May 15, 2024
সাহিত্যফিচার ৩প্রবন্ধ

প্রসঙ্গ: নারীমুক্তি সমাজে-সাহিত্যে

মুজিব রাহমান।। ‘‘Boys will be boys’’ ইংরেজি প্রবাদ হলেও আমাদের দেশে ও মনস্তত্ত্বে এ কথার শেকড় বহুদূর পরিব্যাপ্ত। এ প্রবাদটি পুরুষশাসিত সমাজের চেহারা উন্মোচক বললেও ভুল হবে না। যখন বালক কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক কেউ অভদ্রভাবে হৈ-হট্টগোলে মাতে তাতে বিস্মিত হবার কিছু নেই কারণ এটি সমাজ অনুমোদিত স্বভাবসুলভ পুরুষোচিত ব্যবহারের প্রকৃতি-বৈশিষ্ট্য। আরেকটু বাড়িয়ে বলা যায়, এ প্রবাদের সীমা পুরুষবাদী আচরণের সব দিগন্ত ছেয়ে আছে। সংক্ষেপে, পুরুষ প্রাধান্যের ইতিহাসও এ প্রবাদে বিধৃত, বিস্তৃত।

সামগ্রিক অগ্রগমনের এই পৃথিবীতে অন্তঃপুর এখন আর নারীর ঠিকানা নয়। অন্তঃপুর পেছনে ফেলে বহুদূর চলে এসেছে নারী। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পুরুষের হাত ধরেই সংগ্রামে-সখ্যে ক্রীতদাসী হবার, সহমরণে যাবার বিপর্যস্ত দশা পেরিয়ে এসেছে নারী। সাত বছরের এস. ওয়াজেদ আলির আড়াই বছর বয়সী চাচাতো বোনকে বিয়ের বাস্তবতা এড়িয়ে নয়, পেরিয়ে আসতে হয়েছে বাঙালি সমাজকে।

সভ্যতার অগ্রগমনের ইতিহাস নারী-পুরুষের সম্মিলিত পথচলার ইতিহাস। সক্রেটিসের ইতিহাস। জেনথিপির ইতিহাস। সেই গোড়া থেকেই পৌরুষের একচেটিয়া প্রভাবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে নারী সিনডেরেলা, অবহেলিত, বঞ্চিত ও বৈষম্যের অসহায় শিকার। গৌরী দেবীর ইতিহাস লেখা হয়ে ওঠে না। লেখা হয় না বলে পড়াও হয় না। পড়া হয় সমরেশ বসুর ইতিহাস। কার্ল মার্ক্সের ইতিহাস চর্চিত হয়। জেনির ইতিহাস রয়ে যায় অগোচরে, অজানা।

পুরুষের হাত করাত এবং ক্রাচ দু’ভাবেই ব্যবহৃত হয়েছে এ সভ্যতা বিনির্মাণে। হচ্ছে আজও।

নারীর সম্পূর্ণ মানব-সম্ভাবনাকে বিকশিত করার জন্যে সমাজকে মর্যাদাপূর্ণভাবে সুযোগের সমতা বিধান করা ছাড়া আজকের দিনে আর কোন বিকল্প নেই। সমাজ কাঠামোর এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে নারী ভূমিকা পালন করতে অক্ষম। যুদ্ধ, রাষ্ট্র পরিচালনা সর্বত্রই তার ভূমিকা ও অবদান আজ প্রমাণিত।

১৮৪৭ সালে প্রকাশিত শার্লোট ব্রন্টির Jane Eyre উপন্যাসের মূল চরিত্র জেন ভালোবাসতেন মি. রচেস্টারকে। কিন্তু সামাজিক সম্মান ব্যতীত শুধু রচেস্টারের একজন প্রেমিকা হিসেবে থাকতে অস্বীকার করেন জেন। সময়ের চেয়ে অনেক অগ্রগামী জেন তখন নিজেকে নিজের জেরার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছিলেন। প্রশ্ন করেছিলেন নিজেকে – “এই পৃথিবীতে কে তোমার কথা ভাববে?” [Who in the world cares for you? or who will be injured by what you do?”]

এই কথার জবাবে জেন নিজেকে বলেছিলো:

[ “I care for myself. The more solitary, the more friendless, the more unsustained I am, the more I will respect myself.”]

“আমি আমার কথা ভাববো। যত বেশি নিঃসঙ্গ, যত বেশি নির্বান্ধব, যত বেশি টিকে না থাকার মতো আমি হবো, নিজেকে তত বেশি শ্রদ্ধা করবো।”

দারিদ্র আর অবহেলাকে রক্তমাখা দু’পায়ে দলে দাঁড়িয়েছেন জেন। সাহস, সংকল্প আর দৃঢ়তার প্রমূর্ত রূপ প্রত্যক্ষ করা যায় ব্রন্টি সৃষ্ট এই জেন চরিত্রে।

একটি পুরুষ নিয়ন্ত্রিত, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামন্তশাসিত সমাজে ১৭০ বছরেরও অধিক কাল আগে একজন বেঁটেখাটো ‘অসুন্দরী’ মেয়ে পারিবারিক প্রতিকূলতা, সামাজিক সংস্কার আর ধর্মীয় নৈতিকতাবোধকে অস্বীকারপূর্বক তার মাথাটিকে ঘাড়ের ওপর সোজা রাখার যে নজির স্থাপন করেছে তা নারীর আত্মমর্যাদা রক্ষায় সকল কালের জন্য এক অবশ্যপাঠ্য বাস্তবতা হয়ে থাকবে।

রচেস্টারের বউ উন্মাদ কিন্তু তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে তার প্রতি দায়িত্ব পালন করেন। তার রক্ষিতাও আছে। আবার জেনকেও তিনি ভালবাসতে জানেন। স্ত্রী বর্তমান থাকার কথা জেনের কাছে গোপন করেছিল রচেস্টার। রচেস্টারকে পরম নির্ভরতা মনে করেছিল জেন। গির্জায় বিয়ের আসরে দুই আগন্তুকের হস্তক্ষেপ সব খোলাসা করে দিল। জেন নিজেকে প্রতারিত জেনে নৈঃসঙ্গকে শ্রদ্ধা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতাই তাঁকে বাঁচিয়ে দিল। উপন্যাসের আরেক চরিত্র জন রিভার্স ধর্ম প্রচারে একনিষ্ঠ কিন্তু নর-নারীর ভালোবাসা ও পারস্পরিক দায়িত্ব বুঝতে অক্ষম। অন্যদিকে, রচেস্টার আপাত নিষ্ঠুর ও অহঙ্কারি হওয়া সত্ত্বেও ভালবাসায় দায়িত্বশীল। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে ব্যক্তিক মর্যাদাচেতনা জেনের বিবেচনাবোধকে শানিত করেছে। যে আত্মসম্মান ও আত্মমর্যাদার জ্ঞান নোরাকে যন্ত্রণাময় জীবনচক্র ভেঙে বের হবার শক্তি যুগিয়েছিল এক অর্থে সেই আত্মমর্যাদাজ্ঞানই জেনকে নিরস্ত করেছিল রচেস্টারের প্রেমিকা হতে।

মূলত, সাহিত্যের ইতিহাসে প্রাচ্যের নারী সীতাকে জ্বলন্ত অগ্নিগোলক অতিক্রম করতে হয়, অতিক্রম করতে হয় নিরাপদে। বাঙালি নারীকে রাষ্ট্রে-সমাজে-সংসারে প্রতিনিয়ত পার হতে হয় এই অগ্নিগোলক! অন্যদিকে পাশ্চাত্যের পেনিলোপির সান্নিধ্য লাভের জন্যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় কুড়ি বছরের যুদ্ধবিধ্বস্ত ট্রয়ফেরত স্বামী অডিসিউসকে। এবং অবশেষে বিছানাসংক্রান্ত গোপন তথ্য প্রদানের পরই সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে অডিসিউসকে আলিঙ্গন করেন পেনেলোপি।

অন্যদিকে, শেকসপিয়রের হ্যামলেট নাটকে প্রধান রাজ-অমাত্য পোলোনিয়াসের পুত্র লেয়ার্তেস তার যুবতী বোন ওফেলিয়াকে যে উপদেশ দিচ্ছে সময় এবং পরিপ্রেক্ষিতের আলোকে নারীর সামাজিক-সাংস্কৃতিক অবস্থা নিরূপণে সে-সব লক্ষ্য করার মত।

“সবচেয়ে সতর্ক কুমারী যদি চাঁদকেও আপন সৌন্দর্য অকুণ্ঠভাবে দেখায়, তাহলে তার পথভ্রষ্টতা অবশ্যাম্ভাবী হয়ে ওঠে। পবিত্রতম জীবনও কলঙ্কের ছায়া থেকে রেহাই পায় না। বসন্তের ফুল ফুটে ওঠার আগেই অনেক সময় তাদের মধ্যে কীটের বাসা গড়ে ওঠে। নবীন ভোরের শিশির অতি সহজেই মুছে যায়। সুতরাং সতর্ক থেকো। ভীতিই হচ্ছে সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা।”

আমাদের চারদিকে চারশো বছর আগের উচ্চশিক্ষিত, ক্ষমতা ও সুবিধাপ্রাপ্ত লেয়ার্তেসদের এ কণ্ঠ আজও উচ্চকিত, শোনা যায় সর্বত্র। কতোটা এগোলাম আমরা! কতোটা এগিয়েছি!

