May 16, 2024
সাহিত্যফিচার ৩বই নিয়ে আলাপ

নারীসত্তার সন্ধানে একটি চিন্তাশীল বিশ্লেষণ

তাহমিনা আক্তার ।। “নারীসত্তার অন্বেষণে” বইটি লিখেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লেখক গবেষক ড. স্নিগ্ধা রেজওয়ানা। বইটি তিনি দারুণ অথবা চমৎকার লিখেছেন শুধু তা নয় বরং বইটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।

আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া নারী বৈষম্য, নিপীড়নের কথা টুকটাক পত্রপত্রিকা বা ফেসবুকে সবাই বলি; কিন্তু ড. স্নিগ্ধা রেজওয়ানা নিজের অর্থ সময় ব্যয় করে দিনের পর দিন পরিশ্রমের মাধ্যমে, বিশেষ করে ঢাকা মধ্যবিত্ত নারীর দ্বার প্রান্তে গিয়ে নারীদের খুব কাছ থেকে জেনেছেন কিভাবে আমাদের সমাজে নারী শরীর, যৌনতা, মাতৃত্ব, শিক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, সামাজিক, সংস্কৃতিক সম্পর্কগুলো নারীসত্তা প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।

আমাদের সমাজ প্রেক্ষাপটে একজন অবিবাহিত নারীর অভিভাবক হয় তার বাবা, বিবাহিত হলে তার স্বামী আর তালাকপ্রাপ্ত নারীদের ক্ষেত্রে তার পুত্র, আর নাহয় কখনো দূরের কোন পুরুষ আত্মীয়। এই অভিভাবকত্ব কেবল আনুষ্ঠানিক দলিল-দস্তাবেজে ব্যবহৃত নাম নয় বরং ব্যক্তি জীবনেও নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। একজন নারী তার সত্তাকে কিভাবে তৈরি করবে, তার গঠন কী হবে, মনন ও চিন্তা জগতে নারীর কল্পনাকে কোন পর্যন্ত বিস্তৃত করা যেতে পারে, তার সকল ক্ষেত্রে এই অভিভাবকত্বের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব লক্ষণীয় হয়ে ওঠে, আর এরই সূত্র ধরে নারী-পুরুষ লিঙ্গীয় সম্পর্কে ক্ষমতাচর্চা অর্জন করে থাকে। কিন্তু আমাদের সমাজে নারীর তুলনায় পুরুষের ক্ষেত্রে এর সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র লক্ষণীয়।

তাছাড়া নারীর মাতৃত্বকে এমনভাবে নারীর সাথে যুক্ত করা হয় যে,মাতৃত্ব ভিন্ন নারীর যে আলাদা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র বিদ্যমান, সেটি কেবল দৃষ্টির আড়ালেই থাকে না, সেটি নারীকে নানা ধরনের বিশিষ্টতাও দান করে। যার ফলে নারী হয়ে ওঠে- “মমতাময়ী, স্নেহপরায়ণ ও ধৈর্যশীল মায়ের জাত”।

অন্যদিকে, নারীর এই মাতৃত্ব নারীকে কখনো অধস্তন আবার কখনো শক্তিশালী করে তোলে।মাতৃত্বের কারণেই নারী হয়ে উঠে ‘দাসতুল্য’, আবার কখনো সে হয়ে ওঠে পূজনীয়।

যাই হোক, এই যে শৈশব এবং বয়ঃসন্ধিকালের জৈবিক পরিবর্তন থেকে শুরু করে বৈষম্যের শিকার হওয়া মেয়ে থেকে পর্যায়ক্রমে দাবিত হওয়া একজন অবিবাহিত, বিবাহিত, তালাকপ্রাপ্ত, চাকুরীজীবী নারী কিভাবে বৈষম্য বেড়াজাল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে নিজেকে তার নারীসত্তা গঠনে সক্রিয় করে তোলে – এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তথ্যগুলো সংগ্রহ করে লেখক নিজের চিন্তাশীল এবং বিশদ বিশ্লেষণের মাধ্যমে “নারীসত্তার অন্বেষণা” বইটিতে দারুণভাবে উপস্থাপনা করেছেন।

বইটি সম্পর্কে সামান্য কিছু কথা এখানে তুলে ধরেছি মাত্র, সম্পূর্ণ বইটি পড়ুন তাহলেই বইটির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারবেন। আশা করি সমাজ সচেতন নারী-পুরুষ সর্বসাধারণ সবারই বইটি ভালো লাগবে।

ধন্যবাদ ড. স্নিগ্ধা রেজওয়ানা, আমাদের এমন একটি সমাজ সচেতনামূলক বই উপহার দেওয়া জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *