেছি, আপনাদের এত চেষ্টা, আমার নতুন জীবনের স্বপ্ন- অনেক ভেবেছি। কিন্তু কোন কূল কিনারা পাইনি। মনে হয়েছে যৌনপল্লীতেই আমি সহজে সবকিছু বলতে পারি, সহজে সব কিছু করতে পারি।”

সুরমা স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো।

দিনের সব কাজ শেষ করে সন্ধ্যার আগেই হোটেলে ফিরলো। মনটা বিষন্ন, মাথার মধ্যে সারাক্ষণ শিউলি ঘুরছে। একবারও এভাবে ভাবেনি ওরা। মাসে দুইদিন একজন কাউন্সেলর হোস্টেলে যেত। কিন্তু সেটা ওর জন্য যথেষ্ট ছিল না। একজন স্পেশালাইজড কাউন্সেলরের ব্যবস্থা করতে পারতো, দু’এক জন সাইকোলজিস্ট এবং সাইকিয়াট্রিস্টের সাথে পরামর্শ করতে পারতো। মাসে একবার তাদের সাথে ফলো আপে নিয়ে যাওয়া যেতে পারতো।  সমাজে কত সুবিধাজনক অবস্থান সুরমাদের। তবুও কতসময় রাগ হয়, জেদ হয়, অসহায় লাগে। কত সময় আল্লাহর উপর রাগ করে নামাজ পড়া ছেড়ে দেয়। অথচ শিউলি তো স্পেশাল কেস। ওর ইন্টেন্সিভ সাপোর্ট লাগতো। একবারো মাথায় আসেনি, নিড অ্যাসেসমেন্টেও আসেনি। খুব অপরাধবোধে ভোগে সুরমা। বাস্তবসম্মত প্রজেক্ট ডিজাইন এত সহজ না, মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনাও এত সহজ না। মানুষের আরো কাছে গিয়ে কাজ করা দরকার। তাদেরকে সাথে নিয়ে, তাদের মত করে কাজ করা দরকার।

পরের দিন সকাল থেকে ট্রেনিং। সুরমা পৌনে দশটায় প্রকল্প অফিসে পৌঁছে যায়। কোর্ডিনেটর রাশেদ ট্রেনিংয়ের সবকিছু গুছিয়ে রেখেছে। সুরমা আর রাশেদ সেশনগুলো ভাগ করে নিয়েছে। ট্রেনিংয়ে মেয়েদের ধরে রাখার জন্য মজার মজার খেলা, কৌতুক, গান এসব থাকে সেশন প্ল্যানে।

দুপুরের খাবারের পরে আর কেউ থাকতে চায় না, তাই বেলা দুইটা পর্যন্ত দিনের সেশন শেষ করে খাবার দিয়ে বিদায়। কেউ কেউ খাবার নিয়ে ঘরে চলে গেছে, কেউ কেউ এখানেই খাচ্ছে। খাওয়া শেষ করার অনেক পরেও কয়েকজন ট্রেনিং রুমেই বসে গল্প করছে। সুরমা খাওয়া শেষে ওদের কাছে গিয়ে বসে। টুকটাক কথাবার্তা হচ্ছে এমন সময় শাবনূর নামের মেয়েটি বলে ওঠে, ‘‘আপা , একটা গান কই।”  উত্তরের অপেক্ষা না করেই গেয়ে ওঠে-

তোমরা গেইলে কি আসিবেন মোর মাহুত বন্ধুরে?

আরে হস্তি নড়ান, হস্তিরে চড়ান, টাকুয়া বাঁশের  আড়া,

ওরে কি সাপে দংশিলেক বন্ধুয়াক বন্ধুয়া,

আহইন মোর পোড়া রে,

আর গেলে কি আসিবেন মোর মাহুত বন্ধুরে?

ওঝায় ঝাড়ে, বাইদ্যে ঝাড়ে,

ঢেঁকিয়ার আদাল দিয়া,

ওরে মুই নারীটা ঝাড়ুম বন্ধুয়ার দেশ্যে, আদাল দিয়া রে,

আর গেলে কি আসিবেন মোর মাহুত বন্ধুরে?

আর গেলে কি আসিবেন মোর মাহুত বন্ধুরে?
আরে হস্তি নড়ান হস্তিরে চড়ান হস্তির গলায় দড়ি
আরে ও সত্যি করিয়া বলরে মাহুত কোন বা দেশে বাড়ি?
তোমরা গেইলে কি আসিবেন মোর মাহুত বন্ধুরে?
আরে হস্তি নড়ান হস্তিরে চড়ান হস্তির পায়ে বেড়ি
আরে সত্য কইরা কনরে মাহুত ঘরে কয়জন নারী রে?
হস্তি নড়ান হস্তিরে চড়ান হস্তির পায়ে বেড়ি
আমি সত্য করিয়া কইলাম কন্যা বিয়া নাহি করিরে।

আর গেলে কি আসিবেন মোর মাহুত বন্ধুরে?

 

 – এটা কি ভাওউয়াইয়া গান? এই গান আপনি কোথায় শিখেছেন?

– আপা, মোর বাড়ি গাইবান্ধাত।

– বলেন কি! গাইবান্ধা থেকে পটুয়াখালী যৌনপল্লী?

– এক দুপরত চোক্ষের পলক পড়তে না পড়তেই কয়ডা গাঁও নদীর প্যাটত চলা গেলো। বাড়িঘর জমি জিরাত সব শ্যাষ, হামরা তখনকার তখনই পথের ফকির হনু।যায়া উঠনু এললাইনের ধারত। হামাকেরে মতন আরো অনেক মানুষ এললাইনের উপুর খোলা আকাশে নিচে থাকিচুন। কেউ কেউ দূর দ্যাশত কুটুম্বের বাড়িত গ্যালো। তারপর কাম ঢুঁরতে ঢুঁরতে এক দালালের হাতত পড়নু, তখন থাকাই এই পাড়াত থাকন। মোর আসল নাম শরীফা, পাড়াত নাম দিছুন শাবনূর।

নিজের অজান্তেই বুক ফেড়ে সুরমার দীর্ঘশ্বাস পড়ে। বছর বছর নদী ভাঙ্গনে কত গ্রাম-শহর-রাস্তা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কত মানুষের দরিদ্রতার কাতারে যোগ হচ্ছে, কত মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে, কত শরীফাকে শাবনুর হতে হচ্ছে তার কি সঠিক কোন পরিসংখ্যান আছে? প্রতি বছর কত উন্নয়ন কাজ হচ্ছে কিন্তু সেই উন্নয়নের জোয়ারে এই মানুষগুলোর ভাগ্যের উন্নতি হয় না। তারাপদ রায়ের “দারিদ্র রেখা” কবিতাটির কথা মনে পড়ে গেল। মাঝে মাঝে মনে হয় নদীর বুকে পিলার বসিয়ে বিশাল বিশাল সেতু তৈরি হচ্ছে, নদীর স্বাভাবিক গতি নষ্ট হচ্ছে, নাব্যাতা নষ্ট হচ্ছে। তাই বুঝি নদী এমন প্রতিশোধ নিচ্ছে,  প্রকৃতির প্রতিশোধ?  “প্রতিশোধ” শব্দটা মনে হতেই সুরমা ভিতরে ভিতরে অস্থির হতে থাকে, এই শব্দটাতে তার প্রচণ্ড ভয় করে।

ট্রেনিংয়ের দ্বিতীয় দিনে লাঞ্চের মধ্যেই ট্রেনিং শেষ হবে। যথারীতি সকালে ট্রেনিং শুরু হয়েছে। আজ ক্লিনিক ডে। তাই ডাক্তারও এসেছেন, সেদিকে ক্লিনিক চলছে। সেশনের এক ফাঁকে ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসবে এমনই প্ল্যান সুরমার। ক্লিনিক রুমে কোন এক রোগী খুব চিল্লাচিল্লি করছে। আউটরিচ ওয়ার্কার তাকে থামানোর চেষ্টা করছে, সামলাতে পারছেনা। চিৎকার করতে করতে সে ট্রেনিং রুমে ঢুকে পড়তেই রাশেদকে দেখে বলে ওঠে, ‘‘এই যে ভাইয়া, দ্যাখেন, আমারে ঔষধ দেয়না। আমার বয়স হইছে, অসুস্থ মানুষ, আমারে কয় সরকারি হাসপাতালে গিয়া ঔষধ আনতে। এইটা আপনাগো ক্যামন বিচার কন?  আমি নুরজাহান মাসি, ৫০ বছর ধইরা এইখানে আছি, আজ আমার সাথে আপনেরা এইরকম করেন?”

রাশেদ সেশন থামায়, সকলে নুরজাহান মাসির দিকে তাকিয়ে আছে। সুরমা খেয়াল করলো, বয়স্ক, বুড়ো বলা যায়, একজন নারী প্রচণ্ড আক্রোশ নিয়ে অভিযোগ করছে। একসময় ক্ষমতা ছিলো, আক্রোশ দেখে বোঝা যায়।

‘‘নুরজাহান আপা, ঐ ঘরে চলেন, দেখি কি হয়েছে’’, বলেই রাশেদ অন্য রুমে পা বাড়ায়। পিছন থেকে সুরমা বলে ওঠে, “রাশেদ, আমি ওনার সাথে কথা বলতে চাই।”

রাশেদ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে বলে, “ঠিক আছে আপা। সুরমা আপা, উনি এখানকার যৌনকর্মী সংগঠনের প্রাক্তন সভানেত্রী।”

রাশেদকে সেশন চালাতে বলে নুরজাহানকে নিয়ে পাশের ঘরে যায় সুরমা ।

– নুরজাহান আপা, বলেন আপনার কী সমস্যা?

নুরজাহান সুরমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিছু একটা আছে সেই চাহনিতে, সুরমার অস্বস্তি লাগে। দেখে মনে হচ্ছে সত্তরের কাছাকাছি বয়স কিন্তু বাস্তবে তার চেয়ে কম হবে। সে আবারও জিজ্ঞেস করে, ‘‘কী সমস্যা, আপা?”

নুরজাহান মুখ বাঁকিয়ে, কিছুটা হেঁয়ালি বলে, ‘‘ঐ ঔষধের কথা কইছিলাম আর কি। বয়স হইছে, খারাপ ব্যামোতে ধরছে, প্যাডে খাওন নাই, ঔষধ নাই, পথ্য নাই। ভাবলাম আপনাগো ডাক্তাররে দ্যাখাইয়া ফিরি ফিরি ঔষধ নিয়া আসি। ডাক্তারে কয় আমার অনেক ঔষধ লাগবে, সেইগুলা আপনেরা দেননা। সেইগুলার জইন্যে সরকারি হাসপাতালে যাইতে হইবো। (রাগি গলায়) এ ক্যামন নিয়ম আপনাগো কন? আপনাগো ফিরি ঔষধ সকলডি যৌনকর্মী যাগোর খদ্দের আছে তাগোর লাইগা। অগো বয়স কম, আয় রোজগার ভালো, শরিলে বল আছে, তারা ঔষধ কিইনা খাইতে পারে, বাইরের হাসপাতালে যাইতেও পারে। অথচ তাগোরে আপনেরা ফিরি ঔষধ দেন, আর আমাগো লাইগা আপনাগো কিছুই নাই? বয়স হইছে, খারাপ ব্যামোতে ধরছে, প্যাডে খাওন নাই, ঔষধ নাই, পথ্য নাই। আমাগো লাইগা কাজ করেন না ক্যান? এইডা কেমন বিচার কন?”

(কখনো অহংকারী গলায় আবার কখনো প্রবল আক্রোশে, কখনো বিষন্নতায়, কখনো ভালোবাসায় বলতে থাকে) ‘‘আমি নুরজাহান মাসি, একসময় এইখানে রানি আছিলাম, কত রমরমা অবস্থা আছিলো আমার! আমার চোক্ষের ইশারায় কতকিছু হইছে! আর অহন ভুল কইরাও কোন ব্যাডায় ছোঁয় না……যৌনকর্মীগো বাসন মাজি, ফরমাস খাটি, তাতে দুই- চারডা খাওন জোটে। থাকনের একখান ঘর নাই। একজনের ঘরের বারান্দায় পইড়া থাকি। যুবতী মাগি খদ্দের নিয়া ঢলাঢলি করে, আমার বুক জ্বইলা যায়। একসময় সব আছিলো, অহন আমার কিচ্ছু নাই। কিন্তু মন আছে তো, মন! আর শরিল? শরিল বোঝেন শরিল? মাইয়া মাইনষের শরিল? ঐযে আঁতুড় ঘরে যে মাইয়া জন্মাইলো, সেই থাইকা শুরু এক্কেবারে কব্বরে যাওনের আগখান পর্যন্ত। খালি মাইয়া হইলেই হইছে, আর কিচ্ছু লাগতো না! ক্যান, শোনেনেনা ৫ মাসের বাচ্চা, ৪ বছরের বাচ্চা ধর্ষিত হয়?

মন যেমন মরে না, শরিলও তেমন মরে না, মাইয়া মানুশষের শরিলের কোন মাফ নাই, খালি বয়সের সাথে বিকল হইয়া পইড়া থাকে, কিন্তু সব ট্যার পায়। এই যে, আমারে যে ক্লিনারের চাকরি দিছেন আপনারা মাসে ২ হাজার ট্যাকা দেন, আমার কাজ কী? আমার কাজ হইলো সব যৌনকর্মীদের ঘর থাইকা ছোট ময়লার ঝুড়িখান বাইর করি, সেইখান থাইকা গিট্টু দেওয়া বেলুন নিয়া আপনাগো দেই। আপনেরা হিসাব করেন, গবেষনা করেন। অথচ আপনেরা কি জানেন একেকটা বীর্য ভরা বেলুন আমার ভিত্রে কি আগুন জ্বালায়?  আমার মন পোড়ে, আমার শরিল পোড়ে, আমি ভিতরে ভিতরে জ্বলতে থাকি, জ্বলতে জ্বলতে প্রতিদিন নিজের কাছে নিজে মরি। বোঝেন সেসব? জানেন সেসব? সেইটাই যদি না জানলেন, সেইটাই যদি না বুঝলেন তাইলে কিসের এনজিও করেন? কী করার জন্য আপনেরা আসেন? ভাবছেন একটা চাকরি দিয়া একজন বুড়ি যৌনকর্মীর জীবন বাঁচাইলেন? আসলেই কি জীবন বাঁচাইলেন, নাকি প্রতিদিন আমার ভিতরের আমিডারে খুঁইড়া খুঁইড়া বাইর করা আর খোঁচাইয়া মারনের ব্যবস্থা করলেন?  ক্যান বোঝেন না আপনেরা? ক্যান আপনাগো মনে হয় না সেসব?

মনে হইবো ক্যামনে, বোঝবেন ক্যামনে- গাড়িতে আসেন গাড়িতে যান, এইসব ভাবনার সময় কই আপনাগো। এই যে আপনি লাল-সবুজ শাড়ী পিনছেন , সাইজা গুইজা আমাগো তামশা দ্যাখতে আসছেন। আচ্ছা আপনি লাল-সবুজ পরছেন ক্যান ?

– নুরজাহান আপা, এটা মার্চ মাস, স্বাধীনতার মাস তাই পতাকার রঙয়ের শাড়ী পরেছি।

– হা হা হা স্বাধীনতা? স্বাধীনতা মারান? লাল-সবুজ শাড়ি পইড়া স্বাধীনতা মারান? দ্যাশ উদ্ধার করেন?

(সুরমা ভ্যাবাচাকা খেয়ে যায়, কিন্তু নুরজাহান আপন নে বলতে থাকে)

তখন আমার বয়স ১৪ কি ১৫, চারিদিকে গণ্ডগোল, প্রত্যেক রাইতেই মিলিটারি গ্রামের পর গ্রাম পোড়াইয়া দিত। সেই রাইতে বাজান আর মায়ের মইধ্যে ঘুমাইছি। অনেক রাইতে…না, মিলিটারি না, রহিমুদ্দিন চাচা আর তার লোকজনরা আমারে তুইলা নিয়া গেল। একটা মিলিটারি ক্যাম্প,  কতগুলো শরিল, হায়েনার শরিল, আমার নরম শরিলডারে খাবলা মাইরা খাইলো। যখন জ্ঞান ফিরলো দেখি রক্তে ভাইসা যাইতেছে, চারদিকে অনেকগুলো শরিল-মাইয়া মাইনষের শরিল, বড়, ছোট, উলঙ্গ, আর্ধেক-উলঙ্গ-পইড়া রইছে। ভাবছিলাম মরা শরিল, কিন্তু না, কেউ মরে নাই- জীবন্ত লাশ সব। জানেন আপা, হায়েনাগুলো দ্যাখতে ঠিক মাইনষের মত। একবার আমি কামড় দিয়া রক্ত বাইর করছিলাম। ও আল্লাহ সেই রক্তও আমার রক্তের মতনই।

কত মাস আছিলাম মনে নাই। দ্যাশ স্বাধীন হইছে পর ছাড়া পাইছি। চারিদিকে ধ্বংস, কোথাও কেউ নাই, কিচ্ছু নাই। কোথায় পইড়া আছিলাম জানিনা, কেউ একজন এই পল্লীতে নিয়া ফ্যালাইয়া গ্যাছে। সেই থাইকাই এইখানে আছি। প্রথম দুই বছর মাথা খারাপ আছিল। তারপর আস্তে আস্তে ঠিক হইলাম। তখন আমার ভরা যৌবন, শরিল বোঝতে শিখছি, মনও বোঝতে শিখছি, সাথে লীলাকলাও শিখছি। হু হু করে আমার খদ্দের বাড়তে লাগলো। জানেন আপা, যুইদ্ধে  ভাঙ্গা-চোরা দ্যাশ, চারপাশে দুর্ভিক্ষ, বঙ্গবন্ধুরে মারল কিন্তু আমার কাস্টমার কমলো না -কি  আশ্চর্যের ব্যাপার, না! এইসবের মইধ্যেও মাইনষের শরিল লাগে, মাইয়া মাইনষের শরিল।

তারপর কত যুগ পার হইয়া গ্যাল, মাইনষে কয় আমাগো নাকি মুক্তিযোদ্ধা বানাইছে। কই কেউই তো কোনদিন পুঁছলো না। রাজাকার হাকিমুদ্দিনরে নিয়া মুক্তিযোদ্ধার পুরস্কার দ্যায়। অথচ আপনেরা আমাগো ভুইলা গ্যালেন, দ্যাশ আমাগো মনে রাখলো না। (ফিসফিস করে) আপনেরে একটা সত্যি কই আইজ, গোপন কথা। চুপচুপ কইরা কই। আপনি যে পতাকার রঙের কথা কইলেন, সেই “পতাকার ঐ সবুজ রঙ আমার কৈশোর আর লাল রঙ আমার সতীচ্ছেদের রক্ত।” কাউরে কইয়েন না কিন্তু!”

সুরমা নির্বাক। সে নিজেকে সামলাতে পারছে না, ক্রমাগত ঢোক গিলছে তবুও চোখ থেকে টুপটাপ করে কয়েক ফোঁটা পানি ঝরলো। নুরজাহান আপনমনে বলেই চলছে, (কিছুটা আনন্দচিত্তে) ‘‘আমারও এমুন দিন আছিল, ঘাটে এসে বজরা থামতো। ঘোড়ার গাড়ি  দাঁড়াইয়া থাকতো আগে থাইকা। নিশিকান্ত বাবু গরদের ধুতির খুঁট ধইরা বজরা থাইকা নাইমা ঘোড়ার গাড়িতে উঠতো। সেই গাড়ি এসে থামতো এই পল্লীর সামনে। আমি ধোয়া শাড়ি পইড়া, পান খাইয়া ঠোঁট লাল কইরা রাখতাম। আমার থুতনির নিচের তিলটা তার ভারি পছন্দের। সুগন্ধি তেল মাইখা আলপেট কইরা চুল আঁচড়াইতাম। তারপর একটা লম্বা বেনী, সেই বেনীর গোড়াতে  কতগুলো রুপার কাঁটা লাগাইতাম। নিশিকান্ত বাবু দাঁত দিয়ে একটা একটা করে সেই কাঁটাগুলো খুলতো আর আমি শিরশিরায়ে উঠতাম! কি যে সেই শিহরণ! (নুরজাহানের চোখে মুখে আনন্দদ্যুতি ছড়িয়ে পড়ে, সুরমা যেন চোখের সামনে সবকিছু দেখতে পায়।)

আর এখনকার ছুকরিরা কাস্টমার নিয়া মোবাইলের মইধ্যে কি সব ন্যাংটা-পুংটা ছবি দ্যাখে- বলি কী পাছ তাতে, হ্যাঁ? খরস্রোতা নদীর মইধ্যে পদ্মের দ্বীপ খুঁজোস, তোরা? ওরে তাতে শুধু তোগর খদ্দেরই বাড়ে, প্রেমের দ্যাখা মেলে না। প্রেম? প্রেম, প্রেম,  বেশ্যার প্রেম, মাগীর প্রেম নাকি নারীর প্রেম?

আচ্ছা কন তো, নারীর প্রেম আর মাগীর প্রেম কি আলাদা? নাকি পুরুষের কাছে সব নারীই মাগী হয়?

 এমন মারমুখি প্রশ্নে সুরমা বিদ্ধস্ত। নুরজাহান উত্তরের আশা না করেই বলেই বলে ওঠে ,‘‘হাঃ হাঃ হাঃ ডরাইছেন? আচ্ছা থাউকগা, এইবার ঔষধ দ্যান। খাইয়া দুদিন বাঁইচা থাকি। প্যাটে খাওন নাই, অসুখ-বিসুখ শরিল চলে না, তাতে কি হইছে, মনডাতো আছে। একটাইতো জীবন। মইরা গ্যালেই সব শ্যাষ। বাঁইচা থাকনই জীবন। বাঁইচা থাকলে স্বপন দেখা যায়। আর  স্বপন দ্যাখতে না পাড়লে পুরান ভালো দিনগুলা মনের চোখে দেখা যায় …” বলতে বলতে উদাস হয়ে যায়। হঠাৎ ঘোরলাগা অথচ দৃঢ় গলায় বলে, “সব পুরুষ একরকম হয় না, নিশিকান্ত বাবু আমার আলতা রাঙ্গা পায়ে চুমু না খেয়ে কোনদিন আমার গা থেকে কাপড় সরায়নি!”

নুরজাহান দেয়ালে হেলান দিয়ে দরজা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে একদৃষ্টে, আপন মনে লালন পদাবলি থেকে গাইতে থাকে

ক্ষ্যাপা, মাগি মাগি বল কারে,

ও ক্ষ্যাপা, মাগি মাগি বল কারে,

যারে বলছ মাগি মাগি।

মাগির দায় এড়াতে পারে

কোন মহাবৈরাগী।।

সে ঘাট এড়াতে পারে
সে মহা বৈরাগী ।।

মাগির দায় নন্দের বেটা
হালছে বেহাল গলে কেঁথা
উদাসিনি মুড়িয়ে মাথা
ফিরছে হয়ে যোগী ।।

মাগির প্রেমে চন্ডীদাসে
বিকালে রজকীনির পাশে
মরিয়ে জীবন পায় সে
হয়ে শুদ্ধ অনুরাগী ।।

দেবের দেব সে বিরধি কালী
মাগির দায় শ্মাশান বাসি
লালন কয় সে আউলে কেশী
বুকে পা দিয়ে কিসের লাগি ।।

[চলবে]

[চলবে]

পড়ুন দ্বিতীয় পর্ব- পর্ব-২: খানকিগো আবার দাফন কীসের?

পর্ব-৩: টাঙ্গাইলের পুণ্যভূমিতে পাপীষ্ঠাদের আর জায়গা হবে না

পর্ব-৪: ‘ভালো হইতে চাইছিলাম, দিলেন কই?’

পর্ব-৫: ‘আমরা তো খারাপ কাজ করি, তাই দোয়া চাই আল্লাহর কাছে’

পর্ব-৬: ‘পিন্দনের কাপড় খুইলা টাকা কামাই, পিন্দনেরই কাপড় কেনার লাইগা’

পর্ব-৭: ‘সমাজে যেমুন ব্যাডারা বউরে পিডায়, আমাগোও বাবুরা মারে’

পর্ব-৮: ‘সারাদিন ভালবাসলো, সন্ধ্যায় যৌনপল্লীতে নিয়া বেইচা দিয়া গেল’

পর্ব-৯: ‘‘এই যৌনপল্লীর মাইয়াগো উন্নতি করতে চাই”

পর্ব-১০: “একজন খদ্দের না পাইলে ভাত পাবো কোম্মে”

পর্ব-১১: ‘আমি ভালোবাসি মাইয়াগো, ব্যাডাগো সাথে শুইলে আমার গা গোলায়!’

পর্ব-১২: “এসএসসি’র নিবন্ধনের সময় মাইয়ারে নিজের বইলা স্বীকৃতি দিলো”

পর্ব-১৩: “যৌনপল্লী না থাকলে সমাজে কোন পরকীয়া, সুইসাইড থাকবে না”

পর্ব-১৪: টিকে থাকাই জীবন, বেঁচে থাকাই জীবন

পর্ব-১৫: যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, বঙ্গবন্ধুরে মারল; এইসবের মইধ্যেও ওগো মাইয়া মাইনষের শরিল লাগে

শেষ পর্ব: আমার আকাশে পাখি হয়ে উড়বেন?