রাষ্ট্রশক্তি শক্তিমানের দুষ্কর্মের সাহায্যকারী হলে ব্যক্তির, দুর্বলের ভরসার আর কোনো জায়গা থাকে না দাঁড়াবার। রাষ্ট্রের উৎপত্তির নেপথ্যে আছে সামষ্টিকশক্তির প্রতিনিধি হিসেবে রাষ্ট্র ব্যক্তির জান এবং মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সুরক্ষা দেবে। উল্টোটা হলে ব্যক্তির হাতে প্রতিষ্ঠানকে মার খেতে হলে মানবিক দুরবস্থার অন্ত থাকে না।

নারীর স্বাধীনতা রক্ষা বা নিশ্চিত করার জন্যে পুরো সমাজকেই সযত্ন সতর্ক ও  অতন্দ্র  থাকতে হয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক উপলব্ধিতে, মনস্কতায়। তখনই তার প্রভাব দীপান্বিত হয়ে ওঠে সর্বত্র- জীবনে-সংসারে, সমগ্র প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনায়। সর্বপ্লাবী সমস্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

সচেতনভাবে সতর্ক থাকা প্রয়োজন  এ-জন্য যে, প্রগতির চাকা পেছনের দিকে ঘুরিয়ে দেবার কারবারিরা অতন্দ্র। সদা অপকর্মতৎপর।

নারীকে মানুষ হিসেবে পুরুষের সমকক্ষ সহযোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রথম দূরদর্শী রূপকার ছিলেন জন স্টুয়ার্ট মিলের On Women পড়া  বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগরীয় এই চেতনা এখন অনেক বেশি বিস্তৃত।

সে-সময় আজ আর নেই যখন আমাদের সমাজে নারীকে ক্ষমতায়িত করা পুরুষ আধিপত্যের জন্যে একটি মস্ত চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করা হতো।  অষ্টাদশ শতাব্দের বহু অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, বহুভাষী প্রতিভাবান কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর (১৭১২ – ১৭৬০)। তাঁর কাব্যে নারীর প্রতি তাঁর কালের দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছে। সামগ্রিক অগ্রগমন সত্ত্বেও নারী প্রগতির ক্ষেত্রে বাঙালি সংস্কৃতি এখনও সেই অনতিক্রম্য বৃত্ত পুরোপুরি পার হতে পারেনি। তাঁর কবিতার সেই উচ্চারণ: ‘নারী যার স্বতন্তরা সেজন জিয়ন্তে মরা’।

এই মনোভঙ্গি এখনও শ্রেণিগতভাবে এই সমাজের অনেক মানুষের।

উনিশ শতকের রঙ্গ, ব্যঙ্গে পারদর্শী কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত (৯.৩. ১৮১১ – ২৪.১. ১৯৫৯) যাঁর কবিতায় মধ্যযুগের ভাবধারার শেষ চিহ্ন আর নূতন কালের সূচনা আভাষিত তাঁর ‘বাঙ্গালির মেয়ে’ শীর্ষক কবিতার দিকে তাকালেও নারীর প্রতি সমাজের তদানীন্তন দৃষ্টিভঙ্গির সংকীর্ণতা স্পষ্ট।

“আর কি এরা এমন কোরে

সাঁজ সেঁজুতির ব্রত নেবে?

আর কি এরা আদর কোরে,

পিঁড়ি পেতে অন্ন দেবে?”

ইংরেজি শিক্ষা তিনি অনুমোদন করেননি; সেজন্য ইংরেজি শিক্ষার ধ্বংসাত্মক দিকটিকেই তিনি প্রকট করে তুলেছেন, তার গঠনমূলক দিকটিকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তাঁর উচ্চারণে:

“(এরা) এ বি পড়ে বিবি সেজে,

বিলিতী বোল কবেই কবে!

(এরা) পর্দা তুলে ঘোমটা খুলে,

সেজে গুজে সভায় যাবে!”

অত্যন্ত স্পষ্ট যে, যুগসন্ধিক্ষণের (আধুনিক চিন্তার!) এই কবিও সামাজিক শঙ্কার কথা তুলে ধরেছিলেন এই ভেবে – সত্যিই কি অগ্রগমনের এই ধারা সংসারব্রতধারী নারীকে ব্রতচ্যুত করবে,বৃত্তচ্যুত করবে!  উপর্যুক্ত চার পঙক্তিতে নারীর জন্যে তৎকালে প্রচল-প্রথাবদ্ধ পশ্চাদমুখি লক্ষ্মণরেখাটিও দৃষ্ট।

নারী-পুরুষকে মানবিক মর্যাদাপূর্ণ সুযোগের সমতার সড়কে পৌঁছুতে আর ক শতাব্দ লাগবে বাঙালির!

তরুণীর পথ সুদূর অতীত হতে আজ অবধি বাঁধন-কষণে বিপর্যস্ত। স্বাধীন মানুষ হিসেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ তার কাল হয়েছে সব যুগে। সব কালে। সমাজ বদলের প্রক্রিয়ায় নিরবচ্ছিন্নভাবে অনেক কিছু বদলালেও সমাজের মানসিকতা আজও অতীতের ভাবধারায় সমাচ্ছন্ন। অতীতের ঘেরাটোপে বন্দী।

নির্বাপিত রিরংসার গভীর থেকে উঠে আসা কালো ধূমে গড়া ক্ষমতা প্রদর্শনের দেহজ প্রেমের ঘৃণা-জর্জর উপস্থাপন দেখি উনিশ শতকের ফরাসি কবি শার্ল বোদলেয়রের কবিতায়। ল্যাটিন প্রবাদের post coitum triste বা মিথুন পরবর্তী বিষাদের প্রসঙ্গ উঠে আসে ভালোবাসারিক্ত কামাসক্তির পরিণামে। এবং উঠে আসে রাত্রির উন্মত্ত ভোগের শেষে ভোরের শীতল নীতি-বিচার ও অনুশোচনার প্রসঙ্গ। যদি নিয়তি আধুনিক প্রতিবেশে রচিত পরফিরিয়া’স লাভার কবিতার রাজবংশজাত কন্যা পরফিরিয়ার মত না হয়। ব্রাউনিঙের ‘মাই লাস্ট ডাচেস’ কবিতার ডাচেস-এর মত না হয়। কিন্তু ক্ষমতা, প্রতিপত্তি যদি মানবীর স্বতঃস্ফূর্ত হাসিটিকেও নিয়ন্ত্রণ করতে চায় এবং হাসির উৎসকেও চিরতরে থামিয়ে দেবার মনস্কতায় উন্মত্ত থাকে তাহলে একটি নির্দেশেই নীরবতা নেমে আসে জীবনজুড়ে। যেমন ঘটেছিল ডাচেস-এর জীবনে। ইতালিয় ক্ষমতাবান ঈর্ষান্ধ ডিউকের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হতে হবে ডাচেসকে। এই দখলদারত্ব, এই দখলি মনস্কতা ডাচেসের হাসির সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষণের জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। অন্যথা হলে মৃত্যু অবধারিত। অতঃপর জীবন্ত ডাসেচ অল্প সময়ের ব্যবধানে দেওয়ালে ঝুলানো পর্দায় ঢাকা ছবি হয়ে গেলো।

সময়ের ব্যবধানে ডিউকের ভাষা তামাদি হয় না আজকের দিনেও টাকার কুমিরদের মুখে আত্মম্ভর মনুষ্যত্ববিধ্বংসী একই উচ্চারণ শোনা যায়:

I gave commands;  তারপর পঞ্চশরের বিষাদমাখা পাঁচ শব্দের ট্র‍্যাজেডি নেমে এল ডাসেচের জীবনে –

‘Then all smiles stopped together.’

কী অরুন্তুদ জীবনবিনাশী ক্ষমতার আস্ফালন!

র‍্যাডিক্যাল হিউম্যানিজম-এ বিশ্বাসী প্রত্যয়ী প্রাবন্ধিক ও মনস্বী মনীষা শিবনারায়ন রায়ের ‘আধুনিকতা, নারীমুক্তি ও নির্মীয়মান সমাজবিপ্লব’ শীর্ষক প্রবন্ধের শেষকথাগুলো উদ্ধৃত করে এ লেখা শেষ করতে চাই।

তিনি লিখেছেন:

“এমন তরুণ-তরুণীর সংখ্যা বাড়ছে যাঁরা বলের সাধনার পরিবর্তে বন্ধুত্বের সাধনাকে, আত্মপ্রতিষ্ঠার পরিবর্তে আত্মীয়-অর্জনকে, জীবজন্তু তরুলতা প্রকৃতি পরিবেশকে ভোগের উপাদান ভাবার পরিবর্তে  এক মহৎ বৃন্দগানের অংশভাক রূপে অনুভব করাকে তাঁদের জীবনের উদ্দিষ্ট হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাঁদের কাছে নারী-নরের সমান মূল্য প্রাত্যহিক জীবন চর্যার নিয়ামক। আমার বিশ্বাস এঁরাই নবসভ্যতার প্রচারহীন পথনির্মাতা।”

উদার মানবতাবাদী শিবনারায়ণ রায়ের এই আশাবাদ অনুবাদিত হোক আধুনিক তরুণী-তরুণদের জীবনযাপনের সামগ্রিকতায়।

 

মুজিব রাহমান: কবি, অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক