November 21, 2024
মন ও জীবন যাপনফিচার ৩

নারীর মানসিক স্বাস্থ্য এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?

অনুবাদ ।। সাদিয়া মেহজাবিন

যখন নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নের গুরুত্ব নিয়ে আলাপ করব, তখন তাদের সমস্যাগুলো পুরুষদের সমস্যা থেকে কতটা আলাদা তার প্রতিও খেয়াল করব। নতুন গবেষণাগুলো বলছে নারীদের মানসিক সমস্যা যেমন – বিষণ্ণতা প্রকট। যার অন্যতম কারণ পুরুষ আর নারীর মস্তিষ্কের ভিন্নতা।

লিঙ্গ বৈষম্য আমাদের চারপাশে দীর্ঘস্থায়ী স্টেরিওটাইপ বলয় তৈরি করেছে যা সমাজ ও সংস্কৃতিতে প্রকটভাবে নিমজ্জিত। এমন কি লিঙ্গ বৈষম্য মানসিক স্বাস্থ্য গবেষণা ও যত্নেও প্রভাব ফেলছে।

যদিও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কুসংস্কারগুলো দূর করতে সামান্য অগ্রগতি হয়েছে, তবে এক্ষেত্রে আরো কাজ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে যখন লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে স্বাস্থ্য সেবাতেও তারতম্য হয়।

যারা মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করেন তাদের উচিত মানসিক সমস্যাগুলো নির্ণয় এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য কিভাবে কাজ করে তা জানা।

মানসিক স্বাস্থ্য কিভাবে লিঙ্গ ভেদে ভিন্ন হয়?

মানসিক স্বাস্থ্য এবং মানসিক অসুস্থতা নির্ণয়ে সেক্স এবং জেন্ডার খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্পষ্টত সেক্স নারী ও পুরুষের মাঝে জৈবিক পার্থক্যগুলোকে বোঝায় আর জেন্ডার নারী পুরুষের সমাজে আচরণ ও ভূমিকা বোঝায় যা তাদের দ্বারা প্রদর্শিত হয়। সাধারণত মানসিক সমস্যাগুলোর সূচনা জেনেটিক্স, সমাজে ব্যক্তির ভূমিকা এবং অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণ। ভিন্ন লিঙ্গের ভিন্ন-ভিন্ন মানসিক সমস্যা আছে। উভয়ের সংমিশ্রণ মানসিক সমস্যা বাড়তে প্রভাবিত করতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণত লিঙ্গ ভেদে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে খাবারের সমস্যা, পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার, বিষণ্ণতা, উদ্বেগ। তাই মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে লিঙ্গ পার্থক্যের কারণগুলো আবিষ্কার করলে, মানুষ নির্ভূলভাবে সতর্কতার সাথে সমস্যাগুলো নির্ণয় করবে ও উপযুক্ত চিকিৎসা সেবা নিয়ে উপকৃত হবে।

অভিজ্ঞতা পার্থক্যের মাঝে গভীর দৃষ্টিপাত

ডিপ্রেশন

সবচেয়ে পরিচিত মানসিক স্বাস্থ্য অসুস্থতা যা নিয়ে বেশিরভাগই যুদ্ধ করে তা হলো ডিপ্রেশন। পুরুষের তুলনায় দ্বিগুন সংখ্যক নারী তাদের জীবনে কোনো না কোনো সময় ডিপ্রেশনের সম্মুখীন হয়েছে। লিঙ্গ, জেনেটিক্স, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পার্থক্য সব মিলিয়ে নারীর বিষণ্ণতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে।

বিশ্বজুড়ে প্রধাণত ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডারের জন্যে দায়ী নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের অক্ষমতা। বিষণ্ণতাজনিত সমস্যায় ৪০% অক্ষমতাজনিত কারণে ভোগেন নারীরা যেখানে পুরুষেরা কেবল ৩০% এর নিচে।

অ্যাংজাইটি

উদ্বেগ বা অ্যাংজাইটি আরেকটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যেখানে সাধারণত পুরুষের তুলনায় নারীদের দ্বিগুন অভিজ্ঞতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। টেস্টোস্টেরন হরমোন নারীদের তুলনায় পুরুষের মাঝে বেশি পাওয়া গেছে যা অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ও অ্যান্টি অ্যাংজাইটি হিসেবে সুবিধা দিয়ে থাকে। এছাড়াও উদ্বেগে পুরুষদের তুলনায় নারীদের সহায়তা চাইতে বেশি দেখা যায়। যা নারীদের জটিল রোগ নির্ণয়েও সহায়তা করতে পারে।

ট্রমা

সহিংস সংঘর্ষ, গৃহযুদ্ধ, বাস্তুচ্যুতি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে মুখোমুখী হওয়া বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ২০% নারী তাদের জীবদ্দশায় কোনো না কোনো সময় ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার শিকার হন। যা মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে সমস্যা সৃষ্টির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। নারীরা বেশিমাত্রায় যৌন সহিংসতার শিকার হন এবং যৌন সহিংসতার সাথে যুক্ত পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে (পিটিএসডি) ভোগেন।

পিটিএসডি খুবই সাধারণ মানসিক সমস্যা। যখন কেউ পিটিএসডিতে ভোগে তখন তারা এ সহিংসতার সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের কথাও চিন্তা করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করারও চিন্তা করে। যদিও এটাও একটি কারণ নারীদের পুরুষদের তুলনায় দ্বিগুন হারে পিটিএসডির অভিজ্ঞতা বেশি হওয়ার। নারীদের বেশিমাত্রায় ঘরোয়া সহিংসতা, যৌন নির্যাতন ও অন্যান্য আঘাতমূলক অভিজ্ঞতা হয়। যার ফলে তাদের মানসিক সমস্যা তীব্র হতে পারে যেমন তার অন্যতম উদাহারণ পিটিএসডি।

অতিমাত্রায় খাদ্যগ্রহণ

ইটিং ডিসঅর্ডার পুরুষের তুলনায় নারীদের বেশি হয়। অতিমাত্রায় খাদ্য গ্রহণ স্পর্শকাতর চিন্তাভাবনা ও আচরণগুলির সাথে জড়িত যা বেশি খাবার খাওয়া, ওজন বৃদ্ধি এবং চেহারার সাথে সম্পর্কিত।

অতিমাত্রায় খাদ্য গ্রহণ উল্লেখযোগ্য মানসিক সমস্যাগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করে তবে উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার সাথে তাল মিলিয়েও ঘটতে পারে।

অ্যানোরেক্সিয়া ও বুলিমিয়ার সাথে লড়াই করা বেশিরভাগই নারী। অর্ধেকেরও বেশি যারা ব্রিঞ্জ ইটিং ডিসঅর্ডারে আক্তান্ত হন তারা নারী। অতিরিক্ত খাবারের এ সমস্যা নারীর হতে পারে। ম্যাসাচুসেটস মিডল স্কুলের এক গবেষণায় দেখা যায়, অনুমানিক ৬ % মেয়েরা তাদের ওজন নিয়ন্ত্রনের জন্যে প্রতি মাসে অস্বাভাবিক ওজন কমানোর পদ্ধতি ব্যবহার করছে যার ফলে তাদের বমি বমি ভাব ও রেচন প্রক্রিয়াতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

যদিও এর কোনো নির্দিষ্ট কারণ নেই তবে গবেষণায় দেখা যায়, জেনেটিক্স, আচরণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোই অতিমাত্রায় খাবার গ্রহণে ভূমিকা রাখে। রিপোর্টে বলছে আত্মসম্মানের অভাবে ওজন হ্রাস করতেও অনেককে দেখায় যায়।

আত্মহত্যা

নারীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা যায় তবে পুরুষদের আত্মহত্যায় মৃত্যুর ঘটনা বেশি। যেসব নারী তাদের প্রথম চেষ্টায় লক্ষণগুলো জানিয়েছে এবং সাহায্য নিয়েছে তাদের  পরবর্তীতে আবার আত্মহত্যার চেষ্টা করতে দেখা যায়। মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে যারা আত্মহত্যার চেষ্টায় একবার বিফল হয়েছেন তারা আজীবন সমস্যাগুলোর সাথে লড়াই করে যাবেন তাও কিন্তু নয়।

সামাজিক আচরণের ভারসাম্যহীনতা

সামাজিক চাপ ও প্রত্যাশা যা নারীরা হরহামেশা মোকাবেলা করেন তা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। এর মাঝে রয়েছে সমাজে যেসব নারী শারীরিকভাবে আকর্ষণীয়, লালন-পালন ক্ষমতা সম্পন্ন, সামাজিক, বুদ্ধিমান তাদেরকে বেশি মূল্যায়ন করা।অপরপক্ষে পুরুষদের উচ্চতর মূল্যের মনে করা, যদি তারা আরো সৎ হয়, পেশাদার মনোভাব থাকে, অর্থনৈতিক সাফল্য থাকে, শক্তিশালী ও নেতৃত্বদানের ক্ষমতা থাকে তাহলে তাকে দ্বিগুন মূল্যায়ন করা।

বেশিমাত্রায় সামাজিক চাপ ও পরিশ্রমের কারণে সৃষ্ট চাপও নারীর মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতির জন্যে দায়ী। পুরুষদের তুলনায় নারীরা লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার বেশি হন। যা তাদের মানসিক সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।

স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নে ভিন্নতা

স্বাস্থ্য প্রদানকারী ও নারীদের মধ্যে আচরণ যা পুরুষদের তুলনায় অনেক ভিন্ন হয় তা উন্নয়নশীল দেশে বেশি দেখা যায়। কিছু দেশে এ যোগাযোগ সরকার ও কর্তৃপক্ষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ফলে মানসিক যন্ত্রণাগুলো প্রকাশ করা কঠিন হতে পারে। এ নিয়ন্ত্রণের ফলে কারো অন্তর্নিহিত লিঙ্গ বৈষম্য থাকতে পারে এবং বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর উপর পক্ষপাতিত্ব মনোভাব প্রকাশ পেতে পারে। এটি অতিরিক্ত চিকিৎসা বা কম চিকিৎসা গ্রহণ উভয়ক্ষেত্রেই হতে পারে। ফলস্বরূপ নারীদের উপযুক্ত যত্ন গ্রহণ করা কঠিন হয়।

এ সকল বিষয়কে মাথায় রেখে, চিকিৎসা প্রদানকারী নারীদের সেবা দিতে সর্বোত্তম উপায় বেছে নিতে পারে। বিশেষত যখন মানসিক স্বাস্থ্য সেবার কথা আসে।

অতিমাত্রায় নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ

অতিমাত্রায় নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ নিজেকে এবং আশপাশের মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে, যা ব্যক্তির বন্ধুবান্ধব, পরিবার ও কাজের ক্ষেত্রে সম্পর্ককেও প্রভাবিত করে।

 ড্রাগ বা অ্যালকোহলের প্রতি আসক্তি নানা কারণে মস্তিষ্কে রাসায়নিক পরিবর্তন আনতে পারে যা তার ও অন্যান্যদের উপরও প্রভাব ফেলে। এর ফলে নারীদের অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ দ্রব্য ত্যাগ করার মত কঠিন সময় আসতে পারে। অতিমাত্রায় এসব দ্রব্য সেবনের ফলে তারা যখন চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন তাদের শিশু ও বয়োজ্যোষ্ঠদের সহায়তায় যত্নের প্রয়োজন হয়।

এমন কোনো ভব্যিষতবাণী করা সম্ভব নয় যে নারীদের কেবল অ্যালকোহলের কারণেই সমস্যা হতে পারে। ন্যাশনাল ইন্সিটিউট অন ড্রাগ অ্যান্ড অ্যাবিউজ (এনআইডিএ)র গবেষণায় দেখা গেছে যে নারীদের এসব দ্রব্য সেবনের ফলে নানান সমস্যাও হতে পারে।

পুরুষদের তুলনায় আসক্ত হওয়ার আগেই নারীদের জন্যে অল্প পরিমাণে এসব দ্রব্য সেবন অথবা ওষুধ হিসেবে ব্যবহার অস্বাভাবিক নয়। নারীদের আরো শক্তিশালী ড্রাগের প্রতিও আসক্তি থাকতে পারে যা চিকিৎসার মাধ্যমে ফিরে আসার সম্ভবনাও রয়েছে। মস্তিষ্কের রাসায়নিক পার্থক্যের কারণগুলো জানায় নারীদের জন্যে নির্দিষ্ট ওষুধ ও দ্রব্যগুলোর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে।

ঘরোয়া সহিংসতার শিকার হওয়া নারীদের এ ধরনের দ্রব্যের অপব্যবহারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এর সাথে এও গুরুত্বপূর্ণ যে গর্ভাবস্থায় নারীরা এ দ্রব্য সরবরাহকারীদের সাথে দেখা করে যা তার ও শিশুর জন্যে ঝুঁকি বয়ে আনে।

কোভিড-১৯ এবং স্বাস্থ্য সেবায় ঝুঁকি

করোনা মহামারির কারণে কেবল অর্থনৈতিক সংকট হয়েছে তা নয়, মানসিক স্বাস্থ্য সংকটও দেখা দিয়েছে। বিশ্বে এখন মানসিক স্বাস্থ্য সেবাদানকারী যত্নের জন্যে অনুসন্ধান করে চলেছে। সাম্প্রতিক গবেষণার মাধ্যমে এটা স্পষ্টত, এ মহামারি নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।

কানাডার সেন্টার ফর অ্যাডিকশন অ্যান্ড মেন্টাল হেলথের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের তুলনায় নারীরা উদ্বেগ ও একাকীত্বে বেশি ভোগেন।

বিশেষ করে ২৫% নারী ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা গুরুতর মানসিক উদ্বেগের সাথে লড়াই করছেন, সেখানে ১৮% পুরুষ এর সম্মুখীন হয়েছে । ২৩% নারী গুরুতর একাকীত্বের কথা জানিয়েছে যেখানে তাদের তুলনায় পুরুষেরা কেবল ১৭%।

২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, নারীরা গুরুতর মানসিক উদ্বেগ ও বিষন্নতার গুরুতর লক্ষণগুলো প্রায়শই প্রতিবেদন করছেন। এছাড়া পুরুষদের তুলনায় নারীদের সময়ের সাথে অবস্থার অবনতি হতে দেখা যায়।

আরেক গবেষণা বলছে, পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশিমাত্রায় সহানুভূতি ও পরিস্থিতি  বোঝার তাগিদ জানিয়েছেন। সহানুভূতি উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, একাকীত্ব এবং ট্রমার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

সারাবিশ্বের অগণিত মানুষ হয় মানসিক সমস্যা অথবা ঘরোয়া সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। যার বেশিরভাগই নারী।

মহামারীর সময় বিভিন্ন প্রটোকল সবাইকে বাড়িতে থাকার নির্দেশ দিচ্ছে বা বাড়ি থেকেই কাজ করার কথা বলছে। এর ফলে ভিক্টিমকে নির্যাতনকারীর সাথেই অতীতের চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করতে হচ্ছে।

নারীদের মানসিক সমস্যাতে পুরুষ ও নারীর বৈষম্যের কারণগুলোর পাশাপাশি, বিশ্বে মহামারিও নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলছে। কেবল এসব বিষয়ে সামগ্রিকভাবে দৃষ্টিপাত করেই আমরা নারীদের মানসিক সমস্যাগুলো বুঝতে পারি।

লিঙ্গ ও বর্ণের ফারাক 

লিঙ্গ ছাড়াও, জাতি-বর্ণ অন্যতম প্রধান কারণ যা মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে জাতিগত বৈষম্য দরিদ্র জনগোষ্ঠিতে মানসিক স্বাস্থ্যের সাথে গুরুতরভাবে জড়িত; যার অন্যতম উদাহারণ আমেরিকান ও আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের মাঝে। লিঙ্গ বৈষম্যের সাথে একই হারে জাতিগত বৈষম্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

জাতিগত বৈষম্যে নেতিবাচক আচরণগুলো মোকাবেলার কৌশল সাময়িকভাবে আরাম দিতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব মানুষের জন্যে ক্ষতিকর। এর ফলে অতিরিক্ত খাবার সেবন বা কম সেবন, নিজের ক্ষতি করা, মদ্যপান করা অথবা পরিহার করা অন্যতম।

গবেষণায় দেখা গেছে আমেরিকানদের মধ্যে লিঙ্গ বৈষম্যের ধরণ ও সেটিং এর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ প্রমাণ রয়েছে।

এছাড়াও প্রমাণ রয়েছে যে জাতিগত বৈষম্য ও শারীরিক-মানসিক চাপ ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য চিহ্নিতকরণ সমস্যা হলো হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, কর্টিসেল (স্ট্রেস হরমোন) মাত্রা। দীর্ঘমেয়াদী চাপ শারীরিক ও মানসিক সমস্যা উভয় বাড়াতে পারে।

যখন চিহ্নিত কারণগুলো লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে আরো প্রকট হয় তখন অবস্থার অবনতি মারাত্মকভাবে হয়। উদ্বেগ, বিষন্নতা, বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মত নির্দিষ্ট সমস্যায় তাই প্রশিক্ষিত মানসিক স্বাস্থ্য সেবাদানকারীর অনুপ্রবেশ অতি জরুরি।

নারীরা ভিন্নরকম বাধারও সম্মুখীন হতে পারেন

সারাবিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য সেবাদানকারীর সংকট রয়েছে। অন্যান্য বাধার সাথে যখন এটিও যুক্ত হয় তখন তা পুরুষদের তুলনায় নারীদেরকে প্রভাবিত করে।

এছাড়াও যেসব বাঁধা রয়েছে –

অর্থনৈতিক

নারীরা চিকিৎসা সেবার জন্যে কাজ থেকে ছুটি নিতে আরো মারাত্মক সময় পার করেছেন বলে জানা যায়। কাইজার ফ্যামিলির এক গবেষণায় জানা যায়, প্রতি চারজনের একজন নারী তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন না কারণ তারা কাজ থেকে সময় বের করতে পারছেন না। প্রতি চারজনের একজন চিন্তা করে নিচ্ছেন হয় সেবা নেওয়া বন্ধ করবেন অথবা ব্যয়ের কারণে তা স্থগিত করবেন।

শিশুপালন

এমন কিছু প্রধান মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা আছে যা গর্ভাবস্থায় বিকাশ ঘটাতে ক্ষতিকর এবং  এর ফলে প্রয়োজনীয় সেবা খুঁজে পেতে সক্ষম নাও হতে পারেন। দেখা যায় নারীদের উপর পুরুষদের তুলনায় সন্তান লালন পালনের দায়িত্ব বেশি পড়ে। ফলে তারা যদি পর্যাপ্ত ভালো চাইল্ডকেয়ার খুঁজে না পান তখন তাদের স্বাস্থ্য সেবা নেওয়ার সুযোগ কমে আসে।

স্বাস্থ্যগত বাধা

এটা সত্য যে, মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নেওয়ার ব্যাপারে অনেক কুসংস্কার কমে গেছে কিন্ত নারীরা পুরুষদের তুলনায় কুসংস্কারের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বিশেষ করে যখন নেশার প্রতি আসক্তির কথা আসে। এছাড়াও স্বাস্থ্য সেবা নিতে সঠিকভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে তারা কঠিন বাধার মোকাবেলা করছে।

সেবাদানকারী ও রোগীর মনে রাখতে হবে এ বিষয়গুলো এবং যেন সঠিক সেবা লাভ করে তা নিশ্চিত করতে হবে।

আমাদের কাজ এখনও শেষ হয়নি

যদিও মানসিক স্বাস্থ্য সেবা অনেকদূর এগিয়ে গেছে তবুও নারীদের উপর এর প্রভাবগুলো বোঝার জন্যে আমাদের অনেক কাজ করা প্রয়োজন। মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করার সময় লিঙ্গ বৈষম্যের কথা মাথায় রাখতে হবে এবং একে অন্যতম কারণ ধরে কাজকে এগিয়ে নিতে হবে। সাথে অবস্থার মাত্রা ও ঝুঁকিও বোঝা জরুরি।

শিক্ষা এবং ডিসটিগমাটাইজিংয়ের মাধ্যমে নারীদের মানসিক সমস্যাগুলো বুঝতে আরো বেশি সহায়তা করতে পারি, নানারকম ভূমিকা রাখতে পারি ও প্রয়োজনে তাদেরও সাহায্য নিতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *